প্রজ্ঞা -২

নীরা সাদীয়া ২২ অক্টোবর ২০১৬, শনিবার, ১১:০১:১০অপরাহ্ন গল্প ১৯ মন্তব্য

রিয়ার মনে হতে থাকল প্রতিবারের মত এবারো তার জন্য অপেক্ষা করছে কিছু জোনাক জ্বলা আলোর ভেতর হৃদয় ভাঙা অন্ধকার।চারপাশে এত মানুষ গম গম করছে, তবু যেন কেউ নেই কিচ্ছু নেই।এমন কেন হচ্ছে তা সে নিজেও জানে না। তবে প্রতিবারই বিপদ ঘনিয়ে এলে কিভাবে যেন সে আগে থেকে টের পেয়ে যায়। খুব বিপদ সংকুল জীবন রিয়ার।ছোটবেলা থেকে নানা ঝড় ঝঞ্চার মাঝে বেড়ে ওঠেছে রিয়া।তার শুধু মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই, কি যেন ঘটতে চলেছে।
.
বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা মিটতে মিটতে রাত নটা বেজে গেল।এবার কনে বিদায়ের পালা।রিয়ার মায়ের আঁচলটি তাঁর চোখের জল ধরে রাখার যোগ্যতা হারিয়েছে। শিশুর মত কাঁদছেন তিনি।রিয়ার বাবা খুব শক্ত মানুষ, সহজে কাঁদেন না। তবে তাঁর চোখেও জল।রোহানের বাবা ও রিয়ার বাবা বাল্যকালের বন্ধু। কনে দেখতে এসেই কাকতালীয়ভাবে তাদের আবার দেখা হয় প্রায় ২০ বছর পর। রোহানের বাবা চেয়েছিলেন ফর্সা পাত্রী।যদিও রিয়া দেখতে শ্যামলামতন, তবু বন্ধুর মেয়ে বলে কথা। তাই বিয়েতে মত দিয়ে দিলেন।
.
নানা প্রতিশ্রুতি ও অশ্রু বিসর্জনের পর রিয়াকে গাড়িতে উঠাননো হল।ঢাকার শান্তিবাগে তার শশুড়বাড়ি।সেখানে রোহান আর তার মা বাবা থাকেন।একটা বোন ছিল,বিয়ে হয়ে গেছে।সে বরসহ আমেরিকা থাকে।
কনে এবার নতুন বাড়িতে পা রাখল।তাকে তার ঘরে অর্থাৎ রোহানের বেডরুমে নিয়ে যাওয়া হল। ফুলে ফুলে সাজানো বিছানা।চারপাশের দেয়ালটা হালকা আকাশী রঙে পেইন্ট করা। বিছানায় গোলাপী চাদর। ঘরে মোট দুটো জানালা। কিন্তু কোনটি দিয়েই আকাশ দেখা যায় না। শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং।ঘরে এসি অাছে। রিয়া সেখানে বসে একটু রেস্ট নিল।তারপর তার চাচাত ননদ জুঁই এসে বলল পোশাক পাল্টে আরামদায়ক কিছু পরে নিতে।সে তাই করল।জুঁই তার মাথায় অল্প অল্প তেল দিয়ে পার্লারে বাঁধা চুল খুলে দিল। এবার তার খুব আরাম লাগছে।ইচ্ছে করছে ঘুমিয়ে পরতে।কিন্তু নতুন বউ বলে কথা।হুট করে ঘুমিয়ে গেলে কি চলে?এমন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করতে চলে এলেন তার শাশুড়ি।তিনি হয়ত বোঝেন এই অবস্থাটা, কতটা ক্লান্তিদায়ক এই ধকলটা। তাই তিনি এসে ফুল সহ সকল অপ্রয়োজনিয় জিনিস সরিয়ে রেখে রিয়াকে জায়গা করে দিলেন এবং আলোটা নিভিয়ে দিয়ে বললেন যেন সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যায়।রোহানের যখন ঘুমোতে ইচ্ছা হবে তখন রোহান আসবে।
.
রিয়ার কেমন একটা অস্বস্তি হতে থাকল।এই প্রথম তার পাশে একজন যুবক ঘুমোবে।এরকমটা ভেবেই কেমন একটা ভয় ভয় কাজ করছে।কিন্তু সে ভয়টা তাকে বেশিক্ষণ জাগিয়ে রাখতে পারেনি।ক্লান্তিতে অবশ হয়ে সে ঘুমিয়ে যায়।
হঠাৎ মাঝরাতে তার ঘুম ভাঙে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দুটো।ততক্ষণে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।শান্ত হয়ে গেছে উৎসবমুখর বাড়িটা।কিন্তু রোহান কোথায়?পুরো ঘরটা ভালভাবে খুঁজে দেখে রোহান কোথাও নেই।বাড়ান্দাটাও একবার ঘুরে আসে।সেখানেও নেই। তাহলে কি সে ঘুমিয়ে পরেছিল বলে রাগ করেছে রোহান? তাই অভিমানে চলে গেছে পাশের কোন ঘরে? নাকি রিয়া ক্লান্ত বলে বাড়ির লোকেরাই বারন করেছে রোহানকে ঐ ঘরে যেতে?হাজারো প্রশ্ন ভীড় করছে তার মনে।সে ভেবে দেখল, সেই যে বন্ধুরা ডেকে নিয়ে গেছিল,সেখান থেকে ফেরার পর আর একটাও কথা বলেনি রোহান।গোমড়া মুখে বসে ছিল। কি কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? আকাশ পাতাল ভেবে কিছুই পাচ্ছে না রিয়া।এদিকে তার আর ঘুমও আসছে না। এই একা একটা ঘরে,নতুন পরিবেশে কি করবে সে এখন?কাকে বলবে এ কথা?
.
চলবে........

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ