বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের নাম শুরু করলে সবার আগেই আসে একজন প্রবাদ পুরুষের নাম। মহান মুক্তিযোদ্ধা " মাহবুবুল হক আজম" যাকে আমরা পপ সম্রাট " আজম খান" নামে চিনি। স্বাধীনতা পরবর্তি বাংলাদেশী ব্যান্ড মিউজিক সিন শুরুই হয়েছিলো তার গঠিত ব্যান্ড " উচ্চারণ" এর হাত ধরে।
কেউ চলে যায় কাউকে যায়গা দিতেই। চলে আসলো বাংলা ব্যান্ড মিউজিক সিনারিও কে বদলে দেওয়া চারটা ব্যান্ড । বাংলাদেশের চার স্বপ্নের ব্যান্ড " রকস্ট্রাটা, ইনঢাকা , এসেস, ওয়ারফেজ" । হার্ড রক/ হেভী মেটাল দিয়ে পুরো জাতিকে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করেছিলো সর্বপ্রথম কিন্তু এই ব্যান্ড গুলোই। এদের মাঝে ছিলো মিউজিকাল একচেঞ্জ। এরা নামে চারটা ব্যান্ড হলেও সবাই ই ছিলো একে অপরের অনেক কাছাকাছি। ছিলো বিশাল একটা শক্তি। ওয়েভসের দেখানো পথ ধরে বাংলাতেও যে হেভী মেটাল করা যায় তা সেইটা শক্ত ভাবে প্রতিষ্টা করে গেছে ব্যান্ড গুলো। এর পর আসলো " ডিফরেন টাচ, উইনিং ,নোভা , এল আর বি, আর্ক, পেন্টাগন, পেপার রাইম, লিজেন্ড, সুইট ভেনম, অবসকিউর " এর মত ব্যান্ড যাদের সব কিছুই ইতিহাস কে এগিয়ে নিয়ে গেছিলো অনেক অনেক দূরে। এই ব্যান্ড গুলো নিজেরাই একেকটা ইতিহাস যা আমরা সবাই ই জানি।
আইয়রন মেইডেন এর গান শুনতে শুনতে হঠাৎ করেই চার জন বন্ধু প্ল্যান করলো ব্যান্ড করবে এবং তারা গড়ে ফেললো আজকের " ক্রিপটিক ফেইট" । এদিকে বাপ্পা মজুমদার এবং সঞ্জীবদা মিলে অন্য ধরনের ব্যান্ড "দলছুট" সৃষ্টি করলো । ফিডব্যাক ছেড়ে মাকসুদ উল হক তৈরি করলেন তার ব্যান্ড " মাকসুদ ও ঢাকা " । এর পর আসলো বুয়েটের আঙ্গিনায় বেড়ে উঠা একদল প্রবাদ পুরুষ, যাদের গান শুনে রেকর্ড লেভেল প্রথমে ফিরিয়েই দিয়েছিলো ,। তারা আর কেউ নাই আজকের ব্যান্ড " শিরোনামহীন" । গড়ে উঠলো "ভাইকিংস, দ্যা ট্র্যাপ" এর মত ব্যান্ড ।
ওয়ারফেজ বেজিস্ট বেজবাবা সুমন ওয়ারফেজ ছেড়ে তৈরী করলেন এ যুগের অন্যতম সফল ব্যান্ড 'অর্থহীন ' । সেদিন যদি বেজবাবা এভাবে না ভাবতেন , ওয়ারফেজ এর সাথে যদি এখনো থেকে যেতেন , তাহলে কি আমরা পেতাম 'অর্থহীন ' ???
এই ছিলো বাংলার সোনালী নব্বই । গর্বের নব্বই। নব্বই যেমন দিয়েছে আমাদের কে অসাধরন সব গান তেমনি দিয়েছিলো কিছু ব্যান্ড যারা শাসন করেছে ২০০০ পরবর্তী সময়।
সেই ছাড়পত্র এলব্যাম দিয়ে আগমন ঘটালো অনেক আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড যার মধ্যে "আর্টসেল , ব্ল্যাক , মেটাল মেজ, coprophilia , এবং নেমেসিস" অন্যতম। আর্টসেল, ব্ল্যাক, নেমেসিসের পরের খবর তো সবার ই জানা।
এর পর স্টেনটোরিয়ান, আর্বোভাইরাস , ক্রাল , দ্যা ওয়াটসন ব্রাদার্স , রিবর্ন , এর মত ব্যান্ড গুলোও এগিয়ে যেতে লাগলো । শহরতলী নামে সম্পূর্ণ অন্যধারার গান শুরু করলো একদল অন্য জগতের মানুষ । এর পর আসলো আরো একটি মেজর টার্ন । " দ্যা রক স্টার " এই শো এর মাধ্যমে " পাওয়ারসার্জ , রেডিও এক্টিভের, মেকনিক্স , দৃক " এর মত ব্যান্ড চলে আসলো ইন্ডাস্ট্রিতে।
ভাইব । আফসোস এর যদি কোন সমার্থক শব্দ থাকে তাহলে সেটাকে একবারে বলা যাবে ভাইব। এক এলব্যাম দিয়েই স্বর্ণ শিখরে পৌছে গিয়েছিলো ভাইব। কিন্তু তারপর থেকেই হারিয়ে গেলো।
মিনেরভা, শুন্য, চিরকুট, পরাহো, বে অফ বেংগাল, অশ্রুত, এক্লিপ্স, রিকল, ক্রিমিটিক্স এক্স, ডি ইলুমিন্যাশন, গ্রুভ ট্রাপ , ক্রিমেটিক এক্স, স্কেয়ার ক্রো , পয়জন গ্রীন, ই এফ, ওয়ারসাইট, লালন, মেঘদল , মহাকাল , সহজিয়া , এভোয়েড রাফা, ইন্ডালো, নাগরিক, নোনতা বিস্কুট,ওল্ড স্কুল , পেন্টাগন , দ্যা ট্রী এর মত ব্যান্ড নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আজ মাতাচ্ছে পুরো বাংলাদেশ ।
আমাদের আছে কিছু ট্যালেন্টেড আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড। " Orator, Burial Dust, Satanic, Nafarman, Grimorium Verum, Enmachined, Abominable Carnivore, Thrash, Zerg, Naive , Homicide" তাদের মধ্যে অন্যতম। যাদের হাতে বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার রুপরেখা বর্তমানে বসেই অংকন করা যায় ।
আসুন সবাই গান ডাউনলোড না করে গান কিনি । এগিয়ে নিয়ে যাই আমাদের মিউজক কে আরো বহুদুর ।
সোনেলা তে প্রায় তিন বছর পোস্ট করলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
১২টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
তথ্যপূর্ণ একটি পোষ্ট ভাল লাগলো।
-{@
আসিফ মাহমুদ
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাকেউ ধন্যবাদ।
-{@
নীহারিকা
৯০এর দশকে ব্যান্ডের গান খুব শুনতাম। তখনকার গানগুলো মন ছুঁয়ে যেত। মাইলস, সোলস, রেনেসাঁ আমার প্রিয় ব্যান্ড। এছাড়া ফিডব্যাক, ডিফারেন্ট টাচ সহ অন্য ব্যান্ডগুলোর গানও নিয়মিত শুনতাম। আপনার পোস্ট পড়ে ফিরে গেলাম সেই সময়ে।
সুন্দর তথ্যনির্ভর পোস্ট।
আসিফ মাহমুদ
ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার প্রিয় ছিলো সোলস আর রেঁনেসা।
হেভি মেটাল পছন্দ করতাম না।
সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ পোষ্ট।
আসিফ মাহমুদ
ধন্যবাদ
প্রহেলিকা
আপনার তথ্যপূর্ণ পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ জানবেন পোষ্টের জন্য। নিয়মিত হোন, ভালো লাগবে।
আসিফ মাহমুদ
ধন্যবাদ । এখন থেকে নিয়মিত হওয়ার চেস্টা করবো
অপার্থিব
ভাল পোষ্ট। নব্বই দশকটা বাংলা ব্যান্ডের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল। মাইলস , সোলস , ফিডব্যাক,ফিলিংস, আর এল আরবি ছিল তখন বাংলা ব্যান্ডের পঞ্চ পান্ডব। আমার অবশ্য ভাল লাগত ফিডব্যাকের মাকসুদের গান। মাকসুদের ঢাকা শিরোনামের এ্যালবামটি বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসে খুবই আলোচিত ছিল। পরে অবশ্য সে এই নামে আলাদা ব্যান্ড গড়ে।
আসিফ মাহমুদ
ধন্যবাদ 🙂
জাহিদ হাসান শিশির
বিপ্লব এর প্রমিথিউস এর মাধ্যমে প্রথম ব্যান্ডের গানের সাথে পরিচিত হই।
প্রথম গানটি ছিল- শান্তি নাই,শান্তি নাই ভবঘুরের অন্তরে