আমি আগেই বলেছি নারী ক্রীতদাসদের যৌন দাসী হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। এখানে মালিকরা তার নারী ক্রীতদাসদের সাথে তাদের ইচ্ছেমতো যৌন সম্পর্ক তৈরি করতো। সাদা চামড়ার পিতা ও কালো চামড়ার ক্রীতদাস মায়ের সন্তানরাই মিশ্র জাতির সন্তান। এরা মুলাট্টু নামে পরিচিত। ১৮৫০ সালের আদমশুমারীর তথ্যমতে আমেরিকাতে ২৪৫০০০ জন মালট্টু ছিলেন, যা ১৮৬০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪১১,০০০ জনে আর তখন আমেরিকার মোট জনসংখ্যা ছিল ৩,৯০০,০০০ জন। এই মিশ্র জাততির সন্তানদের অনেকেই ছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তিদের সন্তান কিংবা বিখ্যাত ব্যক্তির পূর্ব পুরুষের ঔরষজাত সন্ততান। সাদা চামড়ার বিখ্যাত শিশুদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন ও শ্যালি হেমিংসের সন্তানরা। ২০০০ সালে ঐতিহাসিক ও গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন বেটি হেমিংসের সন্তানদের জন্মদাতা ছিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জেফারসন।আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন কোনো ইউলে তার সকল ক্রীতদাসদের মুক্তি দিয়েছিলেন হয়তো বা একই কারণে। এ বিষয়ে সন্দেহ করার কারণ, প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের অন্তত দুইজন ক্রীতদাসী ছিলেন তাঁর স্ত্রী মার্থা কাস্টিসের সৎবোন। এই মিশ্র বর্ণের ক্রীতদাসীদের জনক ছিলেন ওয়াশিংটনের স্ত্রী মার্থা কাস্টিস এর পিতা এবং তার পরিবারে তারা সেভাবে স্বীকৃতও ছিলেন। ওয়াশিংটন যখন মার্থা কাস্টিসকে বিয়ে করেণ, তখন ভার্জিনিয়ার আইন অনুযায়ী ততার স্ত্রীর সৎবোনদের মালিকানাও লাভ করেন ওয়াশিংটন। জর্জ ওয়াশিংটন মারা যাওয়ার সময় তার মাইন্ট ভারনন এস্টটে ৩১৮ জন ক্রীতদাস ছিল।
মিশ্র জাতির সন্তান জন্ম দেওয়ার সবচেয়ে বড় বিতর্ক রয়েছে আমেরিকার স্থপতিদের একজন, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা রচয়িতা এবং আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ড থমাস জেফারসন এর উপর। থমাস জেফারসন ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধনতা ঘোষণা রচনা করেন এবং ১৮০১-১৮০৯ সাল পর্যন্ত দুই বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। থমাস জেফারসন ১৭৭২ সালে মার্থা ওয়েলসকে বিয়ে করেন। মার্থা-জেফারসন দম্পত্তির ৬টি সন্তান ছিল। ১৭৭৬ সালে মার্থা জেফারসন গর্ভধারণজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হন। এবং একই বৎসরেই তিনি মারা যান। এদের দুজনের দাম্পত্যজীবন ছিল ১১ বছরের। এটি কিন্তু ছিল মার্থার দ্বিতীয় বিয়ে। মার্থার পিতা মারা যাবার পর ১৭৭৩ সালে মার্থা তার পিতার সকল ক্রীতদাসের মালিক হন। মার্থার পিতার নাম ছিল জন ওয়েলস্। তিনি ছিলেন একজন কৃষক ও ভার্জিনিয়ার একজন বড় ক্রীতদাস ব্যবসায়ী। ১৮ বছর বয়সে মার্থার বিয়ে হয় ভার্জিনিয়ার অ্যটর্নি বার্থাস্ট স্কেলটনের সাথে। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর পযেই জ্বরে আক্রান্ত তার স্বামী মারা যান এবং পরে জেফারসনের সংগে তার বিয়ে হয়। মার্থার পিতার ঔরষে মিশ্র জাতি কন্যা অর্থাৎ ক্রীতদাস বেটি হেমিংসের গর্ভে ৬টি মিশ্র জাতির সন্তান জন্ম নেয়। শেলী হেমিংস্ সেই সন্তানদের একজন। তাই শেলী হেমিংস্ হলো জেফারসনের শ্যালিকা অর্থাৎ মার্থার সৎবোন।
১৭৮৫ সালে জেফারসন ফ্রান্সে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বিপত্নীক জেফারসন ১৭৮৭ সালে তার ছোট কন্যা মেরির দেখাশুনার জন্য শশুরকুল থেকে প্রাপ্ত ১৪ বছরের কিশোরী ক্রীতদাসী শ্যালি হেমিংসকে প্যারিস নিয়ে যান। শ্যালি প্যারিসে তার সাথে দুই বছর ছিলেন। ধারনা করা হয় প্যারিসেই তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। তাদের ৬টি সন্তান হয়েছিল তার মধ্যে চারজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক হতে পেরেছিল। শ্যালি হেমিংস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার বাড়িতে গৃহকর্মি ছিলেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে জেফারসন শ্যালির গর্ভে তার ঔরষজাত সনতানদের মুক্তি দেয়। কিন্তু তার সম্পত্তি ও তার নাম দেয় না।
থমাস জেফারসন ও শ্যালি হেমিংসের সম্পর্ক নিয়ে ২০০ বছর ধরে বিতর্ক ছিল।
চলবে,,,,,,লেখকঃ আশরাফ উল ময়েজ।
২২টি মন্তব্য
সঞ্জয় কুমার
আমার পছন্দের সিরিজ । চলুক
মৌনতা রিতু
অনেক ধন্যবাদ।শুভেচ্ছা রইলো।
নীহারিকা
কি ভয়ংকর সব ইতিহাস। জন্মেরও কত রূপ। জানতে পারছি অনেক কিছু। খুব ভালো হচ্ছে আপা।
মৌনতা রিতু
এই জন্যই তো অআমি বলি যে কোনো সৃষ্টি বা জন্মেরও একটা প্রসব বেদনা আছে। তা কম অথবা বেশি।
ভাল থাকুন ম্যাডাম। (3 -{@
লীলাবতী
এসব ইতিহাস আপনার মাধ্যমে জানছি। নতুবা জানা হতোনা আপু। এত্তগুলান ধ্যন্যবাদ আপনাকে।
মৌনতা রিতু
তোমাকেও অনেক ভালবাসা ও শুভেচ্ছা। দেখি কতোদূর জানাতে পারি।ভাল থেকো সব সময়।
মোঃ মজিবর রহমান
সব কঠিন কঠিন ভাল লাগেনা মানুষের কস্টের কোথা । পড়ে জাঞ্ছি অনেক।
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ ভাই। পড়ুন। জানতেওহয় আসলে কষ্ট হলেও।
মোঃ মজিবর রহমান
(y)
মিষ্টি জিন
সুলতান সোলেমান দেখেই জেনেছিলাম ক্রীতদাসিদের হেরেমে আনা হয় শুধু রাজাদের মনরনজ্ঞন করার জন্য। পররতিতে সন্তান হলে দাসী (যদি রাজা চাহেন )সুলতানার মর্যাদা পান। কিন্তু এদের মধ্যে কোন বিয়ে হয় না। রাজার ষোলবছরের ছেলের ভোগের জন্যও ক্রীতদাসি প্রস্তুত থাকে।
কি অদ্ভুত ছিল এই ক্রীতদাসীদের জীবন।
লিখে যাও রীতু সোনা। শুধু জানছি আর জানছি।
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ আপু। ভাল থেকো। দেখি কতোদূর জানাতে পারি।
ইঞ্জা
ইশ কি জঘন্যইনা ছিলো সেইসব দিনের মানুষ, মানুষকেই তারা পশু মনে করতো। :@
মৌনতা রিতু
আসলেই তাই। সব সৃষ্টির পিছনের ইতিহিস অবশ্যই মর্মান্তিক। ভাল থাকবেন ভাইজু।
ইঞ্জা
আপনিও ভালো থাকবেন আপু
ছাইরাছ হেলাল
জানার শেষ নেই, তবুও আরও জানতে চাই।
যৌন দাসীদের কথা এভাবে জানা ছিল না।
মৌনতা রিতু
হুম, আসলেই বিভৎস। এখনো প্রচলিত আছে। ভারত, নেপাল থেকে আরব বণিকরা এখনো এভাবে বিয়ের নাম করে নিয়ে যায়।
লিখব ভাবছি এই বিষয়টিও।
ছাইরাছ হেলাল
লিখে ফেলুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আমেরিকার ত্রীতদাশ প্রথার ইতিবিত্ত জানলাম।চলুক। -{@
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ ভাই। ভাল লাগছে লিখতে আপনাদের আগ্রহ দেখে।
নীলাঞ্জনা নীলা
এসব কিছুই জানা ছিলোনা। আপু তুমি কি যে উপকার করছো তাদের, যারা ক্রীতদাস প্রথা নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছে করবে, তোমার পোষ্ট থেকে অনেক কিছুই জানতে পারবে। লিখে চলো আপু।
পরের পর্বের অপেক্ষায়। তোমার এই পোষ্টটা আমার অসম্ভব প্রিয়। -{@
মৌনতা রিতু
কি যে বলো না আপু! আমিট তো পড়ে পড়েই তোমাদের জানাচ্ছি।
তুমি বেশিই ভালবাস আমায়। -{@ (3 ভাল থেকো আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আমি তোমার লেখার সত্যিই ভক্ত হয়ে গেছি। লেখায় ভিন্নতা আনার কৌশল আমাকে শেখাবে শান্তসুন্দরী?
অনেক অনেক ভালো থেকো। নিঃসীম ভালোবাসা। -{@ (3
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দাও প্লিজ।