
স্নেহসিক্ত শিশির যখন শিলাবৃষ্টি হয়ে মাথায় পড়ে,
তখন মাথা গোঁজার বৃথাচেষ্টা আশ্রয় খোঁজে সমুদ্রে সলিল সমাধির তরে। অবোধ্য নিয়তি আজন্ম প্রতারক,
বিধিলিপি পড়তে যখন পারিনি শেষতক যা হয় হউক।
আমি ও আজ থেকে নির্বাক দর্শক।রাতের জঠরে দুঃখ ভ্রুণ বেড়ে উঠে ঘুম চুষে, নির্ঘুম চোখের জ্বলুনিতে তার কি যায় আসে ? ভোরের সূর্যের হাসিতে সদ্যজাত শিশুর সারল্য!দায়িত্ব যখন মাতৃত্ব সব ভুলে মন হয় প্রফুল্ল!শিশুতোষ জিদে সোনার হরিণ পুষতে চাইবোনা আর।
হোঁচট খেয়ে বারবার, তাকিয়ে দেখি ভালোবাসার সেই প্রাচীন নুড়িপাথর।
নিজের ছায়া বড় হতে হতে যখন অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়ে সিসিফাসের সেই পাথরে রুপ নেয়, যাকে দিনভর গড়িয়ে চূড়ায় তোলা বৃথা, গড়িয়ে নামার পুনরাবৃত্তি যার স্বভাব,হয়তো সে-ও নিরুপায়,এ হচ্ছে মধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব। আঁতুড়ঘরে নরম গালে চুমো খেয়ে যাকে ভালোবেসে তিলতিল করে বড় করা হয় সে-ও একদিন আরেক সিসিফাস তৈরি হয়। হয়তো দুনিয়াটাই সিসিফাস তৈরির কারখানা। জীবনের অপর পৃষ্ঠা হচ্ছে অসারতা। বিলীন হওয়াই যার চুড়ান্ত। গ্রীক পৌরাণের সিসিফাস মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়েছিল জীবনকে ভালোবেসে। নিশ্চয়ই সুন্দর ছিল তাঁর একান্ত পৃথিবী! হতে পারে তাঁর চরিত্রের তকমা স্বার্থপর। কেন নয়? কেন কেউ মৃত্যুকে রুখে দিতে চাইতে পারেনা যদি তার থাকে আত্মার পরমাত্মীয়?দু-চোখ ভরা থাকে জয়ের আনন্দ! কেন কেউ মৃত্যুকে বরণ করতে পারেনা যদি তার শ্বাসতন্ত্র বেঈমানী করে প্রতিনিয়ত? আজ এই বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বলতে চাই সিসিফাস হওয়া ভালো, তা-ও নার্সিসাস নয় ।
আজকালকার স্থাপনা শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে চোখ ধাঁধানো বাহারি কাঁচ, মানুষের মুখে ও ফ্যাশনেবল হরেকরকম মুখোশ। যতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ততক্ষণ শোভা ছড়ায়।ভেদ করে গূঢ় সত্যি জানলেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।শাব্দিক না বুঝেই ভাবের তরঙ্গ খোঁজে লোক। বস্তুবাদে ছেয়ে গেছে পৃথিবী,ভাববাদ তাই উহ্যই থাকুক।
১০টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
পৃথিবীর সব কিছুই অস্থায়ী মৃত্যুকে কেউ উপেক্ষা করতে কেউ পারেনি পারবেও না। দুনিয়ার বাস্তবরূপ সুন্দর উপস্থাপনা।
খাদিজাতুল কুবরা
হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন।
অনেক ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
হালিমা আক্তার
ভাগ্যে কি আছে আমরা কেউ জানিনা। ভাগ্যে লিখুন গুলো অদৃশ্যই থেকে যায়। নিয়তির দোহাই দিয়ে যখন সুন্দর মুহূর্তগুলো হারিয়ে যায়। তখন ভাগ্যকে প্রতারক মনে হয়।আর মৃত্যু সেতো সত্যের চেয়ে ও সত্য। চাইলেই এর কাছ থেকে পালিয়ে থাকা যায় না। সুন্দর অনুভূতির প্রকাশ। শুভ কামনা রইলো।
খাদিজাতুল কুবরা
খুব সুন্দর বলেছেন আপু।
অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম লাইনেই আটকে গেছে সমস্ত ভাবনা।
স্নেহসিক্ত শিশিরের আঘাত যাকে সইতে হয় তার মধ্যে অনুভূতি উপলব্ধের মতো আর কি কিছু বাঁকি থাকে!!
মুখোশটা নিয়ে চলতে হয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
কেউ কেউ মুখোশেই মুগ্ধতা পেয়ে যায়। আর কেউ একটা সঠিক মুখোশের খোঁজে পেরিয়ে যায় দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন-তক।
লেখাটা পড়ে কেমন যেন লাগছে।
খাদিজাতুল কুবরা
ঐ লাইনটাই এ লেখার হৃদপিণ্ড।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে পড়ে মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য।
আপনার মত পাঠক পেয়েছি ভাগ্যগুণে।
শুভেচ্ছা সবসময়
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক সুন্দর লিখেছেন। মানুষের নিয়তিই এই যে তাকে সিসিফাসের ভাগ্য মেনে নিতে হয়। বেচে থাকার জন্য মানুষ যা করে তার জন্য তাকে কখনো স্বার্থপর বলা যায়না। সুন্দর বলেছে ন- সিসিফাস হওয়া ভালো, নার্সিসাস নয়। শুভকামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
অশেষ ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
ভালো থাকবেন শুভেচ্ছা সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বস্তুবাদে ছেয়ে গেলে আসলে ভাববাদ মূল্যহীন হয়ে পড়ে। ভাগ্যের উপরে আসলে কারুর হাত থাকে না। শুভকামনা অশেষ 🌹
খাদিজাতুল কুবরা
অসংখ্য ধন্যবাদ রুকু,
সবসময় উৎসাহিত করার জন্য।
শুভেচ্ছা সবসময়।