আজ নিউইয়র্কের আকাশ আচমকা গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। ঝুম বৃষ্টি নামলো। কাকতালীয় ভাবে গতবছর ঠিক এইদিনে এমন আকাশ আঁধার করে শহর ধুয়ে যাওয়া বৃষ্টি নেমেছিলো এই শহরে। সেই বৃষ্টির দিনে পুরনো চিঠিগুলো নেড়েচেড়ে দেখবার সময় লিখেছিলাম এই লেখাটি।
......
অবহেলায়, অযতনে পড়ে থাকা চিঠিগুলোর কিছু লাইনে চোখ স্থির হয়ে রইলো ...
পাশের বাসার সমবয়সী শিখা লিখেছে___ ৩১শে মে ১৯৯৫
রিমি, তুমি যে তোমাদের ছাদের উপর থেকে ডাকতে, সেটা আমার কানে মাঝে মাঝে বেজে উঠতেই ফিরে তাকাই। পরক্ষনেই মনে পড়ে, "তুমি তো এখানে নেই !"
আমার মৃত্যুপথ যাত্রী মামা লিখেছেন__ নভেম্বর ২০০২
আমার দু'টো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এ মাসটি আমার জন্যে দুঃস্বপ্ন এবং দুর্ভাগ্যের মাস। শারীরিক যন্ত্রণায় ঘুম আসে না। ছটফট করি। রাতভর জেগে থাকি। তোমাদের জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোআ করি।
মা লিখেছেন___ ৩রা রমযান ১৯৯৯
আমাদের পাড়ার অমুকের ভাই তোমাদের পরে গিয়ে দুইবার দেশে এসেছে। গতবছর তমুকের মেয়ে গিয়েছিলো আমেরিকায়। সেও এসেছে এবার বাবা-মা'কে দেখতে। তোমরা প্রতিবার আসবে আসবে বল, কিন্তু আসো না। আমি বেঁচে থাকতে আসলেই কি আসা হবে তোমাদের ? যদি না আসতে পারো, আশা দিও না।
(মায়ের চিঠিগুলো যখন পড়ছিলাম, ভাষা এবং শব্দচয়ন দেখে যারপরনাই বিস্মিত হচ্ছিলাম। এতো সুন্দর গুছানো লেখা ! আমি তার সিকিভাগও লিখতে পারি না।)
......
এখন ২০১৫। চিঠি, ডাকপিয়ন, প্রতীক্ষা __ সেইসব আয়োজন এখন কেবলই গল্প।
আর মামা, মা ? সে-ও তো এখন শুধুই স্মৃতিময় গল্প। আর কোনদিন এমন অভিমানী চিঠি আসবে না জানি। তবুও প্রতীক্ষায় থাকি ! একদিন প্রতীক্ষার অবসান হবে। আমাদের আবার দেখা হবে। অন্য কোথাও, অন্যলোকে।
রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
২০টি মন্তব্য
প্রজন্ম ৭১
চিঠি তো কেউই লেখে না আজকাল। অফিসিয়াল চিঠি পাই, কিন্তু ব্যাক্তিগত চিঠি পাইনা একটিও। নীলখামে পাওয়া চিঠিগুলো এখন কেবলই স্মৃতি (y)
ইঞ্জা
প্রজম্ম ৭১, ভাই আপনি না আমার ফেবুতে ছিলেন, এওখন না থাকার কারণ কি, কোনো ভুল হয়েছে আমার?
প্রজন্ম ৭১
ইঞ্জা ভাই, ফেইসবুকে আছি তো। কম যাওয়া হয় ফেইসবুকে।
রিমি রুম্মান
কোথায় হারিয়ে যায় সব ভালোলাগার অনুভূতিরা ? সেইসব চিঠি, ডাকপিয়ন, প্রতীক্ষা …
প্রলয় সাহা
চিঠি আমার প্রিয়।
রিমি রুম্মান
অন্য সব প্রিয়র মতন এই প্রিয় বিষয়টিও হারিয়ে গেছে সময়ের ভেলায়।
প্রলয় সাহা
jabe na
ছাইরাছ হেলাল
আপনি চিঠি সংগ্রহ করেন দেখে ভাল লাগল, সময়ের সাক্ষী এগুলো,
যে সময় আর ফিরে আসবে না।
হয়ত দেখা হবে অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে!
রিমি রুম্মান
চিঠিগুলো কি মনে করে রেখে দিয়েছিলাম, মনে নেই। হয়তো অকারনেই। কিন্তু এখন এসব ভীষণ মূল্যবান হয়ে উঠেছে।
লীলাবতী
আসুন আপু আমরা চিঠি আদানপ্রদান শুরু করি 🙂 প্রতিক্ষার অবসান হয়ে যাবে 🙂
রিমি রুম্মান
বেশ হয় কিন্তু, লীলা’পু।
বিষয়টি চমৎকার ছিল। খুব মিস করি, চিঠি … ডাকপিয়ন… প্রতীক্ষা …
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার বিশাল চিঠির কালেকশন। এখানে নেই। যে মানুষগুলোর চিঠির অপেক্ষায় থাকতাম, বাপি, ভাই রানা আর বন্ধু উত্তম। বাপির লেখা বোঝা সহজ না। কিন্তু আমি বুঝতাম। রিমি আপু এমন আহ্লাদী চিঠি আজ আর কেউই দেয়না। তোমার ঠিকানা দিও, আমি চিঠি লিখবো।
ভালো রেখো। -{@
রিমি রুম্মান
ইস্ চিঠি পেলে কতবার যে পড়তাম একই চিঠি। পড়তে পড়তে তেনা তেনা হয়ে যেতো। তবুও ফেলে দেইনি।
লিখবে তো ! তবে ঠিকানা দিবো ।
ভাল থেকো । -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
কথা দিলে কথা রাখি। হুম লিখবো, এটা নিশ্চিত। -{@
ইঞ্জা
চিঠি, আহ কতদিন একটা চিঠি পাইনা। ;(
রিমি রুম্মান
যান্ত্রিক যুগ । কে লিখবে চিঠি ! কার আছে সেই সময়, মন ?
ইঞ্জা
আহা সেইসব দিনগুলি।
শুন্য শুন্যালয়
রিমি আপু, আজকাল কী অল্পতেই চোখে পানি আসে? কী জানি! মুচড়ে উঠলো বুকটা। সেই কবে বলেছি দেশে যাবো, পেছাই আর পেছাই। বোন সেদিন ফোন করে বললো, তুই কবে আসবি, আম্মা এবার রেগে গেছে। মনটা খারাপ হলো, আমার আম্মা ব্যস্ততায় আমার কথা কমই বলে, এমন করছে শুনে মন খারাপ হয়েছে। আজ যেন আপনার লেখায় আবার মনে পড়লো। আপনার লেখাগুলো আমি মনে মনে বলি, কাগজে আনতে পারিনা, রিমির আপুর মতো সেই গুন নেই আমার। লেখাটা রেখে দিয়েছি। ভালো থাকুন খুব আপু। -{@
রিমি রুম্মান
মানুষগুলো হারিয়ে যায়। তাঁদের অনুভূতিগুলো জেগে থাকে চিঠিতে, তাই না শূন্য আপু ? আমার মায়ের লেখা চিঠি দেখলে আমার চোখ, মন ভিজে আসে। এই যে কত আবদার নিয়ে দেখতে চাইতো … এখন তো কেউ ডাকে না, দেখতে চায় না। এখন অবশ্য আমার অঢেল সময় ছুটে যাবার … 🙁
মৌনতা রিতু
যতদিন তোমার লেখা পড়েছি, এই লেখাটায় অন্যরকম এক হৃদয় ছোয়া অনুভুতি আছে।
অনেক অনেক ভাল লাগা রইল।