indexমানব পাচারে চার দেশের সিন্ডিকেট জড়িত বাংলাদেশ থাইলেন্ড,মালেশিয়া এবং বার্মা বা মায়ানমার।এ সব চক্র শতাদিক দালালের কাছ হতে মানব সংগ্রহ করে তারা বছরে প্রায় ১৭০০ কোটি টাকার ব্যাবসা করেন।ছোট্র একটি ট্রলারের মতো জাহাজকে ঘাটে বেধে রেখে তাদের সবাইকে অন্য আরেক জনের কাছে বেচে দিলেন তাতে ফুলীও বাদ পড়েলেন না।সেই সুবাদে সে তার গ্রামটা দেখার সুযোগ পেলেন যখন,তখন তার বিশ্বাস এ গ্রামের মাটিই তাকে আর কোথাও যেতে দিবে না।
ক্রয় কৃত লোকটি রাতের অন্ধকারে একটি বাড়ী ঘেষে সরু রাস্তা দিয়ে দল বেদে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের নিরাপদে।বাড়ীটি হ্যারিকেনের মৃদু আলোতে নিস্তব্ধতায় প্রায় জনশূণ্য,সম্ভবত কোন এক বৃদ্ধ ঘুমের তালে মাঝে মাঝে কাসির শব্দ করছেন বিকটাকার।ফুলীর মনে পড়ে গেল তার বৃদ্ধ বাবার কথা।এমনি ভাবে কাসির যন্ত্রনায় ভূগছিলেন তার জন্মদাতা।

দল বদ্ধ পাচার চক্রের এক কিশোর সদস্য সে ধীরে ধীরে দল রক্ষনাবেক্ষণের কাজ হতে সরতে থাকেন বাড়ীটির আরো কাছা কাছি আসতেই হঠাৎ ঢুকে পড়েন বাড়ীটির ভিতর ফুলী তা অনেক ক্ষণ যাবত লক্ষ্য করেন।তার কেনো যেন মনে হচ্ছিল এ বাড়ী এ পথ এ মাটি তার অনেক পরিচিত,কেনো জানি এ বাড়ী পাশ কেটে যেতে তার মন সায় দিচ্ছিল না।এর মধ্যে সেই কিশোর ছেলেটি আবার বাড়ীটি অতিক্রম করার সাথে সাথে তাদের দলে তাল মিলিয়ে পথ চলতে থাকেন।ফুলীর কাছা কাছি ছেলেটি আসতে অত্যান্ত শতর্কতায় ফিস ফিস করে জিজ্ঞাসা করেন।
-এই...এই ছেমরা তুমি ওখানে কোথায় গিয়েছিলে?
-সিসসস এক দম আস্তে...ওটা আমাদের বাড়ী।
-তোমাদের বাড়ী!তা ওখানে কে আছে।
-আমার বৃদ্ধ বাবা,
-নাম কি?
-তালেব...
-মানে তালেব মাওলানা..
-হ,আগে,,,, আমাগো মসজিদের ইমাম ছিলেন।
ফুলীর মাথা চক্কর দেয়।সেইতো তার পিতা, এই যে ছোট কিশোর ছেলেটি তার ছোট ভাই সেই যে দশ বারো বছর আগে চার পাচঁ বছরের শিশুটি রেখে গিয়েছিলেন ভাগ্যের অন্নেষায় সে আজ কত বড় হয়েছে।ফুলীর এবার জানতে ইচ্ছে করছে তার ছোট বোন আর মায়ের কথা কিন্তু এত কথা জিজ্ঞাসা করার সময় সুযোগ কোথায়।সারাক্ষন দল নেতা তাদের নজরে রাখেন, শেষে ছলেটির যদি কোন ক্ষতি হয়।তবুও এতটা বছর পর যখন তার আপন রক্ত সম্মুখে তখন কি ভাবে সে উপেক্ষা করবেন কিছুটা ভাবের আদান প্রদান না করে।সুযোগ বুঝে আবারো...।
-আচ্ছা তোমার আর কোন ভাই বোন নেই?
-ছিলো,এক বোন আমার বড়, হেয় ফাসি দিছে,আর মা...বোন ফাসি দিবার পর কই গেছেন কেউ খুজে পায় নাই.....তয় আমার আরেক বোন আছিল...হেই ডাহা শহরে,,,হুনছি হেয় নাকি মেলা টেকা কামায়... পাচ ছয় মাস টেকা পাঠাইছিল তার পর....
-তার পর, সে আর তোমাদের খোজ খবর রাখেনি..
-হ,ঠিকই কইছেন তয় কি জানেন, আমার হেই বোনডায় আমারে কইছিল আমারে লেহা পড়া করাইয়া অনেক বড় মানুষ বানাইব।এহন হেয় কেমন আছে কই আছে বাইচ্চা আছে না মইরা গেছে তাও জানি না...।

ভাসছে জলে চোখ, টলটল করছে চোখে তার পুরনো কষ্টগুলো।আজ এতটা বছর পর তাকে চিনতে ভূল করেননি ফুলী তাইতো খুটিয়ে কাঠ কুঠারীর মতো খুতে খুতে প্রশ্ন করছেন ছেলেটিকে।নিজের লুকায়িত চাপা কষ্টগুলো অন্যকে বলে ক্ষণিক নিজের মনকে হালকা করতে ও ভূল করেননি।তাই সে অনরগল বলে যাচ্ছেন।
-তোমার হাটুতে কি কাটা দাগ আছে।
-হ,আছে তো!আমার ঢাহার হেই বোনের জন্যে কেটেছিল।আপনে এত কিছু জানলেন কি করে?
-আমি যে তোর বড় আপু ফুলী,,,,
আবেগে আর ধরে রাখতে পারলেন না ফুলী তার ছোট ভাইটিকে বুকে জড়িয়ে চোখের জলে দুঃখগুলোকে ভাসালেন জীবনের পরমাত্তা পাওয়ার তৃপ্তিতে।ভাইটিও কেদে দেন তার আশা হত নয়নে বড় বোন যেন এলেন অভিবাবক হয়ে কিন্তু মানব পাচারে এমন কঠিন শিকল ভাঙ্গবে কি করে।নাকি তীরে এসে তরী ভাসাতে হবে ছোট ভাইটির।

gfhfgমানব পাচারকারী দলটি তাদের একটি নোংড়া আধো ভাঙ্গা টিন সিটের ঘরে ঢুকালেন।প্রায় তিন চার দিন হয়ে যাচ্ছে অসহায় লোক গুলোকে কখনো এ ঘাটে কখনো ঐ ঘাটে বিক্রি করছেন।কখনো গভীর জঙ্গলের ভিতরে কখনো বা গ্রাম্য নির্জন সরু রাস্তায় হাটতে হাটতে তাদের প্রত্যেকের দেহে ক্লান্তি এসে ভর করেছে, বিশ্রামের কিছুটা সুযোগ পেয়ে তাদের দেহ মনে যেন প্রশান্তির ছোয়া লাগল।
একটু আরাম পেলে ক্লান্ত দেহ যখন নেতিয়ে পড়ে তেমনি সেখানে এক অর্ধ বয়স্ক যুবক,অতিরিক্ত হাটাচলায়,দিনের পর দিন নাম মাত্র খাওয়া দাওয়ায়  দেহের ক্লান্তিতে সেই যে শুয়ে পড়েছিলেন আর উঠেননি।এক সময় এক জন তাকে ডাক দেয়াতে সকলি বুঝতে  তার দেহ হতে আত্তা পরলোক গমন করেছে।এ খবর জানতে পেরে রুমে জীবিতদের মঝে এক ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।অবস্থা বেগতিক দেখে দল নেতার আদেশে নিথর দেহটিকে জঙ্গলের ভিতরেই মাটি চাপা দেন তার সহযোগিরা।ফুলী লক্ষ্য করলেন এখানে এভাবে চললে তাকেও একদিন এই জঙ্গলের মাটির সাথেই মিশে যেতে হবে।

ভাইটি কাজ শেষ,সে প্রত্যহ তার এড়িয়া থেকে পাচারকারী দলের সাথে অন্য এড়িয়ায় নিয়ে যাওয়াই তার কাজ।এর বিনিময়ে নগদ কিছু টাকা পায় সেই টাকা থেকে অসুস্থ বাবার জন্য খাবার এবং সামান্য ঔষধ নিয়ে ঘরে ফিরেন আজও সে শ্রমের টাকা পেয়ে মন স্থির করলেন চলে যাবেন বাড়ীতে কিন্তু বোন ফুলীকে এখানে এভাবে রেখে সে যাবে কি করে সে তো জানে এখান থেকে তার বোনকে হারালে তাকে আর খুজেঁ পাওয়া যাবে না।বুদ্ধি আটেন কি ভাবে তার বোনকে এখান থেকে উদ্ধার করবেন।
বোন সহ আর সবাইকে যেখানে রেখেছিল সেই ভঙ্গুর শ্যাত শ্যাতে ঘরটিতে আগে আর কখনো সে ঢুকেনি আজই প্রথম বোনের বদলতে ঢুকেন।কি বিশ্রি ময়লা আর্বজনাময় পরিবেশ এখানে সুস্থ লোকও কিছুক্ষণ থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন নিশ্চিত।ভাইটিকে দেখে ফুলী তার নিকট এগিয়ে যান।
-বুবু,এহানে তোমাগো রাত দুটো পর্যন্ত রাখবে তার পর তোমাদের ঐ যে নদী দেখা যাচ্ছে সেই নদীতে আরেকটি ট্রলারে বেচে দিবে তার পর তোমরা ট্রলার করে সোজা মিয়ানমারে চলে যাবে তারপর কি হবে তা আমার জানা নাই।তয় আমি তোমাকে ছাড়ছি না,এ ভাবে ওদের কাছে তোমারে বোনের পরিচয় দিলে ওরা তোমারে ছাড়বে নে, তাই এহনি তুমি আমার সাথে চলো।
-কি বলসিস তুই ওরা তোকে আমাকে নিয়ে যেতে দিবে?
-হেইডা আমি দেখুমনে,তুমি শুধু আমার সঙ্গে সঙ্গে আসবা কোন কথা বলবা না।

ভাইটির কথার দ্বিমত না করে তার সাথে বেড়িয়ে পড়েন।ঘরের গেইটে আসতেই বাধা দেন এক মোটা লোক,তাকে ফুলীর ভাই কানে কানে কি যেন বলাতে তাদের অনায়াসে যেতে দিলেন।ফুলীতো অবাক ভাইটি এত চতুর হলো কি করে।আবারও হাটছেন ওরা আর আশ পাশ লক্ষ্য রাখছেন।
-কিরে আমাকে যখন ওরা আর পাবে না তখন তোর কোন ক্ষতি ওরা করবে নাতো?
-দূর!এতো লোকের মাঝে ওরা বুঝতেই পারবে না,যে তুমি একজন নাই।তয় শেষ মেষ বুঝতে পারলেও তুমি কোন জায়গা হতে চলে আইছো তা বুঝতে পারবে বলে মনে হয় না।আর বুঝলে বুঝুক আমিতো আর ওদের সাথে কাজ করছি না।আমারে পাইব কই?
-গেইটের ঐ লোকটারে কি বলেছিস যে,সহজে আমাদের যেতে দিল?
-সে তোমার না হুনলেও চলবে নে,,,,,
-বলনা শুনি....
-এক দম বাজে কথা বুবু, তোমারে বলা যাবে না।
ছোট ভাইটি ফুলীকে নিয়ে তাদের বাড়ীর অনেকটা কাছাকাছি এসে গেছেন।জঙ্গলের ঘণত্ত্ব অনেকটা কমে গেছে এবার হয়তো পথের দেখা মিলবে।এক সময় পথের দেখা মিললেও তাদের সামনে  একদল পুলিশ এসে হাজির।তারা মানব পাচাকারীর হোতার সন্ধানে নেমেছেন।
চলবে....

কয়েক দিন আগে থাইল্যন্ডে ৫১জন মানব পাচারকারী আটক করা হয়েছে সেই সুবাদে বাংলাদেশেও চলছে পাচারকারী আটকের সুদ্ধি অভিযান।মোহনগঞ্জে আটক নারী মানব পাচারকারীর একজন।মানব পাচারে ৩০০ জনের হাতে কলকাঠি... মানব পাচারে এমন সব খবর যদি সত্য হয় তবে এর প্রতিরোধে কেনো এত দেরী কেনোই বা যুগ যুগ চলছে এ ঘৃণিত জীবন মরন ব্যাবসা।যেখানে পুরো থাই সমাজ এর সাথে জড়িত সেখানে বিশ্বের হোতারা শুধুই আফসোস আর সভা সমাবেশ করে যচ্ছেন যা আলোর মুখ দেখবে বলে মনে হয় না।মায়ানমার সরকার এ সুযোগে রোহিংগাদের উসকে দিচ্ছেন মানব পাচারের দিকে যা মানবতা আইনের লংঘন।বাংলাদেশের মূল মানব পাচার কেন্দ্র কক্সবাজার রোড যা সহজে মায়ানমার হয়ে পাচার হন।এ সব মানব পাচারের নামে চলছে মানুষকে জিম্মি ব্যাবসা।কবে এর সমাধান হবে তা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা ছাড়া আর কোন পথই নেই।
ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা ১৫তম পড়ুন

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ