অতৃপ্ত জীবন…ভালবাসা০৮

মনির হোসেন মমি ২৬ জানুয়ারি ২০১৪, রবিবার, ০৪:৪০:০৪পূর্বাহ্ন বিবিধ ১৮ মন্তব্য

 অতৃপ্ত জীবন...ভালবাসা০৭

মনে লেগেছে তুলির আচড়ঁ

একেছিঁ তোমায়, মায়াবী হরিনি চোখের ভাষা,

বুঝেছি ,ধরা দিল এত দিনে বসন্তের কোকিল,

ডাকবে এবার প্রান খুলে কুহু কুহু সূরে।

জীবনের শুরুতে তুমি,মাঝেও তুমি হয়তো

শেষ বেলাও তোমার ছায়া মনে দিবে,

উষ্ণতায় শীতলের আর্বিভাব,

কামনার কাম তৃষ্ণায় করিবে মাতাল  মন।

ভালবাসায় নেই কোন চাওয়ার অধিকার

ভালবাসলে হবে তা একাকার

তোমার মনের দু-পৃষ্ঠে দৃশ্যত হবে আমার ছবি

হারিয়েও পাবে ফিরে তোমার এ কবি.....

 অকালে বিউটির ভালবাসা বিয়োগের পর মিলি-অনন্যা এবং বন্দরের রাখী যেন এক সুত্রে গাথা ।কিছু কিছু বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে "আগে আসলে আগে পাবেন"মমির কাছে প্রেম বা বালবাসার সজ্ঞা এখন ঐ রকমই মনে হয়।তার হাতে এখন ইসকার তিনটি টাক্কাই বিদ্যমান।তিনটি টাক্কার মাঝে প্রয়োজনে আসবে কোন টাক্কা তা যেন মমি সময়ের কাছে ছেড়ে দেয়।আজ সন্ধ্যে হতেই মমি বাসায় টুকটাক আনমনে মন যা চায় তা পেইন্ট করছে আর মন মতন না হওয়ায় তা ডিলিট করছে।কিছুক্ষন পর তার পরিচিত এক মেয়ে এসে একটি চিড়কুট দিয়ে চলে যায়...চিড়কুটটিতে লিখা ছিল একটি ছোট্ট রোমান্টিক কবিতার দুটো লাইন আর কিছু অসম্পূর্ণ বাক্য...বোঝায়ই যায় অত্যান্ত লজ্জাশীলতা তার হৃদয়ে ভর করেছিল।সে আর কেউ নয় আপনাদের পূর্বে পর্বের আংশিক পরিচিত একটি মুখ অনন্যা।বয়স তেমন একটা হবে না ১৫ কি ষোল।মমির প্রথম প্রেমের সমাধিতে তার বয়স ছিল ১৩ কি১৪। সে এখন দেখতে, অনেকটা ষোল আঠারো।পাড়া প্রতিবেশী হিসাবে মমিকে সে ভাইয়া বলে প্রায় সময় চুপ হয়ে যেন আর কিছুই বলতনা সে দিনও ঘটল একই ঘটনা।

-ভাইয়া..

-কি কিছু বলবি।

-না

-না মানে! কিছু একটা যে বলতে এসেছিস তা বুঝতে পেরেছি....ঠিক মত পড়া লেখা করো সব ঠিক হয়ে যাবে..ঠিক আছে?।

মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।অনন্যা যেন খুশিতে আটখানা সে দৌড়ে মমির ঘর হতে বের হয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে টেপ রের্কডারে জোড়ে সাউন্ড দিয়ে গানের অঙ্গ ভঙ্গি করে এক বান্ধবীর সাথে।অনন্যার মা বিষয়টি প্রথমে লক্ষ্য করে তার পর অনন্যার ঘরে ঢুকে তাকে শাষিয়ে আসে।অনন্যার আনন্দে যেন এক রাশ বেদনা এসে ধরা দেয়।এ দিকে মমি রাত যত গভীর হচ্ছে ততই যেন ঘুম দেবতা পালিয়ে বেরাচ্ছে।মনে অতীতের সৃতি যেন নতুন বাসা বেধে মনকে ভারাক্রান্ত করে রাখে।নির্ঘূম চোখে রাত অতি বাহিত হয়ে দিনের আলোর উকিঁ।কলপাড়ে দাত ব্রাস করতে করতে মনে পড়ে অতীত।অতীতে এমনি ভাবে কলপাড়ে বিউটির সাথে কত কথা, সেই সৃতি আজও কল পাড়ে এলেই স্বচ্ছ কাচেরঁ মত ভেসে উঠে তার অতৃপ্ত হৃদয়ে।আজও তেমনি ঘটনা অনন্যাকে দেখে যেন মনে পড়ল বিউটিকে মনে হল এ যেন বিউটির প্রতিকৃতি।

-মা,রাতে অনেক রাগারাগি করে বলেছে আপনার ওখানে যেন আমি আর না যাই।

নিজেকে স্বপ্নের জগৎ হতে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে।অনন্যার কথার সুর ধরে.....

-ভালোত..যতটুকু সম্ভব আমার কাছে এসোনা।

-কেনো আসব না?...আপনিও বলছেন?

-হ্যা..আমি এক অপেয়া..আমার সংস্পর্শে যে আসবে সেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।

-এত শক্ত কথা আমি বুঝি না...আমি এ সব মানিনা।

সরকারী তোলারাম কলেজ এন্ড বিশ্ববিদ্যালয়

বলে অনন্যা চলে যায়।মমি নিজেকে রেডি করে নোট বই হাতে নিয়ে কলেজে চলে যায়।কলেজ ফ্রেন্ড সায়মন,নীরব,শ্যামল,সিরাজ ক্লাশরুমে সমচ্চোরে গান গাচ্ছে "ঐ লাল শাড়িরে....সে সময়ের একটি ব্যান্ড সঙ্গীত।ক্লাশরুমে এক পাশে মেয়েরা অন্যপাশে ছেলেরা বসত।মেয়েদের সিটে বসেছিল লাল সালোয়ার কামিজ পরিহিত লাভলী নামের একটি মেয়ে তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বন্ধুরা সুর তুলে ।মেয়েটি দেখতে বেশ!তার বড় বড় একজোড়া কাজল কালো চোখ যে কোন পুরুষকে আকৃষ্ট করার মত।যথারিতী ক্লাশ শুরু ।প্রথম ক্লাশ স্যার সবার সাথে পরিচিত হচ্ছেন।সে তার নাম-দাম ঠায় ঠিকানা বলা শেষে আমাদের পরিচিতির পালা...আমরাও একে একে যার যায় নাম বলে যাচ্ছি  এক সময়ে মেয়েটির সিরিয়াল আসতেই সায়মন বলে উঠে..

-স্যার ওর নাম ল..ল..ললনা...

সায়মনের এমন তুতলানো অভিনয়ে ক্লাশের সবাই অট্ট্র হাসিতে ফেটে পড়ে।মেয়েটি লজ্জায় লাল হয়ে যায়।স্যার ব্যাপারটা লক্ষ্য করেন।

-চুপ! বেয়াদব...সে তো তোমাদেরই ক্লাশমেট তাকে নিয়ে এমন রসিকতা ঠিক নয়।তোমরা তোমাদের ঐক্যে থাকবে অটল তবেই না দেশের সূ-নাগরিক হতে পারবে।মনে রাখবে তোমরাই দেশের আগামী নতুন প্রজন্ম।

ক্লাশের সবাই স্যারের ভাষনে ভোষন হয়ে চুপসে যায়।স্যার কিছুক্ষন তার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা,শিক্ষাজীবন ইত্যাদি উপস্হিত ছাত্রদের কাছে পেশ করে বিদায় নিয়ে আজকের মত ক্লাশ শেষ করেন।এরপর আসে নীরবতা ফিস ফাস..ক্লাশের দুষ্টু বন্ধু মাসুটা সে দিন প্রথম ক্লাশের একটি মেয়েকে কলেজ করিডোরে জন সম্মূখে চুমো খেলো!মমি হতভম্ম।কলেজের ঐ লাল শাড়ীরে...লাভলী নামের মেয়েটিও মমির প্রেমে মজেছিল তবে তা ছিল খুবই স্বাভাবিক প্রেম।সবাই বলত এদের দু'জনকে নিয়ে রহিম রূপবানের বনবাস।মমিকে আজ অস্হির অস্হির  লাগছে।কোথাও তার মন বসছেনা।কলেজ থেকে শহীদ মিনারের পাদদেশে কৃঞ্চ চুড়ার লাল টকটকে ফুলে নীচে ফাগুনের ভালবাসার বাতাসে চুলগুলো কেমন যেন ঝড়ের কবলে ধানক্ষেত মনে হয়।অনেক তো হলো সময় শেষ প্রতিক্ষার এবার বসন্ত আসবেই,ফুল ফুটবেই ,কেউ আটকাতে পারবেনা ।ওর বান্ধবীরা মহিলা কলেজে ভর্তি হতে যখন পারছিলনা মিলিকে সহ তার পছন্দের বান্ধবীদের মহিলা ছাত্রদলের সংসদের সভাপতিকে দিয়ে মমি সবাইকে ভর্তির সুযোগ করে দিয়েছে।তার আজ প্রথম ক্লাশের দিন।তাই মমির ভাবনাও যেন একটু বেশী।জীবনকে আর কত ঠকাবে এবার না হয় হবে শেষ।মমি দূর আকাশের দিগন্তকে খুজে ফিরে হয়তো হবে দেখা বলবে কথা "আমি তোমায় ভালবাসি...ভালবাসি...   ভালবাসি..."।ফাগুনের হাওয়াতে ভালবাসার মনের ছোয়াতেঁ ঝিম ধরা মাথাটাকে হঠাৎ ডান বাম করিয়ে চুলটিকে ঠিক করে...পকেটে হাত দিয়ে দিয়াশলাই আর বেনসনস সিগারেটের প্যাকটা বের করে একটি সিগারেটে দিয়াশলাইয়ের আগুনের ধোয়ার ঝলকানিতে মাথাটা ঠান্ডা করে মমি একটি দীর্ঘ্য দীর্ঘশ্বাসে নাক দিয়ে সমস্ত সিগারেটের ধোয়াঁ গুলো বের করে নিজেকে মহা রাজা ভাবতে ভাবতে কালি বাজার হতে বাসে উঠে।ছোট বাস অথচ মানুষের কত ভীর,মেয়ে মানুষ যদি কেউ কোন দিন শান্তিতে আরামসে বাসে চড়তে পেরেছে দাবী করতে পারে তবে সেই এ দেশের প্রকৃত খাটি বাঙ্গালী নারী।মনে হয় না আছে থাক সে কথা,বাসে বাদুর ঝুলার মত ঝুলে আছি গাড়ীর স্প্রিডের সাথে মমিরাও স্প্রিড খাচ্ছে।মমির হঠাৎ চোখ যায় মহিলা সিটগুলোর দিকে সেখানে বসে আছে মমির স্বপ্নের নায়িকা মিলি সাথে বান্ধবী ঝিলিক।ঝিলিক একটু বদ মেজাজী হিংসুটে।বাস কন্টেকদার ভাড়া নিয়ে আসলে মমি ওদের ভাড়া সহ চুকে দেন।পরক্ষনে যখন মিলি যানতে পারে ভাড়াটা কে দিল?সে দিন মমির দীলে ফাগুন মাসের শ্রাবনের উঞ্চতা দেখতে পায় গোলাপী দূঠদ্বয়ের রোমঞ্চকর কাপনীঁতে..যেন মেঘ না চাইতেই জল।

মমি বাসায় এসে লম্বা সটান হয়ে শুয়ে পড়ে খাটে কলেজ ড্রেস সহ।সম্ভবত বিকেল হয়ে এলো দুপুরের লাঞ্চ যে যায় পেরিয়ে...মা উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ছেলের কৃর্তিতে।ছেলেটার কয়দিন ধরে কি হইলো,হেই কহন ঘুমাইছে এহনও উঠে না।মমির মায়ের এমন প্রশ্নের উত্তরে মায়ের এক আধা আধুনিক বান্ধবী বলে উঠল।

-হুনছি...তোমার পোলার মত পোলারা নাহি কিতা ডাইল না চাইল খাইয়া এমনে ঘুমায়।

মমির মা তো অবাক!....বলে কি আমি কি পোলারে কম ডাইল খাওয়াইছি...মুশুড়ী ডাইল, খেশড়ী ডাইল,মাস ডাইল,মূগ ডাইল আরো কত।

-আরে এই ডাইল না....না থাক তুই বুঝবি না।যা পোলারে ডাক দিয়া ভাত খাওয়া....আমারে একটু পান খায়োনী দে.....আমি যাইগা।

বেশ কিছু দিন পেরিয়ে গেল ।বসন্ত যে হারিয়ে যাবে কাল বৈশাখীর ঝড়ের মাঝে।কেমন যেন মমিকে মিলি এরিয়ে চলে।মমি বুঝতে বাকী রইলনা ,কিছু একটা হয়েছে।এরই মধ্যে একবার ঝিলিকের মায়ের সাথে মমির কথা হয়েছে।তাহলে আজকের বাসে ভাড়া দেয়া নিয়ে ঝিলিক মিলির মা বাবার কাছে কোন নালিশ দিলো কি না কে জানে।ঝিলিকে মা বলেছিল.....

-মমি বাবা ঝিলিক যদি তোমার বোন হতো তুমি কি তাকে কলেজ যেতে দিতে না?

-আমিতো ঝিলিকে কলেজ যেতে বাধা দেইনি।

-তুমিতো কিছু বলোনি ঐদিকে কলেজের ভিপি ঝিলিককে তোমার সাথে যা মামলা আছে তা শেষ করে কলেজে যেতে হুমকি দিয়েছে।নতুবা ঝিলিকে তারা মারবে।

-সমস্যা নেই,কালকে কলেজ যেতে বলবেন।আমি ভিপির সাথে কথা বলব।

-ঠিক আছে..আজ আসি.....কেমন?

-ঠিক আছে।

মমির মাথায় আকাশেঁর বাজ যেন বার বার আঘাত করছে।কি করবে সে বুঝতে পারছেনা।কলেজে গিয়ে সিরাজ পিন্টুকে ঘটনাটি জানায়।সিরাজ পিন্টুতো সবার আগে এ কাজে।.....চল!আজ মহিলা কলেজ ছুটির পড় যা হবার হবে........

চলবে......................................................................................................................................................................

 

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ