“আমি যাত্রা দেখতে যাব”। ব্যাস, দিলাম থামিয়ে সবার রাতের খাবার যা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম। আমারতো অনেক বুদ্ধি ছিল ছোটবেলা, তাই খাবারের প্রায় শেষের দিকেই তুললাম কথাটা। বাবা মুচকি হাসি রেখে উঠে গেলেন। মা তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। ভাই বোনদের মাঝে নিজেকে জোকারের মতো মনে হোলেও আমি অনড় আমার চাহিদা নিয়ে। আর এটাতো আমাদের মহল্লার মানুষেরা মহল্লাতেই আয়োজন করছে প্রতি বছর শীতের সময়। সমস্যা বাঁধলো আমাকে নিয়ে যাবেটা কে। সবে মাত্র হাই স্কুলে ওঠা মানুষটাকে মা একা ছাড়বেন না রাতে। বড় ভাইটা দয়া করে এক ঘন্টার জন্য যেতে রাজি হলেন। মায়ের আদেশে নিজেকে একটা বস্তার মতো বানিয়ে নিলাম সোয়েটার, মাফলার, টুপি ওসব দিয়ে। তখনকার শীত মনে হয় একটু বেশী বেশী শীত ছিলো।

খোলা মাঠে কিছু চৌকির উপরে শামিয়ানা টানিয়ে দেয়া যেটা হোল স্টেজ। চৌকিগুলোর একপাশে বাঁশ পুতে একটা রাস্তার মতন নির্দেশনা করা যা সাজুগুজু রূম আর স্টেজের যোগাযোগ সাঁকোর মতো। ঠিক তার পাশেই চৌকি গুলোর আরেক পাশে বসেছে কয়েকজন যন্ত্রী হারমনিয়াম, ঢোল, বিউগল, আরো কত কি নিয়ে। সব চাইতে আকর্ষণীয় ছিলো হ্যাজাক লাইটের আলো। বিদ্যুৎ এর সুবাতাস তখনো বয়নি ওখানে। তবে হ্যাজাকের সাদা আলোটা ক্যামন যেন পূর্ণিমার আলোর কথা বলছে মনে হলো। সব মিলিয়ে আমি বেশ উৎসাহ নিয়ে শুরুর অপেক্ষা যা বেশ কয়েক দিনের স্বপ্নের ফসল হবে।

একসময় বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ পাল্টে গেলো। হ্যা, এই সেই শুভক্ষণ। তিনজন শিল্পী আসলেন মঞ্চে। কী সুন্দর রকমারি পোষাক, সাথে হরেক রকম অলংকার। মনে হলে কোন রূপকথার দেশে এলাম । তারা মঞ্চের একপাশে একসাথে দাড়িয়ে শুরু করলেন গান। একদিকে শেষ করে আবার অন্য আরেক দিক। আরে, এতো গান না! তারা তো প্রার্থনা করছেন! “পরথমে বন্দনা করি ...”(একটু ভিন্ন উচ্চারণ)। সূরের সাথে আকাশ বাতাস চন্দ্র সূর্য কি নেই তাতে। চারদিকে ঘুরে চার রকমের প্রার্থনা। ছোট হৃদয়ে অনেক বড় ধাক্কা, একটা যাত্রাপালার ভালো কামনার কত আকুতি! কি জেনো গেথে গেলো মনে। নিজের একটা প্রার্থনার রূপ থাকলে তো ভালো হতো। “ওর নাম বিবেক”। বিবেক আবার ক্যামন নাম! বড় চুল দাড়িওয়ালা একজন কি যেন গাইছে। এটা করিস না, ওটা করলে এই পরিণতি। এও তো সেই প্রার্থনার ই সুর। “ থাকি আরো কিছু সময়”। ভাইয়াটা হয়তো বুঝে গেছে যে আমি আর এই জগতে নাই।

একসময় রাজা মহা ক্ষিপ্ত হয়ে জোরেশোরে হাঁক দিলেন, তারই পুত্র কিনা গরীবের মেয়ে আলোকে বিয়ে করবে –

  • সেনাপতি
  • আদেশ করুন মরালাশ (মহারাজ)

একসময় আলোকে আনা হোল দরবারে। ওমা, এ দেখি আমাদের মহল্লার শহিদ ভাই। মেয়ে সাজে চেনাই যায়না। আরো কয়েকটা নারী চরিত্রে পুরুষেরাই অভিনয় করেছে। কখন যে ভোরের আলো ফুটতে শুরু হোল। আহা, আরো একটু যদি বড় হোতো কাহিনীটা। বাসায় ফেরার পথে নিজের প্রার্থনার পংতি আঁকা হয়ে গেলো নিজের মত করে। সেই যে শুরু, আজও থামেনি দু’ বেলার প্রার্থনারা।

দূর শহরে দুটি বন্ধু থাকে। সুখ দুঃখের কথা হয় প্রতি নিয়ত। ওদের মন খারাপের একদিন, পাঠিয়ে দিলাম কিছু প্রার্থনার কথা রেকর্ড করে। ওরা নাকি এখনো শোনে মাঝে মাঝে। আজ দিলাম সোনেলাকে।

অনুরোধঃ এই গানটার কথা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করার মতো কিছু নেই।

আমার প্রার্থনা

অলঙ্করণঃ ভিডিওটা আমার এক ছবিকার বন্ধূ তার নিজের সৃষ্টি দিয়ে বানিয়েছে।

0 Shares

৪৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ