নিজের গল্প নিজে লিখতে সবচেয়ে বেশী সংকোচ হয় । বারবার ব্যার্থতার জালে আটকে পড়ে সেখান থেকে আবার মুক্ত হওয়ার গল্প টা একেবারেই সহজ নয় ।
এক
তখন ক্লাস নাইনে পড়ি । নাইন থেকে টেনে ওঠার সময়ে একটা বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলাম । প্রচুর কথা বকা শুনেছিলাম সবার কাছ থেকে । নিজের জন্য তেমন খারাপ লাগত না । খারাপ লাগত , আমার জন্য আমার মা বাবাও অনেকের টাট্টার পাত্র হতেন । ভাবতাম ওদের কথার উত্তর দিব । সুধু মুখে উত্তর দিলে সেটা কার্যকর হবে না তাই প্রতিজ্ঞা করলাম যে কারনে মানুষের কথা শুনছি সেটা দিয়েই ওদের উত্তর দিব । এসএসসি পরীক্ষা দিলাম । রেজাল্ট খুব ভাল না হলেও প্রথম বিভাগেই পাশ করলাম ।আমার সমালোচনা কারী প্রতিবেশী এক আন্টির ছেলেও আমার সাথে পরিক্ষা দিয়েছিলো । পাশ করতে পারিনি । সে দিন আন্টিকে বলেছিলাম আপনি আমার প্রতি যতটা খেয়াল রাখেন তার অন্তত অর্ধেক টা আমার বন্ধু (ওনার ছেলে) প্রতি রাখলে আজ হয়তো আমরা একসাথে আনন্দ করতে পারতাম ।
সমালোচনা কারী দের প্রতি আমার কোন রাগ নেই । । বরং মন থেকে ধন্যবাদ জানাই , তাদের জন্যই আমি নিজের ভুল গুলো সামনে থেকে দেখতে পেরেছি ।
দুই
ক্লাসে ইঞ্জিনিয়ারিং এ একটা নতুন সাবজেক্ট আসল ড্রয়িং । আমি ভাবলাম ড্রয়িং আর নতুন কি ?
ছেলেবেলায় কত হাঁস , মুরগী , ফুল , ফল , নদী আঁকিয়েছি এটা মনেহয় তেমনই । এই সাবজেক্ট টা পড়তামই না । ফলাফল হল খুবই বাজে । সারা ক্লাস ভর্তি বন্ধুদের সামনে ঐ দিন চরম লজ্জা পেয়েছিলাম । আমিই ড্রয়িং এ সবচেয়ে কম মার্ক পেয়েছি । তাও আবার একেবারে ০০ । আসলে ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং ফুল ফলের মত সহজ সরল বিষয় না বেশ কাটখোট্টা টাইপের সাবজেক্ট । এরপরের টার্ম পরিক্ষায় বেশী ভাল করতে পারিনি পঞ্চাশের মধ্যে মাত্র চল্লিশ !!!! পেয়েছিলাম ।
ক্লাসে সবাই এসাইনমেন্ট পরের ক্লাসে জমা দিত । আমি দিতাম সেই ক্লাসেই । স্যার ড্রয়িং টা ব্লাক বোর্ডে আঁকতে আঁকতে আমারও আঁকা শেষ হয়ে যেত । শুধু নিজের টা নয় । বড় ভাইদের ড্রয়িং ও আমি আঁকিয়ে দিতাম । জীবনে প্রথম অনেক গুলি টাকা একসাথে ইনকাম করেছিলাম একজনের বাড়ির ড্রয়িং করে । তখন এখনকার মত অটোক্যাড সফটওয়ার এত সহজলভ্য ছিল না ।
বার বার হেরে যাওয়ার পর জেতার আনন্দ অনেক । নিজেকে ব্যার্থ ভাবার কোন কারণ নেই । অন্যকেউ আপনার জীবন কেমন হবে সেটা বলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে না । আপনার জীবন টা আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত ।
সাফল্যে শতভাগের মাত্র একভাগেরও কম থাকে সৌভাগ্য বাকিটা কঠোর পরিশ্রম । সফলতার একটাই রাস্তা পরিশ্রম করে এগিয়ে যাওয়া । এখানে সর্টকার্ট কিছু নেই । সর্টকার্ট করতে গেলেই সর্টসার্কিট ।
২১টি মন্তব্য
লীলাবতী
আপনাকে দেখে ভালো লাগলো দাদা ভাই। কাল পড়ে মন্তব্য দেবো। নিয়মিত লেখা চাই আপনার -{@
সঞ্জয় কুমার
অবশ্যই । সাধ্যমত চেষ্টা করব । ধন্যবাদ
খসড়া
এতো সফলতার গল্প। খুব সাধারণ ভাবে অসাধারণ গল্প বলেছেন।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
লীলাবতী
আপনাকে দেখে বোঝা যায় না যে আপনার মাঝে এত জেদ লুকিয়ে আছে। এসব ক্ষেত্রে নিজের উপর আস্থা রাখাটি সবচেয়ে জরুরী। আপনার নিজের উপর আস্থা প্রবল ছিল বলেই এমন সফল হয়েছেন। যথেষ্ঠ প্রেরণা পেলাম আপনার নিজের দুটো সত্যি কাহিনী পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
প্রেরনা মূলক পোষ্ট, একবারেই সবাই সফল হবে এমন কোন কথা নেই।
সফলতার জন্য পরিশ্রমটাই জরুরী, ভাগ্যকে না ভেবে পরিশ্রম করে যেতে হবে।
ছোট একটা বাড়ির ড্রইং এর কাজ দেব কিনা ভাবছি
অবশ্যই বিনা পারিশ্রমিকে 🙂
সঞ্জয় কুমার
পুরো জমির পরিমাপ সহ দিয়েন । অবশ্যই করে দিব । আগের চেয়ে এখন ড্রয়িং করা অনেক সহজ
জিসান শা ইকরাম
ব্লগে লিখে একটা অন্তত লাভ হবে তাহলে 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
সফলতার একটাই রাস্তা পরিশ্রম করে এগিয়ে যাওয়া । এখানে সর্টকার্ট কিছু নেই । সর্টকার্ট করতে গেলেই সর্টসার্কিট ।
বাস্তব এবং উৎসাহমূলক ভাল লাগলো সঞ্জয় দা।
-{@ -{@ -{@ -{@ -{@ -{@
সঞ্জয় কুমার
সবাইকে অনুপ্রাণীত করতেই এই লেখা । ধন্যবাদ মজিবর ভাই ।
ব্লগার সজীব
আপনার লেখা পড়ে প্রেরণা পেলাম দাদা। আপনি জীবনে সফল হবেনই। -{@
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ সজিব ভাই
নীলাঞ্জনা নীলা
জানেন এস.এস.সি পরীক্ষায় দুই-এর জন্য ফার্ষ্ট ডিভিশন হারালাম। ইন্টারে ১০-এর জন্য। মেডিক্যাল কোচিং করা মেয়েটি সায়েন্স সাবজেক্টটাকে গুডবাই জানালো সেদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম ঘ বিভাগে শুধু। কিছুতেই ক বিভাগ না। শুধু ঘ বিভাগে দিয়েই রিটেনে চান্স পেলাম। ভাইবার খবর পেলাম অনেক দেরীতে। পত্রিকা সময়মতো পৌঁছায়নি হরতালের কারণে। তারপর ভর্তি হলাম সিলেট এম.সি কলেজে বাংলা বিভাগে। সবাই পারলে আমাকে কেটে ফেলে কেবল মাত্র বাপি-মামনি আর আমার রায়হান স্যার আমার পাশে ছিলেন। তারপর পাশ করলাম কলেজে চাকরী। তারপর এই তো আজ নার্সিং-এ।
আপনার লেখাটি পড়ে মনে এসে গেলো সেদিনগুলোর কথা। জীবনে একটা জিনিসই আমায় পথ চলতে সাহায্য করে আর সে হলো আমার পজিটিভ ভাবনা। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ এই পজিটিভ ভাবনাটা আমাকে দিয়েছে বলে।
সঞ্জয় কুমার
আসলে মাঝেমধ্যে দূর্ভাগ্য আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করে হয়তো ।
সবচেয়ে ভাল লেগেছে আপনার মা বাবার অনুপ্রেরণা । মা বাবা পাশে থাকলে সন্তান রা অসম্ভব কেও সম্ভব করে দেখাতে পারে ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আসলেই আমার ভাগ্য খুব ভালো আমার বাবা-মা পাশে ছিলো। আমি গর্বিত এমন বাবা-মায়ের সন্তান বলে। তা নইলে আমি কিছুই না।
মৌনতা রিতু
যথেস্ট প্রেরনামূলক পোষ্ট। আপনাকে শুভেচ্ছা। সাফল হবার জিদই মানুষকে উপরে উঠায়। আশেপাশের হিংসুক ও অতি উৎসাহি এই লোক গুলোকে আমি আজীবন ঘৃণা করি।
ভালো থাকুন।
সঞ্জয় কুমার
হ্যাঁ অবশ্যই আমরা সকল বাঁধা পেরিয়ে এগিয়ে যাবোই ।
ধন্যবাদ আপনাকে । ভাল থাকবেন
অপার্থিব
প্রেরণাদায়ক ও ভাল পোস্ট। শৈশবে সব সময় ভাল রেজাল্ট করলেও এস এস সিতে জিপিএ ফাইভ না পাওয়াটা খুব কষ্ট দিয়েছিল। এই কষ্টই পরবর্তী ধাপ গুলোতে আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। এক দুইবার ব্যর্থ না হলে আসলে সফলতার আনন্দ উপভোগ করা যায় না।
সঞ্জয় কুমার
একদম সঠিক কথা বলেছেন ।
রিমি রুম্মান
ডুবে যেতে যেতে আমরা আবার ভেসে উঠি। এটিই জীবনের গল্প।
ভাল থাকুন, অনেক ভাল।
সঞ্জয় কুমার
অবশ্যই । জীবন টা এমনই । ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য