আপনার আশেপাশের কিছু মানুষকে হাজার চেষ্টা করেও আপনি যেমন সচেতন করতে পারবেন না তেমনি কিছু মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছে বর্তমানে করোনায় যা কিছু হচ্ছে তা সরকারের কারসাজি।

তাদের একাংশ মনে করে দেশে করোনায় যত মৃত্যু হচ্ছে আসলে তারচেয়ে সরকার বাড়িয়ে বলছে বেশী এবং আরেক অংশ মনে করে করোনা টেস্টের ফলাফলে আক্রান্ত না হয়েও অনেককেই পজিটিভ দেখিয়ে সংক্রামনের হার বেশী দেখানো হচ্ছে।

খুব ছোট্ট একটা অংশ মনে করে হেফাজতিদের গ্রেফতার করতেই সরকারের এই লকডাউন নাটক। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বাজার-ঘাট এবং গণপরিবহন বন্ধ রাখা অহেতুক। ভারতপ্রেমী এ সরকার, বাংলাদেশের জনগণের দুঃখকষ্ট কি করে বুঝবে?

এসব কথা যারা অনেকেই বলে, মনেমনে পোষণ করে তারা কিন্তু কারো সামনে এসব আবার লজ্জায় প্রকাশ করতেও পারেনা। কারন দেশে সচেতন নাগরিকের সংখ্যাই বেশি। কিছু বললে পাছে নিজেরা নির্বোধ প্রমাণিত হতে হয়!

কেউ এধরনের কথা বললে আমিও শুনে যাই, প্রতিউত্তর করিনা। ফেসবুকে এরকম পোষ্ট দেখলে এড়িয়ে যাই। যাদের নিজেদের বুঝ থেকেও নাই তাদের আর বলেও লাভ নাই।

এদের বক্তব্য- করোনা যার হবার তার এমনিতেও হবে। ডাবল মাস্ক আর সাবানের ফেনায় নিজেকে চুবিয়ে রাখলেও হবে। আপনাকে সচেতন থাকতে নিষেধ করেছে কে? লক্ষ্য করলে দেখবেন, এসব মানুষ আসলে কোনো না কোনোভাবে কারও ভুল মতাদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করে আছে।

তবে কঠিন ভাষায় বলি, আপনি আক্রান্ত না হয়ে এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে সরকারের লাভ কিছুই নাই। বেঁচে থাকলে ফেসবুকে সরকার বিরোধী কথা কপচানো ছাড়া আপনাকে দিয়ে অন্তত এই করোনাকালীন সময়ে দেশ জনগনের কোন উপকার হয়নি আর হবেওনা।

বরং আপনি আক্রান্ত হয়ে মরে গেলে দেশের, সরকারের, এই পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি। একটি প্রাণ যখন ঝরে যায় তার পরিবার, সমাজে যে শুন্যতা তৈরী হয় সরকার তা ফিরিয়ে দিতে অপারগ। দেশের মানবসম্পদ হুমকীর সম্মুখীন হয়।

একটি শিশুর অকাল মৃত্যু মানেই অপার সম্ভাবনাময় একটি মেধার অপমৃত্যু এটা বুঝতে হবে। করোনায় একেকটি মৃত্যু মানেই বিশ্বমানবতার দর্পণে নতজানু প্রতিফলনে দাঁড়াতে হয় সরকারকেই। আপনাকে আক্রান্ত বা মৃতের হার বেশী দেখিয়ে সরকারের কি লাভ বলতে পারেন?

মানছি, অপরিপক্ব ব্যর্থতাও আছে। তবে কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নন। করোনাকালীন সংকটে পড়েনি পৃথিবীতে এমন একটা দেশ দেখাতে পারবেন না। যেসব দেশ সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে বিশ্বাস করেন তাদের জনগন ভুল মতাদর্শে পরিচালিত নয়। সভ্য নাগরিকরা নিজেদের জ্ঞান, বিবেক বুদ্ধিতে টিকে আছে।

জীবনযাপনের তাগিদে আমাদের আয়-রোজগার করতে বাইরে যেতেই হবে। বেঁচে থাকতে হলে জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই চালু রাখতে হবে এটাও ঠিক। তবে সচেতনও হতে হবে আমাদের নিজেদেরকেই।

দলমত নির্বিশেষে মানুষ হিসেবে আপনি আমি রাষ্ট্রের সম্পদ। নিজের প্রয়োজনেই এদেশের সরকারের দায়ভার থাকে আমাদেরকে সচেতন করার। করোনায় আক্রান্ত আর দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সরকার রাজনীতি করবে, আপনাদের মত এমন নীচু হীনমন্য মানসিকতা সরকারের নেই।

সরকার এতটা নির্দয় নয় বলেই করোনায় কারো মৃত্যু হলে যেন কবরের জায়গার সঙ্কটে তার পরিবারকে পড়তে না হয় সেজন্য আগে থেকেই কবর খুঁড়ে রেখেছে। আপনি নিজে সচেতন থাকবেন নাকি করোনাকে বন্ধু ভেবে বুক ফুলিয়ে জনসমাগমে মিশে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবেন সেটা আপনার অভিরুচি।

জীবন মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। যারা প্রিয়জন, পরিজন হারিয়েছেন তারাই জানেন এর মর্মব্যথা। তবে প্রার্থণা করি, করোনায় মৃত্যু হয়ে আর যেন কেউ কবরে না যায়।

কোনদিন যে কেউ না আবার বলে বসেন- কবরে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী লাশের দাফন দিয়ে সরকার বলছে এরা করোনায় মৃত! এই সরকার অমানবিক সরকার। আপনাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বের হওয়াও বিচিত্র নয়।

শেষ বাক্যটি পর্যন্ত পড়েছেন জেনে কৃতজ্ঞ হলাম। এসব লেখা পড়ার মত সময় আমাদের হাতে নেই। তবে আপনি না পড়লেও বারবার লিখে যাবো। সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন না করলে একদিন প্রজন্মের সামনে কোন লজ্জায় মুখ দেখাবো বলতে পারেন?

অনলাইনে সরকার, জনগন কারোরাই তোষামোদ বা বিরোধীতা করতে আসিনি। এসেছি আপনাদের সচেতন করতে।

[ছবি- নেট থেকে]

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

  • প্রদীপ চক্রবর্তী

    আমরা কোন পথে হাঁটছি।
    আমাদের আগামীর পথ কেমন।
    তা আমরা জানিনা।
    অথচ আমরা সৃষ্টির সেরা সভ্য জীব মানুষ হিসেবে নিজেকে দাবী করি!
    কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে আমরা কতটুকু সচেতন?
    হয়তো আমি আপনি আরও দু একজন সচেতন কিন্তু আমাদের পারিপাশ্বিকের অনেকে সচেতন নয়।
    তারা করোনাকে গা দিচ্ছে না বরং উপড়িয়ে যাচ্ছে আর সরকারকে গালি দিচ্ছে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত।
    সরকার সচেতনতার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তারা করে যাচ্ছে সরকারের বিরোধীতা।

    সরকার যখন জনগণের নিরাপদের জন্য লকডাউনের ব্যবস্থা করে তখন একশ্রেণীর লোক বলে উঠে যে কোন একদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে নাকি এ পদক্ষেপ!
    এমন কথাবার্তা যখন কিছু মানুষের মুখ থেকে যখন বেরিয়ে আসে তখন ভাবতে অবাক লাগে।
    আর এমন মানুষের জন্য আজ এই অবস্থা।
    .
    আপনি আক্রান্ত না হয়ে এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে সরকারের লাভ কিছুই নাই। বেঁচে থাকলে ফেসবুকে সরকার বিরোধী কথা কপচানো ছাড়া আপনাকে দিয়ে অন্তত এই করোনাকালীন সময়ে দেশ জনগনের কোন উপকার হয়নি আর হবেওনা।

    বরং আপনি আক্রান্ত হয়ে মরে গেলে দেশের, সরকারের, এই পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি। একটি প্রাণ যখন ঝরে যায় তার পরিবার, সমাজে যে শুন্যতা তৈরী হয় সরকার তা ফিরিয়ে দিতে অপারগ। দেশের মানবসম্পদ হুমকীর সম্মুখীন হয়।

    সচেতন না হলে মৃত্যুের মিছিল কিন্তু বাড়তে থাকবে। আমাদের চেয়ে উন্নত দেশগুলোও হিমসীম খাচ্ছে।
    .
    যথার্থ বিষয় তুলে ধরেছেন, দাদা।
    এমন সচেতনতার কথা তাদের বধীর কর্ণে যাক।
    সকলে সচেতন থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

  • মনির হোসেন মমি

    পুরোটাই পড়লাম।আপনার সবগুলো যুক্তির সাথেই আমি একমত তবে কিছু কথা না বললেই নয়। করোনা ভাইরাসটি এ দেশের সৃষ্ট কোন ভাইরাস নয় এটা বৈদেশিক আর এদেশে এর আগমনটাও হয়েছিলো বিদেশ হতে আসা প্রবাসীদের দ্বারা।জনগন দোষী কারন সে সচেতন নয় মানলাম কিন্তু প্রথম যে করোনা পজিটিভ প্রবেশে প্রবাসীদের আসতে দেয়া এবং তাদের কোয়ারেন্টনে বাধ্য করার দায়ীত্বটা শুধু জনগনের দোষ দিলে আপত্তি আছে।মনে রাখাটা জরুরী এ জাতি ডান্ডার উপর চলে।
    আরেকটি বিষয় লকডাউন জনগনের মানা নামানার বিষয়ে মুল যে বিষয়টি তাহল পেট।পেটের ক্ষুধা নিবারণে প্রথম বার লকডাউনে জনগন ভাল ভাগেই টের পেয়েছেন।অসংখ্য মানুষ চাকুরী হারিয়েছেন সরকারের পক্ষে কোন টু শব্দও ছিলো না।এ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা লডাউন ভাঙ্গার আরেকটি কারন।
    প্রথম করোনাকাল হতে দ্বিতীয় করোনাকাল এই দীর্ঘ সময়ে করোনা কন্ট্রোলে বা রোগীর সেবায় যে সকল প্রস্তবনা ছিলো তা শেষ করতে অনেকটা গা ছাড়া ভাবে চলেছেন সরকার।এ ক্ষেত্রে জনগন কী করতে পারেন।
    যাই হোক নিজেকে বাচাতে হলে আগে নিজের সচেতন হওয়াটা সবার আগে জরুরী।সরকার মানে জনগন।জনগনের যদি শতস্ফর্ত সচেনতায় থাকত তবে আজকে মৃত্যুর মিছিল দেখতে হতো না।
    চমৎকার লেখা।
    ভাল থাকবেন।সুস্থ থাকবেন।আলোচনার খাতিরে আলোচনা করলাম।

  • পপি তালুকদার

    আমাদের বিবেক যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের সঠিক ভাবে চলার নির্দেশনা দিবে তার আগ পর্যন্ত আমাদের হুঁশ হবে না।আপনি যে কথাগুলো লিখেছেন আসলেই সত্যি সাধারণ মানুষ এ-ই ধরনের ধারনা পোষণ করে।
    আমি বা আমার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারের কিছু না এটাই আমরা কয়জন বুঝি?
    দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়।এখনো সময় আছে সবাই সচেতন হই। বিবেক কে জাগ্রত করি।
    সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

  • হালিমা আক্তার

    এদেশের মানুষের বিবেক কবে জাগ্রত হবে। কবে সচেতন হবে তারা। ভুল পথে আর কত হবে বসবাস। আল্লাহ এদের বোঝার ক্ষমতা দেন। এত সুন্দর করে বিশ্লেষণ করার জন্য ধন্যবাদ।

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    ছোট করে বলছি, করোনা মোকাবেলায় কতৃপক্ষ দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার যে পরিচয় দিয়েছে/দিচ্ছে তার দ্বায়ভার অবশ্যই সরকারকে বহন করতে হবে। যথা সময়ে যথাযথ ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন চেষ্টা তারা করেনি, এখনো করছে না। এর ফল সবাইকেই ভোগ করতে হবে। ঝড় এলে ছোট বড় সব গাছের উপরেই আসে।

    এখন এই দুর্যোগকালে প্রবাদ বাক্যের বাস্তবায়ন খুব জরুরী ❝ নিজে বাঁচলে বাপের নাম❞
    তাই নিজে বাঁচার জন্য এবং নিজ পরিবারকে নিরাপদে রাখার জন্য আমরা যেন সচেতনতার সাথে স্বাস্থ্যবিধি নিষেধ মেনে চলি। আর যারা এতটা স্বার্থপর হতে পারবো না/পারে না তারা যেন আশেপাশের সবাইকে সচেতন হয়ে জীবন যাপনের পথ দেখায়।
    এই দুর্দিনে মানুষকেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মহামারী এক সময় বিলিন হবে, একটার পর আরেকটা আসবে, কিন্তু মানবিকতাকে বিলুপ্ত করা যাবে না। মানবতায় জয়ী হয়েই মহামারীকে পরাজিত করতে হবে।

  • ছাইরাছ হেলাল

    সব থেকে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের একাধিক ধর্ম-কুতুব তো বলে ই দিয়েছে
    করোনা বলে কিছু নেই, এবার করোনা মসজিদে প্রবেশ করে না।
    তবে একটি ব্যাপার, পৃথিবী ব্যাপি যখন দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলো তখন আমাদের কোন প্রস্তুতি ছিল-ই না।
    ধন্যবাদ।

  • সুপর্ণা ফাল্গুনী

    মমি ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে একমত। আপনার কথাগুলো ও যুক্তিযুক্ত। সরকার বা আমরা উভয় পক্ষেরই সমান দোষ দিবো। কেউ বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়নি/দিচ্ছে ও না । বাকীটা ঈশ্বর জানেন। এছাড়া কিছু ই বলার নেই। সবাই ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ