__কয়েকদিন ধরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে যাচ্ছি!! অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে এত দ্রুত যে, কিছু বুঝে ওঠার সময়-ও পাচ্ছিনা ।

কিছুক্ষন পরপর ঠেং ভাঙ্গা, মাথা ফাটা, চোখ কাঁটা, আগুনে পোড়া, থেতলে যাওয়া কিছু শরীর নিয়ে মানুষজন আসছে, কিছুক্ষন পরপর সাদা কাপড়ে ঢাকা মৃতদেহ নিয়ে চলে যাচ্ছে!! আমি দাড়ায়ে দাড়ায়ে দেখছি আর মনের অজান্তে নাকের বাড়তি লোমগুলো হ্যাঁচকা টান দিয়ে পটাং পটাং করে ছিঁড়ছি !!

কয়েকদিনেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

__গাইনি বিভাগের এক জায়গায় দাড়িয়ে একজন ডাক্তারকে দেখলাম কিছু শিক্ষার্থি একজন ক্যান্সার রোগী সম্পর্কে বলছে, কিভাবে এই ক্যান্সারটা একটা বিন্দু থেকে ব্যঙ্গের ছাতার মতো শরীরের কোনও অংশে ছড়িয়ে পরে, আর মানুষ কেমন যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে মৃত্যু যন্ত্রণায়, কিন্তু মৃত্যুতো হয়না।

একজন প্রশ্ন করল, "স্যার! না দেখে কিভাবে বুঝবো ব্যাপারটা ??"

উনি সাথে সাথে রোগীর আত্মীয়দের ২৪ ঘণ্টার তাগিদে অপারেশন করতে বললেন। অতঃপর পরেরদিন গিয়ে দেখলাম, ঐ ডাক্তার একটি বোয়ম হাতে একি জায়গায় দারিয়ে...ওদের বলছে,

"এই যে এখানে একটা অনেক বড় ছাতার মতো মাংশ পিণ্ডটা দেখছ, এটাই সেই ক্যান্সার কোষ। আমরা ঐ রোগীটার কারনেই এত বড় একটা কোষ পেলাম আজকে, এটা ক্যান্সারের শেষ পরিনতির চেহারা!!!

__তিনি বলে চলেছেন, "এই রোগীটা হয়ত আরও ২/৪ মাস বাঁচত.." কথাটা শুনে থমকে গেলাম আমি।

রোগীটা তাহলে মৃত!!!
__ "বাঁচলেও মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করত, তার চেয়ে তার মারা যাওয়াই ভালো না? তাছাড়াও ক্যান্সার কোষটা কাটতে গিয়ে কেউ একজন তার লিভার টা কেটে দিয়েছ, যাই হোক শিখতে গেলে ভুল হবেই!

আমি নির্বিকার ভাবে সব শুনে গেলাম। কি জানি শিক্ষার চেয়ে জীবনের মূল্য হয়ত বেশি নয়!!

তারপর পাঁচ তলা থেকে নেমে এলাম।
এক জায়গায় দেখলাম কিছু মানুষ একজন
লোককে কলার ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যার
বুক থেকে পা পর্যন্ত রক্তে ভেসে আছে, আর
তার হাতটা ভেঙে উল্টো দিকে ঝুলছে, পরে তাকে
লোকগুলো গাড়ীতে তুলে দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলে
এসে গেটের কাছে দাড়িয়ে রইলো,

যার হাত তারা ভেঙেছে সে যেন চিকিৎসা নিতে না পারে, চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়!!! হাসপাতালে এলেতো সুস্থ হয়ে যেত, সেটাতো হতে পারেনা!

___আমি এইসব দেখেই দোকানে গিয়ে আরাম করে চা খেলাম। তারপর বাড়ী...

অনুভুতি গুলো ভোঁতা হতে হতে এখন আমার শুন্যের কোঠায়!! যেমন ঐ ক্যান্সার রোগীগুলো, যাদের দেখে মনে হয়না কষ্টে আছে, তারা বেশ ভালই আছে, মৃত্যুকে খুব সহজ ভাবে মেনে নিয়েছে, তারা বেশ হাসি খুশি, শুধু রাতগুলোতে আর্তনাদে ভরে উঠে হাসপাতাল কাঁপিয়ে।

__৫০১ নং ওয়ার্ডে কয়েকজন দেখি খুব আয়েশে গল্প করছে, একজনের হঠাৎ ব্যথা উঠায় দূরে চলে গেলো, কিছুক্ষন পর তিনি মারা গেলেন, অন্যরা গল্প করে চলেছে। একজন মুখটা ঢেকে নীচে নিয়ে গেলো, গল্প তখনও চলছে... তারা সবাই জানে, তাদের এক পা এখন কবরে...

আজ না হয় থাক, আর না...।

(মন খারাপ করা পোস্ট দিতে ভাল লাগেনা, আমি আনন্দ ছড়ানোর পক্ষে, তবু আজ.... 🙂
____________
শাওন এরিক
____________

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ