অতৃপ্ত জীবন…ভালবাসা০৯

মনির হোসেন মমি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, রবিবার, ১০:৫০:০০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, গল্প ১৭ মন্তব্য

অতৃপ্ত জীবন....ভালবাসা০

রোমিওরা আড্ডা জমায় কলেজ প্রাঙ্গনে

জুলিয়েটরা প্রেমে পড়ে স্মার্ট বয় দেখে

ছয় ফিটের দেহ ফর্সা তার স্কিন

মাথার চুল হিরো যেসি বদনাম নেই যার জীবনে।

রোমিও,কেউ হয় প্রকাশ্যে কেউবা চুপিসারে

সবার জীবনে প্রেম আসে,কারো নজরে কারো বা চুপিসারে,

কেউ পায় কেউ বা হারায় নিজ কর্মগুণে

ভাগ্যের জোরে হয় যে মিলন যা বিধাতার লিখন।

 সারা নারায়ণগঞ্জ শহরে একমাত্র মহিলা কলেজ।ব্যাঙ্গের ছাতার ন্যায় তখনও পাড়ায় মহল্লায় এত কলেজ গড়ে উঠেনি।ঠিক বেলা একটা ছুটি হওয়ার আগেই মমি এবং তার নারায়ণগঞ্জের বন্ধু পিন্টু এবং সিরাজকে নিয়ে চাষাড়া চৌরাস্তায় অপেক্ষা করছে।ধুমছে তিন বন্ধু সিগারেট টানছে মমি এ দিক ঐ দিক লক্ষ্য রাখছে মেয়েটি আসছে কি না।কিছুক্ষনের মধ্যেই মমি,মিলি এবং ঝিলিকের আগমনে নিশ্চিত হয়ে বন্ধুদের হাতের ইশারায় মিলি এবং ঝিলিককে চিহিৃত করে দেখানোর চেষ্টা করছে।এর মধ্যে ওরা কাছাকাছি এসে যায়।চাষাড়ায় এসে মিলি,ঝিলিক রিক্সায় উঠতে রিক্সাওয়ালাদের সাথে কথা বলে। একটি রিক্সায় মিলি উঠে,রিক্সার অপর সাইটে হঠাৎ মমি উঠে পড়ে মিলি হতভম্ভঃ কিংকর্তব্যবিমূর, ঝিলিক তা দেখে হাটতে থাকে মিলি তৎক্ষনাত রিক্সা থেকে নেমে ঝিলিকের সাথে যোগ দেয়।পিছু নেয় মমি এবং তার বন্ধুরা।কালি বাজার সোনারু পট্ট্রি দিয়ে হাটছে ওরা, উদ্দ্যেশ্য কালি বাজার বাস স্টপস।মমি এবং মমির বন্ধুরা দ্রুত হেটে ওদের পিছনে রেখে হাটতে থাকে সামনের দিকে।তিনজনের হাতেই জ্বলন্ত সিগারেট।সিগারেটের ধোয়া মিলি ঝিলিকের নাকের ডগায় যেতেই হাত দিয়ে তা সরানোর বৃথা চেষ্টা করে কিছুক্ষন যাওয়ার পর হঠাৎ পিন্টু থেমে ঝিলিক,মিলির পথের গতি রোধ করে।

-এই...তোমাদের মাঝে ঝিলিক কে?

কেউ কোন উত্তর দেয় না।নিরবে দাড়িয়ে পড়ে।আবারও পিন্টু প্রশ্ন ছুড়ে।

-বলো না কে ঝিলিক?তুমি?

উত্তর আসে মিলির কাছ থেকে।

-না,

-বুঝেছি...ও তুমি তাহলে নিশ্চয়ই।...শোন তোমার আর মমির মাঝে যে দন্দ চলছে তা শেষ করে দিবে আজই নতুবা কলেজে তোমার সমস্যা হবে।

কথাগুলো ঝিলিককে বলে।ঝিলিক ভয় পেয়ে পাশের হোটেলে ঢুকে এক গ্লাস পানি পান করে আবার হাটা শুরু করে মমি মমির বন্ধুরা হোটেলেই বসে থাকে।মমির মাথা গরম কোন কিছুই হলো না।এলো সমাধান করতে বন্ধুদের নিয়ে কিন্তু ঘটনায় প্যাচ আরো লেগে গেল মনে হচ্ছে।

-তোদের জন্য মনে হয় প্যাচ আরো লেগে গেল।

-তো তো তোর কি কি করতে ই ই ইচ্ছে ছিল।সিরাজ তোতলামী করে কিছু উপদেশ দেয়।

শোন যা হ হ হবার তা হবে।এ এ মন মেয়ে অনেক অঅনেক আছে....শু ওওধু চামড়া সুন্দর অ অলেই মন সু সু সুন্দর হয়না।

সিরাজকে থামিয়ে পিন্টু আরো কিছু উপদেশ ছুড়ে এ দিকে বিরহের যন্ত্রনায় মমির কলিজায় পানি নাই।মনে হয় মমির দ্বিতীয় বিরহের সূত্রপাত শুরু।

মমি বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাসে উঠে পাঠানতলী নামে আর একটি ডেটিংয়ে।বহু দিন আগ হতে একটু হালকা হালকা রোমান্টিকতা ছিল।নাম তার রাণী।গায়ের রং একটু ময়লা হলেও ফেইস কাটিং ছিল আকর্ষনীয়।তার বড় ভাই এবং মমির সাথে ব্ন্ধুত্ত্বের খাতিরে ও বাসায় আসা যাওয়া ছিল। সেই সূত্র ধরেই একদিন রাণী তার ভাল লাগার ইচ্ছে প্রকাশ করে,মমি তেমন একটা পাত্তা দেয়নি।আজ ভালবাসায় যখন খড়া চলছে তখন তৃঞ্চার্থ খড়া প্রেম মনকে স্রোতে ভাসাতে মনে একটু শান্তি আনতে মমি বন্ধুর উছিলায় প্রক্ষান্তরে রাণীকে দেখতেই তার বন্ধুর বাসায় যাওয়া।রেল লাইনের পাশে বড়ীটি গাছগাছালিতে ভরপুর যেন প্রকৃতির সব সবুজ রং এখানেই ঢেলে দিয়েছে।চৈত্রের গরমে প্রশান্তি আনে সবুজের ছায়া আর হিম শীতলক্ষ্যার বিশুদ্ধ বাতাসে মমির তৃঞ্চার্থ মন শীতল হয়ে যায়।সেই বাতাসে কিছুক্ষন বাড়ীর বাহিরে মুক্ত বাতাসে বন্ধুকে খোজঁ করে।অপেক্ষারত মমি।ভিতর হতে কোন প্রতিত্তোর পায় না।ঠিক মমির কাছাকাছি স্নান ঘর থেকে সদ্য স্নান করা একটি ষষ্টাদর্শী কন্যা বের হয়ে মমি দিকে তাকাতে মেয়েটি লজ্জায় উড়নায় মুখ ঢাকে।

-ভাইয়াতো বাসায় নেই।রাণীর উত্তর।

-ও.....। তুমি ভাল আছো?

-হ্যা....আপনি?

-তৃঞ্চার্থ....এক গ্লাস পানি হবে।

-হ্যা অবশ্যই, ভিতরে আসুন,মা ভিতরে আছে।

রাণী ভেজাঁ কাপড়ে প্রস্হান নেয়।মেয়েরা যে যাই বলুক যত সাজ সাজুক স্নান শেষে ভেজাঁ চুলগুলোকে গামছায় বেধে রেখে অন্য সব কর্মে ব্যাস্ত তখন সেই মুহুর্তটা মেয়েদের সৌন্দর্য্যের সেরা মুহুর্ত।জগতের সমস্তরূপ যেন সদ্য স্নান ফেরা মেয়েটির রূপে উপচে পড়ে।বন্ধুর মায়ের সাথে আগেও কয়েকবার কথা হয়েছিল কিংবা মমির এলাকায় মাঝে মাঝে কথা হত।অনেক কথাই হল মমির সাথে রাণীর মায়ের।ঐ দিকে রাণী ঘরে চায়ের আপ্যায়ন করে পাশেই পর্দায় থেকে কথাগুলো শুনছে।মমির উদ্দ্যেশ্য ছিল বন্ধুটির সাথে দেখা করে আগামী মাসে এলাকা ভিত্তিক ফুটবল খেলায় যাতে সে অংশগ্রহন করে সে ব্যাপারে কথা বলতেই মুলতঃ এখানে আসা।রাণীর মা কথা শেষ করে চলে যাবার পর রাণী মমির কাছে বসে।

-কি মনে করে এলেন?

-মানে কি?

-না,মানে এত বললাম সে দিন এলেন না,আজ নিজ ইচ্ছায় এলেন তাই একটু জানতে ইচ্ছে করছে।

-এসেছিলাম আসলামের সাথে কথা বলতে,আগামী মাসে খেলা ও.. সুযোগ পাবে কি না তাই।

মমি মিথ্যে বলতে পারে না।এসেছিল মুলতঃ রাণীকে দেখতেই শুষ্ক ভালবাসার মরুভুমিতে জলের সন্ধানে কিন্তু মমি এখানে এতটাই দূরে ছিল যে তা এখন কাছে আসার আহবান করতে মন তার দ্বিধায় থাকে।

-সত্যি বলছেন?

-তোমার কি ধারনা?

-আমারতো মনে হয় আপনি আমাকেই দেখতে এসেছেন।

মমি নিশ্চুপ স্তব্ধ একটু ভালবাসার জন্য,একটু মনে শান্তি পেতে ঘুরে ফিরেছে দেশ বিদেশের অলি গলিতে কোথাও তার জন্য তার বিধাতা ভালবাসার একটু শীতলের পরিবেশ রাখেনি।যেখানেই হাত পেতেছেন সেখানেই পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছেন অনবরত ফিনিশিং টাইমে সে হয় নিঃস্ব।এখানেও এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হচ্ছে না।

-তাও হবে হয়তো,....।

রাণী স্নান শেষে নীল শাড়ী পড়েছে আজ, বেশ সুন্দর লাগছে তাকে যেন নীল আকাশে উড়ে বেড়ানো নীল পরি।মুখে স্নু মাখেনি তবুও যেন মনে হচ্ছে বেশ মসৃণ তার স্কিন শুধু কপালে এটেছে একটি লাল টিপ যেন নীল আকাশেঁ গোধূলী লগ্নের ডুবন্ত বেলা।বেলা শেষে অন্ধকার রাতে জোৎস্নার আলো জ্বলে উঠবে কি না তা নিশ্চিত না হলেও এই মুহুর্তে মমির মনের আকাশেঁ জ্বলছে কুড়ের ঘরে চান্দেরঁ বাত্তি।

-তোমার লেখা পড়ার খবর কি?

-ভাল,তবে ক্লাশে তেমন যাওয়া হয়না।

-কেনো?

-এমনি,ভাল লাগেনা লেখা পড়া।

-তাহলে,আজ উঠি, আসলাম মনে হয় এখন আসবে না,দেরী হবে..।

তার পর রাণীর দিকে চেয়ে থাকে অনেকক্ষন।ভাবনায় ধরা দেয় রোমান্টিকতার অতীত ভবিষৎ।

-কি দেখছেন নতুন করে?

-না,কিছু না।

-কিছু বলবেন?

-হ্যা...না আ থাক।পরে বলব।

-সময় যদি বিট্ট্রে করে?

-সময়তো বিট্ট্রে করছেই দেখি আরো কত বিট্ট্রে করতে পারে।

-আপনার অনেক কথার অর্থই আমার কাছে কেমন যেন অচেনা মনে হয়।

-ঐ পর্যন্তই থাক নতুবা কষ্ট এসে তোমার মনে বাসা বাধতে পারে।

-কষ্ট ছাড়া কেউ কোন দিন সহজেই কি কিছু পেয়েছে?পায়নি,কষ্টের মাঝে যদি সূখ থাকে সেটা কে না চাইবে,বলেন?

-কিছু কষ্ট আছে জীবন সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যায় আর কিছু কষ্ট শুধুই কাদায়ঁ।

-ভাগ্যবানরাই কেবল কাদতেঁ পারে অভাগারা কাদতেওঁ জানেনা হাসতেও পারে না।কান্নার পর মনে যে আত্ত্বতৃপ্তি তা বোধ করি কম জনেই বোঝে।

-বেশ,তুমিতো দেখছি অনেক কথাই শিখে ফেলেছ,কি করে শিখলে এত কথা?

-আগে বুঝেনি এখন মনে হয় একটু একটু বড় হচ্ছি,তাই না?

দু'জনের ফেইসে মৃদু হাসির ঝলক।মমি উঠে দাড়ায়।রাণীর মাকে খোজঁ করে জানতে পারে সে পাশের বাসায় গিয়াছে।

-আবার দেখা হবে?

-হবে হয়তো,

মমি রাণীকে শেষে শুধু একটি কথাই  বলে ...."আজ তোমাকে খুব সুন্দর লেগেছে" বিদায় নিয়ে চলে আসে।ততক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।পুলে এসে পার্টি অফিসে ঢুকে আজ ছাত্রদলের থানা পর্যায়ের আহবায়ক কমিটি গঠন করবে।প্রচুর কর্মী এসেছে,এসেছে কামাল গাজী রবি ভাই এবং জেলা ছাত্রদলের সভাপতি।প্রায় দু'তিন ঘন্টা আলোচনা পর্যালোচনা করে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়।সেখানে মমিকে সদস্য করা হয়।পার্টি মিটিং শেষে মমি বাসায় বাসায় ফিরে রাত এগারোটায়।মমির মা বেশ কয়দিন যাবৎ মমিকে নিয়ে কি যেন চিনতায় থাকে।মমি বাসায় ঢুকে খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় শুয়ে পড়ে কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলে না।

সকালের সূর্য্যটার আলো রস্মি আজ মেঘে মেঘে ঢাকা।অনন্যাটা আজ যেন একটু বেপারোয়া একটু উৎসাহি কলপাড়ে মমির সাথে কথা বলছে অনেকক্ষন যাবৎ যেন কথাই শেষ হয়না।তার মায়ের শাষনের ভয় যেন দূর দেশের প্রবাসী।

-তোমার মিষ্টি কই,পাস করলে মিষ্টি খাওয়াবে না?

-হ্যা,খাবেন তবে তার আগে আপনার মিষ্টি খাওয়াবেন না।

-আমার মিষ্টি!আমার আবার কি হলো যে মিষ্টি খাওয়াতে হবে?

-কেনো,গতকাল বিকেলে ঐ পাড়ায় মেয়ে দেখতে গেছিল দু লা ভাই আর খালুজান,আপনি কিছু জানেন না?

-নাতো!কার জন্য?

-নে এবার হয়েছে...আপনাদের আর কেউ কি বিয়ে করার বাকী আছে ?

-তাইতো!যাস সালা এবার পরিবারও এসে পড়েছে আমার বিরহ ঢাকবার...মমির এই কথাগুলো বুঝতে পারেনি অনন্যা।

চলবে....

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ