অনুপমার অব্যক্ত প্রেমের গল্প

সুরাইয়া পারভীন ২৭ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ১০:২৫:২৭অপরাহ্ন গল্প ৩৪ মন্তব্য

অনুপমার অব্যক্ত প্রেমের গল্প

কে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, কে? পিছনের অবয়ব দেখে মনে হচ্ছে ,সে আমার কত যুগের চেনা। যেনো কতো শত বছর ধরে জানি তাকে ।

কে, কে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে অমন পাশটি ফিরে একবারও ঘুরছে না, তাকে দেখবো কি করে? নাহ এ তো দেখছি ফিরছেই না।
যাই আমি না হয় সামনে গিয়ে দেখি, কেনো তাকে এতো চেনা ঠেকছে? কয়েক পা সামনে গিয়েই থমকে গেলাম
অনিন্দ্য ।

(অনিন্দ্য অনুপমার সহপাঠী। কয়েক বছর আগে তারা একই কলেজে পড়েছে। একে অন্যের দারুণ বন্ধু ছিলো। পুরো কলেজ ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াতো অনিন্দ্য অনু মিলে। আজ অনেকদিন পর সেই অনিন্দ্যকেই দেখছে। এই সেই অনিন্দ্য যাকে ঘিরে এক পৃথিবী স্বপ্ন ছিলো অনুপমার চোখে। )

হ্যাঁ, হ্যাঁ অনিন্দ্যই তো । এ আমার অনিন্দ্য।

বাহ্! আজো বেশ লাগছে ওকে লাল টিশার্টে ।
এতো গুলো বছর পরেও যেনো একটুও পরিবর্তন ঘটেনি কোথাও। কোথাও বিন্দুমাত্র পড়েনি বয়সের ছাপ। আজোও ততোটায় স্মার্ট আছে সে যেমন ছিলো কয়েক বছর আগে।

অনুপমা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনিন্দ্যকে ডাকবে বলে।

অনিন্দ্য,,,
হঠাৎ চোখে পড়লো অনিন্দ্যের পাশে দাঁড়িয়ে আছে কেউ।

অনিন্দ্যর পাশে মেয়েটি কে? বেশ সুন্দর দেখতে
ওহ,,,, বোধহয় অনিন্দ্যর বউ।

অনুপমা নিঃশব্দে চুপিসারে পিছু হাঁটতে যাবে এমন সময় নিজের নাম শুনে থমকে দাঁড়ালো। কেউ ডাকছে অনুপমাকে।

অনিন্দ্যঃ অনু মুখ ফিরিয়ে চললে কোথায়? এতোদিন পর দেখেও আমায় কথা না বলেই চলে যাচ্ছো!

অনুঃ নাহ মানে খেয়াল করিনি

অনিন্দ্যঃ হুম বুঝেছি,,,,,,

অনুঃ কি বুঝলে,,,?

অনিন্দ্যঃ তোমার চলে যাবার কারণ

অনুঃ ও তোমার বউ বুঝি! বউ ভাগ্য তোমার বেশ ভালো গো। কি সুন্দর বউ পেয়েছো? দেখে তো বেশ সুখিই মনে হচ্ছে। সুখের সংসার হয়েছে তোমার। ভালো আছো তুমি। ভালো লাগছে এটা দেখে।

অনিন্দ্যঃ অনু, অনুপমা তুমি তেমনই আছো। একটুও বদলাওনি। আজো সবকথা তুমিই বলে যাচ্ছো, আমাকে সুযোগই দিচ্ছো না কিছু বলার,,,

অনুঃ ওহ সরি!

অনিন্দ্যঃ তুমি কেমন আছো অনু! আর একা কেনো তোমার কর্তাটি কোথায়?

আমি আজীবন একা অনিন্দ্য। আমার যে আর কেউ নেই, যে ছিলো সে তো অন্যের হয়ে গেছে

অনিন্দ্যঃ হ্যালো ম্যাডাম কই হারালেন? বলছি উনি কই?

অনুঃ ছাড়ো ও সব,, তোমার কথা বলো

অনিন্দ্যঃ মানে কি?

অনুঃ বিয়ে থা হয়নি আমার৷ অথবা বলতে পারো আমিই করিনি?

অনিন্দ্যঃ কিন্তু কেনো অনু? তুমি তো বলতে তুমি কেউকে ভালোবাসতে, তবে বিয়ে করলে না কেনো?

অনুঃ ভালোবাসলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন তো নয় অনিন্দ্য। সে অন্য কারো সাথে ভালো আছে, খুব ভালো আছে।

অনিন্দ্যঃ তোমার মতো মেয়েকে কাঁদিয়ে কেউ কি করে ভালো থাকতে পারো অনু, কি করে এমন হলো?
ও বেটার ঠিকানাটা দাও আচ্ছা করে ঝেরে আসি।আমার বন্ধুকে কাঁদানো

তুমি যদি জানতে তোমার বন্ধুকে যে কাঁদিয়েছে সে আর কেউ নয় তুমি নিজেই
অনুঃ ছাড়ে দাও এসব ,, তোমার কথা বলো কয়টা বাচ্চার বাবা হয়েছো তুমি?

অনিন্দ্যঃ বিধাতা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে শুধু দেয়নি শুধু বাবা ডাক শোনার অধিকার। ও সুখ পাইনি আমি আর পাবোও না জীবনে।

(অনিন্দ্যের স্ত্রী নীরা গতবছর একটা দুর্ঘটনায় সে তার গর্ভে থাকা সাত মাসের সন্তান হারিয়েছে সেই সাথে পুনরায় মা হবার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। )

অনুঃ সরি অনিন্দ্য! না বুঝেই কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

অনিন্দ্যঃ না অনু কষ্ট পাইনি। এটাই আমার নিয়তি,আর তা মেনে নিয়েছি, না মেনে তো আর উপায় নেই।

অনুঃ তুমি ঠিকই বলেছো অনিন্দ্য, নিয়তি কে মানতেই হয়। চাইলেও আমরা বদলাতে পারিনা আমাদের ভাগ্য লিখন। একজীবনে সবাই সবটা পায় না অনিন্দ্য।

তুমিই সেই অনিন্দ্য, যাকে কখনো বলতে পারিনি আমি তোমাকে ভালোবাসি অনিন্দ্য। তুমিই আমার প্রথম প্রেম আর তুমিই আমার শেষ ভালোবাসা। তুমিও বুঝতে পারোনি আমার প্রেম। যখন ঠিক করলাম তোমায় সবটা জানাবো তখন তুমি অন্যের হয়ে গেছো

অনুঃ আসছি আমি ভালো থেকো অনিন্দ্য,,,,,,

(অনিন্দ্য চেয়ে চেয়ে অনুপমার চলে যাওয়া দেখলো। অনুপমার এমন চলে যাওয়াতে হঠাৎ অনিন্দ্যের বুকের বাম পাশে ঈষৎ ব্যথা অনুভূত হলো। কিন্তু কেনো এই ব্যথা পাওয়া? হয়তো অনুপমা এখনো একা জেনেই এই,,,)

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ