জলতরঙ্গ (৫)

ইঞ্জা ১ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ০৮:২০:৩৩অপরাহ্ন গল্প ১০ মন্তব্য

 

 

আবীর চা পাতার স্যাম্পল আর নিজের কালেক্ট করা মাঠির স্যাম্পল গুলো নিয়ে ল্যাবে প্রবেশ করে অবাক হলো, এ যদি ল্যাবের অবস্থা হয়, তাহলে তো কিছুই করার নেই, হতাশ হয়ে বেরিয়ে এলো ও, নিজ রুমে গিয়ে পিয়নকে কল দিলো, পিয়ন এলে রফিক সাহেবকে সালাম দিতে বললো, সাথে চা দিতে বললো।
একটু পর রফিক সাহেব রুমে এলে বসতে বলে বললো, আনকেল, ল্যাবে কি কোন কাজ করা হয়না?
না তেমন কিছু হয়না, শুধু চার মান ঠিক আছে কিনা দেখা হয়।
তা তো টেস্ট টিউব দিয়ে করে আমি জানি, আজ ল্যাবে গেলাম, দেখে যা বুঝলাম এইখানে অণুবীক্ষণ যন্ত্র যেটা আছে তা আমার জম্মের আগেই আনা।
হাঁ বাবা, এইখানে যা আছে তা এই বাগান নেওয়ার সময়ই নিয়েছে শুনেছি।
ঠিক আছে আনকেল, আপনি গাড়ী দিয়ে কাউকে মেইন রাস্তার মুখে পাঠান, আমার এক বন্ধু আসবে কিছু ডাক্তার আর নার্স নিয়ে, ওদের রিসিভ করে গ্রামে নিয়ে যেতে বলুন আর ওরা আসলে আমাকে যেন ফোন দিয়ে জানানো হয়, বলে দেবেন প্লিজ।
ঠিক আছে বাবা।
রফিক সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলে পিয়ন এসে প্রবেশ করলো চা নিয়ে, আজ চায়ের সাথে সিঙ্গারা দিয়েছে দেখে আবীর অভাব হলো, জিজ্ঞেস করলো কোথা থেকে?
স্যার গ্রামের এক চা দোকানি বানায়, সেই দিলো আপনার জন্য।
তাই, কয়টা দিয়েছে?
বিশটার মতো।
ওকে এক কাজ করো, আবীর পকেট থেকে একশ টাকা বের করে পিয়নকে দিতে দিতে বললো, এই টাকা ওকে দেবে।
স্যার ও নেবেনা।
কেন নেবেনা।
স্যার কালকে আপনি আমাদের সবাইকে বাঁচিয়েছেন, সেই খুশিতেই সে পাঠিয়েছে।
আবীর কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবলো তারপর বললো, ওকে যাও, বাকিদের দিয়েছো?
হ্যাঁ দিয়েছি।

সন্ধ্যার আগে আবীর ওর বন্ধু ও ডাক্তারদের বিদায় দিয়ে বাংলোতে ফিরে এসে দেখলো নীলা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।
হাই কেমন আছেন, আবীর জিজ্ঞেস করলো।
ভালো আছি, চা চলবে?
দৌড়াবে, তবে আগে সাওয়ার নেবো।
ওকে আপনি সাওয়ার নিয়ে আসুন, আমি হারাধনকে বলছি।
আবীর চলে গেলো নিজ রুমে, নীলা হারাধনকে ডেকে আবীরের জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে নিজে উঠোনে নেমে হাটতে লাগলো।
আবীর ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলে নীলাও এসে সোফায় বসে পড়ে জিজ্ঞেস করলো, আজ আপনার বন্ধু এসেছিলো?
হাঁ, ও ডাক্তার আর নার্দের একটা দল নিয়ে এসেছিলো, ওরা গ্রামের সবাইকে চিকিৎসা ও ঔষধ দিলো ফ্রিতে।
তাই, খুব ভালো হয়েছে, বাবার সাথে কথা হয়েছিলো, উনি আপনার খুব প্রশংসা করলেন
আবীর লজ্জিত কণ্ঠে বললো, এতো এমন কিছুই না, আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি।
হারাধন চা নাস্তা দিয়ে গেলে আবীর বিস্কিটে কামড় দিয়ে চায়ে চুমুক দিলো, এরপর বললো, আপনার কথা বলুন, শুনি।
আমার কথা আর কি শুনবেন, বাপের এক মাত্র মেয়ে হলে যা হয়, তাই হয়েছে, খাচ্ছিদাচ্ছি, ঘুরছি, এই চলে যাচ্ছে।
তাই, খুব ভালো।

প্লিজ মাইন্ড করবেন না, একটা প্রশ্ন করতে পারি?
আরে না না, মাইন্ড করা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই, বলুন।
আসলে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম, আপনি বিয়ে করেছেন কিনা?
হাঁ হাঁ হাঁ হি হি হি করে হেসে উঠলো নীলা, হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেলো ওর, হাসি থামিয়ে বললো, আপনি এই কথা এতো ইনিয়েবিনিয়ে জিজ্ঞেস করছেন কেন?
না মানে এমনি জিজ্ঞেস করলাম, লজ্জিত হয়ে আবীর বললো।
আমার বিয়ে হয়েছিলো।
আবীর অবাক হয়ে তাকালো।
আমার তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছিলো, ছয় মাস পর আমি ফিরে আসি, আমার এক্স একটা পশু ছিলো, জঘন্য এক মানুষ।
আবীর চুপ করে শুনতে লাগলো।
নীলা বলে যাচ্ছে, একদিন আমি ওকে হাতেনাতে ধরলাম কাজের মেয়ের সাথে, বলে চুপ করলো নীলা।
একটু চুপ থেকে আবার বলা শুরু করলো, আমি সাথে সাথে বাবার বাসায় চলে আসি, ও নিজে এসে আমাকে নিয়ে যেতে চাইলো, ওর বাবা মা, আত্মীয়রা চেষ্টা করে বিফল হয় আমাকে নিতে, বাবাই ডিভোর্স করিয়ে নিলেন।
সরি, আমি আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম, আবীর বললো।
ঐ সময় থেকেই আমি বাগানে বাগানে ঘুরি, নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি, আত্মীয় সজন অনেকেই অনেক কথা বলে, তাই এড়িয়ে থাকি।
কিছুক্ষণ চুপ করে নীলা বললো, সরি আপনাকে আমার দুঃখের কথা বলে বিরক্ত করলাম।
না না অসুবিধা নেই, আমি ভালো শ্রোতা, আবীর অভয় দেওয়ার দেওয়ার চেষ্টা করলো।

আসলে আজ তিনটা বছর মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছি নিজেকে, বন্ধু বান্ধব সবাইকে বাদ দিয়েছি, এইসব বললেও কেউ বিশ্বাস করতে চাইনা, আমি সরে গেলে বলে, আমারই কোন সমস্যা আছে, এমন নামকরা ফ্যামিলির ছেলে খারাপ হয় কিভাবে, তাই কাউকে বলিনা আর, নীলার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
আবীর টি টেবিলে থাকা টিসু বক্স এগিয়ে দিলে তা নিয়ে নীলা চোখ মুছে নিলো।
আসলে জীবনটা বড়ই কঠিন, আপনি এইসব চিন্তা বাদ দিন, যে কয়দিন আছেন, সময়টা উপভোগ করুন, চলুন একটু হাটি, আপনার মন হাল্কা হবে, উঠুন প্লিজ।
নীলা উঠে পড়লে আবীরও সাথে এগুলো, দুজনে হাটতে লাগলো উঠোনে, পুরা উঠোন ঝুরে শিউলি ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
জানেন, ফুলের এই মাতাল করা সুবাস আমার খুব ভালো লাগে, আমাদের বাসাতেও প্রচুর ফুল গাছ আছে, আমি যখন ঢাকায় থাকি তখন প্রতিদিন আমি এইভাবে বাগানে হাটি, পরিবেশটা হাল্কা করার জন্য আবীর বললো।
তাই, ঢাকার কোথায় আপনাদের বাসা, নীলা জিজ্ঞেস করলো।
গুলশান, আব্বা কিনেছিলেন আমার প্রথম জম্মদিনের গিফট হিসাবে।
আপনাদের বাসাটি অনেক বড় না?
এতো বড় না, মাত্র এক বিঘা।
গুলশানের মতো এলাকায় এতো বড় জায়গা মানেই অনেক কিছু, শুনেছি আপনারা নাকি প্রচুর টাকার মালিক, তবুও আপনি এইখানে চাকরি করছেন, আশ্চর্য!
আবীর হাসলো।

দুজনে বারান্দায় উঠে এসে সোফায় বসলো দুজনে।
কি বললেন না, কেন চাকরি করছেন, নীলা আবার কথা তুললো।
আসল কথা হলো, আমি নিজে কিছু করতে চাই, ব্যবসা আমার পোষাবেনা।
তাই বলে চা বাগানে?
পাহাড় বন আমার পছন্দ আর আপনার বাবা আমাকে বিশেষ একটা কাজ দিয়ে, যা শেষ হলে আমি আমেরিকায় ফিরে যাবো, ওখানে গবেষণা করার অনেক সুযোগ আছে।
আপনি তো গবেষণা এইখানেও কর‍তে পারেন, নীলা অবাক হয়ে প্রশ্ন তুললো।
তা করা যায়, কিন্তু পিএইচডি করতে হবেনা, আবীর মিষ্টি হেসে জবাব দিলো।
আপনার হাসি খুব মিষ্টি, নীলা হেসে বললো।
হা হা হা হা করে আবীর হেসে উঠলো আর বললো, মেয়েদের হাসি মিষ্টি হয়, পুরুষদের নয়।
না আসলেই সুন্দর, আপনার হাসি খুব সুন্দর।
স্যার, রাতের খাবার রেডি, আপনারা মুখ হাত ধুয়ে আসুন, হারাধন এসে জানালো।
কি বলো, কয়টা বাজে, ঘড়ির দিকে তাকালো, বাহ খেয়াল করিনি কখন রাত নয়টা বেজে গেলো, চলুন খেয়ে নেওয়া যাক।
চলুন, নীলা হেসে বললো।
দুজনে উঠে, ফ্রেস হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসলো।

নীলা খাবার তুলে দিলো আবীরের প্লেটে, এরপর নিজে নিলো, আবীর খাবার মুখে দিয়ে বলল, আপনার বাসায় রান্না কে করে?
আমি থাকলে আমি করি, নরমালি কুক করে, নীলা জবাবে বললো।
বাহ, আপনি রান্না করতে পারেন?
হাঁ মা শিখিয়েছেন সব।
তাই, খুব ভালো।
আচ্ছা আপনার রুমে অনেক যন্ত্রপাতি দেখলাম, এগুলো কি আপনারপনার গবেষণার জন্য?
গবেষণার জন্য নয়, শুধু মাত্র টেস্ট করার জন্য, খেয়ে উঠেই লেগে পড়বো।
খেয়ে উঠে বেসিনে হাত ধুতে ধুতে হারাধনকে বললো, তুমি কফিটা আমার রুমে দিয়ে যেও।
জি স্যার।
আমিও আসি, দেখতে পারবো তো, নীলা জিজ্ঞেস করলো।
অসুবিধা নেই, আসতে পারেন যদি ক্যামিকেল গুলোতে হাত না দেন, এগুলো বিপদজনক।
ঠিক আছে।
তাহলে হারাধন, দুইজনের কফিই আমার রুমে দিয়ে যাও।

_______ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ