অচেনা হয়েছে কন্ঠস্বর

সুরাইয়া পারভীন ৪ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার, ০৮:৫৪:৫৮অপরাহ্ন গল্প ২৯ মন্তব্য

মনের আকাশে মেঘ জমেছে, ঘুটঘুটে কালো মেঘ। মেঘ গুলো বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়বে পড়বে করেও আর পড়ছে না। ঐ যে বলে সব মেঘে নাকি বৃষ্টি হয়, কিছু মেঘ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কালো মেঘ গুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেও গুমোট ভাবটা রয়েই গেছে আগন্তিকার চারপাশ জুড়ে। পড়ন্ত বেলায় যখন পশ্চিমাকাশে বিশাল সূর্যটা রক্তিম আভা ধারণ করে প্রস্তুতি নিচ্ছে অস্ত যাওয়ার ঠিক এমন সময় আগন্তিকা খোলা আকাশের নিচে ছাদের দক্ষিণ-পশ্চিম কর্ণারে রেলিং এ দু হাতে পুরো শরীরের ভর রেখে দূরের আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। আগন্তিকার মস্তিষ্ক জুড়ে চলছে স্মৃতির আনাগোনা। সে স্মৃতি সুখের নাকি কষ্টের বিরহের তা ঠাওর করতে পারছে না আগন্তিকা। কাকে যেনো মিস করছে আগন্তিকা, কিন্তু কাকে? কার জন্য এই মেঘের আনাগোনা? স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বের করলো মন খারাপের কারণ।

কতোদিন কথা হয় না মানুষটার সাথে। কেমন আছে সে? মানুষটা আমাকে চেয়েছিলো, ভালোবেসে চেয়েছিলো। সে বলেছিলো আমার সব পিছুটান ছেড়ে তাকে বিয়ে করে সুদূর প্রবাসে পারি জমাতে। চেয়েছিলো আমাকে নিয়ে সুখের সংসার গড়তে। কিন্তু আমি পারিনি আমার সব পিছুটান ছিন্ন করে অঢাল সম্পদে গা ভাসিয়ে চলে যেতে। মানুষটা সেদিন অশ্রুসিক্ত নয়নে সেই যে চলে গেলো আর ফিরেনি। কখনো জানতেও চায়নি আমি কেমন আছি? আমিও কখনো তার খোঁজ রাখিনি। এতোদিন পর হঠাৎ সেই মানুষটার জন্য বুকে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু কেনো?
আমি তো মানুষটাকে কখনো ভালোবাসতে পারিনি। হয়তো প্রচণ্ড আবেগে ভেসে বলেছিলাম ভালোবাসি। কিন্তু সত্যি বলতে কখনোই তাকে ভালোবাসতে পারিনি।
খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু নম্বর পাবো কই?

হ্যাঁ নম্বর আছে , আছে আমার কোনো এক ডাইরীতে লেখা। সে নম্বর দিয়েছিলো আর বলেছিলো যদি কখনো আমাকে মনে পড়ে অথবা দরকার পড়ে তবে যেনো ফোন করতে দ্বিধা না করি। আরো বলেছিলো তুমি ভালো না বাসলেও আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা একচুল মিথ্যে নয় তা তুমি একদিন ঠিকই বুঝতে পারবে। আমি সেদিনই জেনেছিলাম মানুষটা আমাকে খুব ভালোবেসেছিলো।

অনেক খুঁজে ডাইরীটা পেলাম। যেখানেই আকাশের প্রবাসের নম্বরটা ছিলো। দ্রুত নম্বর ডায়াল করে থেমে গেলাম। ফোন কি দেবো, ঠিক হবে ফোন দেওয়া? এতো দিন বাদে ফোন দিলে আকাশ চিনবে আমায়? এতো ভেবে কাজ নেই কলটা দিয়েই ফেলি।

ক্রিং ক্রিং ক্রিং,,,,,,রিং হচ্ছে।
বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো। কি জানি হয়তো লজ্জা, ভয়, সংশয় সব মিলিয়ে কেমন অদ্ভুত লাগছে।

আকাশঃ হ্যালো, কে বলছেন?

-আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
আকাশঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো, কে আপনি?

না আমি অচেনা, না আমার কন্ঠস্বর। তবুও ধরেই নিলাম সময়ের সাথে সাথে অচেনা হয়েছি আমি, অচেনা হয়েছে কন্ঠস্বর। কিন্তু ফোন নম্বর সে তো আর বদলে যায়নি। এই একই নম্বরে দীর্ঘ দিন কথা হয়েছে আমাদের। সে যদি না চিনতে চায় কিংবা আমাকে ভুলে গিয়ে ভালো থাকে তবে আমি আর তার ক্ষত থেকে রক্ত ঝরাতে পারি না।

-কেউ নই আমি।
আকাশঃ কেউ নই মানে, কাকে ফোন করেছেন আপনি?

আমাকে তুমি চিনতে পারোনি এতে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই আকাশ।

অদ্ভুত রহস্যময় আমাদের জীবন
আমরা নিজেরাই নিজেদের চিনতে পারি না।

আমার সাড়াশব্দ না পেয়ে ফোন কেটে দিলো আকাশ। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর আকাশের নম্বর মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। আমি সাথে সাথে কেটে দিলাম। কারণ আমি আর চাই না আকাশের কাছে নিজেকে চিনাতে। একটু পর আবার ফোন বেজে উঠলো। এবার আর কেটে দিলাম না। বেজে বেজে নিজেই কেটে গেলো।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ