পূজোপ্রেম

অরুণিমা মন্ডল দাস ৩০ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:২১:১১পূর্বাহ্ন গল্প ৬ মন্তব্য

পূজোপ্রেম-১
ষষ্ঠীর জণ্য কেনা হলুদ সালোয়ার পরে তন্দ্রা বিকেলের দিকে ঘুরতে বেরোলো। আগেই বলে রাখি তন্দ্রা বাবা মায়ের চার নম্বর সন্তান । তিন বোনের পর কত আশা নিয়ে তন্দ্রার মুখ দেখতে এসেছিল প্রণয়বাবু । কিন্তু ছেলের মুখ দেখতে গিয়ে মেয়ের মুখ দেখে বাড়ি ফিরলেন।

চাষবাস মাছের ব্যবসা করেই এতোগুলো পেট পালতে হয় তঁাকে । তিন মেয়েকে শহরের কোন মধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়ে দিয়ে কণ্যা দায়গ্রস্থ থেকে নিস্কৃতি পেলেও শেষ মেয়েকে নিয়ে খুব বেগ পেতে হচ্ছিল।

তন্দ্রা গ্র্যাজুয়েট। যাকেতঁাকে তো বিয়ে করতে পারে না। ভালো ছেলে আসে বটে কিন্তু দাবি দাওয়া স্ট্যাটাস জাতপাত দেখে পরে জানাবে বলে আর আগ্রহ দেখায় না!
তন্দ্রা পাশের গ্রামের সদ্য ডাক্তার রমেশকে ভালোবাসে। রমেশের মা এই সম্পর্কের ঘোর বিরোধী। রমেশ আর তন্দ্রার সম্পর্ক তিন চার বছরের। রমেশ তন্দ্রাকে বলেছে সে ডাক্তারী করলেই বিয়ে করে নেবে!

রমেশ পূজোর সময় বাড়িতে এসেই তন্দ্রার সংগে দেখা করার জন্য ষষ্ঠীর দিন বিকেলবেলা তন্দ্রার বাড়ির দিকে রওনা দিল , কথা অনুযায়ী তন্দ্রা রাস্তার মাঝখানে অপেক্ষা করল , দেখা হল অনেকদিন পর , গিফট পেয়ে তন্দ্রা খুব খুশি হয়ে রমেশের সংগে পূজোর প্যান্ডেলে ঢুকল। তারপর ফুচকা খাওয়া আড্ডা মারা ঘোরাঘুরি ঠাকুর দেখা প্রণাম করা ছবি তোলা সবই হল!

তন্দ্রা এবার রমেশকে বিয়ের কথা বলতে যেতেই -----
রমেশ---- জাস্ট কুল ইয়ার এখন তো ইনজয় করার বয়স এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন?
তন্দ্রা---- তুমি বুজতে পারছ না কেন? বাড়ি থেকে----------
রমেশ--- আর দু বছর ওয়েট করো সোনা ----তারপর-----
তন্দ্রা--- মানে?
রমেশ--- আমার মা রাজি নয় -- আর দু বছর দেখি তারপর---নিজেকে একটু ভালোভাবে স্যাটাল করে নি ----তারপর------
তন্দ্রা---- শুনলাম তোমার মা অণ্য মেয়ে দেখছে তোমার জন্য!
রমেশ---- হা তো তোমার জন্য এতই তাড়া অণ্য কাউকে বিয়ে করো আমি কি তোমাকে বেঁধে রেখেছি নাকি? আর শোনো আমার নিজের নার্সিংহোম করার জন্য টাকা লাগবে --বাবাকে বলে ২৫-৩০ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিও--- তারপর দেখছি কি করা যায়---
তন্দ্রা--- মানে -- তুমি আমাকে বিয়ে করবে না তাই না ---তুমি ভালেভাবে জানো আমার বাবা অতগুলো টাকা কোনোদিন দিতে পারবে না--- আমার গভীর ভালোবাসার শারীরিক সম্পর্কের বিনময়ে এই দাম?

তন্দ্রা কেঁদে ফেলল। কেউ দেখল না শুনল না তন্দ্রার তীব্র বেদনার কাকুতি মিনতি !

পূজোপ্রেম--২
মনীষ লন্ডন থেকে সবে এসেছে । বাবা ব্যরিষ্টার । মা উকিল। খুবই স্টাইলিস্ট ছেলে। সলমনের ফ্যান । কথায় কথায় সলমন খান জন ইব্রাহিম অক্ষয় কুমারের ডায়লগ ছোড়ে।
বনেদি বাড়ির একমাত্র ছেলে । সবার আশা ছেলের ধুমধাম বিয়ে দেবে। লন্ডন থেকে ফিরেছে শুনে দাদু জ্যাঠুমনি ঠাকুমার জেদ এইবার এই পূজোতেই তঁার বিয়ে দেবে।
চলল পাত্রী নির্বাচন। ওই তল্লাটে যত প্রভাবশালী ব্যক্তি আছেন সবার মেয়েদের ছবি দেখানো হল।

মনীষের কাউকেই মনে ধরল না। হঠাৎ কাজের সূত্রে তঁার গ্রামে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ল। গ্রামে যাবে শহরের ছেলে তাও আবার কিছুদিন থাকবে ভাবতেই তঁার গা ঘিনঘিন করে উঠল।
যাইহোক মনীষ গ্রামে একটা জায়গায় থাকল। খাওয়া দাওয়া দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ল এক কাজের লোকের উপর। কাজের মেয়েটি ছিল বিধবা । একটি বাচ্চার পেট পালতে তঁাকে এই কাজ করতে হয়।

পূজোতে গ্রামে থাকতে হবে গ্রামের পূজো দেখতে হবে ভেবেই মাথা খারাপ হয়ে গেল মনীষের । তবু নিজেকে সামলে থাকবেই বলে মনস্থির করল।
ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী প্রায় নিরানন্দ ভাবে কাটতে লাগল । কিছু স্কুল লাইফের বন্ধু এলো বটে কিন্তু কেউ থাকতে চাইল না।

নবমীর দিন সকালে------
কাজের মেয়ে--- দাদাবাবু আপনি আমাদের গঁায়ের ঠাকুর দেখেছেন
মনীষ--- না ভালো লাগছে না কিছু
কাজের মেয়ে--- কেন দাদাবাবু শরীরটা খারাপ লাগছে বুঝি আমি মাথাটা একটু টিপে দেবো
মনীষ--- আরে না না থাক আর শোন তোর জন্য কিছু টাকা খাওয়ার আর কাপড় চোপড় আছে ---ছেলেকে দিস নিজে খাস ---- তোর বাবা মা কেমন?
এত অল্প বয়সের একটা বিধবা মেয়েকে পরের বাড়ি কেউ কাজে পাঠায়?

কাজের মেয়ে--- কপাল টাই খারাপ তাই! বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।
মনীষ হঠাৎ মেয়েটার মুখের দিকে তাকাল । অনেকদিন ওর কাজ করছে পাশে থাকছে কিন্তু ভালোভাবে মেয়েটাকে কোনদিন লক্ষ্য করে নি! আজ দেখল মেয়টার জলে ভরা চোখ !

কাপড়ে ঢাকা সংসারের চাপে দুর্বল রোগাক্রান্ত দেহখানি। কেমন যেন মায়া পড়ে গেল । কিছুক্ষনের জন্য মনে হল মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে কিছু খাইয়ে দিই!
কিন্তু সমাজ এই ভালোবাসা কি মেনে নেবে? মনীষের বদনাম হবে না তো?

পূজোপ্রেম---৩
কুশুম আর সোহম এক ক্লাশে পড়ে । দুজনের খুব ভাব । ক্লাশ এলেভেনের পর থেকে তঁাদের ভাবটাও আরো জমজমাট হয়েছে। এক টিঊশানে পড়ে রাত্রিবেলা একই বাড়ি ফেরে । দুজনের মধ্যে কেমন একটা ফিলিংস চলে এসছে।
সোহম ক্লাশ টুয়েলভেই কুশুমকে প্রোপোজ করে বসল। কুশুম ও রাজি হল । এক বেঞ্চিতে বসে ক্লাশ করে । এক সাইকেলে বাড়ি যায় হাতে হাত রেখে সিনেমা দেখে হিরোদের মতো কিসটিস ও মাঝে মধ্যে হয়ে যায়। কিন্তু তাতে কুশুম খুব রেগে যায় । বলে ওসব বিয়ের পর ---------
এবারের পূজোতে সোহমের প্ল্যান যে করে হোক কুশুমকে তঁার চাই। দু বছর ওয়েটিং এ রেখেছে আর নয়। মাঝে মধ্যে কুশুমের বাড়ি গিয়ে উঁকি ঝঁুকি মারে । কুশুমের নোট আনার ছলে বাথরুমে তাক ঝঁাকও চলে কিন্তু ওই পর্যন্ত-------
ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী একসংগে তঁারা ঘুরল মজা করল ----কিন্তু সোহমের মন ভরে না --- বন্ধুদের প্রেমের গল্প শুনে আর আক্ষেপ করে আর ভাবে তঁার প্রেমিকা তঁাকে ভালোই বাসে না ---নয়তো-----

দশমীর দিন মা কাকু জ্যাঠুমনিরা ঠাকুর বিসর্জনে গেলে পর দুপুরবেলা কুশুম সোহমকে ফোন করে বাড়িতে আসার কথা বলল!
সোহম রাজি হয়ে সংগেসংগে হাজির । তারপর দুজনুর গল্প আর শেষ হয় না-----
সোহম--- তুই এখন কি করবি? ঘুমোবি নাকি?
কুশুম-- না না
সোহম--- আচ্ছা আমি কটা এনেছি দেখবি সলমন খানের চলবে
কুশুম--- অবশ্যই । পূজোর মধ্যে একটাই ভালো সিনেমা দেখতে পারিনি
সোহম--আরে সেই জন্যই তো আনলাম
কুশুম -- তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস তা আবার বলতে
সোহম -- তুই তো ভালোবাসিস না আজ পর্যন্ত একটা কিস ও করলি না
কুশুম- ওসব বিয়ের পর-----
সোহম---- আমি চললাম
কুশুম--- আরে রেগে যাচ্ছিস কেন?
বলতে বলতে কুশুম আর দুজন দুজনকে জড়িয়ে প্রেমের সাগরে ভাসতে লাগল ---------

অরুনিমা মন্ডল দাস
৩০ মার্চ ২০১৭
কলকাতা, বাংলা, ভারত।

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ