পৃথিবীতে বেচে থাকার মাঝে জীবনের সাথে সুখ-দুঃখ ওৎপেরিত ভাবে জড়িত।জগতে কিছু মানুষ আছেন যারা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দুঃখের সাথেই কেবল _mg_9418বসবাস করেন;নন্দিনী তাদের একজন।যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয় তবে এ যাত্রায় হতে পারে যদি না হয় তবে তার বাকীটা জীবন হয়তো অতিবাহিত হবে দুঃখের সমুদ্রে একান্ত নির্জনে।সূর্য ও নন্দিনীর বিয়ের আলোচনায় মত্ত ছিলেন উভয় পরিবারের সদস্যরা।সব দিক আলোচনা করে চুড়ান্ত ফলা ফল বলার ভার গিয়ে পড়লো সূর্যের উপর কারন জীবনটা তার ভাল মন্দ ঘটনার দায় ভারও তার।
"এ দেশটাকে অত্যাচারি বরগিদের হাত হতে রক্ষা করতে,দেশটাকে ভাল বেসে যেমন বহু জীবন শহীদ হয়েছেন বায়ান্নতে;তেমনি একাত্তোরেও।এই দুই ত্যাগের উভয়তে আমার পরিবারের অবদান অপরিসীম।আজও আমি পূর্ব পূরুষের পথে হাটতে চলছি এবং হাটবো।যদি এ হাটার মাঝে কোন অর্জনে সফলতা আসে তা অবশ্যই নন্দিনী যদি আমার অর্ধাঙ্গিনী হলেও তা আসবেই।আমরা মানে নতুন প্রজন্ম তার মা বাবার মতো শহীদ পরিবারে নিকট অনেক ঋণী যা শোধবার নয় তার কিছূটা দায় ভার না হয় আমিও নিলাম। শুভ বিবাহ।
মামীর কথাগুলো নন্দিনীর নিকট স্বপ্ন মনে হয়।এ কিরে সম্ভব প্রিয়ার নিশ্চিত মৃত্যুর ডেট জেনেও জীবন সঙ্গী করতে আগ্রহী,সে পাগল ছাড়া আর কিছু নয়।দুনিয়াতে এতো ভাল মনুষ এখনো আছে?
-আছে,আর আছে বলেই পৃথিবীটা আজও ঠায় দাড়িয়ে।
-কি জানি মামী আমিতো...!!!
-আর বিশ্বাস করতে হবে না।এখন চলো শপিংয়ে যেতে হবে।সময় কম....।
-এতো তাড়া হুড়া ডেট দিলে কেনো?
-শুভ কাজ এমনি,কারোরটা ঢোল পিটিয়ে কারোটা নীরবে,..দ্রুত।তুই এ সব বুঝবি না।চল।

দেশকে ভালবেসে,দেশের মাটিতে বীরাঙ্গনা গর্ভ ধারীনি মায়ের রক্তের দাগ কিছুটা মুছতে এ দেশে থেকে না যাবার সংকল্প করেছিলেন নন্দিনী।যদিও এ দেশে তার ভিন দেশী দত্তক মায়ের অনেক ভাই ব্রাদারদের বসবাস তবুও এ সব সমাজের উচু তলার আপণ মানুষদের ভিড়ে তার ঠাই হয়নি শুধু মাত্র সে পিতৃ পরিচয় হীন বলে,নাপাকিদের নাজায়েজী আওলাদ বলে।নিজের দেশে এসেও নিজেকে পর পর লাগে।যার শরিরে এ দেশ জনম নেয়ার মাটির গন্ধ লেগে আছে;যার জন্ম না হলে হয়তো বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক নব কোন সর্য উদিত হতো না সে আজ এ দেশের সব চেয়ে বেশী পর,এক অভিসপ্ত রমণী এক পিতৃ পরিচয়হীন জারজ সন্তান।দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে পেতে ক্লান্ত বিশ্রামের শেষ ঠিকানা তার গর্ভ ধারিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের ভাই বউয়ের নিকট সে আশ্রয় পায়।

আজকের পর নন্দিনী হবেন অন্য এক নতুন ভূবনের বাসিন্দা।নন্দিনীর মামীর স্বামী নেই;বেশ কিছু সম্পদ রেখে নিঃসন্তান হয়ে পৃথিবী গত হয়েছেন বেশ ক'বছর আগেই।নন্দিনী এই মামীর কাছে এর আগেও বেশ কয়েক বার এসে বেড়ায়ে গিয়েছেন তখন সঙ্গে ছিলেন তার দত্তক মা ও ভাই।দত্তক মা মারা যাবার পর নন্দিনীর সেখানে থাকার আগ্রহ হারিয়ে এ দেশে চলে আসেন অনেকটা তার ভাইদের ইচ্ছের অমতেই।এই ভাই দ্বয় হলেন তার দত্তক মায়ের অন্য সংসারের দুই সন্তান।বিয়েতে তারাও এসেছেন।মামীর শুণ্য ঘর আজ তারারঁ আলোতে আঁলোকিত।

উভয় পক্ষের বিয়ের সকল আয়োজন প্রস্তুতি শেষ এখন কনে বউ সেজেঁ বসে আছেন কখন আসবে বরের পাঁলকি,বাজবেঁ কখন মধুর সানাইয়ের সূর।সূর্যের পরিবার বর যাত্রা শুরু করলেন বেশী নয় মাত্র মাচটি প্রাইভেট কারে পনের বিশ জনের একটি বিয়ের চলন।সাত পাচ ভাবছেন সূর্য;অভি,সমর,স্বপ্না বরের টেক্সিতে।টেক্সি কিছু দূর যেতেই অভির এন্ড্রয়েড মোবাইলে একের পর এক নোটিফিকেশনস আসতে থাকে যা পট পট বিকট শব্দ করে।অতিষ্ঠ হয়ে সমর অভিকে মোবাইলের সাউন্ড কমাতে বললেন।
-কি রে কি হইছে!পৃথিবীর সব নিউজ কি তোর শুধু মোবাইলে আসে?
-কেনো কি হয়েছে?
-সাউন্ডটি একটু কমা।
-ওকে ঠিক আছে।
মোবাইলের সাউন্ড কমাতে গিয়ে একটি নোটিফিকেশন হতে চোখ ফেরাতে পারলেন না।একটি অন লাইন পত্রিকায় নিউজ এসেছে "রাজধানীর আশকোনায় হজ্ব ক্যাম্পের কাছে রেপিট অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) প্রস্তাবিত সদর দপ্তরের অস্থায়ী ব্যারাক এলাকায় আত্মঘাতী বোমা হামলার ''
টেক্সি হঠাৎ কষে ব্রেক,টেক্সি রোড পরিব্তনের জন্য।আৎকে উঠল সবাই।
hgkh-কি হলো ড্রাইভার ব্রেক করলে কেনো?
-ঐ দেখেন না কেমনে মানুষ জন ছোটা ছুটি করছেন।
-তাতে কি হয়েছে এমন ঘটনাতো এ দেশে অহরহ ঘটছে...আপনি যান ঐতো ঐ সামনের মোড়ের পরই কনের বাসা।
-না ভাই আপনি বুঝতে পারছেনা ঐ দিকে গেলেই বিপদে পরতে হবে।
-ঠিক আছে,অন্য কোন রোডে যাওয়া যায় না?
-দেখি আমরা আলাপ করে।
ড্রাইভাররা সবাই একত্রে হয়ে মোবাইলে খোজ খবর নিচ্ছেন গন্তব্যে যাবার অন্য কোন রোড আছে কি না।গাড়ীর ভিতর বর যাত্রী সবাই দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় মেতে উঠেন।বাঙ্গালী সমালোচনায় কম যায় না;কথা ও ভোজন সমান তালেই চালায়।ড্রাইভারদের চেষ্টায় গতি পথ পরিবর্তন করে অবশেষে বড় যাত্রী গিয়ে পৌছলেন কনের বাড়ীতে।শহরে খালি জমিন নেই যে বিয়ের প্যান্ডল তৈরী করবেন তবে ছাদ আছে।এখানেও ছাদে বিয়ের আয়োজন করলেন।অভি সমরা ছাদে উঠে চার দিক তাকালেন।উপর থেকে নীচের অনেক কিছুই স্পষ্ট দেখা যায়।যেখানে আত্মঘাতি বোমা হামলা হয়েছিল সেই সেনাদের ক্যাম্পটিও দেখা যাচ্ছে।অনুষ্ঠানে আসা উৎসুক আরো অনেকে ছাদ থেকে ঘটনাগুলো দেখছিলেন।এদের মাঝে কিছু অতিথি খাবারের অপেক্ষায় চেয়ারে বসা।আলাপ করছিলেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে।ঠিক সে সময় সেখানে  অভিজ্ঞ এক প্রবীন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথা মালা গাথলেন।
-দেশটা মনে হয় শেষ হয়ে গেল।
-কেনো,কি হয়েছে.. আপনি এসব কথা বলছেন কেনো?বিশ্বের দিকে নজর দিয়ে একটু ভাবুন আমরা অনেকটা শান্তিতে,এখনো আছি।
পাশে বসা অপরিচিত অন্য এক জনের সাথে কথার রেশ টানলেন অভি।অভির কথায় সে অনেকটা বিরক্ত হলেন।
-কতটা ভাল আছি তাতো আজই দেখছি।সে দিন পত্রিকায় দেখলাম বাধ ভাঙ্গা জলে হাওরবাসীর দুঃখ কষ্টে দিন যাপন করছেন।মরে গেছে অসংখ্য মাছ অপূরণীয় sgzbsক্ষতি হয়েছে গবাদি পশু আর ফসলের অথচ এই মুহুর্তে হাওরের এমন দূর্যোগে সিদ্ধান্ত দেবার লোকই বা বড় বাবুরাই নেই সবাই এক যোগে বিদেশ ভ্রমণে গেছেন।আচ্ছা নয় জনকেই বিদেশ যেতে হলো কেনো?কার বাপের টাকায় এত লোক গেলে সব শেষে এর বেনিফিট কি পাবো?
অভি কেনো সেখানে উপস্থিত কারো মুখেই এই প্রবীন ব্যাক্তির কথার কোন উত্তর নেই।সবাই কেমন যেন এক বিতৃষ্ণার মাঝে সেখানে দাওয়াত খেতে অপেক্ষা করছেন।এক দিকে জলবায়ুর খারাপ প্রভাবে বৈশাখে ঋতুতেও আষাঢ়ের মাসের পরিবেশে মাঝে যেনো আমাদের বসবাস করতে হয়।তা ছাড়া ত্রাসের একটা অজানা ভয় তাদের মাঝে বিরাজ করছিল।অভি তাকে আবারো বুঝাতে চেষ্টা করেন।
-আসলে আংকেল,আমরা যদি এত সহজেই সব আশা ছেড়ে দেই তবে এ দেশটার কি হবে।এ দেশটা যে আমাদের অনেক রক্তের দামে কেনা।আপনি আমি যতটুকু দেশকে দিবো দেশ থেকে ততটুকুই আপনি পাবেন।
-কই আর পেলামরে বাবা!এই বুড়োতো আর এমনিই হচ্ছি না অনেক কালের স্বাক্ষী হয়ে আজ এই আমি প্রবীণ।ঐতো চেয়ার খালি হচ্ছে চলো খাবার টেবিলে বসে আড্ডার সাথে খাওয়া হয়ে যাবে।
অভি অবাক এতোটা বয়স পেরিয়েও লোকটির কথায় কত জোর।বয়স কালে না জানি কত কি করেছেন।চার দিক খবর দারীর আওয়াজ।বর যাত্রী বলে কথা সাথে আছেন কনের মেহমানরা।আজ কাল স্থানের অপ্রতুল্যতার কারনে কোন বিয়ের আপ্যায়ণে আগের মতো খোলা মাঠে প্যান্ডেলের যুগ আর নেই।তাই অনেকে এখনো এ কাজে খোলা ছাদটাকেই ব্যাবহার করেন।সরু সিড়ি দিয়ে এক দিকে মেহমান অন্য দিকে খাবার আয়োজেকদের উঠা নামা ব্যাস্ত সিড়ি গুলো।খাবার টেবিলে স্বর্না সমর যোগ দিলেন।খাবার আসতে শুরু করল।কেউ হাত ধৌত করছে কেউ বা ভাত বেরে দিচ্ছেন।এরই মাঝে চলছে আলাপ।অভির মোবাইল অন লাইনে।প্রবীণ ব্যাক্তিটিকে দেখাচ্ছেন সেই আত্ম ঘাতি বোমা হামলার খবর তখন প্রবীণ বললেন।
-তোমাদের মনে আছে এক বার আষট্রিটি জেলায় এ যোগে বোম্ভিং করেছিল সেই দিনই আমি বুঝতে পেরেছি...আমাদের দেশের রাজনিতী কতটা দূর্বল ঐ জঙ্গিদের নিকট।সে সম্পর্কে আজও কোন টু শব্দটিও পাইনি বিচারতো দূরে থাক।সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই ২০০৯ সালে পিলখানা বিডিআর আন্দোলনে বহু
tgewytনওযোয়ান প্রান দিলো হত্যা করল,,,,সামান্য দাবী-দাওয়া নিয়ে এত হত্যা কান্ড হলো যে শেষ পর্যন্ত বিডিআর এর নামটিই পরিবর্তন করতে হলো!কৈ এর মুল হোতাদের কোন খোজঁ মিলেছে।এ দেশের রাজনিতী সব পারে শুধু পারছে না জঙ্গিদের সাথে।দেখবে এ ঘটনাও এক দিন ভুলে যাবে সবাই।
-আমিও তাই ভাবছি...তবে এর পর যে এর চেয়ে বড় কোন ঘটনা ঘটবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে!যেখানে প্রশাসনের নিরাপত্তা নেই সেখানে জনগণের নিরাপত্তার কথা তো চিন্তাই করতে পারি না।
-সেই জন্যেইতো হাসিনা আপায় শফি হুজুরের সাথে হাত মিলিয়েছেন।দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাকে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিলেন।
পাশের টেবিলে খেতে বসা এক অপরিচিত লোকের এমন কথার কি উত্তর দিবেন বুঝতে পারছেন না প্রবীণ।তবে "সব কিছুইতেই দোষ ধরা যেনো আমাদের স্বভাব" তার এমন একটি কথাতে সেই ব্যাক্তিটি দমে গেলেও এ অপ্রীতিকর বিষয়ে সূর তুললেন সমর।বেড়ে গেলো সূপ্রীম কোর্টের সামনে ভাষ্কর্য রাখা না রাখার কিছুটা অতি সভ্য তর্ক।তর্কের মুুহুর্তে ভিডিও ক্যামেরার ঝিলিক।এই আলোচনাময় খাবারের টেবিলটিতে বর কনে উভয় পক্ষের লোকজনই ছিলেন।আলোচনার এক ফাক দিয়ে বরের পাড়ার এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি কনের পরিচয় জানে চাইলেন অভির কাছে।
-পিতৃ পরিচয়হীন।
-মানে!!!

প্রছন্মের ঋণশোধ ৩৪তম

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ