প্রতি গ্রীষ্মে সমুদ্রস্নান করেছি একাধিকবার।
উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়েছি। বালুচরের নোনা জলে পা ভিজিয়ে হেঁটেছি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা অবধি। সমুদ্রতীরের বড় বড় পাথরে বসে সূর্যাস্ত দেখেছি অভিভূত হয়ে। কিন্তু যেদিন সমুদ্র আবিদকে অতলে টেনে নিলো, সেদিন থেকে আমার আর সমুদ্রস্নান করা হয়না। পা ভিজিয়ে হাঁটা হয়না। সূর্যাস্ত দেখবার অপেক্ষায় বড় পাথরটির উপরে বসেও থাকি না। শুধু নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকি। গর্জন শুনি। ফিরে আসবার সময় দমকা হাওয়া যখন চুলগুলো উড়িয়ে এলোমেলো করে দেয়, কানে বেজে উঠে আবিদের কণ্ঠ __ " পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে উঠে... " এতো দরদ দিয়ে গেয়েছে ছেলেটি !
আমি কাঁধ থেকে ব্যগ নামিয়ে সমুদ্রের মুখোমুখি আরও কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকি। ছোটভাই সমতুল্য সহজ সরল আবিদের মুখখানা সামনে ভেসে উঠে। এই শহরের "রেইনি পার্ক "এ আমাদের দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল। ছবিও তুলেছিলাম আমরা। তারপর একদিন টিভি'তে লাল রং এর ব্রেকিং নিউজের ছুটোছুটি দেখি__" সঙ্গীত শিল্পী আবিদ শাহরিয়ার আর নেই, সমুদ্রে গোসল করতে নেমে... "। নেই মানে নেই ! পৃথিবীর কোথাও নেই ! এমন কি সমুদ্রেও। সেখানে কেবলই থৈথৈ জল। নোনা জল।
আমার সন্তানরা তাঁদের সামার ভেকেশনে সমুদ্রে যেতে চায়। বড় বড় ঢেউয়ে লম্ফঝম্ফ করতে চায় অন্য বন্ধুদের মত। আমি তাঁদের নিয়ে যাই না। নিয়ে যাই ছোট ছোট লেক এ। যেখানে উত্তাল ঢেউ নেই। অতলে হারাবার ভয় নেই। তাঁরা সেখানেই সাঁতার কাটে, পানি নিয়ে খেলা করে, নাক টিপে ধরে ডুব দেয়। আমি আতংকিত হয়ে খুঁজতে থাকি। রিয়াসা-ত, রিহা-ন। আমায় চমকে দিয়ে ওরা ভেসে উঠে, হোহো করে হাসে। তবুও আমার স্বস্তি হয় না।
এ মাসে আবিদের জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন।
সবাই ভাল থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
১৯টি মন্তব্য
লীলাবতী
আবিদের জন্য সমবেদনা। কত সুন্দর ভাবে জন্মদিন, মৃত্যুদিবসকে উপস্থাপন করলেন আপু!
রিমি রুম্মান
এত কাছ থেকে দেখেছি ছেলেটিকে , খুব মনে পড়ে ।
শুন্য শুন্যালয়
অদ্ভূত সুন্দর করে লিখেছেন আপু। এক মুহূর্তের জন্য ছেলেটার মুখের দিকে তাকালাম, যেন আগলে রাখলাম চোখ দিয়ে। আবিদ ভালো থেকো, যেখানেই থেকো। নিজের কাছে রাখলাম লেখাটি।
রিমি রুম্মান
যতবার আবিদের গানগুলো শুনি, ততবারই ওর প্রতি ভীষণ রাগ হয়।
মনে মনে শুধু বলি, ক্যান তুই সমুদ্রে লম্ফঝম্ফ করতে গেলি !
ইঞ্জা
আবিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুক আবিদ। ভাল থাকুক আবিদের বাবা মা।
মেহেরী তাজ
কত সুন্দর করে আপনি সব কিছু উপস্থাপন করতে পারেন আপু!
আবিদ যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক!
রিমি রুম্মান
এমন দরদ দিয়ে কিছু গান গেয়েছে ছেলেটি, খুব মনে পড়ে !
নীলাঞ্জনা নীলা
যেদিন, যে সময়ে আবিদের মৃত্যু হয় তার কিছু সময় আগে ঠিক ওখানেই আমার বান্ধবী ওর স্বামীকে নিয়ে বসেছিলো। বান্ধবী ঊর্মীর জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখা। তারপর জোয়ার শুরুর সময় ফিরে আসে। রাতে আবার বেড়াতে যায় গিয়ে শুনে সব শেষ। আবিদের রবীন্দ্রসঙ্গীত ওর ভালো লেগেছিলো, আমায় বলতো ছেলেটা দারুণ গান করে।
আবিদ আমার বান্ধবী আনন্দীর কাজিন। আনন্দী একদিন বলেছিলো ও নাকি এ জীবনে “পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে” গানটা গাইতে পারবে না। আবিদ ভালো থেকো না-ফেরার দেশে।
আপু একটা কথা বলি এভাবে হারাবার ভয় পেয়ে রিয়াসাত-রিহানকে সমুদ্র দেখা থেকে বঞ্চিত করোনা। আমার অনুরোধ রইলো। ভালো থেকো আপু। -{@
রিমি রুম্মান
হাজার হলেও মায়ের মন বলে কথা নীলা’দি।
সমুদ্র এত ভয়ংকর লাগে কেন জানি।
আগে তো এমন অনুভূতি হত না।
ভাল থেকো।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু ভয় রেখো না। অভ্যাস করে নাও।
ছাইরাছ হেলাল
আবিদের জন্য সমবেদনা,
আর যেভাবে উপস্থাপন করলেন আপনার সহজাত নিপুণ ভঙ্গিতে
তাতে আরও বিদ্ধযন্ত্রণায় ডুবলাম আরো একবার,
‘নাক টিপে ডুব’ অনবদ্য বলতে চাই,
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন।
আবিদের জন্য সব সময় দোআ করি।
এত মায়া ছিল ছোট্ট মানুষটির জন্য।
ব্লগার সজীব
আপনার লেখার মাঝে আবিদের গাওয়া গানটি যেন শুনতে পেলাম। আবিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
রিমি রুম্মান
ভালবেসে সখি নিভৃত যতনে,
আমার নামটি লিখো তোমার
মনেরও মন্দিরে… প্রিয় এই গানটি আবিদের কণ্ঠে এত ভাল লাগতো !
আবিদ থাকুক আমাদের সকলের মনের মন্দিরে।
আবু খায়ের আনিছ
আবিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
রিমি রুম্মান
আমীন…
ঘুমের ঘোরে কেটে যাওয়া অনন্ত পথ
আবিদের জন্য সমবেদনা
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন, নিরাপদ থাকুন।