পান নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য এই পোষ্ট । যুগ যুগ ধরে এই পান খাওয়ার প্রচলন আমাদের গ্রাম বাংলায় । প্রাচীন গ্রাম বাংলায় এবং এই উপমহাদেশে পান বেশ মজাদ্যর এবং অভিজাত একটি খাবার হিসেবে প্রচলিত ছিল । কারুকার্যময় পানের কৌটা , বাহারি মশলা সহ পান ভক্ষন এবং অতিথিদের আপ্যায়ন , বেশ অভিজাত একটি বিষয় ছিল । এখনো গ্রামের কিছু কিছু বাড়িতে সুন্দর পানের বাটা এবং পানদানি দেখতে পাওয়া যায় ।

বর্তমান আধুনিক যুগে , ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে হৃদয়ের বিভিন্ন ইমেজ ব্যবহার করা হয় । এমনকি আমাদের এখানের একজন ব্লগারও তার তোলা একটি ফটো দিয়ে বলেন ' কাওরে প্রপোজ করতে মন চাইতেছে ... ' যদিও এর আপডেট আর দেননি তিনি 🙂 তিনিও একটি পাতাকে হৃদয়ের / লাভ এর সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করেছেন ।

বর্তমান এবং আধুনিক প্রজন্মকে জানিয়ে দিতে চাই যে , এই সিম্বল বহু পুর্ব থেকেই আমাদের পুর্ব পুরুষ গন ব্যবহার করে এসেছেন ।

এই পানকে ( হৃদয়ের সিম্বল ) অত্যন্ত যত্ন সহকারে বিভিন্ন ধরনের মশলা , জর্দা সহকারে পরিবেশন করা হতো । আজকালকার মত নেট থেকে সংগৃহীত ফটো দিয়ে নয় । গ্রাম্য বধুর হাতে এক খিলি পান খাওয়া পরম আত্মতৃপ্তির এক ব্যাপার ছিলো । বধুও হাসিমুখে লজ্জাবনত মুখে পান পরিবেশন করতেন পান সেবিদের । পান পরিবেশনের আন্তরিকতাও ছিলো অনন্য ।

অত্যন্ত যত্নে পান চাষ করা হয় । পানের বরজে হাত পা ধুয়ে প্রবেশ করতে হয় । হৃদয়ের সিম্বলের চাষ , বিশেষ যত্ন তো নিতেই হবে , তাইনা ?

পান নিয়ে নতুন এক তথ্য:
পানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত নতুন নয় । এটি খাওয়া ভালো নয় , জর্দা খাওয়া ক্যান্সারের ঝুকি , পানের পিক ফেলে নষ্ট করে ফেলা হয় ওয়াল ইত্যাদি ইত্যাদি । এসব আসলে কসমেটিক্স কোম্পানীর অপপ্রচার । পান খাবার পরে লাল টুকটুকে ঠোট খুব আকর্ষনীয় , এবং এটি স্থায়ী এবং প্রাকৃতিক । পানি দিয়ে ধুলেও এই লাল উঠে যায়না । অথচ লিপষ্টিক ? ভুক্তভোগীরাই জানেন কত ঝামেলা এটি ঠোটে দেয়া । পানি / চা / কফি পান করার সময় পাত্রে লেগে থাকা , খাবার সময়ে বিশেষ সতর্কতা , প্রেমিক এর সার্টে দাগও পরে যায় , গালে বা অন্য কোথাও এই দাগ দেখা গেলে তো , লজ্জা লজ্জা 😛

ক্যান্সার প্রতিরোধে পান
পান নিয়ে গবেষনায় নতুন তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। পান চিবিয়ে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করা যায় বলে নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শুনতে অবাক লাগলেও এ কথা সত্য। সম্প্রতি ভারতীয় গবেষকরা দাবি করেছেন, পান চিবানোর মাধ্যমে এক ধরনের বোনম্যারো ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করা যায়। তারা জানান, পান থেকে নিঃসৃত হওয়া একটি পদার্থ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর জন্য উপকারী। ওই পদার্থ অস্থি মজ্জাকে রক্তের শ্বেতকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। পান পাতার অ্যালকোহলিক নির্যাস ক্রনিক মাইলয়েড লিউকোমিয়া আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করে। পানের কারণে ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন করে আশার আলো দেখছেন কলকাতা ও মুম্বাইয়ের গবেষকরা। ভারতের ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি, কলকাতার হেমাটোলজি বিভাগ ও পাইরামাল লাইফ সায়েন্স মুম্বাইয়ের গবেষকরা একসঙ্গে গবেষণা করে পান বিষয়ে এ তথ্য দেন। তারা জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, পানের অ্যালকোহলিক নির্যাসের প্রধান উপাদান হাইড্রোকসিশ্যাভিকল এবং এটি মানবদেহের জন্য উপকারী। এ উপাদানটিই লিউকোমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

পোষ্ট বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে , এবার থামতে হয় । থামার পুর্বে কিছু গান শুনুন , তাহলেই বুঝতে পারবেন , পান আসলে হৃদয়ের সিম্বল হিসেবেই ব্যবহৃত হতো   🙂

ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও  নিনা হামিদের গাওয়া
ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও   কিছুটা ভিন্ন ভাবে গাওয়া অনুসুয়ার পগাওয়া ।

পান খাইয়া ঠোট লাল করিলাম , রুনা লায়লার গাওয়া

যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম , মুল গান শেফালী ঘোষ

একটি পুরানো হিন্দি মুভির গান দেখুন , বুঝতে পারবেন , পান কতো গুরুত্বপুর্ন ছিল ঐ সময়ের সমাজে

সবশেষে একটি আইটেম গান , পান খাইতে চুন লাগে  
\|/   ( গানটি শুনতে থাকুন আর এই ইমোর দিকে তাকান , দেখুন একদম তালে তালে ইমো ড্যান্স করছে  :D)
সোনেলার ব্লগারদের ধাব্রানী খাওয়ার আগেই ভাগি এখন   :p

0 Shares

৪১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ