মাগো,
কেমন আছো? অনেকদিন তোমার মুখে খোকা ডাক শুনিনা। তোমাদের দোয়ায় আমি ভাল আছি।
আমাকে নিয়ে কোন দুঃশ্চিন্তা করবে না। জীবন মৃত্যু মানুষের হাতে নয়। এটা পরম করুণাময় আল্লাহর হাতে। তার নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয় না। তিনি যা চাইবেন সেটাই হবে।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা অনুপ্রাণিত। প্রয়োজনে বীরের মত মাথা উঁচু করে, মৃত্যু কে বরণ করে, পবিত্র শহীদের কাতারে শামিল হবো, তবুও কাপুরুষের মত জালিমদের কাছে নত হবো না। যে দেশ মায়ের মত আমাদের এতদিন আগলে রেখেছিল। সেই দেশ মাতা আজ শত্রুর বিষ নিঃশ্বাসে দূষিত। দেহে এক ফোঁটা রক্ত অবশিষ্ট থাকতে আমাদের যুদ্ধে কোন বিশ্রাম নেই। আমরা বাঙালি, অন্যায় অত্যাচার করে আমাদের কখনোই ওরা দাবায়ে রাখতে পারবে না।

গত সাত তারিখের অপারেশনে, কামাল ওদের কাছে ধরা পড়েছিলো। সাত দিন কোন খোঁজ পাইনি। পরে পাকিস্তানী ক্যাম্পের পাশে একটা মাঠে ওর লাশ পেয়েছিলাম।

সেদিন ওদের একটা ঘাটি আক্রমণ করে ধ্বংস করেছিলাম। ওদের ক্যাম্পে অনেক বন্দী নির্যাতীত মেয়েদের আমরা মুক্ত করেছিলাম। আশ্চর্য ব্যাপার!!! সব মেয়েদের চেহারা আমাদের মনির মতো। নিষ্পাপ মেয়েদের ওরা সীমাহীন নির্যাতন করেছে। যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

তোমরা সাবধানে থেকো। নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রেখো। অনেকদিন ধরে তোমার হাতের ভূনা খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা খেতে মন চাইছে। দেশ স্বাধীন হলে সবাই একসাথে খাবো। বাবার দিকে খেয়াল রেখো। ওনার কাশিটা অনেকদিন ধরে হচ্ছে। শহরে ভাল ডাক্তার দেখানো দরকার। মনি কে বলবে তোর ভাইয়া যুদ্ধে গেছে। দেশ স্বাধীন করে তোর জন্য একটা লাল সবুজ পতাকা নিয়ে আসবে।

জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
দোয়া করবে যেন সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছায় দেশ কে সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত করে বিজয়ীর বেশে তোমার কোলে ফিরতে পারি।

ইতি তোমার স্নেহের
কবির। (ছোট খোকা)
তারিখ ১০ আগস্ট ১৯৭১।

পুনশ্চঃ কবিরের এই চিঠিটি তার পবিত্র শহীদ দেহের রক্তে ভেজা অবস্থায়, তারই এক সহযোদ্ধা উদ্ধার করেন। তার শেষ ইচ্ছা ছিল চিঠিটা মায়ের হাতে পৌছে দেয়ার জন্য। মায়ের হাতের খিচুড়ি আর ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছা তার পূরণ হয়নি। বাবাকে ভাল ডাক্তারের কাছে নেয়ার সুযোগ মেলেনি। শুধু বোনের কথা সে রাখতে পেরেছে। একটা লাল সবুজের পতাকা দিয়ে গেছে।

 

1971

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ