বিশ্বাস অবিশ্বাস

ইঞ্জা ৫ মে ২০১৭, শুক্রবার, ০৭:১৬:০৪অপরাহ্ন অন্যান্য ২৫ মন্তব্য

images-15

 

 

জীবনে অনেক কিছুই অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ঘটে যায় যার কোনো ব্যাখা নেই, কিন্তু বিশ্বাস না থাকলেও অবিশ্বাসও করা যায়না, অনেকটা বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।

আমরা যারা শিক্ষিত মানুষ আছি যারা অদ্ভুতুড়ে বিষয় গুলোকে বিজ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণ করেন কিন্তু যা বিজ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায়না, তা নিয়ে ভাবতেই হয় নাকি?
আজ আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু অদ্ভুতুড়ে ঘটনা নিয়ে এই লেখাটি, চাইলে আপনারাও বিশ্লেষণ করতে পারেন।

ঘটনা ১।

আমরা থাকতাম তখন চট্টগ্রামের এক গিঞ্জি এলাকায়, যেখানে গাড়ী প্রবেশ করতে পারতোনা, আমার আব্বার প্রথম নিজস্ব বাড়ী, আমাদের ছোটবেলার বড় একটা সময় এই বাসায় কেটেছে।
একদিন মধ্য রাতে সবাই ঘুম আর সেইসময় হটাৎ কুটকাট, ধুপধাপ শব্দে সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল, সবাইর ঘুম ভেঙ্গে গেল, বড়রা ভালো করে বুঝার চেষ্টা করলেন কোথা থেকে এই শব্দ আসছে, একসময় বুঝতে পারলেন ড্রয়িংরুম থেকে আসছে যা রাতে দরজা লক করে রাখেন, বড়রা পা টিপেটিপে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে যেইনা লক খুলার জন্য গেলেন, তখনি আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল, ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে সবাই পুরা রুমটাই আতিপাতি করে খুঁজলেন, সব ঠিকঠাক, কিছুই নেই যাতে শব্দ হতে পারে, একি ভাবে পরদিনও হলো আর আমার আব্বা অপেক্ষা না করেই পরেরদিন নামকরা কিছু হজুরকে নিয়ে আসলেন, উনারা সারা ঘরকে কোরআন শরিফের দোয়া দিয়ে ঘর বন্ধী করলেন, বড় হজুর বললেন এই ঘরে ভালো জিন আছে, এরা কাউকে কোনো ক্ষতি করেনা, এখন থেকে আর সমস্যা হবেনা, আপনারা নিশ্চিন্ত ভাবে ঘরে থাকতে পারেন।
আরেকদিন আমার আব্বা আমাদের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গেলেন, সন্ধ্যার শো বলে ঘরে ফিরতে রাত হয়ে গেল, ঘরের কাছাকাছি আসতেই দেখলাম প্রচুর লোকজন আমাদের বাসার গেইটে জমা হয়ে রয়েছে, কি ব্যাপার, কি ব্যাপার?
পাড়ারই লোকজন জানালো আমাদের বাসায় ডাকাত পড়েছে, বাসার ভিতর থেকে প্রচুর ধুমধাম আওয়াজ হচ্ছে, আব্বা বুঝতে পেরে উনাদের বললেন, আপনারা কয়েকজন আসুন আমার সাথে, ষণ্ডামার্কা কয়েকজন আব্বার সাথে ঘরে গেলেন, দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে আতিপাতি করে খুঁজে কাউকে পেলেন না, আব্বা বুঝতে পেরে সবাইকে বিদায় দিয়ে আমাদের নিয়ে ঘরে সেইরাত থেকে গেলেন, পরদিন ডাক পড়লো আমার নানার, নানাকে বললেন এখন থেকে এই বাসায় আপনি থাকুন, আপনার সাথে ইঞ্জাও থাকবে ড্রয়িং রুমে, আমি তো পিচ্ছি, আমি কি বুঝি?
নানা আসার খুশিতে নানার সাথে আনন্দের সাথে ভুতুরে ড্রয়িংরুমে থাকতাম আর এতে লাভ হলো সমস্যা আর নেই হয়ে গিয়েছে।
জনশ্রুতি আছে, জায়গাটাতে বড় এক পুকুর ছিলো যেইটার উপর আমাদের বাসা ছিলো।

ঘটনা ২।

আমাদের নতুন বাসা নাসিরাবাদ সোসাইটিতে, আব্বা খুব শখ করে ৩৪০০ স্কয়ার ফিটের বাসা বানিয়েছিলেন সাড়ে দশ কাটার উপরে, সামনে বড় উঠান আর সাথে বিরাট বাগান, আমরা সবাই খুব খুশি নতুন বাসায় এসে, কিন্তু সমস্যা হলো রাতে, রাতে হঠাৎ হটাৎ ছাদের উপর হতো পাথর বর্ষণ, না হয় ছাদে কেউ ইট টেনে ঘষে নিয়ে যেতো, আমরা দৌড় দিয়ে ছাদে যেতাম আর পাথর বর্ষণ বন্ধ, ইট ঘষটানোও বন্ধ, টর্চ নিয়ে পাথর, ইট খুঁজতাম, ইট ঘষ্টানোর চিহ্ন খুঁজতাম কিন্তু না থাকতো পাথর না থাকতো ইট টেনে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন, অবাক কান্ড, এখনো পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হয়নি।

ঘটনা ৩।

আমার সেজ চাচা মৃত্যু পথযাত্রী, কি রোগ হয়েছে ডাক্তার বৈধ্য কেউ ধরতে পারেন না, চাচা মুখে পানিও পান করতে পারছেননা, এই মরে তো এই মরে অবস্থা, আমার অবিশ্বাসী আব্বা উনার বড় ভাইকে দেখে আর থাকতে পারলেন না, মনে উনার অনেক প্রশ্ন, উনি আমাকে ডেকে উনার দুজন কাজিন, আমার এক কাজিন আর সাথে আরেকজন অপরিচিত মানুষকে দিয়ে বললেন, ইঞ্জা তুই লং ড্রাইভ করতে পারবি?
তখন আমি শহরে বেশ গাড়ী চালাই, ১৩ বছর বয়সে লম্বা ছিলাম বলে ড্রাইভিং লাইসেন্সও পেয়েছি কিন্তু শহরের হাইওয়েতে গাড়ী চালাইনি তখনো।
আমি বললাম পারবো, আমাদের পাঠিয়ে দিলেন ফেনিতে, ফেনিতে পোঁছানোর পর অপরিচিত মানুষটি আমার আব্বার কাজিন একজনকে নিয়ে এক বাসায় গেলেন আমাদের গাড়ীতে বসিয়ে রেখে, ঘন্টা খানেক পর নতুন আরেকজনকে নিয়ে এসে গাড়ীতে চেপে বসলে আমি আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
চাচার বাসায় পোঁছে উনাকে পাশের বাসায় নিয়ে গেলাম, উনি বললেন, উনার শক্ত পোক্ত ৮/১০ জন মানুষ লাগবে, যারা খবই শক্তিধর হবে, দেওয়া হলো, উনি বললেন, আমি এখন হাজিরায় বসবো, বসার পর যদি আমি উঠে দাঁড়াতে চাই, আমাকে চেপে ধরে বসিয়ে দেবেন, না হলে আমি যেই জীন হাজির করবো, উনারা আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবেন।
সবাই রেডি, উনি হাজিরায় বসে জীনকে হাজির করার চেষ্টা করছেন, এক পর্যায়ে উনি উঠে যেতে চাইলেন কিন্তু ষন্ডারা চেপে ধরলো সবাই কিন্তু উনাকে কোনভাবেই বসিয়ে রাখা অসম্ভব হচ্ছে, সবাইকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, এক সময় উনি ঠান্ডা হলে বললেন, চলেন ঘরের বাইরে যেতে চাই, বাইরে এসে উনি চাচার ঘরের বাইরে এক কোনায় একটু খুঁড়লেন, সেইখানে পাওয়া গেল ছোট ইনজেকশনের সিসি বোতল, যাতে খুবই অল্প পানি, একটা নখের টুকরা আর ছোট লুঙ্গির টুকরা দিয়ে টাইট করে ডাকনা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, উনি ডাকনাটা খুলে নখ আর লুঙ্গির টুকরা দিয়ে বললেন, রুগীর লুঙ্গি আর পায়ের নখের সাথে মিলিয়ে দেখুন।
আমরা ওগুলা নিয়ে দৌড়ে চাচার কাছে গিয়ে অবাক, চাচা উঠে বসেছেন আর খেতে চাইছেন, সবাই আশ্চর্য হয়ে চাচার পরনের লুঙ্গি গুলোর মাঝে খুঁজে একটাতে ছেড়া অংশ পেলেন, নখের সাইজও সেইম, চাচা একদম সুস্থ।
আমার অবিশ্বাসী আব্বা বিশ্বাস করে খুশিতে ডগমগ।

ঘটনা ৪।

আব্বা অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছেন, এক বয়স্ক ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইলে আব্বা নিজেই উঠে গিয়ে উনাকে কিছু টাকা পয়সা দিলেন।
ভিক্ষুক বললেন, যা তুই বাসায় যা, তোর একটা ছেলে হবে, ওর নাম রাখবি গোলাম নবী।
আব্বা তো অবাক, কোন কথা নেই বার্তা নেই, একি বললেন ঐ ভিক্ষুক, অফিস ছুটির পরে বাসায় এসেই পেলেন সুসংবাদ, আম্মা প্রেগন্যান্ট, আগেই একটা মেয়ে আছে উনাদের, শুনে আব্বা মহা খুশি।
এক সময় উনার ঘর আলো করে দ্বিতীয় সন্তান হলো, তাও ছেলে, আব্বার ইচ্ছেতেই নাম লেখা হলো গোলাম নবী।
গোলাম নবীর জম্মের সময় সবাই খেয়াল করেছিলো বাম হাতে একটা তাবিজ বাধার সুতা, যাকে আমরা তাগিয়া বলি তা জম্মগত ভাবেই বাধা আছে, ছেলে যত বড় হয়, তাগিয়া ততই হাতের মাঝে চাপ বাড়াচ্ছে, মুরুবনিরা তাগিয়া কেটে দিলেন কিন্তু তার দাগ আজো রয়ে গেছে বাম হাতে।
ছেলেটি বড় হতে লাগলো, যখন সে ফোর ফাইভে পড়ে, সে ভোর রাতে সপ্ন দেখে যে তাদের বাসার দক্ষিণ দিকে বড় এক আগুন লেগেছে বিকেল চারটার দিকে, সকালে আব্বা অফিসে যাওয়ার প্রাক্কালে ছেলেটি বললো, আব্বা তুমি অফিসে যেওনা আজ, আমি সপ্নে দেখেছি, দক্ষিণের ঐদিকে বড় আগুন লেগেছে।
ঘরের কেউ পাত্তা দিলোনা কিন্তু কথাটি সত্যে পরিণত হয়ে গেল, বড় ধরণের আগুন লাগলো সেই জায়গাটিতে।
ছেলেটি একদিন ভাবছিলো, আহা আমার দাদী যদি মারা যান তাহলে আমার আব্বা কষ্ট পাবে।
মধ্যরাতে খবর এলো দাদী আরর নেই।
এমনি অনেক ঘটনা ছেলেটির সাথে জড়িয়ে আছে, হয়তো আপনারা বলবেন ইন্টিউশন, বা ফালতু, কিন্তু কথাটি খুবই সত্যি।
ছেলেটির ডাক নাম ইঞ্জা।

সমাপ্ত|

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ