ভ্রমণ কথকতা………২

ছাইরাছ হেলাল ২০ মে ২০১৭, শনিবার, ০৮:১০:৫৯পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ১২ মন্তব্য

পা দেবে যাওয়া বাহারি নকশাদার ভারী কার্পেটে পা-ফেলে হেলে-দুলে হাঁটতে ভালই লাগে, সকাল ন’টায় ফ্লাইট, অখণ্ড অবসর, ভিড়হীন ফাঁকা সুনসান ঘুমঘোর টার্মিনাল। জুতমত জায়গা দেখে বসলাম, কাছেই পানি, ওয়াশ-রুম ও ধুমা-রুম।
অখণ্ড অবসর খণ্ড খণ্ড হবে এবার।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া বা আনন্দ ভ্রমণে এসে নাক-সিধা হেঁটে যাব!! নৈবচ-নৈবচ। পঞ্চম ইন্দ্রিয় নয় শুধু দশম ইন্দ্রিয় বগলদাবা করেই পথে নেমেছি, কিছুই যাব-না ফেলে, অসাধ্যটুকুও কুড়োবা মনের আনন্দে।

ঘুমের সাড়া পাচ্ছি না, তাই যথাবিহিত কাম-কাইজ শুরু হয়েই যায়। একে-একে নানান খণ্ডে। অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ঘুম-রাজ্য পর্যবেক্ষণ থেকে শুরু করে চকোলেট-সুন্দরী, ঘড়ি- সুন্দরী, সুগন্ধ-সুন্দরী, সুরা-সুন্দরী, ধুমা-সুন্দরী থেকে বার্গার-সুন্দরী, প্রত্যেককে নিয়েই গল্প হতে পারে, হয়েছে-ও। টুক টুক করে বলা যাবে সময় করে, এই পোর্টেই-তো আরব্য রজনীর হাজার গল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে!! অন্য-গল্প কখন কী ভাবে জানাব আল্লা মালুম।

চলুন এবার আপনাদের সাথে ধুমা-সুন্দরীর সাথে দেখা করিয়ে দেই।

বিপুলায়তন স্মোকিং রুমটি বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, প্রথমে একটু টাইট টাইট, তারপর শুধুই আনন্দাবস্থা, এখানে তিনটে রুম, প্রথমটি ছয়-ছোট্ট, এখানে মাল-ছামানা রেখে সবার মত আমরাও প্রবেশ করলাম, ভাল কথা আমি বিড়ি-খোর না, তবে টোবাকো ফ্লেবার আমার পছন্দ, আর এই-ই টোবাকোর র’ ঘ্রাণের টানেই এখানে আসা ও পাওয়া।

দ্বিতীয় রুমটি বেশ বড়, এখানে মূলত হাল্কা হেলান দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখতে ধোয়ায় হারিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা, অল্প কয়েকটি বসার ব্যবস্থাও আছে, বসে-না দু’এক জন ছাড়া, এর পরের রুমটি বিশাল, বিস্তর আয়োজন আরামে উরু মেলে হাত-পা ছড়িয়ে ধোঁয়ার উদগীরণের দারুণ ব্যবস্থা, সব মিলিয়ে এখন আসা যাওয়া মিলিয়ে জনা পনের মানুষ কর্মে ব্যস্ত আছে। হেঁটে-হেঁটে-দাঁড়িয়ে বা ঠেস দিয়ে এদের ধুয়া-ভ্রমণ দেখছি মন দিয়ে। অবাক বিষয় প্রতিটি মানুষের সিগারেট হাওয়ার ভঙ্গি আলাদা আলাদা, সে নর বা নারী, সুন্দর বা অসুন্দর (কুৎসিত বলছি না)। অসংখ্য এ্যাস্ট্রে লক্ষ্য করে দেখলাম, ফেলে দেয়া সিগারেটের নানা আকৃতি, প্রায় আস্ত থেকে শুধু পোড়া ফিল্টার পড়ে আছে, আবার সিগারেট নেভাচ্ছেন ফেলে দেয়ার আগে, তা-ও একেক-জন একেক রকম, দেখছি আর দেখছি।

এক লোলচর্ম বৃদ্ধকে দেখলাম পেল্লায় আকৃতির সিগার বের করলেন, যেমন লম্বা তেমন মোটাও, কৌতূহল বেড়ে গেল, এই বৃদ্ধ এটা দিয়ে কেমনে কী করবে!! প্রায় কাঁপা কাঁপা হাতে মুখ দিয়ে কাটলেন মুখে দেয়ার অংশটি, দু’হাতে এক-হাতে নানা রকম টেপাটিপি করলেন, একটু পর পর গন্ধ নিচ্ছেন, আহা!! সে কী এক তৃপ্ত-আনন্দের চোখ-মুখ। একটু আবছায়ায় দাঁড়িয়ে দেখছি আর দেখছি, পকেট হাতড়ে জিপো বের করে আগুন জ্বালালেন, একটু শেকেও নিলেন, ভাবছি এত্ত বড় জিনিশটি কী করে মুখে পুড়ে সামলে নিয়ে টানবেন!! নীল কটু গন্ধি (আমার পছন্দ) ধোঁয়া উড়িয়ে সফল হলেন, হাল্কা খকখকে কাশি সহযোগে। শান্তি পেলেন, পেলাম।

হঠাৎ চোখ গেল এক সুন্দরীর দিকে, বর্ণনা যখন অর্থহীন, এখানে এই ধোয়ার-রাজ্যে অনেকের মধ্যে সে একজন, আমার কাছে অন্যতম-ই মনে হলো, সিগারেটকে সত্যি ভালোবাসলে হয়ত এমন করেই ভালোবেসে আপন করে নিতে হয়। অনিন্দ্য সুন্দর দাঁতের মৃদু দংশন ও মসৃণ রংহীন ভেজা ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় ছোট ছোট পাফ নিচ্ছেন অর্ধ নির্মিলিত হরিণ চোখে সিগারেটটি-তে চোখ রেখে রেখে, ভালোবাসার গভীরতম বিচ্ছুরণে। দেখে দেখে অবাক হচ্ছি। হঠাৎ সিগারেট-টি আধ-খাওয়া অবস্থায় রেখে, যেন একটু নড়েচড়ে বসলেন, চোখে পলক না ফেলেই দেখে যাচ্ছি না-দেখা- দূরত্বে স্বল্প-আলোকে আড়ালে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, কিছু একটা খুঁজছে, খুঁজছে। সামান্য হাসি-হাসি মুখে সিগারেট খেতে-খেতে, এই-রে!! ধরা!! আমাকে দেখে ফেলেছে!! মনে হচ্ছে। ফিফথ সেন্স না ছাই, এ-দেখি টুয়েলভথ সেন্স, দূর থেকে সিগারেট প্যাকেট (মার্লবোরো রেড) বাড়িয়ে নিতে বলছেন, প্রথমে ভাবলাম অন্য কাউকে নাকি!! এপাশ-ওপাশ তাকালাম, তাতে তাঁর হাসি আরও বিস্তৃত হয়েছে দেখে বুঝলাম সত্যিই ধরা, ইশারায় ক্ষমা প্রার্থনা করে জানালাম আমি বিড়ি খাই-না, পাশের জায়গা দেখিয়ে কাছে এসে বসতে বললেন ....... এরপর সব-ই ইতিহাস।

বড় রুমে উদ্যমী সাহসী করিৎকর্মা জিসান সাহেব একটি মেরে দ্বিতীয় বিড়িতে যাওয়ার আগে সাধ্যমত সাঙল দিচ্ছেন পানি খেয়ে।

চলিবে,
পাঠকদের টিয়া, ময়না, ঘুঘু, বক ও মদনটাক!!

0 Shares

১২টি মন্তব্য

  • নীহারিকা

    হাহাহাহা শেষে কিনা এইভাবে ধরা খাইলেন? কিন্ত পাশে বসিবার পরের ইতিহাস যে পাঠক্কুল জানিতে উদগ্রীব তাহার কি হইবে? এইভাবে একের পর এক ইতিহাস গড়িয়া আপনি কি ভাবিয়াছেন, পার পাইয়া যাইবেন? তাহা হইবে না।
    কিন্ত কথা সেইটা না, কথা হইলো ফডু কই? সেই সুন্দ্রীরে না দ্যাকলে তো শান্তি পাচ্ছি না। তার ধুম্র পানের যা বর্ণনা দিলেন তাতে তো আমিই কাইত।

  • শুন্য শুন্যালয়

    কাকতালীয় সবই, বিশ্বাস করুন এই প্রথম পড়ছি লেখাটি। ভাবছিলাম আজকেই, সিগ্রেটখোর মেয়েদের মনেহয় ছেলেরা বেশ লাইক লুইক করে আর তা যদি সুন্দ্রি হয় তো কথাই নেই। আবার ইহাও সত্যি সুন্দ্রীদের গালাগালিও বিস্তর উপভোগ্য, ঠিক কিনা আপনারাই জানেন।
    ডেকে নিয়ে ইতিহাস বানালো, গল্প ফাঁদার আর জায়গা পাইলেন না, না? তা গপ্পো শুনতে মন্দ নয়।
    অখন্ড অবসর শুধু খন্ড খন্ড নয়, পুরাই গুরা গুরা, রোল করে টেনে নেবার অপেক্ষায়।
    জিসান সাহেব দ্বিতীয় বিড়ি, গুড। তুমি কী কুয়াশা! ধোঁয়া ধোঁয়া ধোঁয়া।

    • ছাইরাছ হেলাল

      এ লেখায় অবশ্যই ধুম্র-সুন্দরীর প্রতি মুগ্ধতা আছে, ভাইসভারছা।
      আহা, গালাগালি আর ভালোবাসা তো একই মুদ্রা,

      দেখুন, হাক্কায় লাড়া (নাড়া) যখন দিয়েই ফেললেন তখন দেখুন ইতিহাসের সুন্দরী কত কত কথা বলেরে।
      আর ইতিহাসের জিসান অনুষঙ্গ-ও অচিরেই দেখতে পাবেন। ভাগ্যিস ফ্লাইট ডিলে হয়নি, মহাকাব্যের সামান্য বাকি-ই
      র‍য়ে গেল। মরার কত ফ্লাইট ডিলে হয়, এইডা হয় নাই।

      আচ্ছা, জিসান সাহেব বিড়ি না তৃতীয় সিগারেট ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে ভাগাভাগি করেই খেয়েছেন।
      ভাবছি সিগ্রেট খাওয়াটা ধরেই ফেলতে হবে। ভাগ করে খাওয়ার সে কী যে আনন্দ নিজ চৌক্ষে দেখলাম।
      ভাল কথা, লেখা মন্দ হয়েছে তা কিন্তু বলতে ভুলে গেছেন;

      • শুন্য শুন্যালয়

        ধুর ধুর কিসের ভালো মন্দ, যা লেখেন সবই আউলফাউল, নতুন করে আবার কী বলবো? পুরা লেখা পইড়া আমিও ভাবতাছি সিগ্রেট খাওন আবার শুরু করুম। এম্নে করে আক্কেল বেক্কেল হারাইয়া কেউ সিগ্রেটখোরদের খেয়াল করে এইটাই দুইদশ আশ্চর্য। :@

      • ছাইরাছ হেলাল

        দেখুন সবাই কিন্তু ধুম্র-সুন্দরী হইতারে-না, তয় আপনে চেষ্টা-চরিত্রির করে দ্যাক্তারেন,
        আমিও খামু ঠিক করছি, সুন্দরীর সাথে ভাগে!!
        ভাই সে এখখান ঘটনা বটে, আমি শিউর আপনিও সেই সুন্দরীর প্রেমে পড়ে যেতেন!!

  • জিসান শা ইকরাম

    স্মোকিং রুমটি দেখি এক্কেরে চউক্ষের সামনে নিয়া আসলেন 🙂
    এত্ত কিছু দেহেন ক্যামনে?
    বর্ণনায় তো পুরাই টাসকি খাইয়া গেলাম।

    আমারো তো ইচ্ছা হইতাছে ভ্রমনের লেখা লেখি,
    ভ্রমন কাহিনী সংক্রামক নাকি?

    লেখা চলুক, নো থামাথামি।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    ধূম্র-সুন্দরী তাইলে এইহানে!!!
    ধুয়া কম টানি নাই। একরাতে পুরা এক প্যাকেট বেনসন টেষ্ট করিয়াছি। বন্ধুদেরও সঙ্গ দিয়াছি। তয় ওই ধুয়া মোটেও পছন্দাইতে পারলাম না।
    আপনার ভ্রমণ কাহিনীতে সুন্দরী না থাকলে ভালু লাগতো না। এটাই তো কুবিরাজ ভাইয়ের লেখার বিশেষত্ব। 😀

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ