
বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সঙ্গীতের এক পরিচিত নাম অতুল প্রসাদ সেন। তিনি বাঙালির পঞ্চকবির অন্যতম একজন।
১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১৪৯ তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আদিনিবাস শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম রামপ্রসাদ নববিধান। মায়ের নাম হেমন্ত শশী। অতি অল্প বয়সেই তিনি পিতৃহারা হন। সেজন্য তিনি মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের আশ্রমে প্রতিপালিত হন। তাঁর নিকটেই সঙ্গীত ও ভক্তিমূলক গানের হাতেখড়ি।
অতুল প্রসাদ ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে লন্ডনে গিয়ে আইন শিক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৮৯৪ সালে। এরপর রংপুর ও কোলকাতায় অনুশীলন শুরু করেন।
তাঁর ছিলো মুখে হাসি, গলায় গান, দুহাতে কাজে দান ধ্যান। ব্যারিস্টার অতুল প্রসাদ সেনের জীবন পূর্ণ ছিলো কর্মে, প্রার্থনায়। সেইসময় দিনগুলো ছিলো অন্যরকম। ভাবুকের সঙ্গে মনের যোগ ছিলো কর্মীর। গায়কের সঙ্গে বিজ্ঞানীর। কবির সঙ্গে ব্যারিস্টারের।
সৌভাগ্যের কথা, সবযুগেই থাকেন কিছু মানুষ ; যাঁরা গোটা দেশকে একসুত্রে রাখেন প্রজ্ঞা, প্রতিভা আর হৃদয়বত্তায়। অতুল প্রসাদ তেমনি। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার ও গায়ক। তাঁর গানগুলি স্বদেশী সঙ্গীত, ভক্তিগীতি ও প্রেমের গান। এই তিন ধারায় বিভক্ত। তাঁর গানে করুণ রসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
১৯৮২ সালে মামাতো বোন হেমকুসুমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ তিনি স্থানীয় জন সাধারণের সেবায় ব্যয় করেন। তাঁর বাড়ি এবং গ্রন্থ স্বত্বও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করেন। ঘুমন্ত অসহায় মানুষের বালিশের নীচে টাকা গুঁজে বেরিয়ে আসতেন নিঃশব্দে। আর সব যন্ত্রণার শেষ ঘটান নির্মাণে —- গান রচনায়, সুর সাধনায়। অলক্ষ্যে তখন বুঝি বাজে ” সবারে বাসরে ভালো, নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে! ”
তিনি সবখানে মুকুটমণি হয়ে থাকতেন। তিনি যেমন খাওয়াতে ভালোবাসতেন, তেমনি খেতেও ভালোবাসতেন।
যেহেতু তিনি জীবনের অর্ধেক সময় উত্তর ভারতে কাটান, সেহেতু বাংলা গানে হিন্দুস্তানী ঢঙের একটা মিশ্রণ দেখা যায়। এটি একদিকে বাংলাগানে নতুনত্ব এনেছে ; অন্যদিকে পরীক্ষা নীরিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে বাংলাগানের জগতে এক বন্ধনমুক্ত শৈল্পিক আবহ নির্মাণে সক্ষম হয়েছে। এমন কয়েকটি গান হলো :
১) ” কি আর চাইবো বলো ( ভৈরবি /টপ্পা খেয়াল)
২) ” যাবো না যাবো না আর ঘরে। ( ঠুংরি)
৩) ” তবু তোমায় ডাকি বারে বারে ” ( কাফি সিন্ধু)
এগুলো আজও সঙ্গীত বোদ্ধাদের নিকট সমান প্রিয়।
অতুল প্রসাদ বাংলাগানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তক। তিনিই প্রথম বাংলা গানে গজল রচনা করেন। যদিও সংখ্যাটি ৬/৭ টি। তাঁর গানের সংখ্যা ২০৮। তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গান হলো :
” মিছে তুই ভাবিস মন ; ”
” সবারে বাসরে ভালো। ”
” বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখি পাতে ”
” কে আবার বাজায় বাঁশি এ ভাঙ্গা কুঞ্জবনে / হৃদি মোর উঠলো কাঁপি। ”
” বঁধু এমন বাদলে তুমি কোথা? / আজি পড়িছে মনে মম কত কথা। ”
” ঐ মহা সিন্ধুর ওপার থেকে / কে ডাকে আমারে। ”
” মোরা নাচি ফুলে ফুলে দুলে দুলে। ”
তাঁর জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানটি মনে হয় সবারি জানা। ” মোদের গরব, মোদের আশা / আ মরি বাংলা ভাষা! ” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পাওয়া নিয়ে এই গানটি তিনি ১৯১৩ সালে লিখেন। গানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়ে ছিলো।
তিনি স্বজাতি বলতে বাংলা মায়ের সব ধর্মের সন্তানদের বুঝিয়েছেন। একটি গানে বলেছেন,
” দেখ মা এবার দুয়ার খুলে
গলে গলে এলো মা
তোর হিন্দু মুসলমান দুই ছেলে।”
তাঁর মামাতো বোন সাহানা দেবীর সম্পাদনায় ৭১ টি গানের স্বরলিপিসহ ” কাকলি ” (১৯৩০) নামে দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়।
লক্ষ্মৌতে ১৯৩৪ সালে এই বিখ্যাত ব্যক্তি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। পরে গাজীপুরের শ্রীপুরে কাওয়াইদ ব্রহ্ম মন্দিরের পাশে সমাধিস্থলে তাঁর চিতাভস্ম সমাহিত করা হয়।
স্মৃতিফলকে লিখা :
” তোমার কোলে তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালোবাসা! ”
★★ তথ্যসুত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকা।
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এত এত বিস্তারিত জানা ছিল না। ধন্যবাদ।
গান শুনব ভাবছি।
আরজু মুক্তা
একটু চেষ্টা করলাম লেখার।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
আমরা অতুলপ্রসাদ সেন সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম মুক্তা আপু
অনেক শুভেচ্ছা জানাই এবং প্রয়াত কবি প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানািই
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা
তৌহিদ
সত্যি আগে এত কিছু জানা ছিলোনা অতুল প্রসাদ সেন সম্পর্কে। আপনার এই লেখার মাধ্যমে জানলাম।
শ্রদ্ধা জানাই তাকে।
আপনিও ভালো থাকুন আপু।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমি মুগ্ধ, অভিভূত তার সম্পর্কে এতো বিস্তারিত জেনে। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপু। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
তিনিই প্রথম বাংলায় গজল রচনা করেন। বাংলা সঙ্গীতের প্রধান পাঁচজন স্থপতির একজন বলা হয় তাঁকে। বাংলা গানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তকও তিনি।
‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!’
ছোটবেলায় বাংলা পাঠ্যবইয়ে এই কবিতা পড়েননি এমন কেউ নেই। এমনই অনেক মধুর গীতিকাব্যের রচয়িতা অতুল প্রসাদ সেনের আজ ১৪৯ তম জন্মবার্ষিকী শ্রদ্ধা জানাই।
ভালো তথ্য শেয়ার করলেন, দিদি।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ দাদা
খাদিজাতুল কুবরা
অতল প্রসাদ সেনের কবিতা পড়েছি কিন্তু গান শোনা হয়নি। গুনী মানুষটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো আপনার কল্যাণে। কবির প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে
সুরাইয়া পারভীন
এতো এতো বিস্তারিত জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু। উনার কবিতা পড়েছি গান শোনা হয়নি কখনো। গানগুলো শুনবো
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
গান আমারও শোনা হয়নি। আজই জানলাম তিনি গানও লিখেছেন। আপনার এই সংগ্রহগুলো অসাধারণ।
শুভ কামনা রইলো আপুনি।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে
মোঃ মজিবর রহমান
অতুল প্রসাদ কে আমি গীতিকার ও গায়ক হিসেবেই জানতাম।
তিনি এতো গুণের অধিকারী জানতাম না।
সুন্দর মনের মানুষের সংগে পরিচয় ঘটলে মনটাই ভাল হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আরজু মুক্তা
জি ভাই। ” সত্যম শিবম সুন্দরম ”
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
ফুরিয়ে যাওয়া সময়ের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা নয়, যারা বিশ্বাস করে, ভালো কাজ করে, একে অন্যকে সত্যের প্রতি তাগাদা দেয় এবং ধৈর্য-নিষ্ঠ হতে তাগাদা দেয়—সুরা আল-আসর
মহান আল্লাহ কতইনা মানুষের জন্য করেছে তাঁর পরিমান বা জানা সাধারণ মানুষের আরো জানা দরকার।
আরজু মুক্তা
বিশাল ভান্ডার। কতোই অজানা।