ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, বাহ কি দারুণ কথা, বিশ্বে কোন না কোন কারণে ঢাকার নাম এলো তাহলে, আমাদের তো নাচা উচিত ধেইধেই করে কিন্তু একটা বিষয় শুনে তো চমকে উঠলাম, বছরে প্রায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার মানুষ ইন্না লিল্লাহ খায়ঃ সূত্র আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কি খুব মজা লাগছেনা?
আপনারা জানেন কি, বিআরটিএর তথ্য মতে ঢাকায় ৮ লক্ষ রেজিস্ট্রশনকৃত গাড়ী চলে আর তার মধ্যে প্রায় এক লক্ষ ফিটনেস বিহীন গাড়ী আছে, তাহলে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কতো গুলো গাড়ী চলছে তা মনে মনে অংক করে ফেলতে পারেন নিশ্চয়, এ সাথে বিআরটিএ বলছে মোটর সাইকেল ফিটনেসের আওতায় নেই, বুঝুন ঠ্যালা। এই গাড়ীগুলোর ধুয়া এই ঢাকা শহরকে যথেষ্ট বিষাক্ত করে তুলছে আর সাথে গোঁদের উপর বিষফোঁড়া হিসাবে আছে ফিটনেস বিহীন গাড়ী আর মোটর সাইকেল গুলো।
এরপর আরো কিছু আছে ঢাকার বায়ুদূষণে দায়ী আর তা যথাক্রমে ঢাকা মেট্রোর আসে পাশে গড়ে উঠা ইটখোলা, নতুন বিল্ডিং তৈরীতে প্রচুর ধুলাবালি, রাস্তাঘাট উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ির ধুলা সব মিলিয়ে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে।
এই দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি তা সরকার ভাবেনা কেন, উত্তর সরকার দেয়না কেন তা প্রশ্ন করবে জনগণ কিন্তু আমার নিজের একটি উপায় বা মতামত আছে এই দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার যা সরকার চাইলে ব্যবহার করে দেখতে পারে, আমারটা ছাড়াও সরকার নিজেদের ব্যবস্থা নিতে পারে কিন্তু মোদ্ধা কথা হলো এই বায়ুদূষণের মাত্রা অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে আর তা না হলে এই শহর হবে মৃত্যুপুরী, লাখে লাখে লোক মরতে থাকবে কিন্তু সরকার তখন কিছুই করতে পারবেনা।
আমার মতামত হলো, সরকারের উচিত এই মূহুর্তেই যত ফিটনেস বিহীন গাড়ী আছে তা জব্দ করে ডাম্পিং করা বা ধ্বংস করে ফেলা।
যত বাস, কার বা ছয় চাকা, চার চাকার গাড়ী চলে তাদের অল্টারনেটিভ দিন হিসাবে চালানো, যেমন মনে করুন, জোড় সংখ্যার গাড়ী রবিবার চললে, বেজোড় সংখ্যার গাড়ী সোমবার চলিবে আর এতে প্রতিদিন গাড়ী কম সংখ্যক চলার কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা কমতে থাকবে, হয়ত প্রশ্ন থাকবে বাস ট্রাকের ইনকাম কমে যাবে, তাহলে আমি বলবো কমবে না বই বাড়বে, কারণ প্রতিদিন গাড়ী গুলো নিজেদের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে যাত্রী তুলার জন্য আর এতে আনুপাতিক হারে প্যাসেঞ্জার কম হয় আর অলটারনেটিভ ভাবে গাড়ী চালালে এই ঠেলাঠেলি বন্ধ হবে সাথে প্যাসেঞ্জার বেশি পাবে মানে ইনকাম ডাবল।
বিআরটিএকে আরো শক্ত হতে হবে, লক্কড় যক্ষড় গাড়ী যেন ঢাকা সহ সারাদেশে নামতে না পারে তা অবশ্যই বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এক ফ্যামিলি একটা গাড়ী নীতি করতে হবে, দরকার হলে ইঞ্জিন চালিত গাড়ী কমিয়ে দিয়ে সরকারি ভাবে সুইডেন, জার্মানির মতো সাইকেলের ব্যবস্থা করতে হবে প্রতি এলাকায় যা ঘন্টা হিসাবে ভাড়ায় পাওয়া যাবে।
আমার এইসব মতামত ফলো করতে গিয়ে হয়তো মালিক, শ্রমিক সমিতির আন্দোলনের মুখে পড়তে পারে সরকার কিন্তু এতে সরকারকে দমে গেলে হবেনা, দরকার হলে আন্দোলনরতদের পিটিয়ে কাঁঠাল পাকিয়ে হলেও আন্দোলন শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
গাজীপুর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা বা ঢাকার আশেপাশে থেকে মানুষ আসা যাওয়ার জন্য মুম্বাইয়ের মতো সিটি ট্রেইনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন মানুষ আশেপাশে থেকে প্রতিদিন এসে অফিস এটেন্ড ও অন্যান্য কাজ সেরে ঘরে ফিরে যেতে পারে, এতে গাড়ী বোঝায় করে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আর জীবন নিয়ে গাড়ী বোঝায় করে আর আসবেনা।
আসুন বাকি গুলো নিয়ে আলাপ করি, ইট প্রস্তুতকারিদের বাধ্য করতে হবে অত্যাধুনিক মেশিনারি ব্যবহারে যাতে দূষণ কমানো যায়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে এবং যেখানে খোঁড়া হবে সেইখানে সেইদিনই কাজ সেরে ধুলাবালি মুক্ত করতে হবে প্রতিদিন, প্রতিদিন রাতে রাস্তা ধোয়ার গাড়ী রাস্তার ময়লা চুষে নেবে আর পানি দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে নেবে, এতে ধুলাবালির দূষণ কমে যাবে।
নতুন বিল্ডিং তোলার ক্ষেত্রে ধুলাবালি যেন উড়তে না পারে তার ব্যবস্থাপত্র দেবে রাজউক এবং কঠোর ভাবে তা পালন করছে কিনা নজর রাখতে হবে।
প্রতিটি বাড়ীতে বাধ্যতামূলক গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে, জায়গা খালি না থাকলে, ছাদে লাগানোর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সরকার যদি এইসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন আশা করি আমাদের ঢাকা আবার বসবাস উপযোগী হয়ে উঠবে অন্যথায় মরণ ছাড়া উপায় থাকবেনা।
২৪টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
খুবই সুন্দর ও সময়োপযোগী লেখা। দিন দিন যেভাবে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে তাতে ভবিষ্যৎ কেমন তা সহজে অনুমেয়। বায়ু দূষণ কমাতে মতামতগুলো খুব ভালো লেগেছে।
ইঞ্জা
দাদীজানের নাতি আমি, যাতা কিছু নিয়ে তো আর লিখতে পারিনা। 😀
নিহারীকা জান্নাত
ঠিকই কইছুইন।
ইঞ্জা
😀
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
বিষয়টা নিয়া লেখালেখি হচ্ছে ব্যপক হারে। কিন্তু হর্তাকর্তারা তো এইদিকে নজর দিবেন না। এই লেখালেখির একটা লেখাও যদি হর্তাকর্তারা পড়তেন তাহলে ব্যপক পরিবর্তন চলে আসতো।
ইঞ্জা
কে বলেছে শুনেননা, আমি, আপনি, আমরা যদি লিখালিখি করি তাহলে শুনতে বাধ্য উনারা কিন্তু চোখে যদি টিনের চশমা, কানে টুলি দেয় তাহলে অন্য কথা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার সচেতনতার জন্যই এমন বিষয়ভাবনা চলে এসেছে,
বায়ু দুষণের ভয়াবহতা আমার টের পেতে শুরু করেছি।
দরকার সমন্বিত উদ্দ্যোগ, সেটি না নেয়া পর্যন্ত আমাদের নিস্তার নেই।
ইঞ্জা
সহমত ভাইজান।
আবু খায়ের আনিছ
ঢাকা নাকি বিশ্বের সাত নাম্বার মেগা সিটি! শুনে আমি আশ্চর্য হই। সাধারণত মেঘা সিটিগুলো কখনোই ঘুমায় না কিন্তু আমাদের এই শহর রাত আটটার পরেই আতঙ্কের নাম হয়ে যায়, ঘুমিয়ে পড়ে দশটার মাঝেই।
এত ছোট্ট একটা জায়গায় চারকোটি মানুষ বাস করে এটা ভাবতেই তো ঘা শিউরে উঠে, যদি এই সবগুলো মানুষ এক সাথে বাসা বাড়ি অফিস ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে তাহলে জায়গা দিতে পারবে না এই ঢাকা।
এই শহরকে কে নিয়ে যে সব পরিকল্পনা করছে সরকার তার সবগুলো ব্যর্থ হয়ে যাবে কিছুদিন পরেই, এখানে সবচেয়ে কার্যকরী পরিকল্পনা হবে মানুষকে ঢাকা বিমুখী করা।
ইঞ্জা
সহমত ভাই।
জিসান শা ইকরাম
বিশ্বের আর কোথাও এমন লক্কর ঝক্কর মার্কা গাড়ি চলাচল করেনা,
ঢাকা শহরে যে সমস্ত গাড়ি চলে, এর একটি গাড়িও অন্য কোন দেশের রাজধানীতে চলাচলের অনুমতি পায় কিনা সন্দেহ আছে।
প্রতিবাদ এবং সচেতনতা চলবে আমাদের,
সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে না রাজনৈতিক ধান্ধা বাজির কারনে।
ভাল পোষ্ট।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, সহমত পোষণ করছি।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এদেশে কোন কিছুতেই কিছু হবে না।সবার গন্ডারের চামরা -{@
ইঞ্জা
যথার্থ বলেছেন ভাই।
অপার্থিব
লক্কর ঝক্কর গাড়ির চেয়ে ঢাকার রাজপথের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মাত্রাতিরিক্ত প্রাইভেট কার। এই প্রাইভেট কারগুলো ঢাকার রাস্তার প্রায় আশি শতাংশ দখল করে রাখে অথচ এগুলোতে চলাচল করে নগরের মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ। দিল্লীতে আম আদমি পার্টির সরকার রাস্তায় জোড় বিজোড় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের সিষ্টেম চালু করেছে যা বেশ ভাল ফল দিয়েছে কিন্ত আমাদের এখানে ক্ষমতাবানদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এ ব্যবস্থা চালু হবে না। তবে অর্থমন্ত্রী গত বাজেটে দ্বিতীয় গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ৫০ পারসেন্ট বেশি ভ্যাট আরোপের সিষ্টেম চালু করেছে, দেখা যাক কতটা কাজে দেয়।
ইঞ্জা
আমাদের মনে রাখতে হবে, লক্কর যক্কর টাইপের গাড়ী বেশি বায়ুদূষণ করে আর এই ধরণের গাড়ীর সংখ্যা কিন্তু কম নয়।
দ্বিতীয় গাড়ী রাখাটাই উচিত নয় আর মাল সাহেব মাল কামানোর ধান্ধা ছাড়া আর কিছুই করছেননা কারণ যারা দ্বিতীয় গাড়ী রাখেন তারা কেউ গরীব নন।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
শুন্য শুন্যালয়
মাত্র এক লক্ষ ফিটনেস বিহীন? বিশ্বাসযোগ্য নয়। রাস্তায় একটু তাকালেই নজর পড়বে বাকি সাত লক্ষ কিভাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট পেয়েছে। সরকার মহলের কোন ভ্রুক্ষেপ আছে বলে কী মনে হয়?
ময়লা আবর্জনার কথা বাদ পড়ে গেছে ভাইয়া। ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে গেলে এখন গা ঘিনঘিন করে।
কোন কিছুই বদলাবে বলে মনেহয় না 🙁
ইঞ্জা
জি আপু, বিষয়টা নিয়ে আমার খটকা আছে আর ময়লার ভাগাড় অবশ্যই বায়ুদূষণ করছে।
মৌনতা রিতু
যতক্ষন পর্যন্ত ঢাকা মুখি লোক না কমাবে ততক্ষন এমন অবস্থা চলতেই থাকবে।
আগার গাঁ বস্তির এক পাশে আগে ঢাকার সব থানার জব্দ করা গাড়ি জমা থাকতো। কখনোই তাধ্বংস করতে দেখিনি। জুলফিকার কয়েকবার ওর থানার জব্দ করা গাড়ি, প্রাইভেট কার ও অন্যান্য মালামাল ধ্বংস করার আরজি দিয়েছে কোর্টে কিন্তু তা কখনোই কার্যকর হয় নাই।
রাস্তার দুইপাশে খাবারের গন্ধে তো হাঁটাই যায় না।
অনেক ভাল পোষ্ট ভাইজু। শেয়ার দিলাম।
ইঞ্জা
আপু, আমার মত হলো সরকারের সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা এখনি করা উচিত আর তাহলেই দেশ আগাবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাই এক লক্ষ মনে হয়না!
ইঞ্জা
আপু এক লক্ষ হলো বিআরটিএর মতে, আমার মতে আরো বেশি হবে, দুই লক্ষের উপরে হলেও আশ্চর্য হবোনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
একেবারে ঠিক বলেছেন। দুই লাখের উপরেই হবে।
ইঞ্জা
(y)