tui

পরিচয়টা হয়েছিল কোন রেল ষ্টেশন এ যাত্রী হিসেবে অন্য হাজার যাত্রীদের মাঝে অপেক্ষমাণ দুজনে, হতে পারে এটি প্রতীকি কোন ষ্টেশন, জীবনের কোন ষ্টেশন হওয়াও বিচিত্র নয়।
কোন সৈকতে সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় ছিটকে গায়ে এসে পরা, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমার হাতকে অবলম্বন হিসেবে ধরে রাখা, থমকে থাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন সমুদ্রও হতে পারে এটি।
শপিং মলের সিড়িতে পা পিছলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আগ মুহূর্তে তোর হাত টেনে ধরা, পিছলে পরার আশংকা হতে নিশ্চিন্ত নির্ভরতার হাত এর রূপক হতে পারে যা।
আসলে কিভাবে পরিচয়টি হয়েছিল তা এই মুহূর্তে গুরুত্বহীন। পরিচয়ের মুহূর্ত হতেই তো জানি জন্ম - জন্মান্তরের বন্ধু আমরা। উপরের ঘটনাগুলো হয়ত অন্য কোন জন্মের সময়ের, পুনঃ জন্মের এ জীবনে একটিই বাস্তবতা তোর আমার বন্ধুত্ব।

বন্ধুর কথা লেখা কতটা কঠিন লিখতে বসে বুঝতে পারছি। আজ পর্যন্ত যাকে কোনদিন কোন বিষয়ে ধন্যবাদ দেইনি, কোনদিন একটি বারের জন্যও স্যরি বলিনি তাকে নিয়ে লেখা! আমার সাহস এবং স্পর্ধা দেখে আমিই অবাক হয়ে যাই।

কি লিখবোরে তোকে নিয়ে? কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা লেখি? কোনো প্রশ্ন না করে আমার বন্ধুদের বন্ধু করে নেয়া, আমার সামান্য অসুস্থতায় বার বার ফোন করা, রাত ১২ টা ১ টায় মাসুদকে নিয়ে চলে আসার ইচ্ছে প্রকাশ। সেই ২০০৩ থেকে ২০১১ সন পর্যন্ত প্রতিবছর নিউরোর চিকিৎসায় বিদেশে যাবার আগে প্রতিবার এয়ারপোর্টে বিদায় জানানো, বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কাঁদা, এখনো মন খারাপ করে জগতের সমস্ত দুশ্চিন্তায় মুখ কালো করে খোঁজ নেয়া – ‘ জিসান নিউরোর সমস্যাটি চলে গিয়েছে তো? আবার না হয় যাও ব্যংকক’ , আমার সমস্ত বিপদে পাশে এসে দাঁড়ান, এমনও হয়েছে লিভার অপারেশনের পর সুস্থ্য হয়ে বাড়ি যাবো। সময়ের স্বল্পতায় দেখা করা সম্ভব না, ' জিসান আসতেছি আমি', দুই ঘন্টার পথ ৩০ মিনিটে চলে আসা, চলন্ত যাত্রী বোঝাই ট্যাক্সি ক্যাব থামিয়ে, এটি তোর পক্ষেই সম্ভব রে, আমি এমনটা আর শুনিনি। মনে আছে তোর?, আমার স্নেহের একজন রাগ করে বাড়ি হতে চলে এলে, আমার অনুপস্থিতিতে তোর সব কাজ বাদ দিয়ে ৩ টা দিন ওর জন্য ব্যয় করলি। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে তোর মাঝে যে সক্ষমতা আমি দেখেছি এমন আর দেখিনি। মাঝে মাঝে ফোন পাই তোর মাসুদের যা এতদিন বলা হয়নি তোকে 🙂 ' জিসান ভাই আপনার বন্ধুর খুব মন খারাপ, তার মন ভাল করে দিন, ঢাকায় থাকলে ডাকুন তাকে, একমাত্র আপনিই পারবেন তার মন ভালো করে দিতে।' পেত্নী তুই যদি এই কথা আবার মাসুদকে জিজ্ঞেস করো, দুই মাস কথা বন্ধের শাস্তি হবে তোর।

তুই কি নারী? এই প্রথম এমন প্রশ্ন তোকে। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু লম্বু আর টাকলু ( ইদানিং তিনি আবার কবি হতে চান), এদের থেকে তো আলাদা কিছু মনে হয়নি তোকে। বন্ধু তো বন্ধুই, এর আবার নারী পুরুষ ভেদাভেদ আছে নাকি? ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বে হাগ করা, আই লাভ ইউ বলা নাকি বন্ধুত্বের প্রমাণ, প্রগতির লক্ষন, এমনকি বন্ধুকে চুমু খাওয়াও নাকি যায়। লম্বু আমার ছোট কালের বন্ধু, এরপর টাকলু বড় কালের বন্ধু। কোনোদিন তো তাদের লাভ ইউ বলিনি, হাগ করিনি, চুমুও দেইনি উম্মম্মম্মম্মম্মাহ ও না। তোকেও না, তুইও বলোনি। তাহলে কি আমরা বন্ধু হইনি এখনো? লাভ ইউ মুখে বলা কি জরুরী খুব? বন্ধু মানেই নির্ভরতা, তোদের তিনজনের মাঝেই তো আমি তা পাচ্ছি সমান ভাবে। তোদের নির্ভরতাও কি আমি হইনি? মাঝে মাঝে প্রান খুলে গেয়ে উঠি এখনো সেই গান, গুলশানের এক রেস্টুরেন্টের লনে বসে বিড়ি টানতে টানতে হেরে গলায় গেয়েছিলাম তুই আমি টাকলু ‘ ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেংগে ’ মনে আছে নিশ্চয়ই তোর।
তোকে দেখে পুরুষ যখন পিছলা খায় বসুন্ধরার ফ্লোরে তখন যেমন মজা পাই, ঠিক একই ভাবে মজা পাই টেনিস খেলুরে রাঙ্গা ইয়া লম্বুরে দেখে নারী যখন উষ্ঠা খায়। বন্ধুকে দেখে অন্যরা পিছলা বা উষ্ঠা খাবার দৃশ্য দেখার মজাই আলাদা 🙂

কত মায়া আছে তোর মাঝে কে জানে? আমার যতজন বন্ধু/পরিচিত/স্নেহের মানুষের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছি তারা তোর ভক্ত হয়ে গিয়েছে। নীলা, মিতু, মুক্তা এখনো তোর কথা বলে। অথচ মাত্র দুদিন আড্ডা দিলি নীলার সাথে, মিতুর সাথে কয়েকদিন। মুক্তা তো তুই বলতে অজ্ঞান এখনো।

এক যুগের কথা কি একদিনে বলা যায়? অধিকারহীন অধিকারের বন্ধনে, অফুরান প্রাণের উৎস তোর মতন কেউ নেই। একজন মানুষের প্রকৃত একজন বন্ধু থাকাই যথেষ্ট। আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে এমন বন্ধু আমার তিনজন। চারজনে এভাবেই থাকতে চাই হৃদয়ে জরা জরি করে একের অন্যের হয়ে, হাত হাত রেখে, জীবনের বাকী কটা দিন।

0 Shares

৫০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ