'ক্রীতদাসের শাস্তি'
প্রাচীন রোমান সম্রাজ্যঃ প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্য সম্পদশালী হওয়ার পেছনে ক্রীতদাসদের অবদান অপরিসীম। ক্রীতদাসরা রোমান সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। কিন্তু এই ক্রীতদাসদের জীবনে  "অধিকার" বলে কোনো শব্দ ছিল না। রোমান আইনে ক্রীতদাস ছিল সাধারণ পণ্যের মতো বিক্রয় এ সহজেই স্থানান্তরযোগ্য একটি পণ্য। তারা ছিল চ্যাটেল(Chattels)। যখন কোনো পণ্য বা মালামাল বিক্রয় করা হয় তখন যেমন একটি পণ্য অপর পণ্য হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তা গণ্য করা হয় না, আর ক্রীতদাসরাও যেহেতু পণ্যের অন্তর্ভুক্ত এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী কিংবা পিতা-মাতা, ভাই বোন কিংবা সন্তান-সন্ততি হতে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না এ জাতীয় নিয়ম ক্রীতদাসদের বেলায় প্রযোজ্য ছিল না।  রোমান ক্রীতদাসদের সকল কিছুই নির্ভর করতো তার প্রভুর উপর এমনকি তার জীবনও মরণ। পান থেকে চুন খসলেই ক্রীতদাসদের উপর নেমে আসতো অমানুষিক নির্যাতন অত্যাচার বর্বরতা। অত্যান্ত নির্দয় ও মানষিক অত্যাচার করে ক্রীতদাস মেরে ফেলা একটি সাধারণ ঘটনার মতোই ছিল। এ অত্যাচারে কতো ক্রীতদাস মারা গিয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। সামান্য কারনে তাদের হাত কিংবা আঙ্গুল, কান, পা, নাক, ঠোঁট ছেঁচে দেওয়া কিংবা কেটে ফেলা হতো। আর অপরাধের মাত্রা বেশি হলে চোখ তুলে ফেলে রাখা হতো। আর ক্রীতদাসদের বেঁধে রাখা কিংবা মুখে কাফ পরিয়ে রাখতো যাতে পালাতে না পারে।
ক্রীতদাস মালিকরা আইনগতভাবেই এ অধিকার পেয়েছিল। মালিকরা ক্রীতদাসদের উপর পোটেস্ট(Potestas) ক্ষমতা পেয়েছিল। ক্রীতদাসের ওপর যে কোনো ধরনের আঘাত কিংবা শাস্তি দেওয়াকে অপরাধের মধ্যে গণ্য করা হতো না। নিজ ক্রীতদাস হত্যা করা ও কোনো অপরাধ নয় কারণ ক্রীতদাসদের কখনোই 'জনসাধারন' হিসেবে গণ্য করা হতো না।
(কিউবার ইয়ারা শহরে তাইনু গোত্রের প্রধান ও নেতা হাতুয়ির একটি মুর্তি  যাকে ১৫১২ সালে স্প্যানিশ সৈন্যরা একটি তেঁতুল গাছের সাথে বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে। হাতুয়ির স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯০৭ সালে সেখানে একটি তেঁতুলগাছ লাগানো হয় এবং ১৯৯৯ সালে এই তেঁতুলগাছের সামনে তাকে পুড়িয়ে মারার ভাবধারায় একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হয়)
রাশিয়ান চিত্রশিল্পী ফয়োদোর বন্নিকোভ এর তুলিতে ক্রুশবিদ্ধ ক্রীতদাসের ছবিটিও বিখ্যাত ছবি) এমন অনেক বাস্তব তোলা ছবি বিভিন্ন যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
ক্রীতদাস শাস্তিঃ ক্রুশবিদ্ধ করে মৃত্যুদন্ডঃ ক্যাপিটাল ক্রাইম অর্থাৎ বড় ধরনের অপরাধ, যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর এর শাস্তি ছিল ক্রুশে বিদ্ধ করে মৃত্যুদন্ড। তবে সম্রাট কনস্টান্টিন(Emperor Constantineঃ৩০৬-৩৩৭) এর শাসনামলে ক্রুশে বিদ্ধ করে মৃত্যুদন্ড অবশ্য নিষেধ করা হয়। ইস্তাম্বুলের পূর্ব নাম ছিল কনস্টেনটাইন। রোমান আইনে যে খুব ছোটখাট অপরাধ যেমন চুরি করা ইত্যাদি কারণেও ক্রীতদাসদের ক্রুশবিদ্ধ করা হতো। সাধারণত ক্রুশবিদ্ধ করার আগে ক্রীতদাসকে চাবুক দিয়ে মারাত্নকভাবে প্রহার করা হতো এবং পরিধেয় সকল পোষাক খুলে নিয়ে তার পা ক্রসের সাথে দড়ি দিয়ে আটকানো হতো। তারপর তাকে সাধারণত লোহা বা তামার তৈরি পেরেক দিয়ে ক্রসের সাথে বিদ্ধ করা হতো। হাতের দিক ঠিক কব্জির ওপর দুই হাড়ের মধ্যিখানে পেরেক বিদ্ধ করা হতো। হাত ক্রুশ বিদ্ধ করার সময় এতো জোরে হাত টান দেওয়া হতো যে প্রায় সময়ই কাঁধের কনুইয়ের জোড়া ভেঙ্গে যেত। তারপর যখন ক্রুশ খাড়া করা হতো তখন ক্রীতদাস প্রচন্ড টানের ফলে শ্বাস নিতে না পেরে ক্রীতদাস মারা যেত। ক্রুশে বিদ্ধ করে মৃত্যুদন্ড খুবই কষ্টদায়ক ছিল। অনেক ক্রীতদাস ধীরে ধীরে মারা যেতো তীব্র যন্ত্রনা ভোগ করে। অনেক ক্রীতদাসের ৯ দিন যন্ত্রনা ভুগে মরার রেকর্ড নথিবদ্ধ আছে।
শহরে ক্রীতদাসকে গ্রামঞ্চলে পাঠিয়ে শাস্তিঃ অনেক ক্ষেত্রে ছোটখাট অপরাধের সময় শহরের ক্রীথদাসকে গ্রামাঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হতো। এর কারণ ছিল সাধারণত শহর এলাকা থেকে গ্রামেই ক্রীতদাসদের সাথে বেশী নিষ্ঠুর ব্যবসার করা হতো। গ্রামে বেশীরভাগই একজন কীতদাসের সাথে আর একজন ক্রীতদাস বেঁধে মাঠে কাজ করাতো যাতে পালাতে না পারে। তাদের শাস্তি হিসেবে এভাবেই রাখা হতো। তাদের অনককেই কপালে সিল মারা হতো গরম ধাতব পদার্থ গরম করে। নারী ক্রীতদাসদের চুল কেটে দেওয়া হতো।
মালিককে হত্যা করাঃ ক্রীতদাসের সাথে সর্বদাই সর্বত্র নির্দয় আচরন করা হতো। তাদেরকে যন্ত্রের মতো ১৮ ঘন্টারও অধিক অমানুষিক পরিশ্রম করতে হতো। তাদেরকে খেব নিচুমানের খেবই কম পরিমাণ খাবার দেওয়া হতো। তাদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না এবং অসুস্থ অবস্থাতেও তাদের কয়েকমাইল হেঁটে কাজ করতে হতো। কারণ ক্রীতদাস মারা গেলেও মালিকের তেমন একটা কিছু ক্ষতি ছুল না কারণ সে সময় ক্রীতদাস ক্রয় ছিল খুবই সস্তা এবং সহজলভ্য। যে কোনো উছিলায় তাদের চাবুক মারা, আঙ্গুল, চুল, কান, কেটে ফেলা হতো। আর যৌন সম্পর্ক ছিল আরো অমানুষিক বিকৃত রুচির। আর এসব কারণে অনেক কৃতদাস নারী পুরুষ তার মালিককে আক্রমণ করে বসত। অনেক কৃতদাস নারী তার মালিকের ঔরষে সন্তানও মনের দুঃখে হত্যা করে। কারণ সে চাইতো না তার সন্তানও এই অত্যাচার সহ্য করুক। নিয়ম অনুযায়ী ঐ সন্তানও তখন ঐ মালিকের কৃতদাস বা দাসী।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,.

ক্রীতদাস নির্মম এক ইতিহাস পর্ব-৪

0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ