ভ্রমনে দুর্ভোগ (ইটালি ভ্রমন ২)

ইঞ্জা ২৪ মে ২০১৭, বুধবার, ০৮:০২:১৮অপরাহ্ন ভ্রমণ ২২ মন্তব্য

 

 

ব্রেকফাস্টের ঘন্টা দুই পরে প্লেইন ল্যান্ড করলো এমস্টারডাম এয়ারপোর্ট, সেঞ্জেন কান্ট্রি হিসাবে আমদের এইখানেই এম্বারকেশন নিতে হবে, পাসপোর্ট নিয়ে অফিসারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, অফিসার নাক মুখ কুঁচকে পাসপোর্ট দেখে আর আমাকে দেখে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এনি প্রবলেম?
তার প্রশ্ন শুনে আমিই ভিরমি খেলাম, ব্যাটা বলে কিনা, এই পাসপোর্ট কোন দেশের?
জবাব দিলাম, বাংলাদেশ।
ব্যাটার নাক মুখ আরো কুঁচকে গেল লাল মুখো বানরের মতো, বাংলাদেশ উচ্চারণ করার বৃথা চেষ্টা করে বড় অফিসারকে হাঁক দিলো, বড় অফিসার এসে পাসপোর্ট দেখে সেও জিজ্ঞেস করে, ব্যাংলেডেস কোথায়, ইন্ডিয়া কিনা?
আমি তখন বড় করে লেকচার দিলাম বাংলাদেশ সম্পর্কে।
বড়কর্তা লাল মুখো বাঁদরটাকে কি যেন বললো, ব্যাটা দেখি দৌড় দিয়ে গিয়ে একটা ম্যাপ নিয়ে এসে আমাকে দিলো আর বললো, দেখাও ম্যাপে তোমার দেশ।
আমি অতো বড় ম্যাপে ফোটার সমান দেশটাকে দেখানোর পর দুজনে কগুব ভালো করে দেখলো, পাসপোর্টও কয়েকবার দেখে এন্ট্রি সিল মেরে ঠ্যা ঠ্যা ঠ্যা করে হেসে বিদায় দিলো।

আমরা এখন এগুলাম ট্রানজিটের দিকে আমাদের লাগেজ ট্রানজিট করে রাখা হয়েছে বিধায় লাগেজের হ্যাপা হলোনা, দুই ঘন্টা পরেই আমাদের মিলান ফ্লাইট, তাই এয়ারপোর্ট থেকে গেলাম, ঘুরে ঘুরে এয়ারপোর্ট দেখছি, ফ্লাইটের এক ঘন্টা আগে হাল্কা কিছু স্ন্যাক্স খেয়ে নিলাম।
ফ্লাইট চেকইন হওয়া শুরু হলে দুই ভাই এগুলাম, যথা সময়ে ফ্লাইট ছাড়লো, ইটালির মিলান পোঁছালাম প্রায় চার ঘন্টা পর, ইটালির এয়ারপোর্টে এম্বারকেশনের হ্যাপা পোহাতে হলোনা, যেহেতু এমস্টারডামেই সেরেছি, লাগেজ নিয়ে বেড়িয়ে দেখি এক পাটখাটি আমার নাম লেখা কাগজ ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কাছে গিয়ে পরিচয় দিলে সে আমার সাথে হ্যান্ডসেইক করে পরিচয় দিলো, সেই আমার সাপ্লাইয়ার।
সাপ্লাইয়ার (আসল নাম বললাম না) আমাদের নিয়ে শহরের হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বললো, রাতে ডিনারে দেখা হবে, তাকে বিদায় দিয়ে আমরা রেস্টে গেলাম, সন্ধ্যায় ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে ডিনারে গেলাম।

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করার জন্য ভাই আমার আগে হোটেলের রেস্টুরেন্টে গেল, আমি পনের বিশ মিনিট পর রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি ভাই মেজাজ গরম করে বসে আছে, কি ব্যাপার অর্ডার দিস নাই, জিজ্ঞেস করলাম।
আরেহ না, ব্রেড বাটার জ্যাম দিতে বললাম, ওরা শক্ত শক্ত পেটিস দিয়ে গেল, ওগুলা খাওয়া যায় নাকি, ভাইয়ের জবাব।
আমি হেসে বললাম, ওগুলো হলো ক্রসিন, খেতে বেশ চমৎকার।
ওয়েটার ডেকে বললাম, লোফ (ব্রেডকে ওরা লোফ বলে), বাটার, জ্যাম, ওমলেট দাও আমাদের, সাথে একটা ক্যাফে (প্রচুর কফি থাকে অল্প পানিতে, কঠিন জিনিষ, অভ্যস্ত বলে খেতে পারি) আর এক্সপ্রেসো দাও।
ব্রেকফাস্ট সেরে ভাবলাম, দেখি আসে পাশে কোনো ফোন বুথ আছে কিনা, দেশে কল দিতে হবে।

রিসেপশনে জিজ্ঞেস করলাম, ওরা বললো, ওদের হোটেলের পাশেই আছে কল সেন্টার, বেড়িয়ে গেলাম পাশের কল সেন্টারে, কল সেন্টারে পা দিয়েই অবাক, একজন ফোনে কথা বলছে, মিয়া ভাই, ট্যাহা হাডাইছি, ফাইছেন নি?
আশে পাশে আরো মানুষ দেশিয় ভাষায় কথা বলছে, দোকানের মালিকও বাংলাদেশি।
আমি এগিয়ে বললাম, ভাই বাংলাদেশে কল দেবো।
ব্যাটা চোখ বড় বড় করে বলছে, ভাই আপনারা দেখছি দেশি, তা কোথা থেকে এসেছেন?
বললাম, চট্টগ্রাম।
আরেকজন জিজ্ঞেস করলো, ভাই কিসে আসছেন?
কেন, প্লেইনে চড়েই আসলাম, হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন, আমি বললাম।
একজন জিজ্ঞেস করলো, আমরা কি সেটেল হতে এসেছি?
জবাবে বললাম, না আমরা ব্যবসার কাজে এসেছি।
ওদের সবার চোখে অবিশ্বাস, একজন বললো, ভাই, এই দেশে বাংলাদেশ থেকে যারা আসে, তারা হয় জাহাজ দিয়ে আসে, নাহয় হেঁটে হেঁটে কয়েকটা দেশ পেড়িয়ে, বরফে কষ্ট পেয়ে মরে বেঁচে আসে, আর আপনি এসেছেন এই দেশের সাথে ব্যবসা করতে, বাহ আপনি অনেক ধনি মানুষ নিশ্চয়?
এখন আমার অবাক হওয়ার পালা, ওদিকে ছোট ভাই দেশে কথা বলছে আর আমি এদের কথা শুনছি, কতো কষ্ট করে না এরা এই দেশে আসছে সেটেল হতে, ভালো কিছু ইনকাম করতে, সেই ইনকাম দেশে পাঠিয়ে মা বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী সন্তানদের মুখে হাসি ফুটাবে, আবার শুনলাম অনেকেই নাকি পথেই মরে পড়ে রয়েছে, লাশটার খবরই পাওয়া যায়নি আর, আহা।

সাপ্লাইয়ার আমাদের পিক করতে এসে যাওয়ায় আমরা বিদায় নিলাম, এক বরিশালের ভদ্রলোক বললো, রাতে ডিনার করুন।
আমি ক্ষমা চেয়ে বললাম, না আমরা সাপ্লাইয়ারের সাথেই খাবো, অন্য সময় চেষ্টা করবো।
তিনি বললেন, ওকে আপনারা রাতে ফিরে আসুন, আমি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করবো।
সালাম দিয়ে আমরা গাড়ীতে চেপে বসলাম, সাপ্লাইয়ারের অফিসের উদ্দেশ্যে।

চলবে.......

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ