অনামিকা

সিকদার ২১ জানুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ০৩:৫৯:১৪অপরাহ্ন গল্প ১২ মন্তব্য

  আমি মাদ্রাসার দাওরা শেষ করে ফেকাহ্ ( আইন)  শাস্ত্রে ভর্তি হয়েছি। এরই মাঝে কয়েকটা মাদ্রাসা হতে চাকরির অফার এসেছে।  বেতন যথেষ্ঠ লোভনীয় তাছাড়া কয়েকটা মসজিদে ইমামতি করার জন্য অফার আছে। আমি অবশ্য আমার বাড়ির কাছাকাছি একটা বড় মসজিদে জুম্মার নামায পড়াই। তবে তা সাময়িক।  বলা আছে আমি চাইলেই যে কোন সময় খতিবের ( যারা শুধু জুম্মার নামায পড়ান তাদের খতিব বলে।) এই চাকরিটা ছেড়ে দেব। কারন আমি আমার দ্বীনি কাজের পাশাপাশি নিজে কিছু একটা করতে চাই। কিছু একটা বলতে, কোন ব্যাবসা করতে চাই। বাসা থেকে ব্যাবসা করার জন্য সাহায্য করবে।  
 বাবা নিজেই বলেছেন “ চাকরি না করে ব্যাবসা করতে কারন আলেমরা চাকরি করলে ভিতু হয়ে যায়,  তখন সমাজে সাহস করে সত্য কথা, হক কথা বলতে পারে না। তাছাড়া আল্লাহ রিজিকের ৯৯% রেখেছেন এই ব্যাবসার ভিতর।  তাই চাকরির চেয়ে ব্যাবসাই উত্তম।“
আমিও তাই ব্যাবসা করার কথা ভাবছি।  কিন্তু পূর্বে কোন ব্যাবসার অভিজ্ঞতা না থাকায় বুজতে পারছিনা কি ব্যাবসা করলে ভাল হবে।
বিভিন্নজনের সাথে পরামর্শ করেছি।  অনেকে বিভিন্ন ব্যাবসার কথা বলছে। তার মধ্যে আামার পছন্দ হয়েছে দুইটি ব্যাবসা। একটি হল বই খাতা ও ষ্টেশনারি আরেকটি হচ্ছে আতরের দোকান। এর দুইয়ের মাঝে আতরের দোকানটাই করার ইচ্ছা বেশি। কারন আতরের ব্যাবসাটা বর্তমানে সৌখিন ব্যাবসা ও পরিচ্ছন্ন। কিনতু সাধারন গ্রাহক কম, আর যারা আছেন তারা বেশির ভাগই মাদ্রাসার শিক্ষিত আলেম ও ছাত্র। এদের বেশির ভাগের কাছেই দামি আতর ক্রয় করার সক্ষমতা কম। এদের মাঝে যাদের দামি আতর কেনার সক্ষমতা আছে তারা বেশির ভাগই মধ্যেপ্রাচ্য আসা যাওয়ার সুবাধে সেখান হতে ক্রয় করে নিয়ে আসে। তবে এর বাহিরে কিছু ক্রেতা আছে যারা সৌখিন মুসুল্লি বছরের বিশেষ দিনগুলোতে নামায পড়ে। দুই ঈদের নামায, শবেবরাতের নামায, রমজানের নামায। এরা মাঝেমধ্যে নামায পড়ে বিধায় এরা খুব আয়োজনের সাথেই পড়ে। এরা বেশির ভাগই ধনাঢ্য শ্রেনির তাই দামি সিল্কের পোষাক ও দামি টুপির সাথে খুব ভাল মানের দামি আতরও ব্যাবহার করে। এই লেভেলের গ্রাহককে যদি  ভাল আতর দিয়ে যদি সন্তষ্ট করা যায়। তাহলে ওরা স্থায়ি গ্রাহক হয়ে যায়। এই রকম বেশ কয়েকজন গ্রাহক থাকলে আতর ব্যাবসার জন্য আর চিন্তা করতে হয় না। তখন প্রয়োজন শুধু নিত্য নতুন সুঘ্রানের আতর সংগ্রহ করা আর বিক্রি করা।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত আতরের ব্যাবসাই শুরু করলাম।  চকবাজারের এক মার্কেটের সম্মুখ দিকের একটা দোকান সস্তায় পেয়ে গেলাম। পূর্বে কসমেটিকের দোকান ছিল তাই নতুন করে ডেকোরেশন করতে হল না।
আমি দোকানের চুক্তিপত্র করেই দুবাই চলে গেলাম। সেখান থেকে ভাল মানের বেশ কিছু আতর আনলাম।  দুবাই থেকে আসার পথে ঢাকায় নেমে সেখান থেকেও বেশ কিছু আতর নিলাম। তারপর সেগুলো দোকানে এনে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে বসে গেলাম।
প্রথম দিনই আল্লাহর রহমতে বেশ ভাল বিক্রি হল। প্রথম দিন বিধায় বেশ কম লাভে আতর বিক্রি করলাম।
প্রথম দিন ভাল বিক্রি হওয়ায় পরের দিন তাড়াতাড়ি দোকান খুলে বসলাম। কিন্তু একি!  সকাল পেরিয়ে দুপুর পার হয়ে সন্ধ্যা একটা আতরও বিক্রি হল না। কয়েকজন মাত্র গ্রাহক এসেছিল, নিল না কিছু। এভাবে প্রায় কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেল।  এর মাঝে মাত্র চার পাচ বোতল আতর বিক্রি করেছি। জীবনে কখনও ব্যাবসা করিনি তাই হতাশায় একবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম।
বাবা আমার অবস্থা দেখে নানা ভাবে সাহস দিতে লাগলেন। তিনি বললেন “ বাবা ব্যাবসা করা আর মাছ ধরা একই কথা। মাছ ধরার সময় যেমন পুকুরে বড়শি ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। কখন বড়শির আদার খাবে মাছে,  তখন বড়শি ফাতনা পানি নিচের দিকে টান পড়লে, ছোঁ মেরে টান দিয়ে মাছকে তুলতে হয়, ঠিক তেমনি দোকানে বসে অপেক্ষা করতে হয় গ্রাহক কখন আসবে।
প্রথম মাসটা এভাবেই গেল।  সারা মাসে বিক্রি করেছি মাত্র কয়েকশ টাকার আতর। দোকান ভাড়া, বিদ্যুত বিল, বাবার কাছ থেকে এনে দিতে হল। বাবা আমাকে টাকা হাতে দিয়ে বললেন” হতাশ হবে না।  চেষ্টা করে যাও ইনশাল্লাহ কামিয়াবী হবে।”
বুজলাম এ কথার কথা নয় বাবার পক্ষ হতে আমার জন্য দোয়া। আর সন্তানের জন্য পিতার দোয়া বৃথা যায় না।  তাই আমি নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
দোকানে গ্রাহক না আসলেও আমি নিয়মিত বসে থাকি। অবসর সময় অর্থাৎ গ্রাহক না থাকলে নিজের ক্লাসের পড়া পড়ি অথবা কোরান তেলোয়াত করি।
এভাবেই আমার সময়গুলো যাচ্ছিল।
একদিন হঠাৎ এক তরুনী দোকানে প্রবেশ করল। বোরকা পড়া সাধারন মেয়েদের থেকে একটু লম্বা। ছিপছিপে দেহ গড়ন। বোরকার নেকাবের কারনে চোখ দুটি ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না। কারন হাতে পায়েও কালো মোজা পরিহিত ছিল। তরুনি আমার কাউন্টারের আসতেই আমি হাতের বইখানা রেখে উঠে দাড়ালাম। তরুনিীটি আমাকে সালাম দিল। আমি সালামের জবাব দিয়ে বললাম
“ কি লাগবে?  “
এই প্রশ্ন করার কারন। তরুনীটি পোষাকের কারনে বোঝা যাচ্ছেে সে যথেষ্ট দ্বীনদার মেয়ে। ইসলামে মেয়েদের সুগন্ধি ব্যাবহার করা হারাম।  বিবাহিতা নারী সুগন্ধি ব্যাবহার করতে পারে। তাও বাহিরে নয় শুধু মাত্র স্বামির সাথে একান্তে সময় কাটানো প্রাক্কালে। কিন্তু তরুনীকে দেখে মনে হচ্ছে সে অবিবাহিত।
তরুনী বলল “ আমি কিছু আতর কিনতে চাই। “
আমি শোকেস থেকে বিভিন্ন ধরনের আতর বের করে উনার সামনে রাখতেই সে বলল
“ এইসব না। ভাল আতর দেখান। “
এরপর সে বেশ কয়েকটা দামি আতরের নাম বলল।
আতরের নাম শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম! বুজতে পারলাম ইনি কিনতে আসেন নাই সময় কাটানোর জন্য এসেছেন। কারন তরুনী যেসব আতরের নাম বলেছে এগুলো সব কয়টার মুল্য দুই তিন হাজার টাকার উপরে। এই আতর গুলো দামি বিধায় এখন পর্যন্ত কেউ নেওয়াত দুরে থাক দেখারও চেষ্টা করে নাই। কিন্তু কি আর করা ব্যাবসা যখন করছি তখন এই ঘাটাঘাটি সহ্য করতে হবে।
আমি আতর গুলো নামিয়ে তরুনীর সামনে রাখলাম। তারপর বোতলের ঢাকনা খুলে দিয়ে তরুনীর হাতে পরা মোজার উপর লাগিয়ে দিচ্ছিলাম আর সে হাতটা তার নাকের কাছে নিয়ে সুঘ্রান নিতে লাগল। একটা একটা ঘ্রান নিয়ে দেখছিল আর দুই পাশে আলাদা করে রাখল। লক্ষ্য করলাম ফুলের ঘ্রান যুক্ত আতরগুলো একপাশে রাখল। তারপর বলল
“এগুলো দেন।”
আমি চরম অবাক হলে তা প্রকাশ করলাম না। আতর গুলো প্যাকেট করলাম।
“ কত দিতে হবে?”
তরুনী এত নিম্ন স্বরে কথা বলছিল যে,  আমার বুজতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই বললাম
“ কি বলেছেন বুজতে পারিনি।”
তরুনী আবার বলার পর বুজতে পারলাম।
আতরের দাম বললাম।
সে ব্যাগ খুলে টাকাগুলো দিল তারপর সালাম দিয়ে চলে গেল।
আমি এতক্ষন একবারও তরুনীর একমাত্র অনাবৃত চোখের দিকেও তাকাই নাই। কারন আমার ধর্মিয় শিক্ষা আমাকে সে ভাবেই গড়ে তুলেছে। কিন্তু তরুনী যাওয়ার সময় সালাম দেওয়ার পর সালামের জওয়াব দিতে গিয়ে অসাবধানতাবশত তরুনীর চোখে চোখ পড়ে গেল। পড়ে যাওয়া চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে গিয়ে বুজতে পারলাম কাজটা একজন যুবকের জন্য কতটা কঠিন।  হোক সে একজন আলেম। কিন্তু সেও ত একজন পুরুষ যার একটি প্রেমময় হৃদয় আছে।
ওটাই ছিল তরুনীর দিকে আমার প্রথম ও শেষ  তাকানো।
কারন তার কাজল কালো দুই চোখ আর জোড়া লাগানো মোটা কালো ভুরুর সৌন্দর্যে যে কোন পুরুষ দিক হারাতে বাধ্য।
সেদিন সে প্রায় বারো হাজার টাকার আতর নিয়েছিল যা ছিল আমার কল্পনার অতিত।
ধীরে ধীরে আমার দোকান জমে উঠল এখন গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হতে দশ হাজার টাকার  আতর বিক্রি হয়। তরুনীটি মাসে একবার আসে প্রতিবারই সে বার হাজার হতে পনের হাজার টাকার আতর ক্রয় করে। জানি না সে এত আতর কি করে।
তরুনীটি খুব কম কথা বলত।  প্রয়োজনের বাহিরে কথা তেমন বলেত না।  যদিও সে দোকানে আসলে প্রায় ঘন্টা পার করে দেয়।  নানা ধরনের আতর দেখে, ঘ্রান নেয়, কিসের আতর, কোথায় তৈরি  প্যাকেটে লেখা এসব দেখতে দেখতে সময়টা পার করে দেয়। আমি তখন অন্য গ্রাহক নিয়ে ব্যাস্ত থাকি।
আমার দোকানে এখন একজন কর্মচারী আছে। কিন্তু তরুনী আসলে সে আমার থেকেই ক্রয় করবে। যেদিন আমি থাকব না সেদিন সে আর আতর  না কিনে চলে যায়। যাওয়ার আগে কর্মচারীকে বলে যায় সে অমুক দিন আসবে আমি যেন থাকি।
এর মধ্যে তরুনীকে একবার কৌতুহলবশত প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছি  সে কোথায় থাকে বা কি করে? আমার মনে হল সে আমার কথা শুনে না শোনার ভান করে এড়িয়ে গেছে। বুজতে পারলাম সে তার সম্পর্কটা ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।  
 আমিও তাই আর কখনও আতর বিক্রয়ের বাহিরে আর কোন কথা বলতাম না। অস্বীকার করব না। নিজেকে এতটা সংযত রাখার পরও তরুনীর কাজল চোখ আর জোড়া লাগা ভুরুর সৌন্দর্য ভুলতে পারি নাই।
দোকানে ব্যাবসা ভাল হওয়ার সুবাদে বাবা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে লাগলেন। আমিও কয়েকটা মেয়ে দেখলাম।  মেয়েগুলো যথেষ্ট সুন্দরী ছিল। ওদের এত সৌন্দর্য থাকার পরও আমার পছন্দ হয় নাই। কেন যেন মনে হয় ওদের মাঝে কি যেন নাই!
একদিন  এই ব্যাপার নিয়ে দোকানে বসে ভাবছি। ঠিক সেই সময় তরুনী এল। ওকে আতর দেখাচ্ছি এই সময় মায়ের ফোন এল।আমি বেশ কিছু আতর ওর সামনে রেখে মায়ের সাথে কথা বলতে লাগলাম। মা বলছিল আজ মেয়ে দেখার কথা ছিল,  আমি যাব কিনা।
মাকে বললাম এখন আর কোন মেয়ে দেখবেন না। কারন যতই মেয়ে দেখান আমার পছন্দ হবে না। আমি রাতে বাসায় এসে আপনাদের জানাব আমি কেমন মেয়ে চাই।
এরপর ফোনটা কেটে দিলাম। তারপর তরুনীর কাছে আতর বিক্রি করায় মন দিলাম। আজকে খুব খুশি মনে আতর বিক্রি করলাম,  কারন সে দোকানে আসার সাথে সাথে বুজে গেলাম আমি কেমন মেয়ে বিয়ে করতে চাই। তাছাড়া আজ সে আতর নিয়েছে প্রচুর, প্রায় বিশ হাজার টাকার।

 রাতে মাকে জানালাম আমি কেমন মেয়ে বিয়ে করতে চাই। মা শুনে হায় হায় করে উঠল বলল” এমনি বিয়ের বাজারে পছন্দের মেয়ে পাওয়া দুষ্কর তার উপর যদি জোড়া লাগা ভুরুর মেয়ে চাস তাহলে তোর বুড়া হওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা দেখছি না।”
আমি বললাম “ ঠিক আছে আগে একটু দেখেন পাওয়া যায় কিনা।  না পেলে তখন না হয় যে কোন একজনকে বউ করে নিয়ে আসবেন।”
এরপর আমার মায়ের শুরু হল আমার কাংখিত মেয়ে খোজা। তেমন কয়েকটাই পাওয়া গেল। কিন্তু সমস্যা হল দ্বীনদার পরিবার পাওয়া।  আমার দ্বীনদার পরিবারে পাশ্চাত্য বা ভারতীয় সংস্কৃতির মেয়েকে বউ করে আনলে আমরাও কষ্ট পাব মেয়েটি পাবে। যে যেই পরিবেশে ছোট থেকে বড় হয়  সেই পরিবেশেই তার জন্য সাবলীল জীবন যাপন করা সহজ হয়। হঠাৎ করে অন্যরকম পরিবেশে যে কোন মানুষেরই মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। আর সেই কষ্টের প্রভাবটা সেই পরিবেশের অন্যান্যদের উপরও পড়ে।  এতে বেশির ভাগ সময় তৈরি হয় মনোমালিন্য। যার কারনে পরবর্তীতে অনেক সময় বিচ্ছেদের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখার পর যখন আমি যখন নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার চিন্তা করছি,  তখন একদিন এক ঘটক আমাদের বাসায় বাবার সাথে দেখা করল। সে বলল “ আপনাদের কাংখিত একজন মেয়ে আমার কাছে আছে আপনারা চাইলে দেখাতে পারি।”
আমার এক আত্মীয় তখন বাবার সাথে বসা ছিলেন তিনি বললেন “ আগে ছবি দেখান তারপর সরাসরি দেখব।”
ঘটক বলল “ আচ্ছা।  আমি আগামীকাল আপনাদের ছবি দেখাব।”

এরপর দিন ঘটক এল ছবি ছাড়া।
“ব্যাপার কি! আপনারত ছবি আনার কথা ছিল।”
“ উনারা ছবি দেন নাই।  বলেছেন ছেলেকে সরাসরি মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য। আর মেয়ে দেখতে মহিলা যত ইচ্ছা যেতে পারবে কিন্তু পুরুষের মধ্যে শুধু ছেলে একা মেয়ে দেখতে পারবে। “
বাবা বললেন “ ঘটক সাহেব আমরা আলেম। দ্বীনি নিয়ম আমরা জানি। মেয়েকে দেখতে শুধু ছেলে যাবে অন্য পুরুষ সাথে গেলেও তারা মেয়ে দেখবে না কারন যিনি বিবাহ করবেন তিনি ছাড়া অন্য পুরুষের ওই মেয়ে দেখা হারাম। এমনকি বিবাহের আগে ছেলের পিতারও ওই মেয়ে দেখা হারাম।”
যাই হোক ঘটক আমাদের মেয়ে দেখাল।  মেয়ে দেখে আমি, আমার মা ও অন্যান্য সকল মহিলাদেরই পছন্দ হয়েছে।
আমি আমার কাংখিত মেয়ে পেয়েছি। ভাল লাগছে।  
  তবে হৃদয়ের কোনে কোথায় যেন বিষাদের এক টুকরো মেঘ জমে আছে। সেখানে কি যেন না পাওয়া বেদনার ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। বার বার মনে কি যেন হারিয়ে ফেলছি। যদিও আমার কারও সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না।
বার বার মনে পড়ছে সেই তরুনীটিকে।তার জোড়া লাগা ভুরুর নিচের কাজল কালো দুই চোখ যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তার আমার দোকানে প্রবেশের মূহুর্ত, আতরের প্যাকেট ও বোতল নাড়াচাড়ার দৃশ্য। নিচু স্বরে অস্ফুষ্ট কথা বলা সব কিছু কেমন যেন আমাকে তখন বার বার আনমনা করে দিচ্ছিল।
মেয়ে দেখা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম তাই বেশ কয়দিন  দোকানে আাসা হয় নাই। বিয়ের প্রচার পত্র বিলি করার সময় দোকানে কিছুক্ষন বসে হিসাবপত্র দেখছিলাম, এমন সময় তরুনী প্রবেশ করল।  আমি হিসাব দেখা রেখে আতর দেখানো শুরু করলাম সে বেশ কয়টা খুব দামি আতর নিল।তারপর বলল “ আমাকে এবার কয়েকটা ভাল আতর দিন পুরুষদের জন্য।”
আমি অবাক হলেও মুখে তা প্রকাশ করলাম না
। কয়েকটা আতর বের করে তরুনি সামনে রাখলাম।  সেগুলোর মধ্যে দুই আতর নির্দিষ্ট করে দেখিয়ে বললাম “এই দুটি আতর আমার সবচেয়ে পছন্দের আতর।”
তরুনী হ্যা না কিছু না বলে আতরের প্যাকেট গুলো ভাল করে দেখলো। তারপর আমার বলা দুইটিসহ আরও একটি আতর নিল।

এরপর সে তার ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেওয়ার পর আমি বললাম “ যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলব?
“ বলুন”
“ আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে।  যদি অনুমতি দেন তাহলে দাওয়াত দিতে চাই।”
“ ঠিক আছে দিন।”
আমি আমার বিয়ের একটা প্রচার পত্র বের করে নাম জিগ্যেস করলাম। তরুনী খানিকক্ষন চিন্তা করে বলল “ অনামিকা “।
আমি “ অনামিকা” লিখে বিয়ের প্রচার পত্রটা উনার হাতে দিলাম আর বললাম “অবশ্য আসবেন “।
“ ইনশাআল্লাহ আসব”।

ওটাই ছিল সেই তরুনী গ্রাহকের আমার দোকানে শেষ আসা।

  আমাদের বাড়িটা শহরের একেবারে শেষ মাথায়।  বাড়ির পরেই কিছুটা সমতল ভুমি তারপর ছোট ছোট পাহাড়।  স্থানিয় ভাষায় টিলা বলে। আজ মার্কেট বন্ধ ছিল তাই সারাদিন ঘরে আছি। আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় তিনমাস।  আমরা পরস্পরকে পেয়ে আল্লাহর দরবারে প্রতিনিয়ত শুকরিয়া আদায় করি। আমি আর আমার স্ত্রী বাড়ির পিছনে দোতালার বারান্দায় বসে গল্প করছি।  সেই তরুনীর ঘটনাটা পুরাটা ওকে বললাম। ও সব শুনে বলল
“ সেই তরুনী আপনার বিয়েতে এসেছিল?
“ হয়ত এসেছিল।  তবে আমি দেখিনি।”
আমার স্ত্রী মিটিমিটি হাসছিল।
“তুমি হাসছ কেন?”
সে আমার দুই হাত ধরে তার কোলের উপর নিল। তারপর আমার দুই চোখে চোখ রেখে বেশ কিছু ক্ষন তাকিয়ে থাকল। আমি বললাম
“ তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?”
সে মাথা উপর নিচ করে বোঝাল ” হ্যাঁ “
“বল”
“ আমি সেই তরুনীকে চিনি। “
আমি চমকে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম
“ সত্যি বলছ? “
“ হ্যাঁ। “
“কে?  কে সে?  সে তোমার কি হয়? “
সে আমার হাত ধরে আমাকে বসিয়ে দিল।
“ বলছি।  আমার আর আপনার বিয়ে মুল ঘটক সেই।”
“ কিভাবে? “
“আপনি ওর সামনে ফোন রিসিভ করে আপনার মাকে বললেন রাতে বাসায় এসে আলাপ করবেন তখন সে জানতে পারল আপনি বিয়ে করার জন্য মেয়ে দেখছেন সে দিন সে চলে গেল। এর পরদিন সে আবার দোকানে এল একটা আতর পছন্দ হয় নাই তাই সেটা বদলে নিল। সে সময় আপনার  দোকানের কর্মচারীকে এমনি কথায় কথায় জিগ্গাসা করল আপনি কেমন মেয়ে চাচ্ছেন? কর্মচারী থেকে সব শুনে তরুনী নিজেই চমকে উঠল। কারন তরুনীর আর বুজতে বাকি থাকল কেন আপনি জোড়া ভুরু ওয়ালা মেয়ে খুজছেন। সত্যি বলতে কি আপনার দ্বীনদারি আর সচ্চরিত্র দেখে তরুনী নিজেও আপনার প্রতি মুগ্ধতায় ডুবে ছিল। সে আপনাকে না হলেও আপনার মত একজন পুরুষকে স্বামি হিসাবে পাওয়ার আকাংখা বুক লালন করছিল। আর এটা সত্যি প্রত্যেক নারী স্বামী হিসাবে এমন সচ্চরিত্র ও ব্যাক্তিত্ববান পুরুষই চায়।
সে আপনার কর্মচারী থেকে আপনার নাম ঠিকানা নিয়ে আমার মাকে দিল  আম্মু ভিতরে ভিতরে আপনার ব্যাপারে সব খোঁজ খবর নিয়ে তারপর আমার পিতাকে জানালেন। এরপর আমার পিতা তার দীর্ঘদিনের ঘটককে আপনাদের বাসায় পাঠিয়ে আমার খবর দিলেন। এরপরের ঘটনাত আপনি সবই জানেন।
আমি হতবাক হয়ে আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমি আমার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। একি স্বপ্ন না বাস্তব!  কিছুই যেন বুঝতে পারছি না। বেশ খানিকক্ষন পর বললাম
“সেই তরুনী তোমার কে হয়? “
বসুন আমি একটু ভিতর হতে আসি তারপর সেই তরুনীর সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেব।”
এই বলে সে উঠে গেল।কিছুক্ষন পর ফিরে এল আমার দোকানের একটা প্যাকেট নিয়ে। প্যাকেটটা খুলে দুইটি আতরের বোতল বের করল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম এগুলো সেই আতর যা  আমার পছন্দে তরুনী শেষবার ক্রয় করেছিল।
“ এগুলোত সেই আতর যা আমি শেষবার সেই তরুণীর কাছে বিক্রয় করেছিলাম।  এগুলো তোমার কাছে কি করে এল। সত্যি করে বলত তরুনী তোমার কি হয়? “
“ সত্যি করে বলছি তরুনী এখন আমার স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী। “
তু-----মি………….সেই…….

 

(সম্পূর্ন কাল্পনিক)
                              সমাপ্ত

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ