12404348_10206619759665302_808727586_n
জেনোসাইড ডিনায়াল আইনের দাবীতে প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন

স্বাধীনতা লাভের ৪৪ বছর পরেও বাঙালী জাতির অস্তিত্ব নিয়ে, শহীদদের সংখ্যা নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠে! কি বিচিত্র এই দেশ!! বিচিত্র এ দেশের মানুষ!!!

আর এই প্রশ্ন উঠাচ্ছে এদেশে মুখোশ এঁটে লুকিয়ে থাকা কিছু খাস পাকিস্তানি মানসিকতা লালনকারী জনতা। উইপোকার মতো করে এরা মুখোশের আড়ালে থেকে বাংলাদেশে বাস করে বাংলাদেশ বিরোধী কাজ করে গেছে এতোদিন। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে প্রজন্মের উর্বর মস্তিষ্কে বিষ ঢুকিয়ে একটা অস্থির প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে। অন্তরে পাকি মানসিকতা লালন করে স্বাধীন বাংলাদেশে ‘বাঙালী‘ পরিচয় ধারণ করে গোপন মিশনে নেমে এরাই এতকাল প্রশাসনের সর্বত্র ঘাঁটি গাড়তে নিজেদের লোকদের আসন পোক্ত করেছে। দিনেদিনে এদের আস্ফালন কেবল বেড়েই চলেছে। অন্তরে পাকি প্রেম, প্রকাশ্যে বাঙালিত্ব এমনটা কিছুতেই সহনীয় নয়! এতোদিন এরা মুখোশ এঁটে গোপনে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করে এসেছে, এখন এরাই প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার সাহস দেখাচ্ছে।

পরাজিত শক্তি এমনটা চাইতেই পারে! কিন্তু প্রকাশ্যে সে সাহস তারা দেখাবে এমনটা হতে পারে কি করে!
তাদের আস্ফালনের কিছু নমুনা দেখুন-
১। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছেলে স্পর্ধা দেখায় ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার।
২। যুদ্ধাপরাধী নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে শহীদের রক্তে রাঙানো লালসবুজ পতাকা উড়ে।
৩। যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ দম্ভভরে গলাবাজি করে ”কিসের যুদ্ধাপরাধী? এদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।”

এই আস্ফালন এতোদিন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিলো, তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। আমরা তাদের বিচারের কাঠগড়ায়ও দাঁড় করিয়েছি। কিন্তু সময়ের আবর্তে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে প্রকাশ্য বিরোধিতাকারী ছাড়াও মুখোশের আড়ালেও কিছু স্বাধীনতা বিরোধী চক্র লুকিয়ে ছিলো, যারা এতোদিন গোপনে বা আড়ালে থেকেই কলকাঠি নেড়েছে। একে একে সকল যুদ্ধাপরাধী ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে শুরু করায় মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চক্রের চেহারাও উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। পাকিস্তান তাদের এদেশীয় দোসরদের বাঁচাতে বিভিন্ন প্রকারের কলকাঠি নাড়তে গিয়ে আর ‘৭১ এর গণহত্যাকে অস্বীকার করে নিজেই ফ্যাসাদে পড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে খোদ পাকিস্তানের ১৯৫ পাক সেনার বিচারের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে। ’আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ নামের একটি সংগঠন আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনার প্রতীকী গণবিচারের ঘোষণা দিয়েছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলাই এর উদ্দেশ্যে। অবশেষে চতুর্মুখী ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়া জাল ছিন্ন করতে এখন মুখোশ এঁটে আড়ালে লুকিয়ে থাকারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে নানারকম প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে পুরো মুক্তিযুদ্ধকেই বিতর্কিত করতে।

জাতির সবচেয়ে গর্বের ইতিহাস আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের অহংকার। যা আমাদের পূর্বপূরুষেরা আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। অনেক ত্যাগ তীতিক্ষার পর দাম দিয়ে কেনা সে গর্বিত ইতিহাসকে ঘিরে কেউ যদি বিভ্রান্তি ছড়ায়, আমরা তা মেনে নিতে পারি না। সময় এসেছে এবার এদেরকে চিহ্নিত করার, আলাদা করার।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রাঙানো মাটিতে, বীরাঙ্গনাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে শ্রদ্ধার সঙ্গে সবাইকে মেনে নিতে হবে। যে বা যারা মেনে নিতে পারবে না, স্বীকার করবে না, এই দেশে রাজনীতি করা তো দূরের কথা, সুনাগরিক হয়ে বেঁচে থাকার অধিকারও তাদের থাকা উচিত নয়। চিহ্নিত পাকি পন্থী হিসাবেই তারা আলাদা পরিচয় বহন করুক। আর যেহেতু মা-মাটির জন্ম ইতিহাসকে তারা সন্মান জানিয়ে সুনাগরিক হওয়ার যোগ্যতা দেখাতে পারবে না, সকল প্রকার নাগরিক অধিকারও তারা সমভাবে ভোগ করার অধিকার তারা রাখে না। আমার দেশে সুনাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাইলে শহীদদের রক্তে রাঙানো এদেশের জন্ম ইতিহাসকে স্বীকার করতে হবে। প্রকাশ্যে যে অস্বীকার করবে আইন করে তার জেলে যাওয়া অনিবার্য করে তুলতে হবে।

হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকতে হবে, নাহয় বিপক্ষের লোক বলে বিবেচিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘তবে’ ‘কিন্তু’, বলে কোন কথা নেই। যারা ‘তবে’ ‘কিন্তু’ এর আবর্তে দুলতে থাকে বা দোলাতে থাকে বুঝতে হবে এরাই ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ এর গোপন শত্রু। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে মুলত তারা বিরোধিতাকারীদের সহযোগী হিসাবে তাদের অন্যায়কে আচ্ছাদন দিয়ে রাখে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস যাতে কেউ বিকৃত করতে না পারে, প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সে জন্য জার্মানির ‘হলোকস্ট ডিনায়াল’ আইনের আদলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-বিকৃতির বিরুদ্ধে একটি আইন এখন আমাদের সময়ের দাবী। জার্মানিসহ ১৬টি দেশে ‘হলোকস্ট ডিনায়াল ল’ আছে। রীতিমতো সংসদে পাশ করা আইন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাজি বাহিনী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাকে অস্বীকার করার চেষ্টা, এমনকি গণহত্যার তীব্রতা লঘু করে দেখার প্রচেষ্টাও এই আইনে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ল’ এর আওতায় শুধুমাত্র ফান হিসেবে নাৎসিদের ভঙ্গিতে হাত তুলে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য শাস্তি হয়েছে একজন পর্যটকের। প্রখ্যাত এক লেখকের সাজাও হয়েছে হিটলারের গ্যাস চেম্বারকে অস্বীকার করায়।

অথচ কী আশ্চর্য এই দেশ! স্বাধীনতা লাভের ৪৪ বছর পর এসেও সর্বজনস্বীকৃত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক চলে! যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে সাফাই গাওয়া চলে! এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনিতেই বিভ্রান্তির যাঁতাকলে পড়ে অলরেডি একটি অস্থির প্রজন্ম এখনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলায় দোলায়িত। স্বাধীনতা লাভের ৪৪ বছর পর অনেক মুক্তিযোদ্ধাই এখন হারিয়ে গেছেন। হারিয়ে যাচ্ছেন শহীদ জায়ারাও। কিছু মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও শহীদজায়া এখনো প্রদীপের আলো হয়ে বেঁচে আছেন। একসময় তাঁরাও হারিয়ে যাবেন। জীবন্ত সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউই একসময় থাকবেন না। তখন মিথ্যাবাদীদের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সুরক্ষা করবে কে? কাজেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে ‘জেনোসাইড ডিনায়াল’ (Genocide Denial) আইন করাটা এখন সময়ের দাবী। খুব বেশি জরুরী হয়ে উঠেছে। হলোকাস্টের ইতিহাস অবিকৃত রাখতে ইউরোপের দেশে দেশে যদি আইন থাকতে পারে, সে আইনে বাঘা বাঘা ব্যক্তিদের শাস্তি হতে পারে, খোদ জাতিসংঘ যদি ইতিহাস-বিকৃতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন সেই সুযোগগুলো নেবে না?

এই আইন প্রতিষ্ঠিত হলে বিরোধিতাকারী, সে রাজাকারের বংশধর হোক বা নব্য রাজাকারই হোক অথবা ইনিযে বিনিয়ে সাফাইকারী হোক কিংবা অতি-নিরপেক্ষ মিডিয়া বা সুশীলই হোক তারা জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। ইতিহাসের সত্য অস্বীকার কিংবা বিকৃত করার চেষ্টাকারী শাস্তি পাবে।

সময় এসেছে এবার ‘জেনোসাইড ডিনায়াল ল’ পাশের দাবীতে জেগে উঠো জনতা! সুরাহা হোক অযথা বিতর্কের।

আজকের দিনে এসে এই দাবিটা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের অহংকারকে টিকিয়ে রাখতে গেলে তা আমলে নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

গতকাল মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে এই স্বাধীন দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এক মন্তব্য করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর চপেটাঘাত স্বরূপ। খালেদা জিয়ার এই ন্যাক্কারজনক মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছি।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ