ক্যান্সার যেন এক মৃত্যুদূত

ইঞ্জা ২৮ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ০৪:৪৫:৪০অপরাহ্ন চিকিৎসা, সমসাময়িক ২৭ মন্তব্য

images-4

 

.
প্রধানমন্ত্রীর নিকট Farhan Kaif Ahon এর চিঠি :
.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সালাম নিবেন। ভালবাসা রইল।
আপনি কেমন আছেন? আমি জানি আপনি ব্যস্ত, তাই সংক্ষেপে আপনাকে আমার কথাটা বলে ফেলি। আমাদের স্যাটেলাইট, সাবমেরিন,পারমানবিক কেন্দ্র, পদ্মা সেতুর মত হাজার কোটি,
শত কোটি টাকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হতে দেখে, আমার সাহস করে আপনাকে বলতে ইচ্ছে হয়। প্রধানমন্ত্রী একটা ভাল মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার বাংলাদেশে বানিয়ে ফেলুন না।
আপনি হয়ত জানে না, আমার বেচেঁ থাকার জন্য বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এর বিকল্প নেই।
প্রতিবছর আমার মত দেশের কত শত মানুষের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু আমাদের দেশে ভাল মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সুবিধা নেই।
যাদের সুযোগ হয়, আর্থিক অবস্থা ভাল তারা ভারতে যায়।
আমার অবশ্য ভাগ্য ভাল ।
আমি ভাগ্যবান সারাদেশ থেকে একদল মানুষ আমায় ভালোবেসে আমার চিকিৎসার জন্য টাকা সংগ্রহ করছে। হয়ত আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আমার টাকা সংগ্রহ হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসা করতে ভারত যাবো।
কিন্তু যারা আমার মত ভাগ্যবান নয়, তাদের মৃত্যুর বিকল্প নেই। হয়ত আপনার কলমের এক খোঁচাতে হয়ে যাবে একটা ভাল মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার।
বেঁচে যাবে আমার মত হাজার হাজার অহন।
আপনাকে বলতে ভুলে গেছি আমার এক চিঠির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুলনায় রক্তের রেডসেল আলাদা করার নষ্ট মেশিনটি ঠিক করে দিয়েছেন।
এখন আমার মত শিশুদের আর কষ্ট করতে হয় না।
আগে কত যে কষ্ট হত আমার আর আমার মায়ের। প্রতি মাসে যশোর কিংবা ঢাকায় যেতে হত। এরপর আমার সাহস আরো বেড়ে গেছে।
মায়ের সাথে কথা বলে, সাহস করে আপনাকে চিঠিটা লিখে ফেলাম।
আমি অহন বাঁচতে চাই, ডাক্তার যতই ভয় দেখাক। আমার নাকি মাস কয়েক সময় আছে,
বড়জোর এ বছর। কিন্ত আমি স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্ভোধনের সময় আমি আপনার সাথে থাকব। খুলনা থেকে তখন আর সারারাত জেগে ঢাকায় আসতে হবে না ডাক্তার দেখাতে।
প্রধানমন্ত্রী বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টারটা খুলে ফেলেন না। প্লিজ। আপনি তো চাইলেই পারেন।
বাবা বলেছিল, সবাই নাকি ভেবেছিল পদ্মাসেতু হবে না। অসম্ভব বিদেশী সাহায্য এত বড় সেতু হবেই না। আমি বাবাকে বলি, বাবা তোমাকে আমি পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কত টাকা দরকার একটা বোনম্যাররো ট্রান্সপ্ল্যান্টের সেন্টার বানাতে? আমার চিকিৎসার পর যত টাকা থাকবে আমি তা দিয়ে দিব। আমিও দেশবাসী থেকে টাকা সংগ্রহ করে দিব। হাজার হাজার ভাইয়া-আপুরা আমার সাথে আছে, প্লিজ প্রধানমন্ত্রী একটা উদ্যোগ নিন না। আমাদের তো কোন বিকল্প নেই বেঁচে থাকার বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া।
বলতে ভুলে গেছি আমার নাম অহন। থাকি খুলনায়। ক্লাস ফোরে পড়ি। আপনি ভাল থাকুন।
সুস্থ থাকুন। ভালবাসা রইল আপনার প্রতি।
ইতি-
অহন, খুলনা।

(Farhana Islam Shumi আপুর টাইমলাইন থেকে কপি পেষ্ট করা)

আমার কথাঃ এই দেশে যখন ডিজিটালাইজেশনের যুগে প্রবেশ করেছে, যে সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পদ্মা সেতু, ঢাকা - চট্টগ্রাম, ঢাকা- ময়মনসিংহ ফোর লেইন রাস্তা হয়েছে, অসংখ্য ফ্লাইওভার হয়েছে এবং হচ্ছে, যে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মজুত হচ্ছে, দেশের প্রভুত উন্নতি সাধনে দেশের সরকার একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাচ্ছে, তখন অহনের চিঠিটা আমি সহ অনেকের অনুভূতিকে নাড়িয়ে দিলো গতকাল।

আসলেই আমরা বা সরকার কতো কিছুই না করছে দেশকে উন্নয়নে এগিয়ে নিতে কিন্তু চেরাগের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনি আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাত খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়ে গেছে, এই দেশে আসলেই কোনো ভালো চিকিৎসা নেই, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে, মন্ত্রী, এমপি, সরকারি আমলা সহ সকল ধনী শ্রেণি আজ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় চিকিৎসা নিতে যায়, আর মধ্যবিত্ত শ্রেণি যায় ভারতে।
আবার বড় রোগ হলে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ধার কর্জ করে হলেও চিকিৎসা করতে যায়, শুধু কি ধার করে হয় বড় রোগের চিকিৎসা হয়, নিজের ঘর বাড়ী, স্থাবর অস্থাবর সব বিক্রি করতে বাধ্য হোন এই শ্রেণীর মানুষের, খরচ ও পাচার হয়ে যায় দেশের মূল্যবান অর্থ।

কিন্তু সরকার চাইলে এই বিষয়ে নিজের দেশের স্বাস্থ্য খাতকে উন্নয়ন স্বাদন করতে পারেন, এই দেশেই স্থাপিত হতে পারে বৃহত ক্যান্সার ইনিস্টিউট, যেখানে দেশ বিদেশের বড় বড় চিকিৎসককে রেখে শিক্ষিত করবে এই দেশের মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের, চিকিৎসা দেবেন ক্যান্সার আক্রান্ত ধনি, গরীব সবাইকে, এক শ্রেণীতে রেখে, হবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট অল্প খরচে।
চিকিৎসা সরঞ্জাম, ঔষধ বাধ্যতামূলক ভাবে প্রস্তুত করবে এই দেশের ঔষধ প্রস্তুতকারীরা, এতে যেমন খরচা কম পড়বে, তেমনি সকল শ্রেণীর জন্য তা হবে সুলভ মূল্য।
চিকিৎসায় সরকার দেবে ভুর্তকি, আগামী বিশ বছরের জন্য, যেমন দিতো বিদ্যুত, গ্যাস, তেল সহ অনেক কিছুতে, ভুক্তভোগী পাবে সুলভে চিকিৎসা।
ক্যান্সারে মরবেনা হাজার লক্ষ মানুষ, চিকিৎসা হবে সব ধরণের ক্যান্সারের, প্রোটিয়াস ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার সহ সকল ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যই হবে এই ক্যান্সার ইনিস্টিউট।
শুধু চিকিৎসা দিলে হবেনা এই ইনিস্টিটিউট থেকে, সাথে সাথে করবে জনসচেতনতা মূলক কার্জকর্ম, যেখান থেকে জনগণকে সচেতন করতে হবে ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ সকল ক্যান্সার চেনার কৌশল।
এই মূহুর্তে আনতে হবে স্পেসালাইজড ক্যান্সার চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, ট্রেনিং করিয়ে আনতে হবে টেকনিশিয়ানদের, যারা এই সব যন্ত্রপাতি বাধ্যতামূলক রক্ষানাবেক্ষণ করবে, আনতে হবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক আর আমাদের চিকিৎসকদেরও উচ্চতর ট্রেনিং করিয়ে আনতে হবে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য।

শুধু সরকার কেন একা করবে, সরকার আমাদের বড় বড় গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিকদের কাছ থেকে সহায়তা নেবে অর্থায়নের জন্য, অনেকেই আছেন সরকারকে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা দিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সরকার তাদের কাছ থেকেই নিক সেইসব অর্থ।
এই ধরণের আধুনিক হাসপাতাল করতে যা লাগে সরকার করুক কিন্তু আমরা হাসপাতাল চাই, আমরা চাইনা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে সদয় হোন, আমাদের বাঁচান।

 

 

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ