ভাবনারা আজ হারিয়ে গেছে,মনে নেই জোয়ার আগের মতন।সময়ের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে এক একটি ভালবাসার আশাঁ।কোন কিছুই এখন মমির আর ভাল লাগে না।বিরহের আগুনে পুড়তে পুড়তে কাঠের আঙ্গার হয়ে গেল খনিজ পদার্থ কয়লা।

সেই রাত থেকেই মমি ভাবছেন কাল ভোরে হয়তো কিছু হতে যাবে। এখনও বাকী শেষ দৃশ্যটির,মমির দ্বিতৃয় লাভারের সাথে এক বছরে হিসাব নিকাশের খেলা।শীতের কুয়াশা ঘেরা পরিবেশ,সকাল সাতটা তবুও যেন কুয়াশারঁ ভাজঁ খুলেনি একটু দূরে মানুষগুলোকে চিনতে বড় কষ্ট হয়।এলাকার স্হানীয় মেয়েরা দল বেধেঁ এই সময় কলেজে যাতায়াত করে।ঘূম ঘূম দেহে ভাব নিয়ে মমি তার আর এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে মিলির কলেজ যাওয়ার সেই নিদিষ্ট সড়কে পৌছে,অপেক্ষায় হুড় পরীর আগমন।পকেট থেকে একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে আর শেষ না হতেই টেনশনে আরেকটা ধরায় এক সময় কুয়াশাঁ মাঝে আবছায় ভেসে উঠে মিলির প্রিয় স্নিগ্ধ মূখ খানি সাথে বেশ কয়েকজন বান্ধবী সহ আসছে মেইন রোডের দিকে।মমি মিলির সামনে গিয়ে দাড়ায়,মিলি যেন একেবারে অপ্রস্তুত ছিল।এতো সকালে মমিকে দেখে মিলি একটু অবাক হয়।মমি মিলিকে কোন কথা বলার সুযোগ দেয়নি তার আগেই মমি মিলিকে প্রশ্ন করে।মমির হাতে ছিল মিলির কলেজে উঠার পর সুন্দর একটি ছবি যা একদিন পরম যত্নে মিলি মমিকে ভালবাসার দিবসের গিফ্টের সাথে দিয়েছিল।মমি ছবিটা হাতে নিয়ে মিলির সামনে দাড়াতে মিলি সহ তার পুরো বান্ধবীর দলটি একবার রোডের ডান পাশে আর একবার রোডের বাম পাশে কেবল দাড়িয়া বান্ধার মতন এ দিক ওদিক ছুটা ছুটি করছে।মিলি কোথাও স্হির হচ্ছে যে তার সাথে মমি কথা বলবে।মমির মনে হঠাৎ রাগ এসে যায় থাবা দিয়ে মিলির বাম হাতটি ধরে তাকে স্হির দাড় করাতে বাধ্য করে।বান্ধবীরা সব সামনের দিকে এগুতে থাকে।                                                                                                      

-কি ব্যাপার তোমার দে মাগ কি বেড়ে গেলো নাকি কলেজে উঠে….সম্পর্ক নাই রাখলে কথা বলতে দোষ কিসের।                             

-আপনি কি মাস্তান?এমন পাগলামী কেনো করছেন?                                                                                                      

-সব কেনোর উত্তরতো জানা নেই,তবে আজই সমাপ্তি হবে এই অপেক্ষার।এই ছবিটা চিনতে পেরেছো তুমি দিয়েছিলে আমি বলেছিলাম কোন বিশ্বাসে তুমি তোমার ছবি গিফ্ট করলে আমি যদি কিছু ভেজালঁ করি?সে দিন তুমি বড় সাহস করে বলেছিলে,মেয়েরা প্রেমে পড়ে বুঝে শুনে,তোমার প্রতি সেই বিশ্বাস আমার আছে।......আজ কোথায় গেলো তোমার বিশ্বাসের খুটিঁ নাকি অন্য কেউ দখল করে নিয়েছে।                                        

মিলি যেন মমির এ সব কথা শুনতে অপ্রস্তুত সে কেবল ছটফট করে রোডের এপাশ ওপাশ ছুটাছুটি করছে।মমি বিরক্ত হয় মিলিকে আবার হাত ধরে স্হির দাড়াতে বাধ্য করে করে।অবশেষে মিলির ছবিটা মিলির সুন্দর চেহারার উপর ছুড়ে মারে।ছবিটা ছিটকে গিয়ে রাস্তার মাঝ বরাবর পড়ে একেবারে স্পষ্ট বুঝা যায় সুন্দর দেহের কুৎসিত কালো হৃদয়ের একটি মেয়ের ছবি।মিলি ছবিটা খেয়াল না করে হাটার মুহুর্তে ছবিটার দিকে চোখঁ যায়।কাছে গিয়ে ছবিটা হাতে নেয় তখন মমির কণ্ঠে বেরিয়ে আসে ভালবাসার রূঢতম শব্দ।

                                                        

-ছবিটা তোমার হাতে দিতে পারতাম কিন্তু ছুড়ে মারলাম কেনো জানো?তোমার মত কুৎসিত মনের এমন সুন্দর মেয়ে রাস্তা খাটেই পাওয়া যায় বলে।যাও চলে যাও আর কখনও কোন ছেলেকে এভাবে ধোকা দিওনা।

মিলি চলে যায় ততক্ষনে বাস এসে থেমে থাকে কিছুক্ষণ হলো,মিলি বাসে উঠে চলে যায়।

  মমির দু'চোখে আজ সাত সকালেই জলের বন্যা।হায়রে বিধাতা তুমি মেয়ে মানুষদের কোন মাটি দিয়ে তৈরী করো বেলে মাটি নাকি আঠাল মাটি।অবশ্যই আঠাল মাটিতে নইলেএমন শক্ত হয় কি করে,কি করে পারে মানুষকে ধোকা দিতে।মমি মেয়েদের মন বুঝতে আর বাকী রইলনা একটার পর একটা আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয় তার হৃদয়।প্রথম ছ্যাকা ঢাকতে,ভূলে থাকতে শুরু করে প্রেমের বাজারের  ইচ্ছে মত সাথী খুজেঁ নেয়া কিন্তু এখানেও ভেজালঁ শান্তি নেই প্রেমিকাদের ভালবাসায়।সে দিন মমি আর বাসায় ফিরেনি।রাত যখন এগারোটা প্রায় তখন নিরবে নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করে।বাবা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে মা চিন্তিত নয় টেবিলে ভাত নিয়ে বসে বসে ঝিমুচ্ছে কখন যে ছেলে আসে সেই অপেক্ষায়।তার অপেক্ষাকৃত দুপুরের খাবারও বৃথা যায়।মমি ঘরের ভিতরে ঢুকে সোজাঁ তার শোবার রুমে গিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে।অপেক্ষা রত মায়ের ডাক যেন শুনতে পায়নি।মা নাছোড় বান্দা সন্তানকে না খায়িয়ে সে খাবে কি করে তার উপর সারা বেলা পর ফেরত ছেলে...খেলো কি খেলো না।মমির মায়ের সাথে রাত দশটা পর্যন্ত অনন্যা নামের মমির সেই মেয়েটি ছিল।মা তার কাছে গিয়ে ডাকা ডাকি করেও তেমন কোন সাড়া পায়নি বলে মাও রাতের খাবার না খেয়ে বেড রুমে চলে যায়।বাবার নাক ডেকে ঘুমাবার এমন ভাব দেখে মা ছেন ছেন করে....আমার হয়েছে যত জালা ছেলে কি করল না করল তিনি কোন খোজঁই রাখেন না,কেমন নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন।

খুব সকালেই অনন্যা মমির অগোছালো রুমটাকে গোছাতে রুমে ঢুকেছে।মমি বেদম ঘুমে,ঘুমের সময় অনেকের লুঙ্গি আবার নিজের অজান্তে কোথায় যেন হারিয়ে যায় তাই মমি লুঙ্গিটাকে ঠিক মত গিট্টু দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল তবুও লুঙ্গিটা মমির হাটুর উপরে উঠে আছে তাই দেখে অনন্যা মিটমিট করে হাসছে আর এলোমেলো কাপড়গুলো গোছাচ্ছে।এই সময় মা কি যেন বক বক করতে করতে মমির রুমে ঢুকে।মা এবং অনন্যার বক বকানিতে মমির ঘুম একটু হালকা হয়ে যায় সে কেবল ঘুমের ভান ধরে বিছানায় উপুর হয়ে পড়ে আছে।

-দেখো দি ছেলের কান্ড কোথায় একটু গুছিয়ে শোবে,....না যে ভাবে মন চায় সে ভাবেই শোবে।ঘরে কোন মেহমান এলে কি বলবে,ধামড়া ছেলে এতো বেলা করে ঘুমায়!...শোন অনন্যা তুই কাপড় গুলো গুছিয়ে চলে আসার সময় মমিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলিস কিন্তু....

মা প্যাচাল পারতে পারতে অন্য রুমে চলে যান।মমি মায়ের প্যাচালে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে একটি মেয়ে তার অগোছালো রুম গোছাচ্ছে.....।।

-তুমি!তুমি এখানে কি করছ?কে বল্ল আমার রুমে আসতে।                                                                                                                                                                       -মা,,,                                                                                                                                                                                                                                                               -মা!মা...তো চলে গেছে।                                                                                                                                                                                                                         -আমাকে রেখে গেছে,আপনাকে ডেকে তুলতে।

চলবে....

অতৃপ্ত জীবন....ভালবাসা০৯

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ