চলমান সৃষ্টির শৃঙ্খল।

রিতু জাহান ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:৩১:১৪পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৩ মন্তব্য

ইদানিং ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বড্ড রেগে যাচ্ছি। কারো সামান্য ভুলও সহ্য হচ্ছে না। বাইরেও এর প্রভাব ফেলছি। ভুল করা দেখলেই মনে হয় চাপকে চামড়া তুলে দেই। আবার পরক্ষনেই নিজেকে সামলাচ্ছি ঠিকই। গাম্ভীর্যের মুখোশ পরছি কিনা জানি না। হঠাৎ হাসলেও মনে হচ্ছে রাবারের মতো একটানা হাসি দিয়ে থেমে যাচ্ছি পরক্ষনেই। ভাবছি, আমাদের সমাজ ও পরিবারে এমন কিছু মানুষরূপি জানোয়ার আছে যারা সামান্য কিছু ইট সিমেন্টের জমাট বাঁধা বাড়ি ও টাকা পয়সার জন্য একই রক্তে গড়া একই মায়ের পেটে বেড়ে ওঠা প্রানের সম্পর্কের বুকে ছুঁরি মারে। তাদের পিঠ আমাদের জুতার নাগালের ভিতরে থাকলেও কিছু বলতে পারি না চোখ লজ্জা বিবেকের তাড়নায়। এটা হয়ত সৃষ্টির শৃঙ্খল। একদল সম্পদের জন্য উন্মাদ হবে আর এক দল চুপ থাকবে। একদল শাষন করবে অন্যদল শোষিত হবে। এভাবে টিকে থাকবে এ সৃষ্টির শৃঙ্খল। খাদ্য শৃঙ্খলের মতো কি? খরগোশের কথা মনে পড়ছে। খরগোশের জন্মহার অন্য সব প্রানী থেকে অনেক বেশী। খরগোশ খুবই নীরিহ প্রাণী। ওর বড় বড় দাঁত নেই, নেই ধারালো নখ। আকারেও খুব ছোট। এই খরগোশকেই খেয়ে বেঁচে আছে বাঘ, সিংহ, শেয়াল ও সাপ। অথচ খরগোশের একেবারেই ক্ষমতা নেই পাল্টা থাবা বসানোর। তবু কি খরগোশ বিলুপ্ত হয়েছে? হয়নি, টিকে আছে। ধরে রেখেছে তাদের বন্য শৃঙ্খল।
মানুষের চলমান যান্ত্রিক জীবনে দু'চারটা হোঁচট খাওয়া অন্যান্য অসংখ্য দুঃখের উপসর্গের মতো এটাও কারো চোখে পড়ার কথা না। কিন্তু জীবনে কিছু কিছু হোঁচট চোখে পড়ার মতো। আমি আমরা প্রানপন চেষ্টা করি সে সব হোঁচট কেউ দেখার আগেই হাতে ঠেস দিয়ে উঠে দাঁড়াতে। অনেক সময় হয়ত আমরা চাই কেউ হাতটা ধরে উঠিয়ে দিক। কিন্তু ভাগ্যে হয়ত থাকে না এমন কিছু শক্ত হাত।
গতকাল থেকে একটা গানের লাইন খুব মনে ঢেউ তুলছে।'এখন বুঝি দারুন সময়, বদলে গেছে দিন, কেউ আমারে চায় না দিতে একটু সময় ঋন।'
ইদানিং খুব ইচ্ছে করে সবুজের সমাহারে সেজে ওঠা কোনো চা বাগানে গিয়ে বসে থাকি। চায়ের নতুন গজে ওঠা পাতায় নাকি থাকে নতুন জীবনের গল্প। সে পাতায় নতুন জীবনকে আপন করে পেতে প্রয়োজন শুধু ক্ষণিকের মধুর এক দৃষ্টিবিনিময়।
কিছু চোখের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ ও সুর আপনাই নমনিয় হয়ে আসে এ সবুজ পাতায় সে সব মুখগুলো স্পষ্ট।
কখনো কখনো নির্ঘুম নিরব নিস্তব্ধ  রাতগুলোতে অবসন্ন চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে হাজার হাজার নিষ্ফল কিছু প্রশ্ন উঁকি মারে। আমার এই কচ্ছপের খোলসের ভিতরকার অনেক অবরুদ্ধ উচ্ছাস ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। হয়ত ভাবছি যদি তা প্রকাশ পেতো জীবনের গতিপথ পাল্টে যেতো কিনা। জীবনের যে ইচ্ছেগুলো আমরা মেরে ফেলি, চলতি কথায় যাকে খুন বলে, তা কেউ করেনি। জীবন পরিক্রমায় তা মরে যায়। সংসারে যা অত্যন্ত বিরল তা হলো বিশ্বাস ও তৃপ্তি। তা বাদ দিলে যা থাকে তা হলো যান্ত্রিক জীবন চলা। সৃষ্টির নিয়ম রক্ষা করা। নারী হোক বা পুরুষ হোক সংসারে যারা ত্যাগ স্বীকার করে তারা ইষ্পাতের জাত। বাইরে থেকে যা ভাঙা যায় না। নিন্দা প্রশংসা অনুকূল বা প্রতিকূল উভয় পরিবেশেই তারা অটল থাকে। যে সব রাতে ঘুম চোখে বসে না শুধু সে সব নির্জন রাতেই কচ্ছপের এ ইষ্পাত খোলস ভেঙে পড়ে। কচ্ছপের মুখটা উঁকি মারে অন্ধকার আকাশে। অতীতের অমৃতলোক থেকে উঠে আসে সেচ্ছা নির্বাসিত কিছু না পাওয়া। অন্যের জন্য করা কর্তব্যগুলো ঠিকঠাক করতে না পারার আফসোসও থাকে সমপরিমাণ।
এ পৃথিবীর কালো আকাশের বুকে জ্বলতে থাকা তারাগুলো তখন মুখ ভাঙাতে কার্পন্য করে না।
আচ্ছা, জীবনে তীরষ্কার শোনার পাশাপাশি প্রশংসা শোনার অধীকারও তো সবার থাকে। অধীকার না থাকুক ইচ্ছেটুকু তো থাকতেই পারে। জৌলুস স্টেজের পিছনে যে মানুষটির নিরলস প্রচেষ্টা ছিল তাকে পিছনেই কেন থাকতে হয়। অভিমানগুলো সে জ্বলে ওঠা ঝাড়বাতির মতো জলজল করে তারই চোখের সামনে। ম্লান হাসি সেখানে চাপা পড়ে।
ধুর! কি বলছিলাম আর কোথায় চলে গেলাম।
পৃথিবীর চলমান পরিস্থিতিতে নিজের এসব কথা বলা বেমানান।
কিন্তু এটাই সৃষ্টির নিয়ম। ধর্মীয় গোড়ামী ও ধর্মের বেড়াজাল বলে কিছু নেই। আছে সৃষ্টিকর্তা একজন। যিনি একটা শৃঙ্খলের মাধ্যমে চলমান রেখেছেন তার পৃথিবী। সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টির নিয়ম অনুযায়ী এ পৃথিবীতে দুর্বলের কোনো স্থান নেই। লড়াইয়ে যে টিকে থাকবে সেই জয়ি আর জয়ি মানেই বীর। সেই সৃষ্টি করবে নতুন অধ্যায়। মানবতা বলতে পৃথিবীতে কখনোই কোনো বস্তু চলমান নয়। একমাত্র মাতৃ গর্ভই মানবতার প্রতীক। গর্ভ মানেই সৃষ্টি।

,,,,,,মৌনতা রিতু,,,,,
১৭/০৯/১৭.

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ