জীবনে কিছুই যেন পাওয়া হলো না সুবর্ণার। পড়াশোনা শেষ না হতেই অল্প বয়সে বিয়ে। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেই সংসার নামক যন্ত্রের নিকট হার মেনে নিলো। না পারলো ভালো বউ হতে, শাশুড়ি, স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে। না পারলো সন্তানের মা হতে। এ নিয়ে চারিদিকে কত কথা! সারাদিন একা থাকে বলে কিছুদিন একটা চাকরীর চেষ্টাও করলো। কিন্ত কোনটিই আর ব্যাটে-বলে হলো না। নিজেকে মাঝে মাঝে এ সংসারে, পৃথিবীতে অপ্রয়োজনীয় এক যন্ত্রের মত মনে হয়। নিজের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, অসুখ-বিসুখের কথা শোনবার মত কেউ নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় মরে গেলেই শান্তি। কাল সারারাত ভেবেছে সে। সিদ্ধান্ত যা নেবার নেয়া হয়ে গেছে। খুব ভোরে উঠে নাস্তা বানিয়ে, খাইয়ে স্বামীকে অন্যান্য দিনের মতই বিদায় দিলো সুবর্ণা। দুপুরের রান্নাও আজ সকাল সকাল সেরে ফেললো সে। সারা বাসার প্রতিটি অংশে চুপচাপ কিছুক্ষণ কাটালো সুবর্ণা। ঘুরে ঘুরে দেখলো সেই ঘর, যার প্রতিটি অংশে রয়েছে তার হাতের ছোঁয়া। তারপর একসময় বাসা থেকে বের হয়ে এলো সে। মেইন রোড ধরে হাটছে। নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই তার। ভাবছে কিভাবে কি করা যায়। বুকটা ঢিব ঢিব করছে। ঘামছে অল্প অল্প। হঠাৎ প্রচন্ড এক আওয়াজে হুঁশ ফেরে সুবর্ণার। দেখে সামনে একটি ট্রাক আর সি এন জির ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আহতদের চিৎকারে আকাশ কেঁপে উঠছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে কালো পিচের রাস্তা। দেখে কেমন গা গুলিয়ে উঠলো ওর। বমি পেলো। হাতের উল্টো পিঠে মুখের ঘাম মুছে দ্রুত বাসার দিকে হাটতে লাগলো সুবর্ণা।
ভাবছে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাও আল্লাহর একটি রহমত।
৪১টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
তার সাথে সহমত পৃথিবীতে বাচাও তার রহমত
হাতের উল্টো পিঠে মুখের ঘাম মুছে দ্রুত বাসার দিকে হাটতে লাগলো সুবর্ণা।চরিত্রের কতটা গভীরে চলে গেছেন…হাতের উল্টো পিঠ।
মেহেরী তাজ
প্রথম মন্তব্য টা আমিই দিতে চাইছিলাম! আপনি দিলেন কেনো?
ঠিক আছে পরের বার দেখা যাবে……..
নীহারিকা জান্নাত
এরপর পোস্ট দেয়ার আগে আপনাকে জানাবো। তখন কিন্ত প্রথম কমেন্ট করতে হবে 🙂
অনেক ধন্যবাদ -{@
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ আপু! মমি ভাইয়া কিভাবে প্রথম হয় তাই দেখবো!
আমার নীহারিকা আপু থাকতে চিন্তা কিসের! \|/
নীহারিকা জান্নাত
ঠিক ঠিক 😀
নীহারিকা জান্নাত
আমি নিজের মাঝেই চিরিত্রটি দেখতে পেলাম। তাই এভাবে লিখেছি ভাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মেহেরী তাজ
সংসার বড্ড মায়ার খেলা………. অভ্যস্ততায় অনেকটা নেশা ধরে যায়!
যাক শেষ পর্যন্ত আপনার পোষ্টে মন্তব্য দেওয়ার সৌভাগ্য হলো! 🙂
নীহারিকা জান্নাত
সংসার সত্যি মায়ার খেলা। এ মায়া ছিঁড়তে চাইলেও যেন ছেঁড়া যায় না।
শুভকামনা।
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্, এক গল্পে মাইল পার!!
সময় আমাদের কখন যেন মায়ার বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে,
তাই ফিরে ফিরে আসি, বারেবারে,
নীহারিকা জান্নাত
এ মায়া কঠিন মায়া, যায় না ছেঁড়া।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
শিপু ভাই
সত্যিই বেঁচে থাকাটাও আনন্দের।
বেঁচে থেকে বিভিন্ন সমস্যার উত্তরণের চেষ্টার নামই জীবন। নইলে জীবন পানসে একঘেয়ে লাগতো।
অনলাইনে এই সাইজের গল্প পড়তেই ভাল লাগে। এর বেশি বড় হলে মজা পাই না। বড় গল্প পড়তে হয় হেলান দিয়ে কাগজের পৃষ্ঠা উলটে উলটে!!!
গল্পে+++++++
নীহারিকা জান্নাত
সত্যি কথা বলতে আমারও অনলাইনে বড় কোন লেখা পড়তে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। তাইতো আপনার অণু-পরমাণু গল্পের ভক্ত আমি। এবং বলতে গেলে আপনার লেখা দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। এটিই আমার প্রথম কোন গল্প লেখা। মান নিয়ে নিজেরই যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
যাই হোক, সাহস করে লিখলাম আর সাহস দেবার জন্য আনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শিপু ভাই
প্রথম গল্পেই আপনি মুন মার্ক পেয়ে পাশ করেছেন -{@
নীহারিকা জান্নাত
স্টার মার্ক শুনেছিলাম, কিন্ত মুন মার্ক জীবনে প্রথম শুনলাম। আচ্ছা এরপর কি সান মার্ক? 🙂
জিসান শা ইকরাম
এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে সুন্দর,
পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া মানেই অসুন্দরের মাঝে চলে যাওয়া।
ফিরে আসতেই হয় আমাদের অভ্যস্থ যাপিত জীবনে।
শুভ কামনা।
নীহারিকা জান্নাত
অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপনাকে।
শুন্য শুন্যালয়
বেঁচে থাকাটা অবশ্যই রহমত আপু। তবু আমরা চাই সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকতে এবং দ্বিতীয়ত আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে। তাই বারবার হয়তো মৃত্যুর কথা ভাবি। বেশ হয়েছে গল্পটা আপু।
নীহারিকা জান্নাত
অবশ্যই সুস্থ শরীর ও আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় প্রতিটি মানুষ। কিন্ত সবার ভাগ্যে তো এসব থাকে না। এবং তার জন্য জীবনকে শেষ করে দেয়ারও মানে হয় না।
জীবনের প্রথম গল্প লেখা। কি যে হলো আল্লাহই জানেন।
অনেক ধন্যবাদ তোমায়।
বায়রনিক শুভ্র
ভালো লাগল ।
নীহারিকা জান্নাত
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আবু খায়ের আনিছ
বেচেঁ থাকাটাই আমার কাছে জীবনের স্বার্থকতা বলে মনে হয়, মরে গেলাম তো সব শেষ, জীবনকে যদি যুদ্ধের মাঠ ভাবি তাহলে সেখানে লড়াই করাটাই জীবন।
অনেক ভালো লাগল আপু।
নীহারিকা জান্নাত
যুদ্ধ করতে করতে হাঁপিয়ে গেলেই তখন পালানোর মনোভাব জাগে। মানসিক শক্তি কি সবার একরকম থাকে?
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
সম্মানিত নীহারিকা জান্নাত দিদি।
দিদি আপনি ঠিক আমার পরিচিত একটা মেয়ের কথাটাই তুলে ধরেছেন দিদি। আমার সেই পরিচিত মেয়েটারও একই অবস্থা দিদি।
ভালো লেগেছে, আবার কষ্টও হচ্ছে।
নীহারিকা জান্নাত
কিজানি, হয়তো আমাদের আশে-পাশেই এমন অনেক চরিত্র আছে যাদের জীবন এমন।
তাদের জীবনযাপর সহজ হোক, আনন্দময় হোক এই কামনা করি।
দাদা ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
যে কোনো পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার মতো মন-মানসিকতা যাদের, তাদেরকে আমি খুবই পছন্দ করি।
জীবন যেমন না-পাওয়ার আবার অনেক পাওয়ারও। ভালো লেগেছে গল্প। দারুণ উপস্থাপনা।
ওহ ছোট্ট একটা কথা বলে নেই, পৃথিবীতে ভালো স্ত্রী আর ভালো স্বামীর সংজ্ঞা নেই কিন্তু। 😀
ভালো থাকুন আপা।
নীহারিকা জান্নাত
আপা সহ্য করতে করতে হয়তো একসময় মানসিক শক্তি ভেংগে পড়ে। তখনই হয়তো কেউ চলে যাবার/সরে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।
আর হ্যা, আমার জানা মতে যে বউ যত ভালো রান্নাবাড়া, ঘরের কাজ জানে সেই ভালো বউ। যদিও ভালো বউয়ের সার্টিফিকেট পাওয়া মানুষের দেখা পাওয়া যায় না 🙂
যাই হোক, আপা ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
যারা ভীরু, তারাই এমন করে।
কথায় আছে স্বামীদের হৃদয় নাকি পেটে থাকে। 😀
নীহারিকা জান্নাত
এটা কিন্ত সত্যি 😀
প্রহেলিকা
কখন যে কার কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় কেউউ জানে না। জীবন যেন বেলুনের ভেতর বাতাস। ফিরে আসাটাই বরং ভাল ছিল। চর্চা চালু থাকুক। ভালো কিছু পাব আমরা।
নীহারিকা জান্নাত
জি ভাই/বোন (আপনি ভাই নাকি বোন জানিনা) ভবিষ্যতের কথা কেউ বলতে পারি না। তবে যে কোন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে শক্ত থাকা খুব জরুরী।
গল্প লেখা জাস্ট শুরু করেছি। দেখা যাক পারি কি না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অরণ্য
সাবাস!
সুবর্না ফিরেছে। জীবনের একটা অর্থ বা ভালোলাগা খুঁজে পেয়েছে। এমন হাজারো সুবর্না-সুবর্নেরা তাদের পানসে একঘেয়ে জীবনে নুন-ঝাল-মিষ্টি-টকের ছোঁয়ায় ফিরে আসুক এবং জীবনকে পাক সেই আশাবাদই ব্যক্ত করছি।
ভাল লেগেছে লেখাটি।
নীহারিকা জান্নাত
হার না মেনে এভাবেই ফেরা উচিত সুবর্রণাদের।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মিষ্টি জিন
সংসারের মায়া বড মায়া আপু। ফিরে আসতেই হয়।
হাজারটা না পাওয়ার মাঝে একটা পাওয়াই পুরো জিবনটাকে চালিয়ে নিয়ে যায়।
আর সুস্হ ভাবে বেচে থাকাটাই আসল।
ছোট কিন্তু অনেক ভাল লেখা।
নীহারিকা জান্নাত
সংসারের মায়ার টানে আর জীবন যুদ্ধে পরাজিত না হবার আকাঙ্ক্ষাই সাহসী করে তুলেছে সুবর্ণাকে।
আপনাকে ধন্যবাদ আপা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
যাক, ফিরে এসে ভালো করেছে। বোকা মেয়ে।
নীহারিকা জান্নাত
জি ভাই। ফিরে আসাই তো উচিত।
ধন্যবাদ আপনাকে।
গাজী বুরহান
শব্দশৈলীরর যথাযথ ব্যবহার গল্পের গভীরতায়য় পৌঁছে দিতে বিন্দুমাত্র সময় নেয় নি। এক কথায় “দারুন”।।
নীহারিকা জান্নাত
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নীরা সাদীয়া
পৃথিবীতে বেঁচে থাকাও অাল্লাহর রহমত। ভাল বলেছেন।
নীহারিকা জান্নাত
ঠিক। আমরা চাইলেই বেঁচে থাকতে পারি না। আর জন্য আল্লাহর রহমত থাকা জরুরি।
ধন্যবাদ তোমাকে।
নিতাই বাবু
দয়ালের দয়া ছাড়া, বেঁচে থাকা দায়! তার দয়ায়-ই আমার জীবন চলা।
ভালো লিখেছেন দিদি, লিখা পড়া খুব ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকবেন দিদি ।