কথা দিলাম ছাইড়া যামু না...
কথা দিলাম ছাইড়া যামু না...

পরের দিন মানস স্থির করেই নিলো আজ যা হয় হবে, হয় এস্পার, নয়তো ওস্পার। অতো দেমাগ দেখানো কিসের! নিজেকে কি মনে করে রানী ভিক্টোরিয়া? আজ যদি চৈতি বেশী মুড মারে, সেও মুড দেখাবে। বন্ধুকে সাথে নিয়েই চৈতির কলেজে গেলো। কিন্তু মানসকে অবাক করে দিয়ে চৈতি সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো, 'আজ কোনো গিফট নেই?' মানস রীতিমতো একটু ভাব নিয়ে বললো, 'তুমি কি মনে করো আমি ফালতু ছেলে? এই আমি জিন্দেগীতে কাউরে পাত্তা দেই নাই, বুঝছো?' চৈতি বুঝেছে যে গতকাল ওর ভাইকে দেখে মানস ক্ষেপেছে, 'শোনো গতকাল আমার ভাই এসেছিলো সাথে, ও দেশের বাইরে থাকে।' মানস বুঝেছে চৈতির মন নরম হয়েছে। সে বললো, চৈতি একটা কথা বলি, আকাশ-মেঘ আলাদা হতে পারে, এন্টার্কটিকার সব বরফ পানি হয়ে যেতে পারে, মাগার এই সম্পর্ক কোনদিনই আলাদা হবে না। আমি কথা দিলাম।'

আও কোলাকুলিটা কইর‍্যা লই...
আও কোলাকুলিটা কইর‍্যা লই...

প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে আর দেরী করলো না মানস। পরেরদিনটাকেই ঈদ বানিয়ে ফেলে। ঈদ তো কোলাকুলি ছাড়া হয়না। পার্থক্য একটাই, ঈদের কোলাকুলি হয় জেন্ডার মেনে সকলের সামনে আর এই কোলাকুলিটা ইয়ের সাথে ইয়ের চিপাচুপায়। আর কোলাকুলি যেহেতু রোবটের সাথে হয়না, ভিন্ন জেন্ডারের সাথে, তাই আরোও অনেক কিছুই পাওয়ার ইচ্ছে তৈরী হয়। মানুষের ধর্মই হলো দাঁড়াতে দিলে, বসতে চায় আর বসতে দিলে...।

ঠোঁট দিয়া ঠোকাঠুকি...
ঠোঁট দিয়া ঠোকাঠুকি...

তা ওই কোলাকুলির পর কি হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবেনা? কাঠঠোকরার মতো ঠোঁট ঠোকরাঠুকরি চলতে থাকে অবিরাম। লেখাপড়া থেকে শুরু করে যে কোনো কাজই পনেরো মিনিট পর বোরিং লাগে, এই এক ক্ষেত্রে সমীক্ষার ফলাফল উল্টো। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও চুমুতে লোডশেডিং নামে না। মানস আর চৈতি দুজনেরই মন দারুণ ফুরফুরে, 'আমি ইহাকে পাইলাম' এই টাইপ আর কি!

হৃদয়ের এই বন্দরে তুমি আর আমি...
হৃদয়ের এই বন্দরে তুমি আর আমি...

তারপর কি? ভালবাসার সুতা বাধা ঘুড়ি মনের আকাশে ঘুরতে থাকে বোঁ বোঁ করে। কখনো ডাইনে কাত হয় কখনো বাঁয়ে। এই ওড়ায় যে কি সুখ! ফাস্ট ফুডের বিল আর গিফট দেবার জন্য বাবার মানিব্যাগ, মায়ের ভ্যানিটি ব্যাগ শেষ ভরসা। সেই ভরসায় ব্যাগ ফরসা করতে একটুও বাধে না। বাধে অন্য জায়গায়। হঠাৎ সাথের সঙ্গীর মোবাইল যখন পোঁ পোঁ শব্দে বাজতে থাকে আর সঙ্গী অস্থির হয়ে লাইন কাটে বুকটা কেন জানি ভার হওয়া শুরু হয়। যে ঘুড়ি সকালে বোঁ বোঁ শব্দে ঊড়তে থাকে বিকেলে সেটা গোঁ গোঁ শব্দে গোত্তা খাওয়া শুরু করে। মান-অভিমানের পালা চলতে থাকে সারা রাত। পরদিন ভোর হয় দুপুরে। তারপর ছোট্ট মেসেজ ভাসে মানসের ফেসবুক স্ট্যাটাসে- "ভ্যালেন্টাইন ডে শেষ, একাই আছি এইতো বেশ।" ওদিকে চৈতি লেখে, 'ভুল সবই ভুল!'

বুকটা ফাইট্টা যায়...
বুকটা ফাইট্টা যায়...

নাহ ফেব্রুয়ারি মাস সাতদিনের প্রেমের জন্য নয়। এ প্রজন্মকে আমরাই তো শিখিয়েছি, ওদেরকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। পরিবারের সকল সদস্য একত্রিত হয় খাবার টেবিলে। যদিও হয়, কোন কোন গল্প করা হয় ওখানে? অথচ আমরা পরিবার থেকেই শুনেছি, দেশের গল্প, পৃথিবীর গল্প, মজার ছলে কতো কি যে জেনেছি! এখন আমরা কী বলি আমাদের সন্তানকে যে, ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য অনেক গৌরবের মাস? পড়ার বইয়ে যা শেখা হয়, তা শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য, আমার মতে জানার জন্যে নয়। একুশে ফেব্রুয়ারি আসছে, সেই গল্প এখানে নয়, আলাদা ভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে।

হ্যামিল্টন, কানাডা
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং।

ফেব্রুয়ারির যতো দিবস (তৃতীয় পর্ব) : সাতদিনে প্রেম শেখা

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ