দুপুরের কাছে চিঠি

নীলাঞ্জনা নীলা ২২ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ০৯:৪৪:১৯পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২২ মন্তব্য

মোমের আলোয় অন্ধকার...

প্রিয় দুপুর,

সমস্ত কিছু শেষ করে দিয়ে এসে এইমাত্র এসে বসলাম। খুব এলোমেলো ছিলাম, মাথায় কাজ করছিলো না, কি করা উচিৎ এখন আমার! দেখলাম ভেবেচিন্তে কোনো লাভ হচ্ছে না। তাই আর ভাবনাকে বেশী ঘাঁটাতে গেলাম না। এই যে লিখছি ফুরফুরে সন্ধ্যায়, খুব ভালো লাগছে। আমার চারদিকে সবুজ অন্ধকার, জোনাকির আলো, আর আকাশে বিশাল বড়ো চাঁদ। এর মধ্যে লিখছি তোমায় মোমের আলোয়। তুমি তো জানো এমন আবহ আমাকে পাগল করে দেয়! নিজেকে একেবারেই তখন আর একা লাগেনা। সমস্ত পৃথিবী যখন ভার্চুয়াল জগতের উপর নির্ভর করে মন আর মস্তিষ্ককে মরুভূমির মতো শূন্য করে ফেলছে, আমি এ সময়ের আধুনিক জীবনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এখানে চলে এসেছি। এখন ভাবছো তাহলে কি শেষ করে এলাম? সমস্ত দুঃসহ ভাবনাকে খুন করে দিয়ে এসেছি। ভাবা যায়?

তুমি এখন গভীর ঘুমে। নয়তো অনেক ভালোবাসার স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত, এমন কিছু একটা হবে হয়তো। এছাড়া তোমার তো আর কিছুই করার নেই। বৃত্তবন্দী জীবন তোমার। আর এই দেখো আমি খোলা আকাশের নিচে বসে আছি। এমন একটা সুন্দর সময়ে কেন তোমাকে লিখছি জানো? আসলে তুমি আমাকে অনেক সুন্দর সময় দিয়েছিলে। যে সময়গুলো এ জীবনে আমাকে কখনও কেউ দেয়নি। তুমি আমার নও, এ কথা জানতাম আমি। জেনেও কেন তোমার হাতে হাত রেখেছিলাম, অনেকেই বলবে এ আমার বোকামি, নয়তো চরিত্র খারাপ। আমার তাতে কিছু যায় আসেনা। জীবনে আনন্দ কুড়াতে হলে অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়। আর আমি বহুকাল কোনো সুন্দর স্মৃতির মুখোমুখি বসিনি। আজ সেসবকে সামনে নিয়ে বসেছি। আমার টেবিলে বেশ কয়েকটি বই, একটা ডায়েরী, চিঠি লেখার প্যাড, দুটো কলম, সুগন্ধী মোমবাতি, সিগারেট আর ভদকা। "শেষের কবিতা" পড়ছিলাম আরেকবার। শুনেছি এই বইটি যতোবার পড়া যায়, ততোবারই নাকি নতুন লাগে। কিশোরী বয়স থেকে এই মধ্যবয়সে যতোবারই পড়েছি, এই প্রথম আমি কেটি মিত্তিরকে ভালোবেসে ফেললাম। আর যে দুজন পুরুষ চরিত্র একেবারেই আর সহ্য করতে পারিনি। একসময় লাবণ্য হতে চাইতাম। কেতকীকে ঘড়ায় তোলা জল হিসেবে উপমায়িত করার পরেও খেয়াল করে দেখেছি ওর কষ্ট সবচেয়ে বেশী। আর লাবণ্যকে বিশাল দিঘী করে ঘরের বাইরে রেখে দিলো অমিত রায়, কতো জঘণ্য একজন! তার মানে ঘরেরটাকেও খাবে আবার বাইরে গেলে তৃষ্ণা পেলে দিঘীর জল পান আর গরম লাগলে স্নানও করবে।

প্রসঙ্গ পাল্টে নেই এবার। আসলে তোমাকে লেখার ইচ্ছে ছিলোনা। আচ্ছা আজ পর্যন্ত জানা হয়নি তোমার নাম দুপুর কেন? জন্মেছিলে তো সকাল বেলায়। অবশ্য আমিও তো এমনই অবস্থায় আছি। আমার এই নাম ঝিনুক, অথচ আমি তো ঝিনুক নই! বাবা-মায়েরা পারেও বটে, যা মন চায় নাম রেখে দেয়! আমার মতে একটা শিশু যখন জন্ম নেয় তখন বড়ো হবার পরে তাকে তার নাম রাখতে দেয়া উচিৎ। আমাকে সেই সুযোগ দেয়া হলে নিজের নাম রাখতাম জল। আমাদের শরীরে জল আছে। কী দারুণ হতোনা যদি আমার নাম জল হতো? তুমি বলতে, "এই আমায় একটু জল দাও।" আমি ঠোঁট ভিঁজিয়ে তোমায় জল দিতাম! তুমি বলতে, "এখন স্নানে যাচ্ছি।" পরিশ্রান্ত আমি শরীরের ঘামে তোমাকে নাইয়ে দিতাম। অশ্লীল কথা বলছি, তাই না? আমাকে তো ওসব কথায় মানায় না। কিন্তু এটা তো চিঠি, মনে যা আসে সেসবই লেখা যায়। আজ ঠিক করেছি নিজেকে একেবারে উজাড় করে দিয়ে সবরকমের কথা বলবো। মাঝে-মধ্যে নির্লজ্জ্ব হতে বাধা কোথায়, বলোতো? আমার লজ্জ্বা তো তুমি। তোমার সামনে দাঁড়ালে পৃথিবীর তাবৎ লজ্জ্বা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমার দিকে চাও যখন তুমি, ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে তোমার বুকে মুখ লুকোই। পারিনা, তাই কি আমায় তুমি টেনে নাও? আর চোখে যখন চুমু দাও, জানো কতো কতোভাবে যে নিজের চোখের দিকে চেয়ে দেখি! আমার চোখ আহামরি কিছু নয়। কখনও কেউ বলেনি টানা টানা চোখ, কিংবা আয়তনেত্র, অথচ তোমার কাছেই কেবল এ চোখ অমূল্য। তুমি আমাকে এসব সুন্দর স্মৃতি দিয়েছো দুপুর। পুরুষ নাকি কেবল নারী শরীর খোঁজে! আমি উপমাহীন আদর পেয়েছি। যার জন্য আজও তোমাকে ভালোবেসে যাচ্ছি।

চিঠিটা কালই ডাকে পাঠাবো। যদিও এই অরণ্যে কোনো ডাকবাক্স নেই। যেতে হবে শহরে, চিঠিটা পাঠিয়েই ফিরে আসবো। হুম এখানে অনেকদিন থাকবো। নাহ তোমাকে এই ঠিকানা জানাবো না আমি। আমি চাইনা তোমার স্পর্শগুলো শারীরিক চাহিদা মেটাক আমার। কারণ আমি খুব বন্য, তুমি জানোনা। এই পরিবেশে পারবোনা তোমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। অনেক সুযোগ পেয়েও আমার মহাসাগরে তুমি ডুব দাওনি, তাই জানি এখানে এলেও এমন রোমান্টিক বলয়ে আমার জলে সাঁতার কাটবেনা। বরং এভাবেই কিছুদিন থাকি তোমার স্পর্শকে জড়িয়ে। ওহ শোনো, আমি না আবার ডায়েরী লেখা শুরু করেছি। দুপুর ফিরে এসে তোমার সামনে বসে সেই ডায়েরী পড়ে শোনাবো। মোটেও হাসতে পারবেনা। তোমার ভিলেন কন্ঠের সুন্দর মিষ্টি হাসিটা আমাকে খুব এলোমেলো করে দেয়, বুঝেছো?

অনেক ভালো থেকো।

আমি ঝিনুক
নূতন নাম "জল"

হ্যামিল্টন, কানাডা
১৮ আগষ্ট, ২০১৭ ইং।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ