হযরত শাহজালালের মাজার——

আলমগীর হোসাইন ১০ জানুয়ারি ২০১৫, শনিবার, ০৬:৩৫:৩৪অপরাহ্ন বিবিধ ৬ মন্তব্য
হযরত শাহজালালের মাজার------
আমাদের কাছে একটি পবিত্র দিন শুক্রবার। অনেক দিন পর একটু আগে সিলেট হজরত শাহজালালের (রা:) পবিত্র মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় ও মাজার শরিফ জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন  |

জুম্মার নামাজ আদায় করার পর কিছু ছবি ক্যামেরা বন্ধী করছিলাম | আর মিস করছিলাম, আমার বন্ধু মুনায়েম কে !! সুবিদ বাজার থেকে দরগা মহল্লার

দূরত্ব খুব বেশি না ! হেটে গেলে ৫ -১০ মিনেট লাগে | দেশে থাকতে মুনায়েম আর আমি এক সাথে প্রায় প্রতি শুক্র বার জুম্মার নামজে আসতাম - দরগা কিংবা শাহ পরান মসজিদে !!
ভাবছিলাম হযরত শাহজালালের মাজার নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটা ডকুমেন্টারি লিখব | তাই বিভিন্ন ভাবে তথ্য নিয়ে ক্ষুদ্র প্রয়াস !!
হযরত শাহজালালের মাজার----
শাহজালাল (জন্ম ৬৭১ হিঃ ১২৭১ইং- মৃত্যু; ৭৪০ হিঃ ১৩৪১ ইং) ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ। তাঁর পুরো নাম শায়খ শাহ জালাল কুনিয়াত মুজাররদ। ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজী সালে ৩২ বত্সর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে অধুনা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন বলে ধারনা করা হয়।
সিলেট আগমনের সময় কাল নিয়ে যদিও বিভিন্ন অভিমত রয়েছে; তদুপরি শাহ জালালের সমাধির খাদিমগণের প্রাপ্ত পারসী ভাষার একটি ফলক লিপি হতে উল্লেখিত সন-তারিখই সঠিক বলে ধরা হয় | পারসী ভাষায় লিখিত ফলক লিপি বর্তমানে ঢাকা যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে |সিলেটে তাঁর মাধ্যমেই ইসলামের বহুল প্রচার ঘটে |
 সিলেট বিজয়ের পরে শাহ জালালের সঙ্গী অনুসারীদের মধ্য হতে অনেক পীর দরবেশ এবং তাদের পরে তাদের বংশধরগণ সিলেট সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস করেন |শাহজালাল ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে সিলেটেই কবর দেয়া হয়।
প্রাথমিক জীবন---
হিজরী ষষ্ঠ শতকের শেষাংশে মক্কার কোরায়েশ বংশের একটি শাখা মক্কা শহর হতে হেজাজ ভূমীর দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে ইয়েমেন প্রদেশে গিয়ে বসবাস করেন। ঐ শাখার মোহাম্মদ বা মাহমুদ শাহজালালের পিতা। মাহমুদের পিতা ছিলেন ইব্রাহিম |
হযরত শাহ জালালের রওজায় প্রাপ্ত ফলক লিপি সুহেলি ইয়্যামনি অনুসারে শাহ জালাল ৩২ বছর বয়সে ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেট আগমন করেন। সুহেলি ইয়্যামনিতে উল্লেখিত তথ্য হতে জানা যায় যে, ৬৭১ হিজরী - ১২৭১ খ্রিস্টাব্দে শাহজালাল জন্ম গ্রহন করেছেন। তাঁর জন্ম ভূমি ছিল প্রাচীন আরবে আযমের হেজাজ ভূমির তৎকালীন প্রদেশ ইয়্যামন দেশের কুনিয়া নামক শহর। শাহ জালাল যখন তিন মাসের শিশু বালক, তখই তাঁর মাতার মৃত্যু হয়।
শাহ জালাল শিশু কালেই মাতৃহীন হন এবং পাঁচ বছর বয়সে পিতাকে হারান। মামা আহমদ কবির তাঁকে পালক নেন । আহমদ কবির আরবী ভাষায় কোরআন হাদিস শিক্ষা দেয়া সহ ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক বিষয়ে (নামজ, রোজায়) অভ্যস্ততার জন্য গুরুত্ব প্রদান করেন। পরবর্তিতে আহমদ কবীর শাহ জালালকে ইয়েমেন থেকে মক্কায় নিয়ে যান। মক্কা শহরে আহমদ কবীরের একটি আস্তানা (হোজরা) ছিল। সেখানে অন্যান্য শিষ্যদের সাথে শাহ জালালকেও উপযুক্ত শিক্ষা দিয়া গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন বলে জানা যায়।
গুরু পরিচিতি
শাহ জালাল এর মামা ও শিক্ষাগুরু সৈয়দ শায়েখ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দি, সাধারণত; আহমদ কবির নামে তিনি বহুল পরিচিত। সৈয়দ আহমদ কবিরের পিতা নাম সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী। সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী শাহ জালালের জন্মের আগে ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের লক্ষে মোলতানের নিকট আউচে এসে বসবাস করেন এবং সেখানেই শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন | সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দির পিতা সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী ছিলে তাঁর মুরশীদ।
সিলেট আগমন পর্ব---
শাহ জালাল মুজাররদ তাঁর মামা ও গুরু সৈয়দ আহমদ কবিরের আস্তানায় আরব দেশে ছিলেন। শাহজালাল ভারতবর্ষে ধর্ম প্রচারের স্বপ্ন দেখার পরে সৈয়দ আহমদ কবির এর কাছে ব্যক্ত করেন। মামা ও মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবিরকে তা জানান। কবির এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে শাহজালালকে ভারতবর্ষে যাবার পরামর্শ দেন। যাত্রাকালে কবির শাহ জালালেরর হাতে এক মুঠো মাটি তুলে দিয়ে বললেনঃ যে স্থানে এই মাটির "স্বাদ" "গন্ধ" ও "বর্ণের" মিল এক হবে, সেখানেই ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গড়বে। মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবির (রহ) এর দোয়া লয়ে শাহ জালাল (রহ) ধর্ম প্রচার অভিযানে আরব দেশে থেকে
হতে একা একাই যাত্রা শুরু করেন |
সিলেটে প্রবেশ-----
খ্রিস্টিয় দশম শতকে শ্রীহট্ট ভুমী লাউড়, জয়ন্তীয়া ও গৌড় নামে তিনটি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। উক্ত রাজ্য গুলোর মধ্যে গৌড় অন্যতম রাজ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল। এ রাজ্যে প্রাচীন সীমা রেখা বর্তমান মৌলভীবাজার জেলা সহ হবিগঞ্জ জেলার কিয়দাংশ নিয়ে বিস্তৃত থাকায় গৌড় রাজ্যের দহ্মিণ সীমাভুমী নবীগঞ্জের দিনারপুর পরগণার পাশে রাজা গোবিন্দের চৌকি ছিল। শাহ জালাল তাঁরসঙ্গীদের নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে প্রথমত সেখানে অবস্থান করেন। এখানে গৌড়ের সীমান্ত রক্ষীরা অগ্নীবাণ প্রয়োগ করে তাদেরকে প্রতিহত করতে চায় । কিন্তু মুসলমান সৈন্যের কোন ক্ষতি করতে পারে নাই । গোবিন্দ সমস্ত বিষয় অবগত হয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে বরাক নদীতে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ বলে ঘোষনা জারি কর। শাহ জালাল পুর্বেরমত জায়নামাজের সাহায্যে বরাক নদী পার হন। বরাক নদী পারা-পারে বাহাদুরপুর হয়ে বর্তমান সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায় ফতেহ পুর নামক স্থানে রাত্রি যাপন করেন। উল্লেখিত তথ্য সম্মেলিত প্রাচীন গ্রন্থ তোয়ারিখে জালালীতে উল্লেখ আছেঃ
চৌকি নামে ছিল যেই পরগণা দিনারপুর
ছিলটের হর্দ্দ ছিল সাবেক মসুর
সেখানে আসিয়া তিনি পৌছিলা যখন
খবর পাইলা রাজা গৌবিন্দ তখন ।
এপারে হজরত তার লস্কর সহিতে
আসিয়া পৌছিলা এক নদীর পারেতে
বরাক নামে নদী ছিল যে মসুর
যাহার নিকট গ্রাম নাম বাহাদুরপুর।
যখন পৌছিলা তিনি নদীর কেনার
নৌকা বিনা সে নদীও হইলেন পার |
সর্ব প্রকার কল-কৌশল অবলম্বন করে রাজা গৌড়-গোবিন্দ যখন দেখলেন সকল প্রয়াসই বিফল হচ্ছে, তখন শেষ চেষ্টা করার লক্ষে যাদু মন্ত্র সহ এক প্রকাণ্ড লৌহ ধুনুক শাহ জালালের কাছে প্রেরণ করে । যার শর্ত ছিল যদি কেহ একা উক্ত ধনুকের জ্যা ছিন্ন করতে পারে তখন গোবিন্দ রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে। শাহ জালাল তাঁর দলের লোকদের ডেকে বললেন; যে ব্যক্তির সমস্ত জীবনে কখনও ফজরের নামাজ খাজা হয় নাই বা বাদ পরে নাই একমাত্র সেই পারবে গোবিন্দের লৌহ ধনুক "জ্যা" করতে। অতপর মুসলিম সৈন্য দলের ভেতর অনুসন্ধান করে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনকে উপযুক্ত পাওয়া গেল এবং তিনিই ধনুক জ্যা করলেন |
সুরমা নদী পারাপার--------
সিলেটের ঐতিহাসিক 'সুরমা' নদী
উত্তর পূর্ব ভারতের বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে বিভক্ত হয়ে যায়। সিলেট বিভাগের বেষ্টনী হিসেবে দর্তব্য এ নদী গুলো প্রাচীন কালে প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হত। বর্ষা কালের দৃশ্য প্রায় সাগরের মত দেখাত। ঐতিহাসিক পর্যটক ইবন বতুতা সুরমা নদীকে নহরি আজরফ বলে আখ্যায়িত করেছেন । শাহ জালাল ফতেপুর হতে যাত্রা করে যখন সুরমা তীরে অবস্থান নিলেন । এ নদী পার হয়েই গৌড়র রাজধানী ।
শাহ জালাল আউলিয়ার কেরামতি ও আলৌকিক বিভিন্ন ঘটনায় রাজা গোবিন্দ বীতশ্রদ্ধ হন। গোবিন্দশক্রবাহিনীকে কিছু সময় ঠেকিয়ে রাখার সুরমা নদীতে নৌকা চলা-চল নিষিদ্ধ করেন। তা সত্ত্বেও শাহ জালাল নদী হন। গোবিন্দ গড়দুয়ারস্থিত রাজবাড়ি পরিত্যাগ করে পেচাগড়ের গুপ্ত গিরি দুর্গে আশ্রয় নিলেন । এরপর থেকে তার আর কোন হদিস বা খবর মেলেনি। শাহ জালাল তিন দিন সিলেটে অবস্থান করার পর, মিনারের টিলায় অবস্থিত রাজ বাড়ি প্রথমে দখল নিলেন।
সময় করে এ বিষয়ে একটা পূর্ণনাঙ্গ ডকুমেন্টারি লিখব !!
ধন্যবাদ
আলমগীর হোসাইন
সুবিদ বাজার, সিলেট |
১৮ জুলাই ,২০১৪ ইং |
মাজারের কিছু ছবি দেখার জন্য লিঙ্ক দিলাম নিচে ..................
0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ