কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বস্তুনিষ্ঠু সংবাদ পরিবেশনে পটুয়াখালীর সাহসী সাংবাদিক এবিএম মিজানুর রহমান (৩৫)। তিনি প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি। মানুষরূপী শকুনদের ঘেরাটোপে বন্দী করা হয়েছিল তাকে। শিকার হন নির্যাতনের। দক্ষিণের জনপদ পেরিয়ে গোটা দেশজুড়ে শকুনদের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানানো হয়। প্রতিবাদে স্বো”ার হয়ে উঠেছিল সকল শ্রেনী পেশার মানুষ। শুধুই হয়রানী আর নির্যাতন করতে মেধাবী সাংবাদিক মিজানকে মিথ্যা অভিযোগের চাউর ঘটিয়ে রাখা হয়েছিল বন্দীশালায়। সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই কলম সৈনিককে জামিন দেন। জামিন পাওয়ার খবরে শান্তিপ্রিয় নারী পুরুষের মাঝে যেন স্বস্তি নেমে এসেছে। পাশাপাশি ওইসব শকুনদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবী জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, বাউফলে গত ১৭ মার্চ সাংবাদিক মিজানুর রহমানের সঙ্গে এক পুলিশ সদস্যের কথাকাটাকাটি ঘটে। যদিও ওই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে বাকবিতন্ডার আগ থেকেই মিজানকে ফাঁদে ফেলতে গভীর ষড়যন্ত্রের কলকাঠিতে ব্যস্ত ছিলেন এক মহল। যাদের নানাবিধ অন্যায় অপকর্মের চিত্র লেখনীতে তুলে ধরেছিলেন মিজান। আর এ কারণে মিজানকে নির্যাতনের ছক একে পরিকল্পনামাফিক চলছিল মহলটি। যে পুলিশ সদস্যের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়েছিল তা বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপরও রাতে মিজানকে  আটক করা হয়। শকুনদের নাটক শুরু! সরকারি কাজে বাধাদান ও হামলার অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়া হয়। পরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে থানায় নিয়ে রাতভর করা হয় নির্যাতন। এরপর পাঠানো হয় কারাগারে। এখানেই শেষ নয় উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার দায়ের করা পুরোনো একটি চাঁদাবাজির মামলায়ও মিজানের নাম ঠুকে দেয়। ২২ মার্চ মিজানকে পটুয়াখালীর দ্বিতীয় বিচারিক হাকিম এ এস এম তারিক শামসের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। আদেশের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। ওই আদালতে জামিনের কোনো শুনানি হয়নি। ১৫ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারন করা হয়। নির্ধারিত দিনক্ষনেও পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বিমল চন্দ্র সিকদার মিজানের জামিন দেননি। ২৩ মার্চ মিজানুরের বাবা আবদুস সালাম হাইকোর্টে একটি রিট করেন। এই আবেদনে মিজানুরকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়। ২৪ মার্চ মিজানুরকে পুলিশি হেফাজতে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট।
এদিকে, সাংবাদিক মিজানুর রহমানের পক্ষে শুনানিকালে প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক আদালতকে বলেন, হয়রানিমূলক এই মামলায় সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘটেছে। কারণ, সংবিধান সাংবাদিকদের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। আদালতে ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে সহায়তা করেন বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক ও মনজুর কাদের।
মিজানের বাবা আবদুস সালামের বক্তব্য, দুর্নীতিবাজ,ভুমিদস্যুদের বিরুদ্ধে  সংবাদ পরিবেশন করায় মিজানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। তিনি ওই সকল অপকর্মকারীদের বিচার দাবী করেন। বলেন, এরকম হয়রানীর শিকার যেন কেন সাংবাদিক না হয়।

0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ