ঈদের গল্প

মাহবুবুল আলম ৪ জুলাই ২০১৬, সোমবার, ১২:৩৬:৩৯অপরাহ্ন গল্প ৩ মন্তব্য

বিবর্ণ বিষাদ // মাহবুবুল আলম

কাশেম সাহেব আজ একরকম আয়েস করেই টিভি দেখতে বসেছেন। বাসায় একা। তাই অন্যান্য দিনের মতো রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি নেই। স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা সবাই যার যার মতো বেড়াতে গেছে। ছেলে-মেয়েরা গেছে বন্ধুবান্ধদের বাসায় বা অন্য কোথাও আড্ডা দিতে; আর স্ত্রী আয়েশা চলে গেছে ‘পল্লবী’ বাবার বাড়িতে।  ছেলে-মেয়েরাও হয়তো ঘোরাঘুরি শেষ করে নানার বাড়িতেই চলে যাবে। ফিরতে ফিরতে সে অনেকরাত।

ওরা বাসায় থাকলে কখনও নিজের ইচ্ছেমত টিভির খবর দেখতে পারেন না কাশেম সাহেব। এখন টিভিতে হাসির নাটকের একটা দৃশ্য দেখে তিনি খুবই হাসছেন। বেশ মজা পাচ্ছেন নাটকটা দেখে। ঈদে প্রত্যেকটি চ্যানেলই ভাল ভাল অনুষ্ঠান নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নামে। কার চেয়ে কে ভাল আনুষ্ঠান বানাতে পারে। তাই ঈদ এলে ভাল ভাল প্রোগ্রাম দেখা যায়। এখন যে নাটকটা দেখছেন তাতে ঈদ নিয়ে হাস্যকৌতুকের মাধ্যমে নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারে যে নানাবিদ বিড়ম্বনা দেখা দেয় তাই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এ নাটকে, তা যেন কাশেম সাহেবের পারিবারের জীবনেরই একটি প্রতিলিপি। তাই তিনি নিজে নিজে হাসছেন আর মনে বলে বলছেন : “ঘরের কথা পরে জানল ক্যামনে”। নাটকটি দেখে এই ডায়লগটির কথাই আরো বেশি বেশি মনে পড়ছে। তিনি আরো ভাবছেন, নিশ্চয়ই সংসারে নাট্যকার ব্যটার অবস্থা তার মতোই। না হলে তার জীবনের গল্পের সাথে, নাটকের গল্প খাপের খাপ মিলে যায় কি করে? এখনও তিনি বেশ ঝেঁকে ঝেঁকে হাসছেন। কিন্তু কি ভেবে যেন হঠাৎ করেই তার মুখের হাসিটা ম্লান হয়ে যায়।

আজ ঈদ। ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ। সবাই ছুটছে যে যার মতো। ছেলে-মেয়েরা ঈদের বেড়ানো বেড়াতে গেলেও আয়েশার বাবার বাড়ি যাওয়াটাকে বেড়ানো বলা যাচ্ছেনা। কাল রাতে ঈদের কেনাকাটা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে একচোট ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়াটা অতি সামান্য বিষয় নিয়ে। আয়েশার অভিযোগ ঈদে বাজার-সওদা করার জন্য তাকে যে টাকা দেয়া হয়েছে তাতে সে হাতখুলে কোন খরচই করতে পারেনি। হাতখুলে খরচ করাতো দূরের কথা; টাকার অভাবে নাকি সে রিবন্ডিং করার জন্য পার্লারে যেতে পারেনি। এই নিয়েই ঝগড়ার সূত্রপাত, এবং তা গড়িয়েছে অনেক রাত পর্যন্ত। কাশেম সাহেবের মনবেদনার কারণ হলো; আয়েশার চাহিদা মতো টাকা দিতে পারেননি এটা ঠিক, তাই বলে কি বছরের এমন একটা আনন্দের দিনে তাকে একা বাসায় ফেলে রাগ করে আশেয়া বাবার বাড়ি চলে যাবে! এসব ভাবতে গিয়েই কষ্টে মনটা তার কেমন নীল হয়ে যায়।

তিনি ভাবেন, এটা নতুন কিছু নয়। ঈদ এলেই ছাপোষা কাশেম সাহেবদের মতো স্বল্প বেতনের চাকুরেদের নানাবিদ বিরম্বনার সম্মুখিন হতে হয়।  রোজার শুরু থেকেই সেই যে বিরম্বনার শুরু তা চলে ঈদের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত। রোজা আরম্ভ হতেই চাপ বাড়তে থাকে ঈদের কেনাকাটার জন্য। আগে আগে টাকা না পেলে নাকি পরে ভিড়বাট্টার কারণে দাম বেড়ে যায়। আগে আগে কেনাকাটা করলে নাকি বেশ সস্তা ও কম দামে কাপড়চোপড় কেনা যায়, তাই চাপ। এ  নিয়ে কম বেশি সব পরিবারেই কিছু কিছু মনমালিন্য হয়, তাই বলে কি সবাই এমন আনন্দের দিনে ঘরের কর্তাকে বাসায় একা ফেলে চলে যায়।

বাসায় একা হলেও আজ নিজকে বেশ স্বাধীন স্বাধীন মনে করছেন কাশেম সাহেব। তাই তিনি লুঙ্গি আর সেন্ডু গেঞ্জি পরে হাত-পা ছড়িয়ে টিভি দেখতে বসেছেন। কিন্তু দরজায় ঠক ঠক আওয়াজে চরম বিরক্তি নিয়ে বসেই জোরগলায় জিজ্ঞেস করেন : কে? কোন উত্তর নেই। আবার ঠক ঠক। কে? বলেই দরজার দিকে এগিয়ে যান। দরজা খুলতেই দুই তিনজন ভিক্ষুক হরহর করে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। কাশেম সাহেব জোরে ধমক লাগান : এই তোমরা ঘরের ভেতর ঢুকছ কেন? দাঁড়াও বাসার বাইরে দাঁড়াও। আমি আসছি। বলেই দরজা বন্ধ করে ভেতর দিক থেকে লক করে বেডরুমে ঢুকেন। মানিব্যাগ খুলে পাঁচ টাকার তিনটা কড়কড়ে নতুন নোট নিয়ে ফিরে আসেন। দরজা খুলেই বলেন: এই নাও। পাঁচ টাকা করে দিলাম।

ভিক্ষুকদের মধ্যে একজন তাচ্ছিল্যের সাথে বলে ওঠে : মুটে পাচ টেহা! আজকাইলত মানুষ ফকিরকেও পাচ টেহা দেয় না। কাশেম সাহেব রেগেমেগে বলেন : তোমরা কি ফকির না? সবাই একযোগে বলে ওঠে ফকির হইলেও আইজ আমরা ভিক্ষা করতে আহি নাইক্যা।

আইজ বখশিস আর ফেতরার লাইগ্যা আইছি। দেন বাড়াইয়া দেন। কেমন আদেশের সুরে বলে একটি বয়ষ্ক মহিলা ভিক্ষুক।

বিরক্ত হয়ে কাশেম সাহেব বলেন : না নিলে যাও, এর বেশি দিতে পারব না। বলেই জোরে আওয়াজ করে দরজা লাগিয়ে দেন। তিনি ভেতরে না গিয়ে একটু দাঁড়ান। তিনি স্পষ্ট শুনতে পান বয়স্ক ভিক্ষুকটি বলছে : খাইষ্টার খাইষ্টা। হেত দেহি আমগর থাইক্যাও বড় ফকির। চল চল এ্যাহানে সময় নষ্ট কইরা লাভ অইবনা।  আরেকজন বলে : ওস্তাদ চলেন, হেরে টেকাগুলান ফেরত দিয়া তারে ঐ দশ টেকা ভিক্ষা দিয়া যাই। এই কথার পর একযোগে সবার হাসির আওয়াজ শোনা যায়। কথাটা শুনে কাশেম সাহেবের ভীষণ রাগ হয়। একবার ভাবে দরজা খুলে ঘার ধরে বের করে দেয় । কিন্তু মুহূর্তে নিজকে সংযত করেন।

তখনই তিনি আবার শুনছেন সবাই একযোগে কাশছে এবং থুক থুক করছে। এর পরই দৌড়ে চলে যাওয়ার শব্দ শুনতে পান। ওরা যে চলে গেছে তা নিশ্চিত হয়েই আবার দরজা খোলেন কাশেম সাহেব। তিনি মনে মনে যা ভেবেছেন তাই। ওরা সবাই কেশে কেশে প্যাসেজটি নোংরা করে দিয়ে গেছে। মনে মনে একটা গালি ছাড়েন : কুত্তার বাচ্চারা। এই জন্যই আল্লাহ তোদের ভিক্ষুক বানিয়েছে।

রাগে-ক্ষোভে বেচারা ভেতর থেকে পুরনো খবরের কাগজ এনে ওইসব নোংরা পরিস্কার করে ভেতরে এসে টিভি দেখায় মনোনিবেশ করেন। রিমোট চেপে একটার পর একটা চ্যানেল পাল্টান। কোন চ্যানেলেই থিতু হতে পারছে না যেন। কোন কারণ ছাড়াই মনটা হঠাৎ করে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। নিজের ভেতরেই কেমন এক চাপা অভিমান এসে ভর করেছে। জীবনটা তার কেন এমন হলো? জীবনের কোনো স্বপ্ন-স্বাদই তার পূরণ হলো না। সংসার জীবনেও একা। বড়ই একা।

এ সব ভাবনার মাঝেই টিভির ক্যাবল লাইন ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। টিভি পর্দায় এখন যেন লক্ষ লক্ষ জোনকীর আলো জ্বলছে ও নিভছে। চোখ কেমন ঝাপসা হয়ে আসে। এ পরিস্থিতে টিভির সুইচ অফ করে সটান বিছানায় শুয়ে পড়ে কাশেম সাহেব। মাথার ওপর সিলিং ফ্যানটা বাধ্য ও অনুগত শিষ্যের মতো। বাতাস দিয়ে যাচ্ছে। একদৃষ্টে চেয়ে থাকেন ফ্যানের দিকে। ফ্যান ঘোরার সাথে সাথে যেন তার মনের ভাবনাগুলোও ছন্দহীন ও বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরছে।

কাশেম সাহেব কাস্টমস এর একজন উচ্চমান সহকারী। বিএ পাশ করার পর জুতার অনেক সুকতলী ক্ষয় করে এ চাকরীটা হয়েছে। প্রথমে এই পজিশনে নয়। নিন্মমান সহকারী। তারপর দশ বছর কেরাণী হিসেবে কলম পেষার পর, উচ্চমান সহকারী হিসেবে প্রমোশন হয়েছে। তাও আবার মেধা ও যোগ্যতার কারণে হয়নি চাকরীটা। গ্রামের বাড়ির দুই বিঘা ফসলী জমি বিক্রি করে দুই লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকুরীটা বাগাতে হয়েছে। জমি বিক্রি করে ঘুষ দিয়ে চাকরী পেতে কাশেম সাহেবের মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না। সবাই তখন বলেছে : জমির মায়া কর কি মিয়া। কাষ্টমের চাকরী, কয়েক বছরেই লালে লাল হইয়া যাইবা। দুইচারদশ বছর চাকুরী করেই এমন বিশ পচিশ বিঘা জমি কিনতে পারবা। শেষ পর্যন্ত অনেক ভাবনা চিন্তা করে জমি বিক্রি করে ঘুষের বিনিময়ে এ চাকুরীটার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। মোটামোটি ভালই চলছিল। কিন্তু বিয়ের পর সংসার বড় হতে থাকলে সাথে সাথে চোখ বড় হয়ে উঠার কারণে বেতনের টাকায় কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি। অভাব ও দারিদ্রের কাছে পরাস্ত হয়ে সব আদর্শ জলাঞ্জলী দিয়ে অসৎ পথের দিকে হাটতে হাটতে এখন পুরোপুরি অসৎ পথের অসৎ মানুষ হয়ে সংসারের হাল টেনে ধরতে হয়েছে তাকে।

একজন সিনিয়র কর্মচারী হিসেবে তিনটি টাইমস্কেলে বেতন ফিক্সেশন হওয়ার পর মোটামুটি হাজার বিশেক টাকা বেতন-ভাতা পান তিনি।  সেই বেতনের টাকায় অর্ধেক মাসও চলে না। বেতনের অর্ধেকেরও বেশিটাই খেয়ে ফেলে বাড়িভাড়া। এরপর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ; অসুখ-বিসুখ, এটা সেটা। একজন ঠিকা কাজের বুয়া, যাকে বেতনের পরও তিনবেলাই খাবার দিতে হয়। রাতের বেলা বাড়ি যাওয়ার সময় হাড়ি ভরে খাবার দিয়ে দিতে হয় বাচ্চাদের জন্য। না দিয়েও উপায় নেই। ঢাকার ছুটা বুয়াদের ডিমান্ড এখন আকাশ ছোঁয়া। তাও কাজপ্রতি হিসেব। এলাকা ভেদে এক কাজ তিন’শ চার’শ টাকা। এমন হিসেব করলে এই বুয়াটা অনেক ভাল রেটেই পাওয়া গেছে। সকাল ছয়টায় এসে ফিরতে ফিরতে সেই রাত দশটা সাড়েদশটা। ছুটা বুয়াদের হিসেবে ধরলে এই বুয়ার বেতন দিতে হতো কম করে  হলেও ছয়-সাত হাজার টাকা।

যে মা-বাবার অসীম ত্যাগের কারণে আজকের এই কাশেম সাহেব হয়েছেন তিনি; সে বৃদ্ধ মা-বাবাকে বাসায় এনে রাখার উপায় নেই। তাই বৃদ্ধ মা-বাবাকেও মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠাতে হয়।  তাই সব মিলিয়ে সংসারের অনেক খরচ। এর ওপর নির্ভর করেই চালাতে হয় সংসারের সারা মাসের খরচপাতি। উপ্রি আয় না থাকলে রাতেরবেলা পার্টটাইম চুরিদারি করেও সংসার চালানো সম্ভব হতো না। তাই উপ্রি আয়ই একমাত্র ভরসা।

চাকরী বাকরী খোঁজতে খোঁজতে এবং চাকরী পেয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই বয়স চলে গেছে অনেকটা। তাই বিয়ে করতে হয়েছে একটু বেশি বয়সেই। ঘরে দুই মেয়ে আর সবেধন নীলমনি একমাত্র ছেলে। তাও মেয়েগুলো হয়েছে আগে। মেয়েদের পরে হয়েছে ছেলেটি। কিন্তু প্রায় শেষ বয়সের ছেলেটি সবার বেশি বেশি আদরে বিশেষ করে মায়ের আদরে অনেকটাই বখে গেছে। টেনেটোনে এসএসসি পাশ করলেও গ্রেডপয়েন্ট পুয়র হওয়ার কারণে ঢাকার কোন সরকারী বা পাবলিক কলেজেই ভর্তি হতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত নতুন একটা প্রাইভেট কলেজে অনেক টাকা ডোনেশন দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ক্লাসে ভর্তি করা হলেও তাকে দিয়ে যে কোন আশা নেই, তা দিনকে দিন স্পষ্ট হচ্ছে। ছেলেকে নিয়ে কথা বলতে গেলে আয়েশা মুখের কথা কেড়ে নিয়ে চোখ গোলগোল করে ইয়ার্কীর সুরে বলে : ‘বুড়া বয়সের পোলাপাইন এমনই হয়। কেন যে মা-বাবা তোমার মতো একজন বুড়োর কাছে আমাকে বিয়ে দিল।’

আর মেয়েরা, তাদের পড়া যেন শেষ হয়না। এই পড়া নাতো সেই পড়া; একটা না পড়ার মধ্যেই আছে। আবার বিয়ের কথা উঠলেই ফোঁস করে ওঠে : ‘বাবা তুমি যে কি বলনা পড়ালেখা শেষ না করে কিসের বিয়ে! পড়ালেখা শেষ করে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াই, তারপর বিয়ে।’

এখন আর আগের মতো সেই রমরমা উপ্রী আয়ও নেই। খুবই সতর্কতার সাথে, অনেক ভাবনা-চিন্তা করে ফাঁকফোকর বের করে ঘুষের ওই নাপাকি টাকা অর্জন করতে হয়। কিন্তু আগে বেশি খেয়ে খেয়ে গলা ও পেট এমন বড় হয়ে গেছে, এখন কমে আর পেট ভরানো যাচ্ছেনা। এ অবস্থা আয়েশাকে বোঝানো কঠিন। সবকিছু কম্পিউটারাইজড ও ডিজিটাল হয়ে যাওয়ার কারণে উপ্রি আয় অনেক অনেক কমে গেছে। সে মনে করে আমার অনেক টাকা। কিন্তু, আমি টাকা জমাই, আর গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা গরীব আত্মীয়-স্বজনকে লুকিয়ে লুকিয়ে টাকা দিয়ে দিই। তাই তাদের বেলায়ই যত হাতটান, টানাটানী। তার ওপর ঈদ এলেই যেন তাকে হাটতে হায় ধারালো তলোয়ারের ওপর দিয়ে। শুরু হয় নানা বিরম্বনা। বোনাসের পুরো টাকাটা তার হাতে গুছে দিলেও নিস্তার নেই। শুরু হয় চিল্লাচিল্লী, চেচামেচি, অশান্তি। এই ঈদেও শপিং করার জন্য বিশহাজার টাকা দিতেই টাকাটা গুণে নাকে-মুখে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে-: এই টাকা দিয়ে কি হবে! টাকা দিয়ে আমার কাজ নেই। তোমার শপিং তুমি করো গিয়ে। আমি আর তোমার ঈদ-ফিদের মধ্যে নেই। আরে, আজকাল যারা যাকাত ফিতরা পায় তারাও এরচেয়ে বেশি টাকায় ঈদের শপিং করে...।

আবার দরজায় ঠক ঠক আওয়াজে কাশেম সাহেবের ভাবনার সুতো ছিড়ে যায়। বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতেই তার চোখ ছানাবড়া। আশপাশের বাসাবাড়ির সাত আটজন ছোট ছোট ছেলে ছোকড়া প্রায় এক সাথেই বলে ওঠে-: আঙ্কেল ঈদ মোবারক! তিনি উপরে উপরে বলেন : ঈদ মোবারক, কিন্তু মনে মনে বলে আরেক কথা,  তোদের ঈদ মোবারকের খেতাপুড়ি।

ওদের দেখেই বোঝা গেল শুরু হলো বুঝি ঈদ সালামির আরেক বিরম্বনা। যারা এসেছে তাদের দুএকটাকে চেনা গেলেও বাকিদের কাউকে কোনদিন দেখেছে বলে মনে হয় না। কি আর করা এ মুহূর্তে কষ্টের মধ্যেও চেহারায় একটা অসহায় হাসি ঝুলিয়ে দিয়ে উপরি হাসির একটা  প্রলেপ লাগিয়ে বলেন : আরে তোমরা! আস। আস। ভেতরে এসে বসো।

কথা শেষ হতে না হতেই সবাই হুরমুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ঘরের ভেতর। একে একে সবাই সালাম করে কাশেম সাহেবকে। তিনি চিরতা হজম করার মতো সবার সালাম গ্রহণ করে, সবাইকে ডয়িং রুমে নিয়ে বসান। যাদেরকে চিনেনা, একে একে জিজ্ঞেস করেন সবার পরিচয়। না কাউকেই তেমন চিনতে পারছেন না। পরিচিতদের দুইজন চোখ ঘুরিয়ে ঘরের ভেতর জরিপ করে কারো কোনে আওয়াজ না পেয়ে বুঝে যায় বাসায় অন্য আর কেউ নেই। যাকে এই মুহূর্তে কাশেম সাহেবের কাছে ঈদ সালামির চাঁদাবাজীর ক্যাপ্টেন বলে মনে হয় সে বলে : আঙ্কেল, আন্টি, ভাইয়া, আপারা কি বাসায় নেই?

না, নেই। এই একটু আগে সবাই আমার এক আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে গেছে।

ক্যাপ্টেন ও তার শিষ্যদের চোখমুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তারা ভীষণ হতাশ। সবাই কেমন কাচুমাচু করছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কাশেম সাহেব বলেন : তারা নেইতো কি হয়েছে, আমিতো আছি।

তখন ক্যাপ্টেন বলে : ঠিক আছে আঙ্কেল তাহলে আমরা এখন যাই। সাথে সাথেই কাশেম সাহেব বলেন : আরে বলো কি! এমন খুশির দিনে তোমরা কিছু মুখে না দিয়ে চলে গেলে কি হয়। কিন্তু মনে মনে বলেন যে একপাল এসেছো ঘরে ঈদের যে খাবার তৈরি করে দিয়ে গেছে এক চাঞ্চেইতো সব সাবার হয়ে যাবে। কথা শেষ করতে পারেনা কাশেম সাহেব সবাই এক সাথে বলে : না না আঙ্কেল আমরা এখন কিছুই খেতে পারবো না। তবে চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সবায় যেন বলছে : বিভিন্ন বাসায় খেতে খেতে আমাদের পেট ভরা এখন আমাদের চোখের ক্ষুদাটা! মিটিয়ে দিলেই আমরা চলে যেতে পারি।

কাশেম সাহেব বলেন: কিছুই যখন খাবেনা কি আর করা। তোমরা একটু বসো। আমি আসছি। কাশেম সাহেব ভেতরে চলে যান। ছেলে-মেয়েরা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে মুখ চেপে হাসে। মিনিট দু’একের মধ্যেই কাশেম সাহেব চলে আসেন। হাতে কড়কড়ে কিছু বিশ টাকার নোট। একে একে সবার মধ্যে টাকা বিলি করেন। একবার ভেবেছিলেন দশ টাকা করে দিতে। ছেলে-মেয়েরা শুনলে আরো বকাঝকা করবে। : ‘দরকার কি ছিল দশ টাকা করে সালামি দেওয়ার। বরং এ চেয়ে না দেয়াই ভাল ছিল।’ ছেলে-মেয়েদের মান-সন্মানের কথা ভবেই বিশ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কাশেম সাহেব।

নতুন টাকার গন্ধমাখা বিশ টাকার নোট এক এক করে সবার হাতে তুলে দেন কাশেম সাহেব। কিন্তু এই সালামি পেয়ে যে তারা খুশি নয় তা তাদের চোখ-মুখের ভাষা পড়েই বোঝা যাচ্ছে। আর দেরি করেনা ওরা। একযোগে-আসসালামু আলাইম বলে সবাই চলে যায়। ওরা চলে যেতেই চরম বিরক্ত কাশেম সাহেব একটা বড় তালা এনে বাইরের দিক থেকে কলাপসিবল গেইটে লাগিয়ে মনে মনে বলেন : আর আসিস। ফকির, মিশকীন ঈদ সেলামির খেতাপুড়ি ।

কাশেম সাহেব ফিরে এসে আবার টিভি অন করেন। ডিসের লাইন এসেছে। রিমোট নিয়ে টিভি অন করেন। বিছানায় বসে চোখ ঘুরিয়ে আনেন বিভিন্ন চ্যানেলে। না কিছুই ভাল লাগছে না। প্রচন্ড ক্ষিদা লেগেছে। নামাজ পড়াতে যাওয়ার আগে যাও একটু সেমাই খেয়ে গেছেন; রোজাভাঙা পেট অনেক আগেই তা হজম করে ফেলেছে। টিভি অফ করে ডাইনিং টেবিলে আসেন তিনি। টেবিলে সব খাবারই সরপু দিয়ে ঢাকা। সরপু উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখেন। মিস্টি জাতীয় খাবার ভাল লাগছে না। একটা বাটিতে চটপটি তুলে নেন। খাওয়া শেষ করে ভাবেন, একটু চা হলে ভাল হতো। চা বানানো ঝামেলা ভেবে চা খাওয়ার ইচ্ছা মুহূর্তেই জলাঞ্জলি দেন। ফিরে আসেন বেডরুমে। বিছানায় গাটা এলিয়ে দিয়ে আবার টিভি দেখায় মগ্ন হন। প্রায় সব চ্যানেলই এগারোটা খবর শুরু হয়েছে। খবর দেখায় মনোনিবেশ করেন কাশেম সাহেব।

এ মুহুর্তে ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়ার একটি টিভি রিপেটিং দেখাচ্ছে। যদিও এটা গতকালের ফলোআপ। তবে দেখতে ভাল লাগছে। ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে ট্রাকে কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই নেই। আগে ছেলেরা উঠতো ট্রেন-বাসের ছাদে, এখন দেখা যাচ্ছে ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও যে ভাবে পারছে বাস, ট্রেনের ছাদে ওঠছে। মানুষের মধ্যে মা-বাবা, ভাইবোন আত্মীয়স্বজনের সাথে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করার নেয়া জন্য কী যে আবেগ, কী যে আকুতি তা দেখে ভাল লাগছে। একই সাথে মা-বাবার জন্য কাশেম সাহেবের মনটা ভরে ওঠে ব্যাকুল কান্নায় ।

মা-বাবাকে দেখতে যাওয়া হয়না অনেক দিন। আর মা-বাবার সাথে শেষ ঈদ কবে করেছে এখন মনেই মনে করতে পারছেন না কাশেম সাহেব। হঠাৎই তপ্ত এক নোনাজলের অশ্রুধারায় তার দু’চোখের কোণ ভরে ওঠে। প্রতিবারই ইচ্ছা হয় গ্রামের বাড়ি গিয়ে মা-বাবার সাথে ঈদ করার। কিন্তু সংসারের নানাবিদ টানাপোড়েনে কোনবারই আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। তাছাড়া বাড়ি যাওয়া নিয়ে স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের সাথে মতপার্থক্যের কারণেও যাওয়া হয় না। কিন্তু মা-বাবার আকুতি সর্বদাই তার কানে বাজে : ‘কাশেম! একবারও কি বুড়া মা-বাপের কথা মনে অয় না তর। কতদিন হইয়া গেল তরে দেখি না, বউ, নাতি-নাতনিদের দেখতে মন চায়। একবার সময় কইরা বাড়ি আয়নারে বাপ।’

এসব ভাবতে ভাবতে কাশেম সাহেবের দু’চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসে। এই ঈদের বাড়ি যাওয়ার জন্য পরিবারের সবাইকে বলেছিল। তারা বিরক্তি নিয়ে নাক ছিটকিয়ে বলেছে : কী আছে গ্রামে! না আছে কোন আনন্দ, না আছে শিহরণ, ন্যুনতম বেড়ানোর একটা জায়গাও নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো টয়লেট, পানি ও গোছলের। তোমার ইচ্ছা হলে তুমি যাও। ঢাকা ছেড়ে ঈদে কিছুতেই আমরা কেউ  গ্রামে যাব না।

এ কথা শোনার পর কাশেম সাহেব একটি শব্দও আর করেননি। কিন্তু টিভি রিপোটিংটা দেখে নিটোল আবেগের সেইসব স্মৃতিময় শৈশব ও কৈশোরের দিন তাকে হাত ধরে নিয়ে যায় সবুজ ফসলের মাঠ, নদীনালা বনবনানীর ঝোপঝাড়ে। এ মুহূর্তে কাশেম সাহেব ভাবাবেগের এক রেলগাড়িতে চড়ে বসেছেন। ধাবমান ট্রেনের জানালায় বসে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেন। চোখ জুড়িয়ে যায় সবুজের সজীব রঙে। এখন তিনি ভুলে থাকতে চান স্বার্থপরতার রেপিং পেপারে মোড়ানো শহরের জীবন সংসারের কথা। এই স্বার্থপরতার জীবন সংসারের কঠিন শেকলে বাধা পড়েই মানুষ ভুলে যেতে থাকে আপন সত্ত্বাকে। ভুলে যায় নিজের শেকড়কে।

একসময় ভাবাবেগের সেই রেলগাড়িটা এসে থামে অচেনা এক স্টেশনে। না, আসলে এটি কোন অচেনা স্টেশন নয়। গ্রামের বাড়ি না আসতে আসতে ভুলে যাচ্ছে এটা কি শশীদল নাকি রাজারপুর স্টেশন। একটু ভালভাবে দেখতেই পরিস্কার হয় এটা রাজারপুর স্টেশনই। এখানে দাঁড়িয়ে খোলা মাঠের ওপারে দৃষ্টি প্রসারিত করতেই তাদের বাড়ির বিশাল তাল গাছটি নজরে পড়ে। এটি এখনও সগৌরবে মাথা উঁচু আকাশ ছুঁতে চাইছে যেন। ওই তালগাছটি তাদের গ্রামটিকে এলাকায় বিখ্যাত করে রেখেছে। শুধু তাদের এলাকায় কেন এমন বিশাল গাছ আর অন্য কোথাও আছে কিনা কারো জানা নেই। এই শতবর্ষি তাল গাছটির বয়স কত হবে কেউ বলতে পারে না। কেউ বলে দেড়’শ বছর আবার কেউ বলে দুই’শ বছর। এ গাছটির কথা সে শুনেছে তার বাবার কাছ থেকে, বাবা শুনেছে তার বাবা বা দাদার কাছে থেকে। গাছটিকে দেখেই তাদের আশপাশের মানুষ নিজেদের গ্রামের অবস্থান নির্নয় করতে পরে সহজেই।

কাশেম সাহেব দাঁড়িয়ে দেখেন তাদের গ্রামটিকে। গাছটি পাশেই দেখা যাচ্ছে ইয়া বড় বড় কাটার শিমুল গাছটিকেও। শিমুল গাছটিও অনেক পুরনো। বিশাল বিশাল কান্ড শাখা, প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়েছে ইচ্ছে মতো। এখানটায় দাঁড়িয়ে সে স্পষ্ট দেখতে পায় বয়সি এ গাছটিও লাল-মেজেন্ডা মিশ্রিত থোকা থোকা ফুলে ফুলে রঙের আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটির তাদের চারাবাড়িতে মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে।

চারাবাড়ির এই দুইটি গাছের মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়ালেই দেখা যায় রেল লাইন। ছোট বেলায় এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ও আর ওর বন্ধুরা ট্রেনের আসা-যাওয়া দেখতো। দেখতো কোন গাড়িটি কত লম্বা। কোনটা মাল গাড়ি, আর কোনটা পেসেঞ্জার গাড়ি। কোন গাড়িতে কয়টি বগি। আবার কখনো শশীদল স্টেশন থেকে ট্রেনের হুইসেল শুনলেই সবায় মিলে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়াতো, কাছ থেকে ট্রেন দেখার জন্য।

কাশেম সাহেব যখন ছাত্র ছিলেন; ঢাকায় লেখাপড়া করতেন বা চাকরির প্রথম জীবনে প্রতি বৃহস্পতিবার চলে আসতেন বাড়িতে। সন্ধ্যার আগে আগে স্টেশনে নেমে যখন বাড়ির দিকে হাটা দিতেন তখনই নজরে পড়তো চারাবাড়ির বিশাল গাছ দুটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। পরনে তার লাল অথবা হলুদ রঙের শাড়ি। সে বুঝতো এটা বীথিকে ছাড়া আর কেউ নয়। তাদের পাশের বাড়ির বীথি। কাশেম সাহেবের ছেলেবেলার খেলার সাথী, বড় হয়ে ভালবাসার মানুষ। বীথিকে দেখলে তার সারা শরীরে খেলে যেত অজানিত এক শিহরণ, ভালবাসার আবেগের উর্মীমালা। কাছাকাছি আসতেই বীথি সকল সামাজিক অনুশাসনের ভয় তোয়াক্কা না করে ছুটে আসতো তার কাছে।

একদিন মজা করে কাশেম সাহেব বীথিকে জিজ্ঞেস করেছিল, আচ্ছা বলতো বৃহস্পতিবার এলেই তুই লাল না হয় হলুদ শাড়ি পরিস কেন। এর মাজেজা কি? সেদিন হেসে হেসে বীথি বলেছিল এইডা বুঝনা বুদ্দু। তুমি যাতে দূর তাইক্যা আমারে দেখতে পাও হের লাইগ্যা আমি বৃহস্পতিবার আসলেই লাল না অয় হলুদ শাড়ি প’রি।

এভাবেই কেটে গেছে অনেক দিন। কিন্তু একদিন বীথি তার জীবন থেকে হারিয়ে গেল। তখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। কাশেম সাহেব চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় গ্রামে গ্রামে ঢুকে হাজার হাজার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তাদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাচ্ছে গ্রামের সুন্দরী মেয়েদেরকে। একদিন পাশের গ্রামের রাজাকার কমান্ডার মফিজ বেপারী তাদের গ্রামে নিয়ে আসে পাকিস্তানের হানাদার নারী লোলুপ কিছু সেনাকে। তাদের ঘরসহ জ্বালিয়ে দেয়া হয় গ্রামের আরও কিছু বাড়ি। যাওয়ার সময় ধরে নিয়ে যায় বীথিকে। এর পর শত চেষ্টা করেও  বীথিকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যুদ্ধ থেকে ফিরে কাশেম সাহেব ও তার সহযোদ্ধারা ধরে আনে মফিজ রাজাকারকে। গুলি করে মফিজ বেপরীকে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নিতেই এলাকার মুরব্বীদের অনুনয়-বিনয় ও অনুরোধে তাকে মারতে পারেনি সেদিন। কিন্তু কাশেম সাহেব গুলি করে তার একটি পা গুড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকে মফিজ বেপারীর নাম হয়ে যায় রাজাকার লেংড়া  মফিজ। সেই রাজাকার লেংড়া মফিজ এখন বিপুল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী। কয়েকটি শিল্প কারখানার মালিক। কাশেম সাহেব সেদিন খবরের কাগজে দেখেছেন, যুদ্ধপরাধী হিসেবে রাজাকার লেংড়া মফিজের বিচারের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। কাশেম সাহেব সিদ্ধান্ত নেন তদন্তকারী দলের সামনে হাজির হয়ে এই রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যালে সাক্ষী দেবেন। তাতে নিশ্চয় বীথির মৃতআত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।

নিচে কলাপসিবল গেইটের তালা নাড়ার শব্দে কাশেম সাহেবের ভাবনার রঙিন ঘুড়ির সুতো ছিড়ে যায়। কারা যেন খুব জোরে জোরে গেইটের তালা নেড়েই চলছে। কাশেম সাহেব রুম থেকেই জানালার পর্দা একটু ফাঁক করে দেখেন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন ভিক্ষুক গেইটের তালা নাড়ছে আর বলছে : হারামী বড়লোকগুলান অ আইজকাইল ফাঁকিবাজ অইয়া গেছে। আমগো মতো গরীবদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য ঘরের ভিতর থাইক্যা বায়রে দিয়া গেইটে তালা লাগাইয়া রাহে। হালার বড়লোকের...মারি। কথাটা শুনে কাশেম সাহেবে মেজাজটা ভীষণ বিগড়ে যায়। একবার ভাবেন গেইট খুলে কষে কয়টা থাপ্পর লাগায়। কিন্তু পরক্ষণেই নিজকে সামলে নেন। কিন্তু তার কানের ভেতর বাজতে থাকে ভিক্ষুকদের বিশ্রী গালিটা।

 

 

---------

 

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ