একজন সুনাগরিক হিসেবে পরিবারের সদস্যদের জন্ম ও মৃত্ত্যুর তথ্য সরকারকে অবহিত করা আমাদের একান্ত দায়ীত্ব । আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের সমালোচনা করে থাকি তাদের দায় দায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলি কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি আমরা নাগরিক হিসেবে সঠিক ভাবে দায়ীত্ব পালন করছি কিনা ?

প্রথমেই জেনে নেই জন্ম নিবন্ধন বিষয়টা আসলে কি ?

জন্ম নিবন্ধন হলো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর আওতায় একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক সরকারী রেজিস্টারে লেখা বা সরকারী কম্পিউটারে এন্ট্রি করে রাখা এবং সেই সাথে জন্ম সনদ প্রদান করা ।

যে সকল বিষয়ে জন্ম নিবন্ধন আপ্নার কাজে লাগবেঃ

@ পাসপোর্ট ইস্যু
@ বিবাহ নিবন্ধন
@ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
@ সরকারী, বেসরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান
@ ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
@ ভোটার তালিকা প্রণয়ন
@ জমি রেজিষ্ট্রেশন
@ ব্যাংক হিসাব খোলা
@ আমদানি ও রপ্তানী লাইসেন্স প্রাপ্তি
@ গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি
@ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি
@ ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি
@ বাড়ির নক্সা অনুমোদন প্রাপ্তি
@ গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তি
@ ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও
@ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি।

কিভাবে জন্ম নিবন্ধন করবেনঃ

জন্ম নিবন্ধনের নির্ধারিত আবেদন ফর্ম ফিলাপ করে সরকারী নিবন্ধকের নিকট সংশ্লিষ্ঠ্য কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। এছাড়াও br.lgd.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কার্যালয় বরাবর অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে পারবেন। (অনলাইনে আবেদন করতে হলে এই লিংকে যেতে পারেন http://bris.lgd.gov.bd/pub/?pg=application_form ) আবেদনের কম্পিউটার প্রিন্ট কপি নিবন্ধন অফিসে দাখিল করলেও জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন । আবেদন ফর্ম ডাউনলোড লিংক : http://br.lgd.gov.bd/files/Application%20Form.pdf

যেসকল কাগজ পত্র ফর্মের সাথে জমা দিতে হবেঃ

মনে রাখবেন যার জন্ম নিবন্ধন করা হবে তার বয়স ৫ বছর বা তার কম হলে নিন্মের কাগজ পত্রগুলো লাগবে

তথ্য সংগ্রহকারীর প্রত্যয়ন, অথবা ইপিআই কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান হইতে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি অথবা সরকারী নিবন্ধক যেরূপ প্রয়োজন মনে করেন জন্ম সংক্রান্ত সেরূপ অন্য কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি অথবা তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোন এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।

আর যদি নিবন্ধন ইচ্ছুক ব্যাক্তির বয়স ৫ বছর এর অধিক হয় তবে

বয়স প্রমাণের জন্য এমবিবিএস ডাক্তারের এবং জন্মস্থান বা স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর/সদস্যের প্রত্যয়ন, অথবা বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক বা তৎকর্তৃক মনোনীত শিক্ষক বা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন, অথবা বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য ইপিআই কার্ড বা পাসপোর্ট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম সংক্রান্ত ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান হইতে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা সরকারী নিবন্ধক যেরূপ প্রয়োজন মনে করেন জন্ম সংক্রান্ত সেরূপ অন্য কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোন এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।

জন্ম তথ্য প্রদানকারী কারা ?

শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত তথ্য সরকারী নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য দায়ী থাকবেন। এছারাও
@ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং সচিব ,
@ গ্রাম পুলিশ ,
@ সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর,
@ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণকর্মী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী ,
@ কোন সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে উহার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা,
@ নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী,
@ জেলখানায় জন্মের ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি,
@ পরিত্যক্ত শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা

এবারে আসি মৃত্ত্যু নিবন্ধন কি ?

মৃত্যু নিবন্ধন হলো মৃত ব্যক্তির নাম, মৃত্ত্যুর তারিখ, মৃত্ত্যুর স্থান, লিঙ্গ, পিতা বা মাতা বা স্বামী অথবা স্ত্রীর নাম নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক খাতায়/রেজিস্টারে লেখা এবং মৃত্ত্যু সনদ প্রদান করা।

যে সকল বিষয়ে মৃত্ত্যু নিবন্ধন আপ্নার কাজে লাগবেঃ

@ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন,
@ পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তি প্রভৃতি কাজের জন্য মৃত্ত্যুর নিবন্ধন প্রয়োজন।
( তদুপরি মৃত্ত্যুর নিবন্ধিত না হলে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা নির্ণয় সম্ভব হবে না। মৃত্ত্যুর নিবন্ধন করতে হলে মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন থাকতে হবে। জন্ম নিবন্ধন করা না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সম্পাদনের পর মৃত্ত্যুর নিবন্ধন করতে হবে। )

কিভাবে মৃত্ত্যু নিবন্ধন করবেনঃ

মৃত্ত্যু নিবন্ধনের নির্ধারিত আবেদন ফরমে (ছাপানো বা হাতে লিখা হলেও চলবে) সরকারী নিবন্ধকের নিকট সংশ্লিষ্ঠ্য কাগজসহ আবেদন করতে হবে। এই লিংক হতে আবেদন ফর্ম প্রিন্ট করতে পারবেন ( http://br.lgd.gov.bd/files/DRForm.pdf )

যেসকল কাগজ পত্র ফর্মের সাথে জমা দিতে হবেঃ

সরকারী বা বেসরকারী স্বাস্থ্যকর্মীর প্রত্যয়ন, অথবা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত মৃত্ত্যুসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র, অথবা
মৃত ব্যক্তির ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা সংশ্লিষ্ট কবরস্থান বা শ্মশানের কেয়ারটেকার কর্তৃক প্রদত্ত দাফন বা সৎকার রসিদের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট সদস্য অথবা পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত মৃত্যুসংক্রান্ত প্রত্যয়ন, অথবা নিবন্ধক যেরূপ প্রয়োজন মনে করেন মৃত্ত্যুসংক্রান্ত সেরূপ অন্য কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি।

মৃত্ত্যু তথ্য প্রদানকারী কারা ?

মৃত ব্যক্তির পুত্র বা কন্যা বা অভিভাবক মৃত্যুর ৩০ দিনের মধ্যে মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য সরকারী নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য দায়ী থাকবেন।এছারাও
@ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, এবং সচিব
@ গ্রাম পুলিশ
@ সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর
@ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণকর্মী
@ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী
@ কোন সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে উহার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা
@ কোন গোরস্থান বা শ্মশান ঘাটের তত্ত্বাবধায়ক
@ সরকারী নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী
@ জেলখানায় মৃত্ত্যুর ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি
( সাধারণ স্থানে (Public Place) পড়ে থাকা পরিচয়হীন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং
নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান )

জন্ম বা মৃত্ত্যু নিবন্ধন করাতে সরকারী যে পরিমান ফিস প্রদান করতে হবে তার হার নিন্মে দেয়া হলোঃ

জন্ম বা মৃত্যুর তারিখ হতে দুই বৎসরের মধ্যে কোন ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে
= টাকা লাগবে না
জন্ম বা মৃত্যুর তারিখ হতে দুই বৎসর পর জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতি বৎসরের জন্য
= ৫ টাকা (ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এলাকায়) / ১০ টাকা ( সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় )

জন্ম বা মৃত্যু সনদের মূল বাংলা বা ইংরেজী কপি সরবরাহ
= টাকা লাগবে না

জন্ম বা মৃত্যু সনদের বাংলা বা ইংরেজী দ্বি-নকল বা দ্বিতীয়বার কপি সরবরাহ হলে
= ২৫ টাকা (ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এলাকায়) / ২৫ টাকা ( সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় )

সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রদত্ত নিবন্ধন সনদে কোন ভুল বা গরমিল পরিলক্ষিত হলে নিবন্ধন সনদ এবং ক্ষেত্রমত,নিবন্ধনবহি সংশোধন করতে
= ১০ টাকা (ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এলাকায়) / ১০ টাকা ( সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় )

এছারাও দূতাবাসসমূহে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৫ মার্কিন ডলার, তথ্য সংশোধনের জন্য ২০ মার্কিন ডলার ও জন্ম বা মৃত্যু সনদের দ্বি-নকল বা দ্বিতীয়বার সংগ্রহের কপির জন্য ১০ মার্কিন ডলার ফিস আদায়ের বিধান আছে।
**রসিদ ছাড়া নির্ধারিত কোন ফিস আদায় করা হবে না।

আশা করি আমার এই লেখাটি পাঠকদের জন্ম ও মৃত্ত্যু নিবন্ধন এ উৎসাহিত করবে এবং নিবন্ধন পদ্ধতিতে সহায়ক হবে ।

আমার লেখাটির তথ্যসমুহঃ
স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্ত্যু প্রকল্প হতে সংগ্রহিত ,
লেখায় অনিচ্ছাকৃত ভুল থাকতে পারে , যদি কোন পাঠকের চোখে পরে মেহেরবানি করে আমাকে জানাবেন , আর যদি আরও তথ্যের প্রয়োজন হয় তবে তবে মন্তব্যে জানালে উত্তর দেয়ার চেস্টা করবো ।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ