খেলা পাগল ছেলেটা আমার মন খারাপ করে গ্যালারীতে বসে আছে। জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হয়নি কারণ কি। তার দুটো মামাতো ভাই পাকিস্তানের পক্ষে কাফঝাপ করছে। “ওরা কি স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস জানেনা”? বিদেশ বিভুঁয়ে জন্মানো ছেলেটা খুঁটিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চাইতো, আমি কি করেছি যুদ্ধের সময়, কেন আমি যুদ্ধে যায়নি, আরো কত কী? অথচ ওরই কাজিনরা কিনা তাদের পক্ষে, যাদের দাদাকে ওরা মেরে ফেলেছে সেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে!

খেলা দেখা থামিয়ে শুরু হোল ইতিহাস। ওদের কথা শুনে আমি যারপর নাই হতাশ। শুধু জানে তাদের দাদা শহীদ হয়েছেন, জানা নেই কেমন করে! আমার আঙ্গুল গেলো ওদের বাবার দিকে সেও আছেন মাঠে। ৭১ এর এপ্রিল মাস, আমার ছেলের বড় দুই মামাকে ধরে নিয়ে গেলো পাক বাহিনী। শহরে মাইক দিয়ে ঘোষনা করছে তারা, যদি ওনাদের বাবা এসে ধরা না দেন তবে তার ছেলেদের মেরে ফেলা হবে।  সেই বাবা চলে গেলেন মিলিটারি ক্যাম্পে তাদের মা কে নিয়ে। ছেলে দুটোকে তাদের মায়ের হাতে দিয়ে বিদায় জানালেন। দুদিন পরে তার মরদেহ পাওয়া গেলো পাশের একটা খালে।  এমন মহান এক ব্যক্তির আত্মত্যাগ, অথচ তারই বংশধরেরা জানেনা! তাহলে আমরাই কি হেরে যাচ্ছি না! আমাদেরই তো দায়িত্ব এদেরকে সঠিক ইতিহাস জানানো।

‘খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না' এই কথাটা ওরাই বেশী বলে যারা রাজনৈতিক কারণেই ক্রিকেটে একটা বিশেষ দলকে সমর্থন করে। যেসকল বাঙালি পাকিস্তান সমর্থন করে সাধারণত ওরাই বলবে এই কথাটা, খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না। রাজনৈতিক কারণ ছাড়া আর কি কারণে একজন সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ক্রিকেটে (বা অন্য কোন কিছুতে) পাকিস্তানকে সমর্থন করবে? ধর্ম? সে তো রাজনীতিরই একটা অনুপান মাত্র।

খেলার সাথে রাজনীতি মিশাবো না তো কি কঠিন পানীয় মিশাবো? খেলার সাথে রাজনীতি তো অবশ্যই মিশাবো, কেননা খেলার সমাজতত্ত্ব সবসময়ই রাজনৈতিক। রাজনীতি-বিযুক্ত খেলাধুলা বুদ্ধি ও অনুভূতিহীন নাবালকের কসরত মাত্র।

0 Shares

৪৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ