
ধর্ম নিয়ে তর্ক করা কখনোই ঠিক নয় যার যার ধর্ম তার তার কাছে প্রিয় হয়ে থাকে।তাছাড়া ধর্মের পুরো বিষয়টাই হলো অনুভব আর বিশ্বাসের উপর।কারন মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের স্বাদ আপনি আমি কেউ বেচে থাকতে বুঝতে পারি না।তবে পবিত্র ধর্ম গ্রহন্হগুলোতে উল্লেখ আছে যা সব ধর্মেই একই কথা বলে তা হলো মৃত্যুর পর বেহস্ত দোজক৴ স্বর্গ নরক, দুনিয়ার ভাল মন্দের বিচার হয়ে অনন্তকাল ওখানে থাকতে হবে।।আদতে পৃথিবীতে বেচে থাকতে কেউ আমরা তার স্বরূপ দেখতে পাই না এটাই বিশ্বাস। তবুও ধর্মপ্রাণ মানুষ আমরা ধর্মের গান গাই। সবায় সবার ধর্মকে উচুতে রাখতে চাই আর এটাই স্বাভাবিক।
তেমনি একটি ঘটনা
সনাতন ধর্মের এক ধর্মগুরুর এক আল্লাহকে নিয়ে মুসলমানদের কাছে তার তিনটি প্রশ্ন ছিলো যা দুনিয়ার কোন পন্ডিত দিতে পারেনি আর তার বিশ্বাস ছিলো তার এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর পৃথিবীর আর কেউ দিতেও পারবেন না।
প্রশ্ন তিনটি অনেকটা এমন৴৴
@মুসলমান এক আল্লাহর বন্দিগী করে যাকে অথচ তারা তাকে কখনোই দেখেননি।যাকে দেখা যায় না তার অনুগত্য হয় কি করে ?
@ইসলাম ধর্মের মতে এ পৃথিবীতে ভাল মন্দ যাই ঘটে তা সব স্বয়ং আল্লাহর মাধ্যমেই ঘটে তাহলে মানুষ যখন কোন খারাপ কিছু ঘটায় তখন তার দায় ভার মানুষ নেবে কেন তাদের আল্লাহ কেন নয়।
@ আল্লাহ বলেছেন শয়তানকে আগুন দিয়ে বানানো হয়েছিলো আবার কালকিয়ামতের দিন শয়তানকে আগুনেই নিক্ষেপ করা হবে। প্রশ্ন হলো আগুন আগুনের কি ক্ষতি করবে?
প্রশ্নগুলো জটিল কিন্তু উত্তর যে নেই তা কিন্তু নয়।
সনাতন সেই ধর্মগুরু রাস্তা দিয়ে দম্ভের সহিত যাচ্ছিনেল তখন এক পাশে এক দরবেশ ফকির বেশে কুমারের কাজ করছিলেন মানে মাটির জিনিসপত্র গোলাকার বৃত্তে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বানাচ্ছিলেন তখন দরবেশ বাবা ধর্ম গুরুকে ডাক দিলেন।
৴এই যে শুনুন
৴বলুন
আমি শুনলাম আমার মহান আল্লাহকে নিয়ে তোমার তিনটি প্রশ্নের উত্তর নাকি পৃথিবীর কেউ দিতে পারেনি আর পারবেও না ।
৴হ্যা ঠিক শুনেছো আর পারবেও না।
আচ্ছা,তাহলে আমাকে কি বলবে কি সেই তোমার তিনটি প্রশ্ন ?
৴কি যে পাগলের মত বলো, তুমি ভিখারী, কি এমন শিক্ষা তোমার আছে যে আমার মত এমন পন্ডিতের ঐ তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিবে!আশ্চর্য হলেন ধর্মগুরু।
তখন দরবেশ বললেন।
৴বলেই দেখুন না আমি চেস্টা করে দেখি।
৴ঠিক আছে বলছি।
বলেই আবারো সেই তিনটি প্রশ্ন করলেন দরবেশকে।
@মুসলমান এক আল্লাহর বন্দিগী করে যাকে অথচ তারা তাকে কখনোই দেখেননি।যাকে দেখা যায় না তার অনুগত্য হয় কি করে ?
@ইসলাম ধর্মের মতে এ পৃথিবীতে ভাল মন্দ যাই ঘটে তা সব স্বয়ং আল্লাহর মাধ্যমেই ঘটে তাহলে মানুষ যখন কোন খারাপ কিছু ঘটায় তখন তার দায় ভার মানুষ নেবে কেন তাদের আল্লাহ কেন নয়।
@ আল্লাহ বলেছেন শয়তানকে আগুন দিয়ে বানানো হয়েছিলো আবার কালকিয়ামতের দিন শয়তানকে আগুনেই নিক্ষেপ করা হবে। প্রশ্ন হলো আগুন আগুনের কি ক্ষতি করবে?
ধর্মগুরু যখন তার তিনটি প্রশ্ন একটার একটা বলে যাচ্ছিলেন তখন দরবেশের মনের ভেতর খুব রাগ উঠছিলো।প্রশ্ন করা যখন শেষের দিকে তখন দরবেশ নিজ কাজে বানানো মাটির পাতিলে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ভাবছিলেন।তখন ধর্মগুরু বললেন।
৴তোমার মত ফকির আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না আমি জানতাম।
তখন বসা থেকে দরবেশ মাটির পাতিলটা হাতে নিয়ে হঠাৎ উঠে দাড়িয়ে ধর্মগুরুর মাথায় আঘাত করলেন। তার মাথায় জখম হল , রক্ত পড়তে লাগল ঝর ঝর করে।আশপাশের লোকজন এসে ধর্ম গুরুকে হাসপাতাল নিয়ে গেলো।আশেপাশের মুসলমানরাও দরবেশকে নিন্দাইলেন গাল মন্দ দিলেন।
কাঠগড়ায় জজের সামনে দাঁড়ালেন দুজনে।ঘটনার মুল ব্যখ্যা জানতে কিংবা বিচারের রায় শুনতে আদালত প্রাঙ্গনে জড়ো হলে মুসলিম অমুসলিম অসংখ্য মানুষ।
জজ সাহেব দরবেশকে বললেন।
৴তুমি তার মাথায় মাটির পাতিল দিয়ে আঘাত করেছিলে?
দরবেশ নরম সুরে জবাব দিলেন।
৴জি জনাব,আমি জেনে শুনে তার তিনটি প্রশ্নের দিতে এ কাজটি আমি করেছি।
৴কিন্তু এ ঘটনায় আমরা শুধু তুমি আঘাত করেছো তাই দেখছি এ ঘটনার সাথে তার তিনটি প্রশ্নের উত্তর তুমি কই পেলে?
৴আছে জনাব অনুমতি দিলে আমি তার করা তিনটি প্রশ্নের উত্তর আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে চাই।
ধর্মগুরুও অবাক হয়ে বলল।
৴ঠিক আছে তুমি উত্তর দাও। আমাকে আঘাত করার সাথে তোমার উত্তর লুকিয়ে!! তুমি নিশ্চিৎ পাগল হয়ে গেছো।
তখন দরবেশ বলল হ্যা আমি পাগল তবে এক আল্লাহর পাগল।
ধর্মগুরু মুচকি হাসলেন।জজ জেরা করার অনুমতি দিলেন।
দরবেশ বললেন
৴তোমার প্রথম প্রশ্নের কথা মনে আছে?
মুসলমানরা কেন আল্লাহকে না দেখেই এবাদত করে তাই না?।
তোমার মাথায় যে আমি আঘাত করেছি তা কে বলল? প্রমাণ দিতে পারবে?
৴আমি ব্যথা পেয়েছি!
৴ব্যাথা কি তুমি দেখেছো?
৴না অনুভব করেছি
ঐতো তোমার এই কথার মধ্যেই তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর।আমার আল্লাহকে দেখা যায় অনুভব করা যায় যা তোমরা যখন কোন বস্তুকে পূজা করো তখন মনে মনে অনুভব করো কোন এক অদৃশ্য শক্তিকে।আমরা না দেখে শুধু অনুভব আর বিশ্বাস করে এক আল্লাহর এবাদত করি।
তখন ধর্মগুরু বলল
৴ঠিক আছে আমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর পেলাম।এবার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দাও।
৴তোমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো
আগুনের তৈরী শয়তান তাকে আবার আগুনে ফেললে কি বা আসে যায়।
৴তাহলে বলো তুমি কিসের তৈরী?
৴কেন! মাটির তৈরী।
তাহলে তোমাকে যেটা দিয়ে আঘাত করেছি সেটা কিসের তৈরী?
৴মাটির তৈরী ।উত্তর দিলেন ধর্মগুরু।
তাহলে এবার খুজে নাও তোমার করা প্রশ্নের উত্তর।মাটির পাতিল দ্বারা মাটির মানুষকে আঘাত করলে ব্যথা কেন পেলে রক্ত কেন ঝরলো?
৴ঠিক আছে এ প্রশ্নের উত্তরও পেলাম।এবার বলো শেষ প্রশ্নের উত্তর।
এখন যে প্রশ্নের উত্তর দিবো সেটা ছিলো তোমার করা দ্বিতীয় প্রশ্ন আর কিছুক্ষণ আগে যে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি সেটা ছিলো তোমার করা প্রশ্নের শেষ প্রশ্ন।বিচারের রায়ের সুবিধার্থে একটু ঘুরিয়ে নিয়েছি তাও তুমি বুঝনি তুমি বলে একটা ধর্মের ধর্মগুরু।ধর্ম নিয়ে কখনোই বাড়াবাড়ি করবে না কারন ধর্ম মানুষের তৈরী না ধর্ম স্বয়ং পৃথিবীর আকাশ পাতাল সৃস্টির স্রস্টার তৈরী।যে ধর্ম মানুষের তৈরী ওটা ধর্ম না ভন্ডামী ওখানে কোন ঐশ্বরিক শক্তি থাকে না যা একজণ প্রকৃত বিবেক বুদ্ধিমান মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে না।
যাই হোক তোমার শেষ প্রশ্নটা ছিলো মুসলমানদের কথা মতে দুনিয়ায় সব কিছুই বা সব ঘটনাই যদি আল্লাহর ইচ্ছাতে ঘটে তাহলে সেই সব ঘটনার জন্য মানুষ কেন দায়ী হয়? আল্লাহ কেন নয়?
তাইতো,তাহলে শুনুন
৴এই যে আজ আমি যে ঘটনাটা ঘটানোর জন্য এই আদালতের কাঠগড়ায় আসামী হয়ে দাড়িয়ে আছি- আমারতো এখানে থাকার কথা নয়! তোমার প্রশ্নমতে আমার আল্লাহ তোমার স্রস্টার থাকার কথা ছিলো তাই নয় কি?তাহলে তোমরা মানুষ আমাকে দোষী করলে কেন?
পৃথিবী,চন্দ্র সূর্য,বায়ুমন্ডল জল স্থলের অধিকারী যদি ভিন্ন ভিন্ন হতো তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ পরিচালনায় মনের পার্থক্য থাকতৌ।আমরা চন্দ্র সূর্যের চলাচলে এখনও ব্যতিক্রম দেখিনি।ঠিক একই নিয়মে চলছে।
আমার কথা
আমরা যে যা বলি না কেন নশ্বর এই পৃথিবী নয় নশ্বর হলাম আমরা মানুষ।যতদিন বেচে থাকবো ততদিনই পৃথিবী আমার। মৃত্যুর পর পৃথিবী হবে পর।ভিন্ন ভিন্ন ধর্মমতে পরকালে কথা বলা থাকলেও বেচে থাকতে এর কোন ভিত্তি খুজে পাবো না কিন্তু নিশ্চয় পরকাল বলে কিছু আছে৴ আর মানুষ এ বিষয়টা না দেখতে পাওয়াটাই হলো স্রস্টার অস্তিত্ব, স্রস্টার কৌশল।নতুবা মানুষ পৃথিবীর কত কিছুইতো জয় করে ফেলল একটা পর্যায়ে নিজেদের স্বরূপও বানিয়ে ফেলেছিলো অথচ মানুষের অজানা আনকন্ট্রোল ভাবে এখনো দেখি সূর্য ঠিক আগের মতই পূর্ব থেকে উদিত হয় পশ্চিমে অস্ত যায় নিয়মের কোন ব্যতিক্রম নেই,পূর্ণিমার চাদ তারা মানুষকে নিয়মে থেকে এখনো আনন্দ দেয়।মানুষের কন্ট্রোলের বাহিরে ভুমিকম্প,ঘুর্ণিঝর,জলোচ্ছাস,বর্জ্যপাত,রোদ বৃস্টি,খরা,বন্যা ইত্যাদি।
ধর্ম নিয়ে ধর্মস্রস্টাদের মাঝে বাড়াবাড়িটা না থাকলেও বাড়াবাড়িটা ক্ষণস্থায়ী মানুষদের মাঝে।পৃথিবীতে যত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে তার অধিকাংশ মানুষই ধর্মের কারনেই হয়েছে। অথচ সব ধর্মের কিতাবে লেখা আছে ধর্ম নিয়ে বারাবাড়ি করা নিষেধ।সব ধর্মেই শান্তির কথা বলে নিয়ম শৃংঙ্খলার কথা বলে।সব ধর্মই মানুষকে নীতির কথা বলে।
সুতরাং
ধার্মিক ভাবার সাথে নিজেকে মানুষ ও মানবিক ভাবো
দেখবে স্বর্গ তোমার আমার দুয়ারে।
৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴৴
৴তথ্য ও ছবি কালেক্টটেড অনলাইন কিছুটা সংযোযিত।
৭টি মন্তব্য
নাজমুল আহসান
অনেকদিন পর সোনেলাতে মমি ভাই!
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাই।নিয়মিত হবার ইচ্ছে কিন্তু সময় বড় বেরসিক।
নার্গিস রশিদ
চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন ধর্মের ব্যাপারটি যা বর্তমান সমাজের জন্য খুবই জরুরী । মানুষের বোঝা উচিৎ ধর্ম আসলে কি। শুভ কামনা ।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
ধার্মিক ভাবার সাথে নিজেকে মানুষ ও মানবিক ভাবো দারুন
হালিমা আক্তার
প্রকৃত ধার্মিক কখনোই অন্য ধর্মকে অসম্মান করে না। যারা করে তারা ধর্মের নামে ভন্ডামি করে। ধর্ম মানুষকে মানবিক হতে শিখায়। অমানবিকতার ধর্মে স্থান নেই। চমৎকার উপস্থাপন। শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
চমৎকার পোস্ট! অনেকদিন পর ব্লগে আপনার সু-চিন্তা বিষয়ক পোস্ট দেখে ভালো লাগলো। আসলে দাদা, ধর্ম মানুষের জীবন থাকতে মৃত্যুর পরের চিন্তায় বিভোর থাকা। কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্ন হলো, মৃত্যুর পর কেউ কি কখনো স্বর্গ বা নরক বা দোজখ বা জান্নাত থেকে এই দুনিয়ায় মেসেজ দিতে পেরেছে? আপনার কাছ থেকে কী উত্তর আসে তা আমার জানা নেই। তবে আমার ধারণা পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে এপর্যন্ত স্বর্গ-নরক, দোজখ-জান্নাত থেকে কেউ মেসেজ দিতে পারেনি। তারপরও আমরা বিশ্ববাসী সকল ধর্মাবলম্বী শুধু মৃত্যুর পরের চিন্তাই বিভোর হয়ে কাল্পনিক স্বর্গের আশায় থাকি। এর নামই হচ্ছে ধর্ম।