বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরো পন্য বিক্রেতা আমেরিকার ওয়ালমার্ট । যারা দেশের বাইরে থাকেন এবং দেশে অবস্থান করে একটু খোঁজ খবর রাখেন তারা সবাই জানেন এই ওয়ালমার্টের বিশালত্বের কথা। সারা বিশ্বে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা হচ্ছে পাঁচ লাখ। খ্যাতনামা এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা। বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়নে এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাসে ওয়ালমার্ট দেশের গার্মেন্টস মালিকদের পাচশত কোটি টাকা স্বল্প সুদের ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
এই ওয়ালমার্টের লন্ডন বিক্রয় কেন্দ্রে পাওয়া এখন হতে পাওয়া বাংলাদেশের আম। আপাতত সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম পাওয়া যাবে। ক্রমান্বয়ে দেশের অন্যান্য এলাকা যেমন মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত অন্যান্য জাতের আমও পাওয়া যাবে।এ বছরের আমার মওসুমে শুধু ল্যাংড়া ও আম্রপালি পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে ওয়ালমার্টের কাছে দেশের ৭ জেলার নয়টি উপজেলার ১৮০ জন আমচাষী নাম লিখিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে আম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও যাবে। ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৩ দশমিক ৭ পাউন্ড (বাংলাদেশী মুদ্রায় সাড়ে ৪শ’ টাকা)।
হঠাৎ কেন বাংলাদেশের আমের প্রতি ওয়ালমার্টের এত আগ্রহ? এক বাক্যে বলতে হবে আমের কোয়ালিটি। ওয়ালমার্ট তো নিশ্চয়ই কোন টক আম কিনবে না, খেতে সুস্বাদু এবং ঘ্রাণে তীক্ষ্ণ আমের প্রতিই তাদের আগ্রহ। লন্ডনের পরে সারা বিশ্বে যদি ওয়ালমার্ট এই আম নিতে থাকে তবে দেশের রফতানী পন্য হিসেবে আম এক নতুন এবং বিশেষ পন্য হিসেবে গন্য হবে। গুণগত মানসম্পন্ন আম উৎপাদনের প্রতি মানষেুর আগ্রহ বাড়বে।
জানা যায়, গত বছর ওয়ালমার্টের প্রতিনিধিসহ একটি বিদেশী দল রাজশাহী সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি জেলায় উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে দেখার জন্য সরেজমিন পরিদর্র্শন করে। এ সময় আমে কোন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা হয। তারপর ওই আম জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে এ সব আম নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পর ওয়ালমার্টে রফতানির অনুমতি পায়।
জাতিসংঘের কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও-এর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম আম উৎপাদনকারী দেশ। দেশে এখন প্রায় দেড় কোটি আমগাছ রয়েছে। বর্তমানে আম উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশ ভারত। এরপরেই রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। আর আম রফতানিকারক দেশের শীর্ষে আছে মেক্সিকো। এর পরেই রয়েছে ফিলিপিন্স, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও ভারত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, বাংলাদেশে গত বছর ৯ লাখ ৪৫ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছে। এ বছর ১০ লাখ টন ছাড়াবে। বিশ্বের আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে আমের ফলন বাড়ছে। ২০১২ সালে দেশে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এ বছর আম চাষ হয়েছে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ৮ লাখ ৯০ হাজার টন আম উৎপাদন করে বিশ্বের অষ্টম আম উৎপাদনকারী দেশ হয়েছিল। গত দু’বছরের মধ্যে দেশে আমের উৎপাদন বেড়ে তা ১০ লাখ টন হয়েছে। আগামী বছর সেটা ১২ লাখ টনে পৌঁছতে পারে। আগামী এক দশকে সেটা ৫০ লাখ টন উৎপাদন করার টার্গেট রয়েছে।
সুত্রঃ-১
২২টি মন্তব্য
স্বপ্ন
আনন্দের খবর। আমের চাষ আরম্ভ করবো নাকি? রফতানীর নতুন পন্য আম। দেশে আমের দাম বৃদ্ধি না পায়।
আশা জাগানিয়া
ভালোই হয়, আমরা একজন আম চাষী পাবো 🙂
স্বপন দাস
নিঃসন্দেহে একটা ভালো খবর।
আশা জাগানিয়া
অবশ্যই ভালো খবর।
প্রজন্ম ৭১
আমি শিওর বাংলাদেশের আম অন্যান্য দেশের আমের তুলনায় মিষ্টি। রফতানী আয়ের আরেকটি খেত্র বৃদ্ধি পেল আমাদের।
আশা জাগানিয়া
আমাদের আম আসলেই মিষ্টি।
শুন্য শুন্যালয়
দারুন একটি খবর। কবে যে এখানে আসবে!! দেশের আম খেতে পারবো এটা ভাবলেই তো অন্যরকম লাগছে। আমাদের দেশের যেটা দেখা দরকার সেটা হচ্ছে প্যাকেজিং। অনেক গুনগত মানের জিনিস আমাদের দেশে। প্যাকেজিং ঠিক ভাবে না করায় সেটা রপ্তানী হলে মান আর ঠিক থাকেনা বলে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
আমের গাছ এবার দেশে লাগিয়ে আসতে হবে বেশি বেশি করে। দারুন দারুন সব খবর শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আশা জাগানিয়া
প্রথম পর্যায়ে যা গিয়েছে তার প্যাকেজিং এ ভালোই তাদারকি ছিল। এর সাথে ওয়ালমার্ট জড়িত, আশাকরি প্যাকেজিং ভালোই হবে। আপনার ওখানে যখন দেশের আম যাবে, আম খাচ্ছেন এমন ফটো দিবেন এখানে 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সু খবর দেবার জন্য ধন্যবাদ।তবে সরকারকে বেশী উদ্দ্যোগী হতে হবে নতুবা এ স্বপ্ন অচিরেই ঝড়ে যাবে।
আশা জাগানিয়া
তদারকি বৃদ্ধি করলেই হবে।
জিসান শা ইকরাম
খবরটা ভালো
তবে অভ্যাস অনুযায়ী আমে ফরমালিন দিয়ে না ফেলে
আর দেশে আমের মুল্য বৃদ্ধি না হয়…
আশা জাগানিয়া
তবে অভ্যাস অনুযায়ী আমে ফরমালিন দিয়ে না ফেলে
আর দেশে আমের মুল্য বৃদ্ধি না হয়… এদুটোর সম্ভাবনাই আছে 🙂
স্বপ্ন নীলা
পোস্টটা পড়ে মনে আশা জাগলো — খুবই ভাল খবর —
আশা জাগানিয়া
আশার খবর এসব,আশা জাগতেই হবে।
ব্লগার সজীব
ভালো খবর।আমাদের দেশে আমার মুল্য বৃদ্ধি না পায় আবার 🙂
আশা জাগানিয়া
কিছুটা পেতে পারে,সবার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে,সমস্যা হবেনা আশাকরি।
খেয়ালী মেয়ে
অবশ্যই এটা একটা ভালো খবর…
ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য…
আশা জাগানিয়া
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
মেহেরী তাজ
তারমানে দেড় কোটি আম গাছের মধ্যে আমার গাছ গুলোও আছে।
আনন্দের ব্যপার।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা খবর শেয়ার করার জন্য।
আশা জাগানিয়া
আপনার আম গাছ থাকলে অবশ্যই আছে।আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
মিথুন
আমরা ফরমালিনের ভয়ে আম খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি, আর আমাদের আম বিদেশে চলে যাচ্ছে 🙁
আপু, ফরমালিন বিদেশে রপ্তানী করা যায়না? তাহলে আমরা একটু শান্তিতে থাকতাম 🙁
আশা জাগানিয়া
বিদেশে বেশী বেশী রফতানি হোক।দাম ভালো পেলে কৃষক ফরমালিন দেয়া ভুলে যাবে এক সময়।
ফরমালিন আমদানী করাই বন্ধ করে দেয়া উচিৎ।