মালয়েশিয়া এখন এক দুর্ভোগের নাম

ইঞ্জা ৭ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৪১:০৫অপরাহ্ন সমসাময়িক ১১ মন্তব্য

 

 

মালয়েশিয়া একটি দ্বীপ রাষ্ট্র, বাংলাদেশের পরেই এই দেশে স্বাধীনতা লাভ করলেই এই দেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নত দেশ, মাত্র আটারো বছরের মধ্যেই এই দেশ এত দ্রুত উন্নতি করে যে, আজ এই দেশেই চাকরী করে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড সহ আরো অনেক দেশের মানুষ।

অন্য দেশ গুলো থাকুক, মালয়েশিয়াতে অল্প বেতনে সহজলভ্য বাংলাদেশি চাকুরী প্রার্থী, এই দেশে বিভিন্ন ভাবে আমাদের দেশ থেকে মানুষ চাকরীর উদ্দেশ্যে যায় যা দুই ধরণের, ১) বৈধ ও ২) অবৈধ।
বৈধ ভাবেরই আবার কিছু সিস্টেম আছে, তার মধ্যে সরকারি ভাবে হলে কলিং ভিসায় হয়, বাকি গুলো বেসরকারি ভাবে প্রফেশনাল ভিসায়।

আবার বেশিরভাগ মানুষ যায় অবৈধ ভাবে যার জন্য কোনো ভিসার ব্যবস্থা নেই, শত শত মানুষকে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়, এদের মধ্যে অনেকেই পতিমধ্যে অনাহারে মারা যায়, আবার অনেককে মালয়েশিয়া উপকূলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয় আরো টাকা দাবি করে, যারা টাকা দিতে পারেনা তাদের মেরে ফেলা হয়, এই বিষয়টি আপনারা সবাই জানেন।

 

 

ইদানীং মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় করা শুরু করেছে, যার মধ্যে সংখ্যার আদিখ্যে বাংলাদেশি বেশি, যাদের মধ্যে আছে কলিং, প্রফেশনাল, স্টুডেন্ট ভিসায় যারা মালয়েশিয়াই যাওয়ার পর ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ওখানে চাকরী করছেন বা থাকছেন।
নিয়ম হলো, যারা মালয়েশিয়া কলিং ভিসা ও প্রফেশনাল ভিসায় ঐ দেশে চাকরীর জন্য যান, তারা নির্দিষ্ট কোম্পানির বা চাকরীদাতার কাছেই চাকরী নিয়ে যান, আর সময় শেষ হওয়ার আগে চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের ভিসার সময় বর্ধিত করার জন্য আবেদন করেন, কিন্তু দেখা যায় যে উক্ত প্রতিষ্ঠান অবহেলা করে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে এদের ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে এদের অবৈধ করে দেয়, এই কাজ করার একটি কুটিল কারণও আছে তা হলো, পুরাতন কর্মী থাকলে তাদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে দিতে হবে, যদি এরা বাধ্যগত ভাবে বিদায় হয়ে যায় তাহলে অল্প বেতনে নতুন কর্মী আসবে, এই জন্যই পুরানোদের এরা অবৈধ করে দিলো মালয়েশিয়ান কোম্পানি গুলো।
এই মূহুর্তে মালয়েশিয়াতে সাত লক্ষের উপর বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে এবং আরো পনের লক্ষ বাংলাদেশি যাওয়ার সুযোগ আছে এবং অনেকেই যাচ্ছেন।

এই অবৈধ অভিবাসীদের মালয়েশিয়ান সরকার গত ৩০শে জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অথবা যাদের পাসপোর্ট নেই বা ভিসা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট টাকা নেই, তাদের জন্য E (ই) কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলো, কিন্তু বাংলাদেশিরা তাও নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যে কারণে এখন দলে দলে ধরা পড়ছেন।
এইবার মালয়েশিয়ান সরকার আরেকটি সুযোগ দিয়েছেন, মাত্র চারশ রিঙ্গিত (আমাদের আট হাজার টাকা) জরিমানা দিয়ে দেশে ফেরত আসা, যা হয়ত কিছু মানুষ এই জরিমানা দিয়ে ফিরে আসতে পারবে আর বাকিরা ক্ষমা পাওয়ার আশায় বা টাকার অভাবে মালয়েশিয়ার জেলে পঁচবে।

এইদিকে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ এয়ারপোর্টে শুরু করেছে আরেক তুঘলকি কান্ড, বাংলাদেশি বৈধ ভিসা ধারি পর্যটকদের তাদের দেশে প্রবেশে বাধা দান করছে, আজকাল তাদের দেশে বেড়াতে যাওয়া বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রচুর জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তাদের প্রায় সবাইকে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আর এদের মধ্য থেকে বেশির ভাগ পর্যটকদের ফিরতি টিকেট যেদিন আছে, ততদিন এয়ারপোর্টে আটকে রেখে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, যা খুবই অমানবিক, তাদের দেশের এম্বেসি আমাদের সকল অনুসন্ধান শেষ করেই আমাদের ভিসা দেয়, এরপরেও মালয়েশিয়ান এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ যা করছে তা ঔদ্ধত্যই বটে যা অন্য কোনো দেশের পর্যটকের সাথে হচ্ছেনা।

এইদিকে আমাদের এম্বেসি যা মালয়েশিয়াতে আছে, তারা এই বিষয়ে কোন সহায়তা করছেনা, তাদের উচিত ছিলো যারা এরেস্ট অবস্থায় আছেন, তাদের পক্ষ নিয়ে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া, পর্যটকদের হয়রানি কেন হচ্ছে তার জবাবদিহি চাওয়া, কিন্তু আমাদের এম্বেসি ওখানে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে, তারা নানা ভাবে ব্যবসা করছে শুধু মাত্র তাদের স্বার্থে।
আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুপ কেন, আমাদের দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের ইনকামের টাকায় এই দেশ চলে, আর সেই শ্রমিকদের বিপদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুপ কেন?
আমাদের প্রবাসীর টাকা একটু কম আসলেই সরকারের অন্দরমহলে হাহাকার রব উঠে, সরকারের কোনো দায়িত্ব কি নেই এইসব প্রবাসীদের জন্য?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্লিজ শুনুন প্রবাসীদের কান্না।

 

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ