ভ্রমনে দুর্ভোগ (ইটালি ভ্রমন ৩)

ইঞ্জা ৩১ মে ২০১৭, বুধবার, ১১:৪০:৩১অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৫ মন্তব্য

সকাল নয়টায় সাপ্লাইয়ারের অফিসে পোঁছেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, কাজ শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেল, সাপ্লাইয়ার বললো, চলো তোমাদের নিয়ে লাঞ্চ করবো, সাথে আমাদের সব চেয়ে বড় ক্যাথেড্রাল দেখাবো।
আমরাও এক পায়ে রাজি, রওনা হয়ে গেলাম, ক্যাথেড্রালের কাছাকাছি এসে অস্কার (সাপ্লাইয়ারের ছদ্মনাম দিলাম) এক পার্কিংলটে কিছু লিরার বিনিময়ে (ততকালিন ইটালির টাকা যা এখন ইউরো হয়ে গেছে) গাড়ী পার্ক করে হাটতে শুরু করলাম।
দশ মিনিটের হাটা পথ ছিলো, ক্যাথেড্রালে মুখে এসেই অবাক হলাম, দূর থেকেই দেখা গেলো ক্যাথেড্রাল দ্যুমো ডি মিলানো, কি বিশাল ক্যাথেড্রাল, দূর থেকেই বোঝা যায় তার বিশালতা, ষোড়শ শতাব্দীর এই ক্যাথেড্রাল এখনো সেই আগের মতোই রয়ে গেছে, ক্যাথেড্রালের সামনে বিশাল খোলামেলা জায়গা (হয়ত বড় ফুটবল মাঠ হতে পারতো), যেখানে হাজারো মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে, আছে কয়েকশো কবুতর, অনেকেই কবুতরকে গম খাওয়াচ্ছে, কবুতর গুলো কারো মাথায়, কারো কাঁদে, কারো হাতে বসেই খাচ্ছে, ক্যাথেড্রাল মাঠের দুই পাশে আছে বড় দুই শপিংমল, শপিংমল ধরেই হাটছিলাম, সব বড় বড় দোকান, কতো কিসিমের যে দোকান আছে এইখানে তা বলাই বাহুল্য, ব্রান্ড নন ব্রান্ড সব আছে, আছে পেস্ট্রি শপ, ওয়াইন শপ, সবই আছে।
আশ্চর্যজনক ভাবে এইসব শপের সামনের বারান্দা বা ওয়াকওয়েতে আছে ছোট ছোট ফেরিওয়ালা আর তার মধ্যে আমাদের বাঙ্গালিরাও আছেন।

অস্কার আমাদের নিয়ে এক ছোট রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে এক টেবিল দখল করে জিজ্ঞেস করলো, কি খেতে চাও?
আমরা বললাম, তোমাদের পাস্তার অনেক নাম শুনেছি, পাস্তাই খাওয়াও কিন্তু নো পর্ক (শুয়োর)।
সে আমাদের জন্য বাটারফ্লাই পাস্তা, স্পেগেটি বলোনিয়ার অর্ডার দিলো, সাথে বিয়ার।
খাবার এলে খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম, বাইরে এতো ফেরিওয়ালা দেখলাম, এরা কি বৈধ ভাবে বেচা বিক্রি করে নাকি অবৈধ?
সে জানালো, ফেরিওয়ালারা সবাই অবৈধ, সব ফরেনার (মানে হলো অন্য দেশ থেকে এসেছে), এরা বিভিন্ন কমদামী জিনিষ ফেরি করে বেড়ায়, কেউ ফুল, কেউ ইমিটেশন, কেউ কম দামী কাপড়, মেকআপ, সুভেনির ইত্যাদি বিক্রি করে, আবার কেউ কেউ শিল্পী, তারা অবিকল আপনার চেহেরা ফুটিয়ে তুলে তাদের কাগজ আর পেন্সিলে, পুলিশ আসতে দেখলেই হয়, দে দৌড় সব নিয়ে, সেকি উর্দ্ধশ্বাস দৌড়, ধরা খেলেই তো বিপদ।

আমরা খাবার শেষ করে এগুলাম ক্যাথেড্রালের দিকে, লাইন দিয়ে প্রবেশ করলাম ভিতরে, দ্যুমো ডি মিলানোর বিশালতা বুঝা যায় যখন ভিতরে আপনি প্রবেশ করবেন, ভ্যাটিকান সিটির আন্ডারে এই ক্যাথেড্রাল, এর চারিদিকে কারুকাজ করা রঙ্গিন কাঁচের বড় বড় জানালার মতো করে রাখা হয়েছে যাতে আলো প্রবেশ করতে পারে, আছে বড় বড় মা মেরি আর যিশুর মূর্তি, হাজারো মানুষের স্থান হয় এই ক্যাথেড্রালে, এক জায়গায় এক ফাদার সবাইকে হলি ওয়াটার খাওয়াচ্ছেন অতিথিদের।আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম পুরা ক্যাথেড্রাল, এরপর বেরিয়ে এলাম বাইরে, বাইরে এসে ফটোসেশন শুরু হলো আমাদের, ক্যাথেড্রেলের দরজায় দাঁড়িয়ে, ক্যাথেড্রালকে পিছনে রেখে, কবুতরকে গম খাইয়ে, কতোভাবে না ছবি তুললাম।

এরপর শুরু হলো আমাদের শপিং আর উইন্ডো শপিং, পুরা মল ঘুরে ঘুরে টুকটাক শপিং করলাম, ডকারস ট্রাউজার্স কিনলাম আমার জন্য, এই করে করে সন্ধ্যা হয়ে গেল, এইবার অস্কার আমাদের নিয়ে চললো ডিনারে।
রেস্টুরেন্টের সামনে আমাদের নামিয়ে দিয়ে বললো, তোমরা বাইরের এক টেবিল নিয়ে বসো, আমি গাড়ী পার্ক করে আসি।
আমরা টেবিল একটা চয়েজ করে বসে পড়লাম, একটু পর অস্কার এসে জয়েন করলো।
ওয়েটার এলো অর্ডার নিতে, অস্কার ইটালিয়ান ভাষায় ভুং ভাং করে অর্ডার দিলো।
একটু পর ওয়েটার আমাদের রেড ওয়াইন সার্ভ করে গেলে আমি চিয়ার্স করলাম অস্কারের দীর্ঘ আয়ু কামনা করে।
আমাদের পানিয় পানের মাঝে এক ছেলে এগিয়ে এলো ফ্লাওয়ার ফ্লাওয়ার, নাইস ফ্লাওয়ার করে করে, কাছে এসে আমাদের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ পড়তেই ব্যাটা দেখি উল্টো পায়ে হাটা দিলো, আমি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, দেখি ভাইও অবাক, আমাকে বললো কাদের ভাই না (ছদ্মনাম)?
আমি হাঁ বললাম।
একটু পর কাদের আবার এলো, এসে বললো, ভাই আমাকে চিনে ফেলেছেন না?
ছোট ভাই বলে উঠলো, না না কাদের ভাই, আপনাকে আমরা চিনি নাই।
ও লজ্জিত হয়ে বললো, আসলে আপনাদের এইখানে দেখে আমি ভয় আর লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম, আসলে ইটালি এসে আমি কোনো কাজ না পেয়ে এই কাজ করছি, প্লিজ দেশে কাউকে বলবেন না।
আসলে কাদের ছিলো বিখ্যাত এক পরিবারের ছেলে, ওর বড় ভাই মাল্টি মিলিয়নিয়ার।
আমরা ওকে অভয় দিয়ে বিদায় দিলাম।

একটু পর খাবার আসতে লাগলো, প্রথমে এলো লবস্টার, লবস্টার শেষ হলে এলো ল্যাম্ব (ভেড়া) চপ, পাস্তা লাসানিয়া।
খাওয়া শেষে অস্কার বললো, সে খাওয়ার পর ড্রিংক করে, আমরা করবো কিনা?
ভাই অনিহা দেখালে, আমি অস্কারকে বললাম, কোন ড্রিংকস খাবে তুমি?
সে বললো, ইটালিয়ান এক ড্রিংক আছে, নাম গ্রাপ্পা, খুব বেশি এলকোহল যা তুমি খেলে বেহুশ হয়ে যাবে, তুমি অন্য ড্রিংক নাও।
বলে কি ব্যাটা, দেশ বিদেশ ঘুরি আমি, বিভিন্ন ড্রিংকস চেখে দেখি আর এই দেশে এসে গ্রাপ্পা খাবোনা, এইটা হয় নাকি?
আমি বললাম, তুমি কয়টা খাবে (কয় পেগ)?
সে বললো, চারটা, আপাতত একটার অর্ডার দেবে।
আমি বললাম, ওকে তুমি দুইটা গ্রাপ্পার অর্ডার দাও।
সে বুঝতে পারলো, আমি দমার পাত্র নয়, তখন অর্ডার দিলো, সাথে এও বললো, এই একটাই, এরপরে আর পাবেনা, দরকার হলে অন্য ড্রিংকস নেবে।
আমি চুপ মেরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
গ্রাপ্পা সবুজ আঙ্গুর থেকেই হয় কিন্তু এলকোহলের মাত্রা অনেক।
গ্রাপ্পা এলো, দুজনে চিয়ার্স করে শুরু করলাম, খেতে খারাপ না, দুজনে একে একে চার চারটা পেগ শেষ করার পর সে নিজেই বন্ধ করে দিয়ে বললো, বুঝেছি তুমি থামবে না, তাই আমিই থেমে গেলাম।
আমি মিষ্টি এক হাসি উপহার দিলাম তাকে।

চলবে.........

Images: Google.

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ