একটা জাতির সামগ্রিক পরিচয় নির্ধারিত হয় সংস্কৃতি দ্বারা। মানুষ পৃথিবীর একমাত্র সংস্কৃতিবান প্রানী এবং সংস্কৃতি হচ্ছে তার টিকে থাকার কৌশল। এই কৌশলগুলো ভৌগোলিক, সামাজিক, জৈবিকসহ নানা বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। এই বৈশিষ্ট্য গুলো যেহেতু জাতি বা অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হয় সেহেতু জাতি বা অঞ্চল ভেদে আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতির পার্থক্য দেখতে পাই। সংস্কৃতির এই উপাদানগুলোর কিছু আরোপিত যা আমরা উত্তরাধিকার সুত্রে পাই আবার কিছু অর্জিত যা সমাজ ও যুগের প্রয়োজনে নুতুন করে তৈরী হয়। সংস্কৃতির কোন উপাদান স্থায়ী নয়, প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে সংস্কৃতির ধারা। বর্তমানে বিশ্বায়নের প্রভাবে এই পরিবর্তন হচ্ছে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে। ধর্মও সংস্কৃতির একটা উপাদান। কিছু মৌলিক বিষয় বাদে ধর্ম পালনের প্রক্রিয়াতেও সংস্কৃতির পার্থক্য থাকে। যেমন ইসলাম ধর্ম সৌদি আরবে পালনের প্রক্রিয়া এক রকম আবার নাইজেরিয়ায় আরেক রকম। আবার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোও অনেক সময় ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ও পরিবর্তিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন হয় সময়ের প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। সমস্যাটা তৈরী হয় তখন যখন কোন একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতিকে পরম মানদন্ড হিসেবে ধরা হয় এবং সেই মানদণ্ডের আলোকে নিজ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের আরোপিত চেষ্টা চালানো হয়। আজকে বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট ইসলামী জঙ্গিবাদের উদ্দেশ্য মুলত তাই। ইসলামী জঙ্গিরা মূলত মধ্যযুগীয় আরব সংস্কৃতিকে পরম মানদন্ড হিসেবে ধরে তাদের ভাষায় শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। সভ্যতার অগ্রযাত্রা ও যাবতীয় সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে অগ্রাহ্য করে তারা সভ্যতাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সেই মধ্যযুগে যে যুগটাকে তারা তাদের ভাষায় স্বর্ণযুগ হিসেবে মনে করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে একই না হলেও প্রায় কাছাকাছি ধরনের ভুল (অবশ্যই ইসলামী জঙ্গীদের মত সহিংস না) প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ডাক দেওয়া এক শ্রেনীর প্রগতিশীলরাও করে থাকেন। চুমু হয়তো বাঙ্গালী, চাইনিজ, জাপানিজ, ষ্পানিশ সবাই খায় কিন্তু এটা প্রকাশ্যে খাওয়া হবে নাকি গোপনে খাওয়া হবে সেটা নির্ধারিত হয় সংস্কৃতি দ্বারা। চুমু ভালবাসার প্রকাশ, সেটা মা-সন্তান, স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা অন্য কোন সম্পর্কের অধিকারীদের মধ্যে হতে পারে তবে আমাদের বর্তমান সংস্কৃতি হাজবেন্ড-ওয়াইফ বা প্রেমিক-প্রেমিকার প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া সমর্থন করে না। অনেকে হয়তো হাজবেন্ড-ওয়াইফ বা প্রেমিক-প্রেমিকার প্রকাশ্যে চুমু না খাওয়ার এই রীতিকে ধর্মের প্রভাব বলে মনে করতে পারেন কিন্ত সত্যটা হচ্ছে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের পূর্বেও ভারত বর্ষে তাদের প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল না। এই রীতি কি অপরিবর্তনীয়? অবশ্যই না। কিন্তু আপনি যখন একটি ভিনদেশী সংস্কৃতিকে পরম মানদণ্ড হিসেবে ধরে তার আলোকে নিজ সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার আরোপিত চেষ্টা চালাবেন তখন সেই পরিবর্তন কতটা সাষ্টেইনবল হবে সেই প্রশ্নটা উঠে আসবে। সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হলেও তা প্রচলিত সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্য থেকেই চালানো উচিত অন্যথায় এই ধরনের অতি বিপ্লবী চিন্তা ভাবনা ব্যর্থতা ছাড়া অন্য কিছু বয়ে আনবে কিনা সেটাও এই ধারার প্রগতিশীলদের ভাবা উচিত। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি কিন্ত এই ভুলটা করেনি। তারা জানতো ৭১ সালে যে অসাম্প্রদায়ীক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছে সেই রাষ্টের বুকে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ধৈর্য ধরা ছাড়া আপাতত তাদের কোন উপায় নেই। তারা এও জানতো যে এদেশের রাজনীতিতে ধর্ম তথা ইসলাম সবসময় একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই অসাম্প্রদায়ীক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে কাউন্টার করতে এদেশে ইসলামের কোন বিকল্প নেই। অন্তরে পাকিস্তানী আদর্শ লালন করলেও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে তারা বাস্তবতা হিসেবেই গ্রহণ করেছে। তাদের রাজনীতির মূল অনুষঙ্গ ইসলামের সঙ্গে তারা জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত এই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে মিশিয়ে একটা ককটেল বানিয়েছে এবং এই ইসলাম-বাংলাদেশী মতবাদকে দেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় করেছে। অধিকাংশ পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে শিবিরের রাজনীতির শক্তিশালী ভিতের মূল রহস্যও এটাই। এছাড়া বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থ সাহায্য দিয়ে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রচুর স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিম খানা স্থাপন করে নিজেদের অনুগত একটা শক্তিশালী শ্রেণী তৈরী করেছে। ব্যাংক,বীমা, শিল্প কারখানা স্থাপন করে তারা মূলধারার অর্থনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে যা একই সঙ্গে তাদের নিজেদের সংগঠনকেও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছে। পাশাপাশি পাড়ায় মহল্লায় ওয়াজ মাহফিল আর প্রচার যন্ত্র ব্যবহার করে নিজেদের মতাদর্শকে তারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এভাবেই ধীরে ধীরে খুব সুক্ষ ভাবে বাঙ্গালী সমাজের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়েছে একটা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, হুমায়ুন আজাদ যাকে তুলনা করেছেন বাঙ্গালী মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙ্গালী এবং মুসলমান বাঙ্গালী থেকে মুসলমান হওয়া হিসেবে। মনে রাখবেন এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আপাতত সাষ্টেইন করছে, শুধুমাত্র জামায়াতের নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে ঠেকানো যাবে না। এই সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে কাউন্টার করতে প্রয়োজন দীর্ঘ সাংস্কৃতিক লড়াই। সেটার প্রুস্তুতি নেওয়াই এখন বড় জরুরী।

fdfd
২)
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি যুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির স্বীকার হয়েছে নারী, তা সেই যুদ্ধ রাজনীতি, অর্থনীতি ,ধর্ম কিংবা অন্য যে কোন নামেই পরিচালিত হোক না কেন। ইসলামী জঙ্গিবাদ এই মুহূর্তে বিশ্বের জন্য একটা বড় সমস্যা ( বামপন্থীরা অবশ্য ভিন্ন মত দিতে পারেন)। আফগানিস্তানে তালেবান শাসনামলের ইতিহাস যদি দেখেন তাহলে দেখবেন সেখানে ইসলামিক কট্টরপন্থা অবলম্বন করে নারীদের গৃহবন্দী করে সমাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল। নারীদের মাহরাম (পুরুষ সঙ্গী) ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া, চাকরি ও প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ধবংস করা হয়েছিল হাজার হাজার স্কুল। নারীদের স্কুল গুলোতে হিংস্র হামলা, নানা রকম কথিত অপরাধে নারীদের প্রকাশ্যে বর্বরোচিত হত্যা ছিল সেসময় সেখানকার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এমোনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাব মতে সেসময় আফগানিস্তানে সংঘটিত হওয়া ৮০ শতাংশ বিয়েই ছিল জোরপূর্বক। সাম্প্রতিক কালে ইরাক -সিরিয়ায় আই এস জঙ্গীদের হাতে ইয়াজিদি নারীদের দুর্দশার খবরও হয়তো আপনারা পত্রিকায় পড়ে থাকবেন। আর অতদুর যদি যেতে না চান তাহলে পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইয়ের নজির তো আছেই। ইসলামী জঙ্গিবাদের বিস্তারের ফলে যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও কখনো যুদ্ধাবস্থা তৈরী হয় তবে সেই যুদ্ধেও সবচেয়ে বেশি ভুগবে বাংলার নারী। এই সত্যটা বাংলার শিক্ষিত মডারেট নারীরা ( যারা সব কিছুতে ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র খুঁজেন কিংবা “কিউট” জঙ্গীদের প্রতি অন্তরের টান অনুভব করেন) যত দ্রুত বুঝবেন ততই মঙ্গল। জঙ্গীবাদ ঠেকানোর কাজে তাই নারীদের ভুমিকার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। সম্প্রতি এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবলের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের মেয়েরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে। এই মেয়েগুলোর অধিকাংশই দেশের প্রান্তিক সমাজ থেকে উঠে আসা। অধিকাংশই দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত, নানা রকম প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে এদের এই পর্যায়ের সাফল্য রীতিমত অভাবনীয়ও বটে। বাংলাদেশে যেখানে দিন দিন বোরখাওয়ালীদের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, সো কলড শিক্ষিত মডারেট নারীরা যেখানে হিজাবের মধ্যে নারী মুক্তির উপায় খুঁজছে সেখানে এই মেয়েগুলোর সাফল্য নিঃসন্দেহে আলাদা কৃতিত্বের দাবী রাখে। আর একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় তা হচ্ছে জঙ্গীবাদ মোকাবেলার এই ক্রিটিক্যাল সময়ে এই মেয়েগুলো তাদের সাফল্যের জন্য মিডিয়ার কাছ থেকে বেশ ভাল প্রচার পেয়েছে। যদিও বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের নজির আগেও কিছুটা ছিল যেমন রানী হামিদ, জোবেরা রহমান লিনু কিংবা সম্প্রতি সাফ গেমসে স্বর্ণ জয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, মাহফুজা খাতুন শীলা কিন্ত তারা কেউই মিডিয়ার কাছ থেকে এতটা প্রচার পায় নি। সেদিক দিয়ে এই মেয়েগুলো ভাগ্যবান। এই প্রচারের ফলে দেরীতে হলেও এখন বাফুফে ও সরকারের টনক নড়েছে। বাফুফে এখন তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করছে, বেসরকারী নানা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এদেরকে নানা ভাবে সম্বর্ধিত করা হচ্ছে অর্থাৎ বাংলাদেশের এই ক্রিটিক্যাল সময়ে সরকার ও মিডিয়া এই মেয়েগুলোর সাফল্যকে জঙ্গীবাদ মোকাবেলার সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের একটা ক্ষুদ্র ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। ডাঃ ইসতিশনা ঐশী, আকলিমা আক্তার মণি, শায়লা আফরিন ওরফে প্রিয়তিদের বিপক্ষে কৃষ্ণা, সানজিদা, মৌসুমীদের একটা আলাদা আইডেন্টিটি হিসেবে দাড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যাপারটা আশাব্যঞ্জক। তবে বাস্তবতা হল দিনে পর দিন মাসের পর মাস পাড়ায় মহল্লায় ওয়াজ ব্যবসা করে সাইদীরা যেভাবে “ছিলাকলা তত্ত্ব” জনপ্রিয় করেছে তাতে এই লড়াইয়ে জেতার পথ অত সহজ নয়। এই ফুটবলার মেয়েগুলো বাসে করে বাড়ি ফেরার পথে তারই কিছু নমুনা দেখেছে। সমাজেও ঐশী, মণি, প্রিয়তি তৈরি হওয়ার পথ গুলো রুদ্ধ নয়। সানজিদা, মৌসুমীরা কেন হিজাব করে না, কেন তারা মেয়ে হয়েও ফুটবল খেলে এই প্রশ্ন গুলো দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যেই আছে এটাই বাস্তবতা। এই প্রশ্নগুলো উত্থাপনের পিছনে রয়েছে একটা দর্শন এবং এই দর্শন থেকে গড়ে উঠেছে প্রশ্নকারীর পার্সপেক্টিভ। মনে রাখবেন এই পার্সপেক্টিভ কিন্ত প্রগতিশীলতার পার্সপেক্টিভ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ইভটিজিংও কারো কাছে প্রেমের শ্বাশত নিবেদন, আবার কারো কাছে প্রেমের শ্বাশত নিবেদনই ইভটিজিং অর্থাৎ এখানেও পার্সপেক্টিভটা ডিফ্রেন্ট। কবির ভাষায় বলতে হয়-

প্রেম নিবেদন শাহরুখ করলে
মাইয়া প্রেমে পাগলা
একই কাম আমি করলে
খাই ইভ টিজিং এর মামলা।

ইটজ অল এবাউট পার্সপেক্টিভ ইনডিড। পার্সপেক্টিভ আর পার্সপেক্টিভ উদ্ভবের পিছনের থাকা এই দর্শন মোকাবেলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

  • লীলাবতী

    বর্তমান সময়ে আপনার এই লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। এমন ভাবে আমরা সবাই চিন্তা করলে দেশটিই পালটে যেত। জামায়াত তাদের ৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবেই, সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, জিয়াউর রহমান সে সুযোগ তাদের করে দিয়েছে। আমাদের দেশে ধর্ম একটি বিশাল বিষয়, খুব সেন্সেটিভ। সুযোগ মত একে ব্যাবহার করলে সাফল্য আসবেই। যেটা জামায়াত করেছে। যে কারনে জামায়াতকে ঘৃণা করার পরিবর্তে মানুষ তাদের ইসলামের রক্ষা কর্তা মনে করে।
    আমাদের স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক বিকাশ সব অন্ধকারকে দূর করে দিতে পারে, কিন্তু এই বিকাশের জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এমন লেখার জন্য ধন্যবাদ ভাই।

    • অপার্থিব

      জামায়াতের নামের শেষে ইসলাম থাকার কারণে বাংলার রাজনীতিতে তাদের একটা অবস্থান ঠিকই টিকে থাকবে, পাশাপাশি কার্যকর বিরোধী দলের অভাব থাকার কারণে আওয়ামী লীগ ও ভারত বিরোধী রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিও পেতে পারে । শুধু মাত্র নিষিদ্ধ করে তাদের ঠেকানো যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা চালাতে হবে রাজনৈতিক , সামাজিক , সাংস্কৃতিক ভাবে। আমাদের স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক অবশ্যই বিকাশ সব অন্ধকারকে দূর করতে পারে কিন্ত এই বিকাশ ত্বরান্বিত করতে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি ও জামায়াতি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইটা চালাতে হবে। তাদের সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। মানুষের মধ্যে অসাম্প্রদায়ীকতা বোধ ও প্রগতিশীলতা জাগ্রত করতে হবে। যারা জামায়াতি সংস্কৃতি লালন করছে তাদের মধ্যে সংশয়ের বীজ বপন করতে হবে। দায়িত্বটা আমাদের সবার। সবাইকে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে অন্যথায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার।

      ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

  • নাসির সারওয়ার

    খুব ভালো analytical লেখা। অনেক মানুষই হয়তো এমন ভাবে। তবে কিছু মানুষ নিজেকে বাজে কধা শোনা থেকে হিজাব পরে আলাদা করে।
    লেখাটায় ধর্ম এবং রাজনীতির রসদ আছে। ঠিক জানিনা সোনেলার রীতিনীতির সাথে যায় কিনা।
    শুভেচ্ছা রইলো।

    • অপার্থিব

      ধর্ম ও রাজনীতি দুটোই সমাজের অনুষঙ্গ। এই বিষয় নিয়ে লেখা যাবে না কেন ? সোনেলার রীতি নীতিতে আমি এমন কোন কিছু খুঁজে পাইনি।

      পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে জীবনের কোন না কেন পর্যায়ে তার নিজের সম্পর্কে একটাও বাজে কথা শোনে নি। কোন একটি বিষয়ে সবাই একমত হবে, কোন একটি ধারণা সবার ভাল লাগবে এমন কোন কথা নেই। তাই অন্যের বাজে কথা শোনা থেকে রেহাই পেতে হিজাব পরার ধারণা হাস্যকর। অন্যরা কি ভাবছে তার চেয়ে আমি নিজে কি ভাবছি সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার জীবনাচরন প্রভাবিত হবে আমার নিজের জীবন দর্শন দ্বারা, অন্যের জীবন দর্শন দ্বারানয় দিয়ে এই বোধটা সবার মধ্যে জাগ্রত হওয়া উচিত।

      ধন্যবাদ।

  • শুন্য শুন্যালয়

    দেশে হিজাবীদের সংখ্যা যেইভাবে বাড়ছে তাতে সেই মুসলমান হয়ে যাবার প্রায় দরজায় আমরা। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তো হয়েই আছে, এই সেদিন ব্লগে এক ভাইয়ের মন্তব্যেও দেখলাম মা বোনদের রক্ষা করবার জন্য পন্থা এটাকেই মনে করছেন, তাহলে আর কী? সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কাউন্টার করতে আমরা নিজেদেরকেই আস্তে আস্তে হিজাবে আটকাচ্ছি। পহেলা বৈশাখে হাতাহাতি প্রতিরোধ না করতে পেরে, বলছি যাবার দরকার টা কী অই ভিড়ের মধ্যে, আর এখন তো প্রোগ্রামই বাতিলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সবকিছুই পেছন দিকে টেনে নেয়ার উদাহরন চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো সবে হলো, সেই ১৯৭১ এর বীজ গুলো এখন যেইহারে ছড়িয়েছে, তাতে মৌসুমী, সানজিদারা সাময়িক খবরই না হয়ে থাকে!
    গোছালো লেখা।

    • অপার্থিব

      রাস্তায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হিজাব কোন সমাধান নয়, যে বোধ থেকে এই নারী নির্যাতন হয় সেই বোধটার বিরুদ্ধেই লড়াই চালানোই সবচেয়ে বেশি জরুরী। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি আর কট্টর পন্থী ধর্মীয় সংস্কৃতিকে ঠেকানোর জন্য বাঙ্গালী সংস্কৃতির চর্চাকে লিমিটেড করা যে কোন সমাধান নয় সেটাও প্রশাসনকে বুঝতে হবে বরং এই ধারার সংস্কৃতির চর্চাকে আরও বেশি করে উৎসাহিত করা উচিত । তবে শুধু সরকারের আশায় বসে থাকলে হবে না, সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে বাঙ্গালী সংস্কৃতি চর্চা ও জঙ্গীবাদ বিকাশের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। শুরুটা করতে হবে অন্তত নিজের পরিবার দিয়ে।

      ধন্যবাদ।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    দারুণ লিখেছেন। হুম আমাদের দেশে এখন হিজাবীদের সংখ্য অনেক বেড়ে গেছে। একসময় চাচী-খালাদের দেখেছি ঘোমটা দিয়ে চলতে। আর এখন সেই চাচী-খালাদের মেয়েদেরকে দেখছি হিজাব পড়ে আছে। আজ যদি বেগম রোকেয়া বেঁচে থাকতেন, আমি জানিনা তিনি কি করতেন!
    দেশের মানুষ একদিকে মহাধার্মিক হচ্ছে, আবার অন্যদিকে হিন্দী/ইংরেজী মুভি দেখার জন্য অনলাইনে টিকেটও বুকিং দিচ্ছে। সেদিন দেখলাম বাংলাদেশের নায়িকাদের পোষাক। আর ছেলেদের কথা কি বলবো! এরা তো যখন যাকে ইচ্ছা তাদের সম্পত্তি হিসেবে ভোগ করে নিয়ে মেরে-কেটে ফেলে দিতে পারে। তারপর আবার বলতেও পারে এমন সব পোষাক পড়ে কেন? নয়তো বলবে মেয়েমানুষের বাইরে যাবার কি দরকার একলা একলা? সেদিন কোথায় জানি পড়লাম, দেশে পতিতাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ইসলাম প্রধান দেশে পতিতালয়!!!

    রাজাকারদের জন্য কতো যে কান্না। আহা কবরে আবার শহীদও লেখা হয়। আর পাকিস্তানীদের এদিকে বুক ফেঁটে যায়। ফেসবুকে নর্দমার এসব কীটদের জন্য আরোও অনেক কীটদের দেখি এক হয়ে যেসব বাণী ছাড়ে। এরা নাকি আল্লাহর বান্দা। সেদিন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বলতে শুনেছি নয় মাস নয়, যদি নয় বছর হতো, তাহলে নাকি বুঝতো সবাই স্বাধীনতার মর্ম। খুব তাড়াতাড়ি দেশ স্বাধীন হয়েছে। আসলে কি স্বাধীন হয়েছে?

    ফুটবলার মেয়েদের কথা আর কি বলবো? যেখানে ঘোমটা দিয়ে শিক্ষিকারাই লাঞ্ছিত হয়, সেখানে ফুটবল খেলে মেয়েদেরকে কি ছেড়ে দেবে আমাদের ধার্মিক মানুষেরা?

    • অপার্থিব

      ঢাকার বাইরের জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলের অবস্থা বেশ ভয়াবহ। সেখানকার অধিকাংশ নারী বোরখা -হিজাব পড়ছে। গ্রামের দিকে শিক্ষা ও প্রগতিশীলতার হার কম থাকার কারণে এই অঞ্চলে জামায়াতি সংস্কৃতি শক্তিশালী হয়েছে। লোকজন সাইদী আর জাকির নায়েকের থিওরি কে কোন রকমের প্রশ্ন ছাড়াই অন্ধভাবে বিশ্বাস করছে। আজকাল অনেক বোরখাওয়ালী বেগম রোকেয়াকে আইডল মানছে, রোকেয়ার লেখার ব্যাখ্যা পরীক্ষার খাতায় লিখে জিপিএ ফাইভ পাচ্ছে কিন্ত সেই লেখার মর্ম বোঝার চেষ্টা করছে না। রোকেয়া প্রায় একশ বছর আগে যে চিন্তা করেছে সেই চিন্তা আজ শুধু তাদের কাছে পরীক্ষার খাতায় লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে। আফসোস, বড়ই আফসোস!!! রোকেয়ার কপাল ভাল যে তাকে এই দৃশ্য দেখতে হয়নি।

      অনেক মেয়ে বোরখা হিজাব পরলেও প্রচলিত আধুনিক সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করতে পারছে না , তারা একটু একটু করে আধুনিক সংস্কৃতিতে ইন্টিগ্রেটেড হচ্ছে। কিন্ত নিজের ও দুই সংস্কৃতির পার্থক্য সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা না থাকায় তাদের অনেকের মধ্যে কনফিউশন তৈরী হচ্ছে। এই কনফিউশন থেকে মুক্তি পেতে তারা আরো বেশি করে নিজেকে আবদ্ধ করছে। আর অধিকাংশ ছেলে বিয়ের জন্য নম্র, ভদ্র , পর্দানশীন মেয়ে খুজলেও প্রেম বা যৌন সম্পর্কের জড়ানোর জন্য তাদের কোন বাছ বিচার নেই। এই ধারার ছেলেরাই সম্পর্ক গড়ছে, আবার ভাঙছে, রাস্তা ঘাটে নারী নির্যাতন করছে, ধর্ষণের দায় মেয়েদের পোশাকের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এরাই আবার বাড়ি ফিরে নিজের মা বোনকে পর্দা করতে বলছে। যৌন অবদমিত সমাজে পতিতা যতটা না বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে পতিতার খদ্দের ্কিন্ত লোকে ব্যস্ত পতিতা নিয়ে, পতিতার খদ্দের নিয়ে কেউ ভাবিত নয়।

      ধন্যবাদ।

      • নীলাঞ্জনা নীলা

        আমাদের সমাজের মেয়েদের অবস্থা এখন “শ্যাম রাখি, না কূল রাখি” এই অবস্থা।
        আমি এই মেয়েদেরকে বলবো শালীনতা কিংবা ধর্ম পালন হিজাব/বোরখা পড়লেই হয়না। তাহলে আমাদের যে চাচী-খালারা উনাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখেছি, কিন্তু হিজাব/বোরখা পড়তে দেখিনি। আর আজকের সমাজের পুরুষগুলো তো হিপোক্রেট।

        আপনার মন্তব্য ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

  • মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

    লেখাটি সত্যিই মন কেড়েছে এমন ভাবে বুঝিয়ে দেশ ভক্ত লেখা হৃদয়কে নাড়া দেয়।তবে সব কিছুর দায়ী এই আমরাই আবার এই আমাদেরকেই ভাবতে হবে কাজ করতে হবে কি ভাবে তা নির্মূল করা যায়। -{@

  • ইলিয়াস মাসুদ

    প্রকৃত ভাবে মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে পারলে মামুষের মানুষিকতার পরিবর্তন এম্নিতেই এসে যেত,সব পলিটিকেল দল গুলো ধর্মকে ব্যাবহার করে শিক্ষার মান কে উন্নত করতে দেয় না,শিক্ষাবিদ হিসেবে যারা শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রন করছে তারা প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষাকে ধ্বংস করে যাচ্ছে দিনের পর দিন,আমরা আমাদের সন্তানদের সেই নিন্মমানের শিক্ষায় শিক্ষিত করছি জীবন ভর,ইসলাম,জামাত,ইন্ডিয়া পাকিস্তান নিয়ে মাতা খারাপ করছি,আসল গোড়াতে হাত দিচ্ছিনা,এত নিন্ম মানের শিক্ষায় শিক্ষিত করে সেই জাতির কাছে আপনি ধর্মের গোড়ামি ছাড়া আর কি আশা করতে পারেন,কেউ ড্রাগে আসক্তি হোয়ার পরে তাকে সেই ড্রাগ থেকে মুক্ত করা কঠিন,বাংলাদেশের মানুষ স্বভাব্জাত হিসেবে অতিপতিক্রিয়া পছন্দ করে না,এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে কিনা জানি না,মানুষ যদি প্রাথমিক পর্যায় থেকে উন্নত শিক্ষা না হলেও সঠিক শিক্ষা পেত তবে বোরকা কেন, লুংগিও সমাজ থেকে এমনি এমনি বিদেয় হত।আমেরিকাই প্রচুর ধর্ম প্রচার হয়, এমন কোন সপ্তাহ নেই আমার কাছে ভিন্ন ধর্মিওরা তার প্রচার নিয়ে আসেনা,কিন্তু কেউ-ই তেওম প্রতিক্রিয়া দেখায় না,অথচ আমাদের দেশে যারা ধর্মে বিশ্বাস করে আর যারা করে না দুই অতিপ্রতিক্রিয়া(Allergen) দেখায়,তাতে করে আমার মনে হয় মানুষ তার নিজেস্ব বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে এবং বোরকা এবং স্বল্প বসন তার-ই একটা উপাদান মাত্র।উপরের দুটোই আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না।
    এসব বিষয়ে আমার জ্ঞান খুব স্বল্প জীবনের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন দেশ জাতির সাথে চলতে চলতে আমার শুধু মনে হয় প্রাথমিক পর্যায়ে প্রক্রিত শিক্ষা আমরা জাতিগত ভাবে পায়না,আমার নিজেরো সেই অভাব আছে তাই বললাম।
    খুব ভাল লিখেছেন,আমরা যত তারাতারি এই সব বিষয় গুলোকে উপলব্ধি করতে পারবো ততই সামনের দিকে আগাতে পারবো

    • অপার্থিব

      আপনি ঠিকই বলেছেন বোরখা বা বিকিনি কোনটাই বাঙ্গালী সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। আসলে মানুষের পোশাক নির্ধারিত হয় সংস্কৃতি দ্বারা। সাংস্কৃতিক ধারা তৈরিতে আবহাওয়া বা জলবায়ুর প্রভাব থাকে। এই অঞ্চল নদী প্রবণ দেশ, চলাচল ও জীবন ধারনের জন্য নারীদেরও কঠোর শারিরীক পরিশ্রম করতে হত । আবহাওয়ার সাথে দৈনন্দিন বাস্তবতা মিলিয়ে এখানকার বাঙ্গালী নারীদের পোশাক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যা মোটেও অশালীন নয়।মধ্যপ্রাচ্যে নারী পুরুষ সবাই লম্বা ঢিলেঢালা আলখাল্লার মত পোশাক পরে। সমস্যা হচ্ছে এক শ্রেণীর লোক সৌদি সংস্কৃতিকে পরম মানদণ্ড হিসেবে ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে সেই সংস্কৃতি আমদানী করতে চাচ্ছে, ঐ সংস্কৃতির মানদণ্ডে বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে বিচার করে নারীদের চিরায়ত পোশাককে অশালীন বলে রায় দিচ্ছে। এটাই মূলত সমস্যার জায়গা।

      পশ্চিমা বিশ্বেও ধর্ম প্রচার হয় , সেখানকার সমাজে ধর্ম বেশ ভাল ভাবে টিকে আছে কিন্তু সেখানকার রাষ্ট্র কাঠামো ও রাজনীতি থেকে ধর্মকে পৃথক করা হয়েছে। ধর্মকে বলতে গেলে অনেকটাই ব্যক্তিগত আচার হিসেবে রাখা হয়েছে, ধর্ম প্রশ্নে রাষ্ট্র নিরপেক্ষ অবস্থানে আছে তাতে কিন্ত ধর্ম বা ধার্মিক লোকদের ধর্ম পালনে কোন ক্ষতি হয়নি , ভবিষ্যতেও হবে না । কিন্ত বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে রাষ্ট্র কাঠামোর সব জায়গায় ধর্ম জাকিয়ে বসেছে প্রবল ভাবে।সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম যোগ করে অন্য ধর্মের নাগরিকদের কার্যত দ্বিতীয় স্তরের নাগরিক বানিয়ে দেওয়া হয়েছে যা সংখালঘু নির্যাতনের স্বপক্ষে এক ধরনের রাজনৈতিক ও মনস্তাত্বিক সুরক্ষার জায়গা তৈরী করেছে। রাষ্ট্র কাঠামো ও রাজনীতিতে ধর্ম শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় ধর্ম ভিত্তিক জামায়াতী সংস্কৃতি এখন তৃণ মুল পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। এই সংস্কৃতিতে মোকাবেলা করার প্রয়োজনেই রাষ্ট্র , রাজনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ধর্মকে পৃথক করা জরুরী।

      ধন্যবাদ।

  • মিষ্টি জিন

    অনেক ভাল একটা বিষয় বড় ভাইয়া।
    কবে জানি বলেছিলাম পড়াশুনা করলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না। তো হঁযেছে হোল আমরা পড়াশুনা করে হাই ডিগ্রি নিঁয়ে মানষিক ভাবে অশিক্ষিত হচছি।
    আমার মা দাদীকে দেখেছি পাচওয়াক্ত নামায পড়তে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলতে। এনারা বৃটিশ আমলের। খুব একটা পডালেখা করেন নি। মা বলতেন নিজের ধর্ম কে শ্রদধা কর। ধর্ম কাউকে দেখানোর বিষয় না।এনারাই প্রকৃত শিক্ষিত ছিলেন।ধর্মিয় গোঁড়ামি ছিল না এদের মাঝে।
    আর এখন আমরা নামাজ পড়ি আর না পড়ি হিজাব এখ্খান মাথায় থাকবেই। মনের হিজাব দেয়ার নাম গন্ধও নাই।
    প্রত্যেকটা দেশের ই তার নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। এবং দেশের মানুষ তা শ্রদধা করে। ইরানে দেখেছি নওরোজ বা নতুন বছর কে ইরানিরা খুব ধুমধামের সাথে পালন করে । প্রত্যেক ইরানি এতে অংশ গ্রহন করে। কারো মনেই এ নিঁয়ে কোন বিদ্বেষ নাই। অথচ আমাদের পহেলা বৈশাখ নিয়ে কত মত দ্বিমত। ধর্মের নাম করে অন্ধকারে ডুবে আছি আমরা।
    সঠিক সুস্হ সাংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যমেই এই অন্ধকার থেকে আমরা হঁয়তো মুক্তি পেতে পারি। সেদিনের অপেক্ষায়।

    • অপার্থিব

      চমৎকার মন্তব্য করেছেন বড় আপু। আমার প্রায় শত বর্ষী দাদী এখনো বেঁচে আছেন যাকে ছোট বেলা থেকে কখনো বোরখা পড়তে দেখি নাই । ছোটবেলায় যত বয়স্ক মহিলা দেখেছি তাদের কাউকেও বোরখা-হিজাব পড়তে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। আপনি যদি ৫২ এর ভাষা আন্দোলন , ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে বাঙ্গালী নারীদের বিক্ষোভ মিছিলের ষ্টিল ছবি দেখেন তবে সেখানেও কোন বোরখা ওয়ালীকে পাবেন না। যদিও সে সময় নারী শিক্ষার হার অনেক কম ছিল , যারা মোটামুটি শিক্ষিত ছিল তাদের মধ্যে সঠিক শিক্ষা, মুক্ত চিন্তার ক্ষমতা, প্রগতিশীলতা ও আত্ন মর্যাদাবোধ ছিল যা এখন কার শিক্ষিত নারীদের একটা বড় অংশের মাঝে সেটা পাবেন না । তাহলে এখনকার নারীরা কি এগিয়েছে না পিছিয়েছে? শালীনতা -অশালীনতার ধারণা আপেক্ষিক। শুধু বোরখা-হিজাব শালীন আর বাকি সব অশালীন এ জাতীয় ভাবনা আসলে ধর্ম ভিত্তিক জামায়াতী সাংস্কৃতিক ভাবনা। ধর্ম ভিত্তিক যে জাতীয়তাবাদের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল সেই আদর্শের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ যায় না কারণ পহেলা বৈশাখ আবহমান কাল থেকে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে একটা অসাম্প্রদায়ীক সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে এ অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। একারনে পাকিস্তান আমলে পহেলা বৈশাখকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি আখ্যা দিয়ে এর উদযাপনকে নিরুৎসাহিত করা হত। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি আর জামায়াতের নামে পাকিস্তানী আদর্শের পুনরুজ্জীবনের ফলে এই জাতীয় ভাবনা আবার নুতুন করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুস্থ সাংস্কৃতিক বিকাশই এ থেকে উত্তোরনের একমাত্র পথ।

      ধন্যবাদ।

  • মৌনতা রিতু

    আমার নানা ও দাদা বাড়ি এরা খুবই রক্ষনশীল মুসলিম পরিবার। এদের পূর্ব পুরুষ হেঁটে ও হজ্জ করেছে। কিন্তু দাদা বাড়িতে খুব কড়াকড়ি ছাড়া নানা বাড়িতে এতো কড়াকড়ি দেখিনি। আমাদের বাড়ির মেয়েদের প্রথম শর্ত বোরখা পরতে হবে। আমার বাবা একদম পছন্দ করত না। আমি দাদা বাড়ি গেলে পরতাম ঠিকই। পরতে হতো। তবে তখন ও যে ইভটিজিং এর শিকার হইনি তা না। তাই ফুফুদের বলেছিলাম, কি লাভ হল পরে ! শশুর বািতে এসেও একি কড়াকড়ি বোরখা পরতে সবে। জুলি একদম রাজি হলো না। ও মোটেও বোরখা পছন্দ করে না।শুরু হল ওখানেও যুদ্ধ। তবে ধর্মীয় গোড়ামি নানা বাড়িতে ছিল না। আমার নানা বাংলার প্রতিটা পর্বন পালন করতেন। তখন তো দিন উল্লেখ করে হতো না, তবে পর্বন অবশ্যই পালন হতো। নানা আয়োজন করত নৌকা বাইচ, ঘোড়ার দৌড়, গাজি কালুর গীত, পহেলা বৈশাখের আগে সব বকেয়া শোধ, মেলাতে আমাদের নিয়ে যাওয়া। নানিকেও দেখতাম খুব প্রফুল্ল মনে এসব করতে। আমি তাই এই সময়গুলোতে নানা বাড়িতেই থাকতাম।
    আসলে ভাই মনোস্তত্বিক দিক থেকে মানুষ স্বভাবতই ধর্মের ভয়ে ভীতু। কিন্তু ধর্ম কখনোই আপনাকে বন্দি করেনি। আমরাই বরং ধর্মের মূল কথাকে বন্দি করেছি। নামাজ পড়ি না, কিন্তু অন্য সব ধর্মীয় কাজে নাক গলাই। এই হলাম আমরা। কোরবানির দিন গরুর মাংস কাটতে কাটতে দুপুরের নামাজই পড়ি না। অথচ গরু নিয়ে সেলফি তুলি। তবে এটা ঠিক, অন্তত আমি যেটা মানি, পুরুষকে মানায় এমন কিছু আচরন মেয়েদের ও কিন্তু মানায় না। যেমন এবার দেখলাম, কয়েকটা মেয়ে গরু কিনে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে, গরু জবাইয়ের সময় গরুকে ধরছে, আসলে এসব আচরনে নারী আর নারী থাকে না। তবে খেলাধুলার বিষয় কিন্তু আলাদা। ওটার সাথে এটার কিন্তু কোনো মিল নেই। আর জামাত কোনোদিন কখনোই শুধরাবে না।
    অনেক সুন্দর একটা পোষ্ট।
    ধন্যবাদ ভাই।

    • অপার্থিব

      প্রথমেই সুচিন্তার জন্য জুলি আপু/ভাইকে আমার পক্ষ থেকে একটা ধন্যবাদ পৌঁছে দিয়েন। আসলে আবহমান কাল থেকে এই অঞ্চলে পহেলা বৈশাখ , নৌকা বাইচ, ঘোড়ার দৌড়, গাজি কালুর গীত সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসব আয়োজিত হত। ধর্ম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের নামে পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই জাতীয় অসাম্প্রদায়ীক উৎসবগুলোকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি আখ্যা দিয়ে এর উদযাপনকে নিরুৎসাহিত করা শুরু হয় যা স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার পাওয়ার কারণে আজও প্রবল ভাবে বিদ্যমান। আগেও কট্টর পন্থী ধ্যান ধারনার অধিকারী মুসলিম লীগের রাজনৈতিক চেতনাধারী লোকজন বাঙ্গালী সমাজে ছিল কিন্ত সেই সংখ্যা এখনকার মত এত বেশি ছিল না । রাষ্ট্র , রাজনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্ম প্রবল ভাবে জাকিয়ে বসায় ও জামায়াতি সংস্কৃতি বিস্তারের কারণে এই ধারার লোকজনের সংখ্যা সমাজে বেড়েছে। সমাজের সুস্থ বিকাশের জন্যই এদের বিরুদ্ধেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক লড়াইটা জরুরী।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ