মায়ের চোখে ঘুম নেই।ছেলেটা ঘর থেকে যখন বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়তে যায় তখন থেকে বাড়ী ফেরা না পর্যন্ত সে ঘুমাবে না।আজ কাল ছেলেটা কেমন যেনো এক রোখা হয়ে গেছে।রাতে বেশ দেরী করে বাড়ী ফেরে।আবার সেই ফজরের আযানের সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।জিজ্ঞাস করলে বলে "মা আমার কোচিং ছিলো অথচ দিন আনি দিন খাই ওর কোচিংয়ের বেতন দেবো কি করে!ওসব জানে তবুও ওকে জিজ্ঞাস করলে বলে "তোমাকে কোন টাকা দিতে হবে না আমি বাড়ী বাড়ী কোচিং করে তা জোগার করব।মাকে যা বুঝায় তাই বুঝে।আজ এতো রাত হলো এখনো আসছে না কেনো।বেড়ার দেয়ালে ছোট্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন রাত দুটো।মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত মনে মা বসলেন একটি আধ ভাঙ্গা একটি চেয়ারে।
হঠাৎ ছেলের আসার শব্দ পেয়ে দ্রুত দরজা খুলেন।ছেলে নিজ দায়ীত্ব দরজা আবার এমন ভাবে লাগালেন যে কেউ আবার দেখে ফেললো কিনা।মা রীতি মত অবাক !ছেলে মাকে জড়িয়ে ধরে ভাঙ্গা একটি চৌকিতে বসালো।ছেলে মায়ের মুখো মুখি হাটু গেড়ে বসে মায়ের চোখে ভয়ের জল মুছে দিলেন।
-মা আর কোন চিন্তা করো না,আমি একটি চাকুরী পেয়েছি।লেখা পড়ার সাথে চাকুরীটা করা যাবে।আর ভাল মায়নাও পাওয়া যাবে।
মা এবার যেন একটু স্বস্তিতে নিঃশাস নিলেন স্রষ্টা যেন এতো দিনে মুখ তুলে তাকালেন।চোখেঁর কোণে লেগে থাকা জল আচলঁ দিয়ে মুছে ছেলের হাতের দিকে তাকিয়ে বেশ বিষ্মিত হলেন।ছেলের হাত ভরা টাকা আর টাকা।এতো টাকা যে জীবনে প্রথম সে দেখলেন।
-এতো টাকা তুমি কোথায় পেলে?
-ঐতো ঐ অফিস হতে এডভান্স দিয়েছেন,
-এতো!
-আহা মা তুমি বাজে চিন্তা কেনো করছো,আর এখানে সব টাকাইতো আমাকে দেয়নি।এখান থেকে দশ হাজার টাকা আমার,বাকীগুলো কাল অফিসে যাবার সময় নিয়ে যাবো....নাও এবার টাকাগুলো তোমার ট্রাঙ্কে লক করে রাখো।
মা এবার এক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হলে এক সঙ্গে এতো টাকা!দেখে মা মনে মনে ছেলের সম্পর্কে অনেক বাজে চিন্তা করে ফেলেছেন।যখন শুনলেন টাকা গুলো অফিসের তখন ছেলেকে শান্তনা দিলেন।
-তাই বল,তবুও অফিসের টাকা বাড়ীতে আর কখনো আনবে না কারন এলাকায় চোর ডাকাতের অভাব নেই যদি কিছু হয়ে যায় তবে উপায় কি বল!তোর মায়ের কি সেই সাধ্য আছে যে এতো টাকা ফেরত দিবে।আর তুমিও সারা জীবন অফিসের ঘানি টেনেও তা শোধ করতে পারবে না।
ছেলে মায়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মনে মনে ভাবলেন ভুলটা তারই এক সঙ্গে এতো গুলো ঘরে আনাটা তার ঠিক হয়নি,যে কেউ বিভিন্ন সন্দেহ করবে এটাই স্বাভাবিক কারন চাকুরী জীবি মায়ের সামর্থ্যের টান টান সংসারে হঠাৎ তারার ঝিলিক আশ পাশের ঈর্ষার কারন হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।এর মধ্যে মা টাকা গুলোকে তার ট্রাঙ্কে লক করে রাখতে ঘাটের নীচ হতে পুরনো একটি মোটা টিনের ট্রাঙ্ক বের করলেন।ছেলে হাত মুখ ওয়াস করতে চলে গেলেন চাপ কলের নিকট।ততো ক্ষণে ফজরের আযান পড়ে।
ফুলী হলেন জীবন সংগ্রামে এক অকুতোভয় শ্রম সৈনিক।এক মাত্র ছেলে জয়কে নিয়ে স্বামী হারা তার জোড়াতালি সংসারে তার অতীত বড়ই নির্মম।সেই অনেক দিন আগের কথা,গ্রামের হত দরিদ্র এক পরিবারে তার জন্ম।অভাবের কারনে কাজের মেয়ে হিসাবে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয় শহরে।বাসা বাড়ীর কাজের মেয়ে সেই কিশোর কাল হতেই যৌবনের নৌকা বয়ে বেড়িয়েছে শহর থেকে শহরে।জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে ছিল তার অশুভ হাত।কোথাও তার শান্তি মিলেনি।কাজের মেয়ে হিসাবে কিশোরী অবস্থায় ভদ্রতা মুখোশে এক ধনাঢ্য লম্পটের কাম লালসার নিকট হারিয়েছিল তার সতীত্ব।তার পরও জীবনকে সে বাচিয়ে রাখে,সমাজের আট দশ জন মেয়ের মত সতীত্ব হারিয়ে বেছে নেয়নি সে ঘৃণ্য আত্মহত্যার পথটি;বিচারকের আদালতেও আরো এক বার ধর্ষিত হবেন ভেবে সেই জন্যে সে বিচারও চায়নি কারো কাছে।বরং নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে খোজেঁ ফেরেন নতুন কোন নির্ভয় আশ্রয় কেন্দ্র।জীবনের বহু ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এক সময় সে,সেই আশ্রয় স্থল খুজেঁ পেলেন;সমাজের চোখে ঘৃণিত এক পতিতা সর্দানীর পরিবারে।জীবন চলে জীবনের নিয়মে।আশ্রয় স্থলের পাশে এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজে লেগে জীবনকে কোন মতে মানিয়ে নিলেন সে।ফুলী ফজরের নামাজ পড়া শেষে মোনাজাতের শেষ পর্যায় জায়নামাজেই তার ঘুম হীন ক্লান্ত দেহ মাথা লটিয়ে পড়ল সেজদার ভঙ্গিতে।

চলবে..
ফুলীর অতীত জীবন

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ