ফেইস বুক জ্বর

মনির হোসেন মমি ২৯ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ০৭:৫৪:১৯অপরাহ্ন গল্প, বিবিধ, সমসাময়িক ১০ মন্তব্য

হ্যালো,শুনছো?
-হুম...
-শুনছো তো?
-আরে বাবা বলো না...।
-আমি তোমার কে?
এতো ক্ষণ আজম সাহেবের স্ত্রী মোবাইলে ফেবুকে মগ্ন থাকায় খুব ব্যাস্ত ছিলেন স্বামীর কথায় তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি।এবার স্বামীর এমন অপ্রস্তুত প্রশ্নে অবাক হন,আপাতত ফেবুক হতে চোখ ফিরিয়ে স্বামীর প্রশ্নের উত্তরটা একটু রাগ নিয়েই দিলেন।
-মানে!হঠাৎ এতো বছর পর এ কথা কেনো?
-না মানে আমিতো আর সেই ভেবে কথাটা বলিনি,তুমি আমার কথা শুনছো কি না তাই তোমার ঐ উচ্চাআধুনিক স্যোসাইল সাইট থেকে মনযোগটা সরাতে চেয়েছিলাম মাত্র।
-ও তাই...
আবারো ম্যাডাম ফেবুকে টিপাটিপি শুরু করলেন।তা দেখে সাদা সিদে স্বামী বেচারার মনে বিরক্ত এসে যায়।কি সব সারা দিন রাত জেগে ইউজ করে তার মাথায় যেন তা আসতেই চায় না।সে এক প্রকার বাধ্য হয়েই সোফায় স্ত্রীর মুখো মুখি বসলেন।তার এমন বসার ভঙ্গিটা আড় চোখে দেখলেন তার স্ত্রী তবুও সে মোবাইলের ফেবুর স্কিন থেকে চোখ সরালেন না।মনে হচ্ছে বিশ্ব জয়ের দিকে ধাপিত হচ্ছেন তাইতো সে চ্যাটিংয়ে অভ্র কি বোর্ডে আঙ্গুল চালাচ্ছেন খুব দ্রুত।ভাগ্যিস বাংলায় অভ্র কি বোর্ডটা আবিষ্কার হয়েছিলো নতুবা ইংরেজী চ্যাটিং টাইপিনে খবর আছিলো।এই কৃতিত্ব অর্জন কারী হলেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মেহেদী হাসান
-কি কিছু বলবে?
-তুমি কি খুব ব্যাস্ত?
-দেখতে পাচ্ছো না!
-হ্যা তাতো দেখছিই মনে হচ্ছে সকালে দাত ব্রাসও করোনি
-কি বললে?
-না মানে...কিছু বলতে চাইছিলাম।
-বলো,
-না মানে তোমরা যে অবস্থায় সময় অপচয় করছো তাতে যদি টাকা আসতো তবে কোন কথাই ছিল না,তাই বলছিলাম কাজের বুয়ারে ছাটাই করলে কেমন হয়!
-তাহলে বাড়ীর এতো কাজ কে করবে?তুমি?
-দূর!আমার কি আর এতো সময় আছে?...আমি বলছিলাম কি তুমিই যদি ঘরের কাজে একটু মনযোগ দিতে,,,না মানে তোমারতো অফুরন্ত সময়।সারা দিন কেবল ফেবুক আর জলসা টিভিতে সিরিয়াল দেখে দেখে অযথা সময় কাটাও।
-কি বললে?তুমি জানো এতে কত জ্ঞান অর্জন হয়!...তুমি জানবে কি করে তুমিতো আবার অসামাজিক গেয়ো।
-হ্যা,ঠিকই বলছো তবে টাকা রোজগার যদি করতে তবে বুঝতে...।
-তুমি কিন্তু আমার রাগ তুলে দিচ্ছো...।
-না না কি যে কও জীবনের বিশটি বছর গত হলো এক সাথে আর জীবনের এ অবেলায় সঙ্গী করলে ফেবুককে!এই দুঃখটাই একটু বললাম আর কি।
কর্তৃর যেনো সে দিকে কান নেই আবারো অনবরত সে চ্যাটিং করেই যাচ্ছেন আর মিটমিট করে হাসছেন।মনে হচ্ছে খুব মজার একটা চ্যাটিং চলছে।স্বামী বেচারা একটু উকি মেরে চ্যাটিং দেখার ভান করলেন তাতে কর্তৃর এক দিকে রাগ আসলেও চ্যাটিং আপাতত শেষ হওয়াতে মোবাইলের ফেবুক বন্ধ করে চ্যাটিংয়ের কাহিনী শুনালেন।
-কি কার সাথে দীর্ঘ ক্ষণ চ্যাটিং না ফেটিং করলে?মনে হচ্ছে আজকাল খুব মজে আজো।
-আরে না,,,,আহা!বেচারা।ঐ যে আমার বান্ধুবী রাহেলা...তার চ্যাচিং বক্সে তারই মেয়ের প্রেম ঘটিত ম্যাসেজ এসে পড়ে।
-বলো কি?আর তাতে তুমি খুশি হচ্ছো কেনো?এ ভাবে পরিবারের হাতে ধরা পড়া এটাতো রীতিমত বিষ্ময় কর।আমাদের আগের দিনই ভাল ছিলো যখন একটি চিঠির জন্য অপেক্ষায় থাকতাম দিনকে দিন।অতি গোপনে ডাক পিয়নের সাথে যোগা যোগ রাখতাম।আর এখন কি কলি কাল এলোরে বাবা!।
-আরে রাখতো তোমার সেইকাল।কি মজা তাই না?ভালোই হলো এখন আর ছেলে মেয়েরা কোন কিছু লুকাতে পারবে না আমরা গার্ডিয়ানরা সহজেই ধরতে পারব।জুকারবার্গকে ধন্যবাদ দিতে হয়।
-তুমি গেছো!ফেবুক জ্বরে তোমাকে পেয়ে বসেছে।এটাকে তুমি ভাল বলছো,তবে তো প্রাইভেসি বলে আর কিছুই থাকছে না।
-আগে শুনবেতো কি হয়েছিলো?
-বলো!
-রাহেলার মেয়ে তার প্রেমিককে চ্যাটিংয়ে এত্তো এত্তো কিস মানে চুমো দিছে সব রাহেলা জেনে গেছে,আগেতো সরা সরি যা হবার হতো আর এখন হচ্ছে ভার্চুয়ালে অদেখা স্পর্শহীন।খুব ভালো তাই না?জীবনের নিরাপত্তায় আর কোন টেনসন থাকলো না।
-হ ঠিকই কইছো,তুমি থাকো তোমার ফেবুক জ্বরে আমি চল্লাম আমার অফিসে।
স্বামী বেচারা স্ত্রীর ফেবুক নেশায় নিজেই যেন কাইত হয়ে না যায় সেই ভয়ে অফিস শুরুর অনেক আগেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন।মৌচাক মোড়ে এসে জেব্রা ক্রসিং পার হবেন,অপেক্ষায় সিগনাল পরার।সে এ দিক ঐ দিক তাকিয়ে দেখেন তার সাথে সব বয়সের আরো লোক জন তারই মতো অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছেন,কম বেশী সবার হাতেই এড্রুয়েড মোবাইল প্রায় সবাই যেনো মহা ব্যাস্ত।একটু কাৎ হয়ে অন্য একজনের মোবাইলের বিষয় দেখার চেষ্টা করলেন।হুম!এখানেও ফেবুক।এর মধ্যে সিগনাল ছেড়ে দিলে যে যার মত রাস্তা পার হচ্ছেন শুধু এদের মধ্যে এক জন যুবককে সে দেখলেন,যুবকটি খুব ধীর গতিতে রাস্তা পার হচ্ছেন,হাটার সাথে চোখ তার মোবাইলে,আঙ্গুল তার  মোবাইল স্কিনে সাতরাচ্চে।হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার তাকে একটু হালকা বায়ু স্পর্শ দিয়ে চলে গেলেন স্পিডে,সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলটি তার হাত হতে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায় তৎক্ষনাৎ তার চোখের সামনে আরেকটি গাড়ীর চাকায় তা ভেঙ্গে চুড়মাচুড় হয়ে গেল।যুবক অবাক হয়ে গাড়ীর দিকে চেয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলেন।এরই মধ্যে আজম সাহেব তাকে পাজা কোলের মতো আলগিয়ে দ্রুত রাস্তা পারা পার করালেন।যুবক রীতি মত আজম সাহেবের উপর ক্ষ্যাপে গেলে।
-কি ব্যাপার আপনি আমাকে এ ভাবে তুলে আনলেন কেনো?
-আর একটু হলে তুমিও গাড়ীর তলে চাপা পড়তে...বুঝলে।
যুবক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তাকে ধন্যবাদ দিলেন।
-আসলে ঐ আমার সাধের মোবাইটা গাড়ী চাপা দিলো তাই আমার মাথা কি যেনো কি হয়ে গেল,,,,আপনাকে ধন্যবাদ।
-ধন্যবাদ না দিয়ে একটু চিন্তা করো,,, এভাবে চলন্তবস্থায় কখনো মোবাইল টিপবে না বুঝলে।
যুবকটিকে আচ্ছা মত উপদেশ দিয়ে সে অফিসের সামনে গিয়ে এক চা স্টলে চায়ের অর্ডার দিলো।চা স্টলেও বেশ কয়েকজন যুবক চা পান করছেন আর মোবাইল টিপছেন।নাহ্ এখানেও দেখছি সেই ফেবুক জ্বর। অবাক হলে যখন রাস্তার এক ভিখারী ফোনে তার পার্টনারকে বলছেন।
-পার্টনার তুমি আজ কোন কোন জায়গায় যাইবা?
-কেন,তুমি আমার ফেবুক স্টেটাসটা দেখো নাই?
-ওমা আমার কি আর ফেবুক আছেনি।আমিতো ওয়া চালাইবার পারি না।
-ঠিক আছে,,,ঠিক আছে আজ রাহি তুমি তাড়া তাড়ি ফেবুক অ্যাকাউন্ট খোল।ওকে,,,!!
ফকির বেচারা কি বিপদেই না পড়ল।এখন কাকে দিয়ে এই ফেবুক অ্যাকাউন্ট খুলবে।ওটা না বানালে তো সাথীদের খোজঁও পাবে না সে,কে কোথায় আছেন।ফকিরের চোখ পড়ল চা স্টলে দাড়িয়ে চা পান অবস্থায় আজম সাহেবের উপর।সে নিজে এক হাত পঙ্গু অন্য হাতে এন্ডুয়েট মোবাইলটা আজম সাহেবের মুখের সামনে নিয়ে একটি ফেবুক খোলে দেবার অনুরোধ করেন।
-স্যার আমার একটা ফেবুক অ্যাকাউন্ট খুইল্লা দিবেন।
কি জ্বালা আজম সাহেব এমনিতেই ফেবুক ইউজ কারীদের উপর ক্ষ্যাপা তার উপর সে বলছে তাকে একটা এ্যাকাউন্ট খুলে দিতে।তাও আবার ফেবুক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে একজন ফকিরের ।দুঃখে জীবন তার যায় যায়!!এটা কি হচ্ছে যেখানে যাচ্ছি সেখানেই ফেবুক।ফকির বেটারে এক দমক দিলেন।
-যা বেটা খাইয়া লইয়া আর কাম নাইহে...
-কেন স্যার আমিতো আর ভিক্ষা চাই নাই....।
আজম সাহেবের মেজাজটা আরো খারাপ হলো।রাগে চা কাপের চা গুলোকে দূরে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে সে দ্রুত কেটে পড়লেন।অফিসের বাহিরে আজম সাহেব যাই হন না কেনো অফিসে তার একটি গুড উইল আছে।তা হলো সবার আগে অফিসে ঢুকবেন এবং সবার পরে অফিস থেকে বের হবেন।অফিসের অন্য সব কর্মচারীদের কাজের আদান প্রদানে আছে বেশ স্বচ্ছতা।অফিসে ঢুকে সে সাধারণতঃ যে কাজটা করেন তা হলো সোজা তার কক্ষে প্রবেশ করেন।আজ সে একটু ব্যাতিক্রম করেন।অফিসে ঢুকে চলে যান তার সহকারীর টেবিলে এর মধ্যে যে যার মতো তাকে হঠাৎ দেখে সালাম দিয়ে শ্রদ্ধাবোধ জানালেন।সরকারীর টেবিলে যেতেই সরকারী কর্মকর্তা তাকে সন্মান দেখিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন।
-বসুন বসুন,,,তা কজটা কতটুকু হলো?
-জি স্যার কমপ্লিট।অন লাইনে আশা কাল থেকেই অর্ডার পাবো।
-এটা কি ভাবে করলেন?
সহকারী তার চেয়ারে বসলেন অতপর অন লাইন চালু করেন।কম্পিউটারের মনিটর টি তার দিকে একটু বাকা করে তাদের তৈরীকৃত সাইটটি দেখালেন।
-স্যার এইতো আমাদের সাইট।ফেবুকেও এড করে দিয়েছি।
আজম সাহেব সাইটটি দেখে যতটুকু না খুশি হয়েছিলেন ফেবুকে এডের কথা শুনে ততটুকুই মুখ তার গম্ভীর হয়ে গেল।সে তার সহকারীকে ভাল মন্দ কিছু না বলেই চলে যাচ্ছেন তার কক্ষে।যাবার পথে আড় চোখে তার সহকারীর টেবিলেই রাখা এন্ড্রুয়েট ফোনের দিকে।ফেবুক ওপেন!তার পর এক এক করে আড় চোখে প্রায় অন্য সবার মোবাইল খেয়াল করলেন তারাও সম্ভবত ফেবুক জ্বরেই ভুগছেন।নিজ কক্ষে এসে চেয়ারটিতে আরাম করে হেলান দিয়ে ভাবছেন,,,একি অবস্থা দেশের সর্বত্রই কেবল ফেবুকের জয়ো গান রীতি মত চিকুনগুনিয়াকেও যেনো হার মানিয়ে দিচ্ছে।

এ দেশের গর্ব বাংলা অভ্র কি উদ্ভাবক মেহেদী হাসান।স্যালুট ভাই তোমাকে।
............
গল্পটি দুটি পর্বের
শেষ পর্বটি পড়ার অনুরোধ রইল।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ