অঙ্কন ও কথন

ইকরাম মাহমুদ ২৬ আগস্ট ২০১৬, শুক্রবার, ০৩:০৮:২৪অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, কবিতা, গল্প ২২ মন্তব্য

প্র্যাকটিকাল খাতার ছবিগুলোও এঁকে দিয়েছিল বড় ভাইয়া। ছবি আঁকার হাত আমার আবার খুব ভাল কিনা! একবার চে'গুয়েভারার ছবি আঁকতে চেষ্টা করছিলাম। মনে হলো পারবো, কয়েকটা পয়েন্ট আছে সেগুলো ঠিক রাখা। ছবি আঁকা কী এমন কঠিন কাজ! শুধু চোখটা অাঁকতে পারলেই হলো। শুরু করলাম চোখ আঁকা। ডান চোখ খুব সুন্দর মতোই সমাপ্ত করলাম, এখন বায়ে। বাম চোখটা আর ডানের মতো হচ্ছে না। চোখ দুটো যদি দুই রকম হয় তবে ছবিটি কি হতে পারে তা অনুমেয়। আঁকিবুঁকি আমাকে দিয়ে হবেনা। দিলাম হাল ছেড়ে। যে নাকি গরু, ছাগল আর মাটির গর্তের চিত্রই আঁকিয়ে নেয় বড় ভাইকে দিয়ে সে আঁকবে চে' গুয়েভারা!?
চে গুয়েভারা
চিত্রটা সংগ্রহে নেই। অন্তত আঁকিবুঁকি, কাটিকুটিটা দিতে পারতাম এখানে।

২০১১-তে
কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম বন্ধু ক'জন। সেখানে জলছাপে আঁকা কবিগুরুর একটা ছবি দেখে মনে হল ছবিটি আঁকব আমি। সেই থেকেই আবার ভুত চাপলো ছবি আঁকার। জানি আমাকে দিয়ে হবে না। তবু মনে হলো পারবো।
কোন এক খেয়ালে আমার রুমের (ভাড়া বাসা) ঠিক টেবিলের পাশের দেয়ালে শুরু করলাম ছবি আঁকা। এবারের বিষয় কবিগুরু। এবারও শুরু চোখ থেকে। মুখের অবয়বটা আঁকার পরই চোখের কাজ ধরলাম। তবে এবার ডান নয়,বাম চোখ আগে আঁকব। ডানহাতি বলে আমাদের মস্তিষ্ক ডান দিকের কাজকে সাড়া দেয় ঠিকঠাক। তাই এবার মস্তিষ্ককে বোকা বানাতে বাম চোখে পূর্ণ মনোযোগ স্থাপন করলাম। মস্তিষ্ক কি আমার মতো বলদ যে আমি বোকা বানাব আর সে তা জানবেনা! যাই হোক শুরু করলাম আঁকা। বামচোখটা আঁকা সম্পন্ন হলো, এভাবে কবিগুরুর একটা অবয়ব দাঁড় করাতে সমর্থ হলাম। কী এঁকেছিলাম তা আপনারাই দেখে নিন।
আমার জীবনের প্রথম ও শেষ( তারপর অনেক চেষ্টা করেছি,এজন্যই শেষ বলছি)।
রবীন্দ্র

ছবিটা আঁকার পর যে ভালোলাগা বা অানন্দের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম তা মাটি হতে সময় লাগলো না, যখন মনে পড়ল জীবনের প্রথম আঁকা ছবিটা এঁকেছি ভাড়া করা এক বাসার দেয়ালে। নিজের আঁকা হলেও নিজের থাকবে না,বলতেও পারব না। একটা সময় পর ধরেও রাখতে পারবো না নিজের বলে।
২০১৫-তে
যখন ভাড়া বাসা চেঞ্জ করার কথা ভাবছি তখন ভয়ঙ্কর এক বেদনা আমায় ভর করলো। যতক্ষণ বাসায় থাকি ছবিটা ফেলে যেতে হবে ভেবে চোখটা জলে ভরে উঠত।
কি করব ছবিটা? রেখেই যাব এভাবে নাকি কালো কালিতে ঢেকে দিয়ে যাব ছবিটা। ওর চিন্তায় সারাক্ষণ মনটা উদাসিন থাকত। বাসায় আমার উদাসিনতার খবর জানতে পেরে সবাই আমাকে সান্তনা দিতে শুরু করলো, এর কি সান্তনা হয় কোনো? যেখানে নিজেই পারছিনা নিজেকে শান্ত করতে!
মনোস্তাত্মিক এক দ্বন্দ্বে কাটতো আমার দিন।
ছবিটার ভাগ্যে কি ঘটবে?
এই ভাবনাটা খুব ভাবাত আমায়। সেই ভাবনা থেকে-- "'তোর অথবা আমার "নামে
কয়েকটা লাইন লিখেছিলাম।

তোর প্রতি সবার অবহেলা
অথবা আমার নিষ্ঠুরতা।
কোনটা সহ্য হবে তোর?
আমিই বা সবার অবহেলা কতটুকু মানতে পারবো?
অথবা আমার নিষ্ঠুরতা!
মনে কর,তোকে কেউ রাঙিয়ে দিল নতুন কোনো
রঙে অথবা কালো কালির আস্তরণে ঢেকে দিল
তোর অবয়ব।
কতটা সহ্য হবে তোর!
অথবা আমার!
মনে কর, কেউ বিকৃত করলো তোকে।
মুখ, চোখ, নাক সবই বদলে গেলো তাতে।
কতটা সহ্য হবে তোর?
অথবা আমার?
স্রষ্টাই তো ক্ষমতা রাখেন ধ্বংসের।
তাই যদি হয় তবে আমার হাতেই হবে তোর ধ্বংস।
আমার হাতেই যে তোর জন্ম!
আমিই করব অবহেলা।
আমিই হব নিষ্ঠুর।
আমিই হব নির্দয় তোর প্রতি।
আমিই হব ধ্বংসকারী।
কতোটা সহ্য হবে তোর?
অথবা আমার!

লেখাটা দিয়েছিলাম ফেসবুকে।সেদিন বন্ধু আনিস কমেন্টে বলেছিল, তুমি পারবে না। ঠিকই পারিনি আমি,সত্যিই পারিনি। নিষ্ঠুর, নির্দয় হতে পারিনি আমি।
তবে আরো কিছু না পারায় রয়েই গেছে। সে না পারাগুলো কখনো পারা হবেনা আর।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress