অতৃপ্ত জীবন….প্রবাসী০৩

মনির হোসেন মমি ৩০ অক্টোবর ২০১৩, বুধবার, ০৮:৩৭:২৬অপরাহ্ন বিবিধ ৮ মন্তব্য

বাবা তুমি কেমন আছ ।অনেক দিন হল তোমার কোন পত্র পাইনা।তুমি কোথায় ,কি করছ,ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো কিনা.....স্বপ্নে স্বপন দেখছিলাম হঠাৎ চিৎকার আর অনেক লোকের কথার চিল্লাচিল্লিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।চারতলা বিশিষ্ট ঘুমানো সিট থেকে নেমে জানতে পারলাম তামিল বস এসে কাজে না যাবার কারনে এক বাঙ্গালীকে মারদোর করছে।ছেলেটির কাছে এগিয়ে গেলাম ততক্ষনে তামিল বস চলে গেছে।ছেলেটির গায়ে হাত দিলাম,,প্রচন্ড জ্বর গা তাপে পুড়ে যাচ্ছে।অসহায়ের মত চেয়ে আছে ছেলেটি।চোখ দিয়ে গড় গড় করে অশ্রু ঝড়ছে।পিঠে আঘাতে চিহ্ন।দেশের বাড়ী টাঙ্গাইল।মনে অনেক রাগ হল তামিল বসের উপর।কিন্তু কি আর করা পরদেশে এসেছি গোলামী করতে একটু আঘাত সহ্যতো করতেই হবে।এখানে বলাবাহুল্য যে একজন আনস্কিল ওর্কারের একদিনের লেবি মানে সরকারকে কোম্পানীর টেক্স দিতে হয় সিং ডলার ১৭.৬ আর স্কিল ওর্কারের দিতে হয় সিং ডলার ১.00।সূতরাং যে ছেলেটিকে তামিল মেরেছে তার বিনিময়ে আজতো তামিল বসের একদিনের লেবি +কাজের উপর কমিশন সবই গচ্ছা যাবে।

আমাদের দশ জনের একটি গ্রুপকে নতুন কাজে নিয়ে যাবে।ছেলেটিকে শান্তনা দিয়ে চলে এলাম বাথরুমের সিরিয়ালে।আমার মেসম্যাটরা রান্নায় ব্যাস্ত।সিরিয়াল ডিঙ্গিয়ে বাথরুম শেষ করে রান্নায় সহযোগিতা করে নিজেই আজ রান্না করলাম।রান্না কেমন হয়েছিল জানিনা তবে যেহেতু রুমম্যাটদের কোন আপত্তি পাইনি তাই রান্না ভালই মনে হয়েছিল।অথবা ক্ষুধার তাড়নায় যা পাই তাই হয়তোবা ভক্ষন করি।যাক যথারিতী সকাল ১০টায় কোম্পানীর গাড়ি আসে আমাদের নিয়ে যেতে।সিঙ্গাপুরে প্রথম তাই যেখানে যাই সেখানটাই অচেনা।সিঙ্গাপুর শহর(সেরাঙ্গন) ছেড়ে গাড়ী চলছে মালেসিয়া সিঙ্গাপুর লিং রোড়ে।একটি ব্রিজ পাড় হলেই মালেশিয়া জহুর বারু।তার পাশ দিয়ে একটি হাইওয় রোড দিয়ে আমাদের নামিয়ে দিল জুরং এর একটি বন্দরে।প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে স্প্রিড বোডে যেতে হবে সাকরা আইল্যান্ড নামক একটি নতুন স্হানে।স্প্রিড বোডের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি বন্দরে।পকেটে সিগারেট ছিল একটা ধরালাম।সাগরে ঢেউয়ের তরঙ্গে ছোট ছোট স্প্রিড বোডগুলোকে মনে হচ্ছে একবার আকাশে তুলে আবার ঢেউয়ের স্রোতের টানে মনে হয় ডুবে যাচ্ছে।সাগরের কোন সীমানা দেখতে পাচ্ছিনা।অভিজ্ঞ একজন দেখিয়ে দিল ঐ যে দুরে শেষ সীমিনা ওটাই ইন্দোনেশিয়া আর ঐ দিকে মালেশিয়া।অবাক চোখে তাকিয়ে রই সাগরের বুকে কি অপরূপ স্রষ্টার সৃষ্টি।আমরা এক চাইনিজ লোকের সাথে এসেছিলাম কিছুক্ষন পর সে সেখানে আর এক থাইল্যান্ডডীকে আমাদের দশ জনকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়।তার মানে এরই মধ্যে আমরা দুই বার বিক্রি হইয়া গেছি।থাইল্যান্ডডীকে ফলো করে একটি স্প্রিড বোডে উঠলাম।স্প্রিড বোড প্রশান্ত মহাসাগরে উত্তাল ঢেউয়ের বুকে।মাঝে মাঝে স্প্রিড বোডটি এত নীচে চলে যেত যে আগত ঢেউকে পাহাড় মনে হত।দীর্ঘ প্রায় এক ঘন্টা চলার পর আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছলাম।কোথায় কোন বাড়ীঘর দোকান পাট নেই চারদিকে কেবল মরুভূমি ।মরুভুমির উপর দিয়ে হেটে যাচ্ছি আরো প্রায় ঘন্টাখানেক লাগল নিদিষ্ট স্হানে পৌছতে।তখন প্রায় সন্ধ্যা।থাইল্যান্ডডী লোকটি মরুভুমির মাঝে কিছু কন্টিনারে বৈদেশিক ওয়ারকার বসবাস করে সেখানে একটি প্রজেক্টে কাজ করে সেখানে একটি তালাবদ্ধ কন্টিনার দেখিয়ে থাইল্যান্ডডী বলে এটা আমাদের থাকার ঘর।কিন্তু আলগা তালা লাগানোযে..সে তালা ভেঙ্গে আমাদের ঢুকতে বলে।আমরা তালা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে ব্যাগগুলো রেখে আমি এবং আমার এক এলাকার বন্ধু দীলিপকে নিয়ে বাহিরে হাটতে বেরুলাম।প্রচন্ড খিদে পেয়েছে ।হাটতে হাটতে পেয়ে গেলাম আর এক কন্টিনেয়ারে স্বদেশী ভাইদের।আমাদের অবস্হার কথা জেনে তাদের রান্না করা যা ছিল তাই আমাদের খেতে দিল।স্বদেশী ভাই পেয়েছিলাম বলে পেট রক্ষা।নতুবা নির্জন এই মরুভুমিতে না খেয়েই রাত কাটাতে হত।আশে পাশে কোন দোকান পাট নেই,নেই শহরে (সেরাঙ্গনে)যোগাযোগের মাধ্যম।প্রশান্ত মহাসাগরকে সরকার বালু দিয়ে ভরাট করে সাগরের পাড় বাধ দিয়ে বিশাল এক জায়গা সৃষ্টি করেছে।সেখানে একটি গ্যাস ফিল্ড তৈরী হচ্ছে।স্বদেশীদের সাথে খাওয়া দাওয়া করে চলে আসছি আমাদের কন্টিনারে।কিন্তু পথি মধ্যে আমাদের এক সাথীকে দেখছি সে অনেক পেরেসানী হয়ে দ্রুত কোথায় যেন যাচ্ছে।তাকে ডাক দিলাম।

-কি ব্যাপার কি হয়েছে?

-রুমে যায়েন না ,এক তামিল  এসে ওদের আটকিয়ে ফেলেছে,এবং আই পি কেড়ে নিছে এবং বলে তোদের কে বলেছে তালা ভাঙ্গতে তোদের পুলিশে দেব।

-থাইল্যান্ডী কোথায়?

-খুজে পাইনি।

আশ্চর্য!এ কোন বিপদে পড়লাম।আমরা ভয়ে সেখানে আর যাইনি।কিন্তু রাত কাটাব কোথায়?ব্যাগের কি হবে?ভাগ্যিস আই পি আমাদের সাথে ছিল।রাত তখন ১০ টা।ঘুমানোর যায়গা খুজছি।নতুন বলে মোবাইলও নাই যে শহরে আমার লোকের সাথে কথা বলব।ঘুমানোর যায়গা না পেয়ে একটি টং দোকানের মত প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে পাথরের উপর তৈরী ঘরের পাটাতনের নীচে পাথরের উপর অবশেষে আশ্রয় নিলাম।রাত বারোটা ঘুমে চোখের পাতা যেন বার বার বলছে এবার তাকে রেষ্ট দিতে।যখনই চোখের পাতা ঘুমে এক হয় তখনই সাগরে চলা বড় বড় জাহাজের হুংকারের শব্দে ঘুম পরী জেগে উঠে তবে মনে প্রশান্তি এনেছিল নীবর নির্জন রাতে সাগরের পাড়ে আছড়ে পড়া সাগরের গর্জন।দূর দিগন্তে সাগরে অবস্হান নেয়া জাহাজগুলোর লাইটের আলো পানিতে যেন চন্দ্রের চন্দ্রিমাকে মনে করে দেয়।

বিধি বাম অনেক কষ্টের মাঝে যদিও  তন্দ্রা আসছিল কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজেঁই আধা ঘুমে  আমাদের রাত্রী যাপন করতে হয়েছিল।

চলবে......

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ