নদী (১৯তম পর্ব)

ইঞ্জা ৯ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:০২:৪০পূর্বাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

images-6

 

 

ঘুমন্ত নদী, নাবিলাকে আরো ভালো করে বুকে টেনে নিলো, নাবিলা গলাটা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে রইল দেখে নদীর মা অবাক হলো।
নদী চোখ খুলে মেয়ের দিকে তাকালো, এরপর আসে পাশে তাকিয়ে অবাক হলো, ঘুমের মাঝে থাকায় সে মনে করেছে মেয়ে সব সময় যেমন করে বুকে আসে, তেমনি এসেছে লন্ডনের বাসায়।
নদী মেয়ের মাথায় হাত ভুলালে নাবিলা চোখ খুলে নদীর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।
মামনি তুমি কখন এসেছো?
এইতো কিছুক্ষণ আগে এসেছি, আমার ফিভার ছিলো তাই ড্যাড নিয়ে এসেছে।
কি বলো বলেই নদী মেয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখলো, কই ফিভার তো নেই মামনি, ওকে তুমি শুয়ে থাকো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
ওকে।
নদী উঠে গেলো বিছানা ছেড়ে, ঐদিকে নদীকে উঠতে দেখে নদীর মা দ্রুত সরে গেল দরজা থেকে, সরে গিয়ে উনি কিচেনে গেলেন মেহমানের জন্য নাস্তা রেডি করতে।
নদী ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে ড্রেস চেইঞ্জ করে নিলো, মাথাটা পরিপাটি করে নিয়ে বললো, চলো মামনি, ড্যাডের সাথে দেখা করে আসি।
মেয়ে বিছানা ছেড়ে দ্রুত নেমে এসে নদীকে জড়িয়ে ধরলো, এরপর নদীকে নিয়ে চলে এলো ড্রয়িং রুমে।
নদী জীবনকে দেখে বললো, কেমন আছেন?
জি ভালো, মেয়ের হঠাৎ জ্বর হলো দেখে হাসপাতালে চেক করাতে এসেছিলাম, ওখান থেকেই আপনাদের এইখানে নিয়ে আসার জন্য গোঁ ধরে বসলো, তাই নিয়ে এলাম।
ভালো করেছেন কিন্তু ওর তো জ্বর নেই!
কি বলেন, খুব জ্বর ছিলো বলেই জীবন মেয়ের কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখলো আর বললো, আশ্চর্য, জ্বর তো নেই।

ও তুমি বুঝবেনা বাবা, ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে করতে বললেন নদীর মা, সাথে কাজের লোক ট্রলিতে করে বিভিন্ন ধরলের নাস্তা, শরবত, চা নিয়ে আসলো।
জি খালাম্মা, আমি বুঝলাম না।
মেয়ে তোমার খুব লক্ষি আর নদীর ন্যাওটা, ও নদীর রুমে গিয়েই নদীর বুকে মাথা গুঁজে দিলো।
তাই, জীবন অবাক হলো।
মেয়েটা মা পাইনি, নদীকে তাই খুব পছন্দ করে, নাও বাবা কিছু খাও, মুখ দেখছি শুকিয়ে আছে, দুপুরে খাওনি নিশ্চয়?
আসলে ওর এতো জ্বর দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম, তাই ওকে নিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে এসেছি, খাবার সুযোগই পাইনি।
এউ নাও, আগে তোমরা পায়েস খাও, গরম গরম খেতে ভালো লাগবে।
জীবন আর অনিক খাওয়া শুরু করলে, মিনা গিয়ে নদীর পাশে বসে গল্প করতে লাগলো, নাবিলা নদীর আঁচল ধরে বসে আছে দেখে, নদীর মা এক বাটি পায়েস হাতে দিয়ে বললেন, এই নে, তুই মেয়েটাকে খাইয়ে দে।
নদী চামচ দিয়ে নাবিলার মুখে দিলে, নাবিলা বললো, স্টিকি রাইস, তা শুনে সবাই হেসে উঠলো।
তা বাবা, তোমাদের বাসা কোথায়, নদীর বাবা জিজ্ঞেস করলো।
ধানমন্ডি সাতাইশে।
তা তোমার আব্বা কি করেন।
আব্বা খুব অল্প বয়সে ইন্তেকাল করেন, উনি আবার ইংল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত ছিলেন, ওখানেই ইন্তেকাল করেন মাত্র আটচল্লিশ বয়সে।
কি নাম ছিলো উনার, সারোয়ার চৌধুরী নাকি?
হাঁ খালু, আপনি চিনতেন নাকি উনাকে?
চিনতাম মানে, ছাত্র রাজনীতির দিনে উনার সাথে কতোই না মিটিং মিছিল করেছি, আমার এক বছর সিনিয়র ছিলেন, খুবই সৎ ও উদার মানুষ ছিলেন।

আচ্ছা খালু, আমরা আজ উঠি আমরা, চায়ের কাপটা রেখে জীবন বললো, আগামী বৃহস্পতিবার ছোট বোনের বিয়ে, আপনারা সবাই আসবেন, নদী আপনি খালা খালু, সাগরকে নিয়ে চলে আসবেন, অনিক যাতো একটা কার্ড নিয়ে আয় গাড়ী থেকে।
অনিক কার্ড নিয়ে এলে, জীবন স্বপরিবার লিখে কার্ড এগিয়ে দিলো।
আর আগামী বুধবার, মানে পরশু আমার গায়ে হলুদ, আপনারা আসলে খুশি হবো, নদী আপু মনে থাকে যেন, মিনা বললো।
আচ্ছা আসবো সবাই, নদীর মা হেসে বললেন।
বেবি, চলো যায়, জীবন নাবিলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
আন্টি তুমি চলো, নদীর হাত ধরে নাবিলা টান দিলো।
না মামনি, তুমি ড্যাডের সাথে যাও, আমরা পরে আসবো।
নাহ, তোমাকে এক্ষুনি যেতে হবে, তুমি আমার সাথে যাবে।
বেবি, সুইট হার্ট চলে আসো, আন্টি পরে আসবে, জীবন বললো।
না আন্টিকে ছাড়া আমি যাবোনা, আন্টি যাবে আমাদের সাথে।
জীবন এগিয়ে গিয়ে নাবিলাকে কোলে তুলে নিতে চাইলে, নাবিলা নদীর পা শক্ত করে চেপে ধরলো আর কাঁদতে লাগলো, সাথে সাথে নদীর চোখ দিয়েও পানি গড়াতে লাগলো।
জীবন একটা কথা বলি, নদী কাতর কণ্ঠে বললো।
জি বলুন।
নাবিলা আজ আমার সাথে থাক।
জীবন মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো অবাক হয়ে, এরপর নদীর মা, বাবার দিকে তাকালো।
বাবা, তোমার মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, পারলে ওকে আজ রেখে যাও, নদীর মা হেসে বললেন।
জীবন হাল ছেড়ে দিয়ে বললো, বেবি তুমি আন্টির সাথে থাকতে পারবে?
হাঁ পারবো।
ওকে, শুধু আজকে থাকবে, কাল ড্যাড এসে নিয়ে যাবো।

নদী নাবিলাকে নিয়ে জীবনদের এগিয়ে দিতে গেইট পর্যন্ত এলো, জীবন বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলে হাত নেড়ে বিদায় জানালো।
গাড়ী ছেড়ে দেওয়ার পর মিনা জীবনকে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া নদী আপু কি তোমার বাসায় থাকেন?
হাঁ।
উনার হাসবেন্ডের সাথে কি হয়েছিলো উনার।
জীবন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সব কিছু খুলে বললো।
ভাইয়া, ওই লোকটা তো দেখছি একটা পশু, অনিক অবাক হয়ে বললো।
ভাইয়া নদী আপু কিন্তু খুব ভালো, নাবিলা উনাকে খুব পছন্দ করে।
মা হারা মেয়ে আমার, কখনো মায়ের ভালোবাসা পায়নি, নদী আসার পর মেয়েটা ওর আদর পেয়ে পেয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়া নাবিলা বকে যায়নি, ও নদী আপুর ভালোবাসার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে, ওর কাছে নদী আপুই মায়ের মতো।
কি যাতা বলছিস।
ভাইয়া তুমিই ভেবে দেখো।
জীবন কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলো, তারপর বড় একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, বড্ড সমস্যা হয়ে গেলোরে, নদী তো আগামী মাসেই নতুন বাসায় উঠবে, তখন কি হবে চিন্তাই কর‍তে পারছিনা।
মিনা চুপ করে গেল।
অনিক ধানমন্ডিতে একটা ভালো গয়নার দোকান দেখে থামিস।
জি ভাইয়া।

ঘরে ফিরার পর মিনা মাকে নতুন কেনা গহনা গুলো দেখিয়ে বললো, ভাইয়া কিনে দিয়েছে।
এতো টাকা খরচা কেন করেছিস, জীবনকে বললেন মা।
মা ওকে তো সব সময় দেওয়া হয়না আর আমারও তো কিছু দেওয়া উচিত।
আচ্ছা ঠিক আছে, যা তুই মুখ হাত ধুয়ে নে, খেতে দিচ্ছি, ভালো কথা আমার দাদুরী কই, দেখছিনা কেন?
মা তোমার নাতনী নদী আপুর সাথে থেকে গেছে, উনি আসবেন না, মিনা বললো।
মানে, নদী কে আর ওর কাছে কেন আমাদের মেয়ে থাকবে?
ভাইয়া তুমি মুখ হাত ধুয়ে আসো, আমিই মাকে বুঝিয়ে বলছি।
জীবন চলে গেলে মিনা আর অনিক মিলে মাকে সব খুলে বললো, সাথে এও বললো, নদীকে নাবিলা নিজ মায়ের মতো করেই পছন্দ করে।
কি বলিস, কিন্তু মেয়েটা তো প্রেগন্যান্ট।
তাতে কি হয়েছে মা, মেয়েটা দুখি কিন্তু নামকরা ফ্যামিলির মেয়ে, দেখতে শুনতে খুব মিষ্টি, মনটাও খুব ভালো, তোমার উচিত ঐ মেয়েকেই ভাইয়ার বউ করে আনা।
তাই বলে একটা ডিভোর্সড মেয়েকে আমার ছেলের জন্য আনবো?
মা তুমি না আনলে কি হবে, দেখো আগে পরে ভাইয়াই উনাকে বিয়ে করবে, তখন কি করবে?
এমন কিছু জীবন বলেছে তোদের?
না ভাইয়া না বললেও নাবিলা বলবে।
তাই?
হুম।

নাবিলা নদীর মার কোলে বসে শরবত খাচ্ছে, নদীর মা জিজ্ঞেস করলো, শরবত কেমন লেগেছে?
ইটস ফাজি (fuzzy)।
তাই, টেস্টি হয়েছে?
ইয়েস।
তুমি কি খাবে ডিনারে মামনি, নদী জিজ্ঞেস করলো।
তুমি কি রান্না করবে, নাবিলা পাল্টা প্রশ্ন করলো।
আমি রান্না করবোনা মামনি, তোমার দাদু রান্না করে রেখেছে।
তুমি কি রান্না করেছো আমার জন্য ডাডু?
ডাডু ডাক শুনে সবাই হেসে দিলো, নাবিলা অবাক হয়ে সবাইকে দেখছে, হাসার কারণটা সে বুঝতে পারছেনা।
ডাডু তোমার জন্য চিকেন রোষ্ট করেছি, ভেজিটেবেল করেছি, বিফ করেছি আর পোলাও করবো এখন।
ওহ রিয়েলি, আই লাইক চিকেন বলে নাবিলা তালি দিলো।
নাবিলা তুমি বাইরে যাবে মামার সাথে, সাগর আগ্রহ ভরে জিজ্ঞেস করলো, চকলেট কিনে দেবো।
নাবিলা তাড়াতাড়ি নদীর মার কোল থেকে নেমে গিয়ে নদীর পাশে গিয়ে বললো, আমি যাবো?
যাও, সাগর বেশি দেরি করিসনা।
আচ্ছা বলেই সাগর নাবিলাকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
নদী, মেয়েটা তোকে খুব ভালোবাসে।
হাঁ মা, মায়ের আদর পায়নি তো।
এখন তুই কি করবি ভাবছিস?
বুঝলাম না!
তুই কি জীবনের বাসায় আজীবন এইভাবে থেকে যাবি?
না না মা, আমি তো আগামী মাসেই নতুন বাসায় উঠছি।
এই মেয়েকে ছাড়া তোর মন মানবে, নাকি মেয়েটা মেনে নেবে?
জানিনা মা, চিন্তিত স্বরে নদী জবাব দিলো।

 

...........চলবে
ছবিঃ Google

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ